সব্যসাচী বসুরায়চৌধুরীর ‘নেপাল এ বার কোন পথে’ (১৬-৯) প্রবন্ধের পরিপ্রেক্ষিতে এই চিঠি। ২০২২ সালে শ্রীলঙ্কায় রাজাপক্ষে সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ আন্দোলনের কারণ ছিল মুদ্রাস্ফীতি, অর্থনৈতিক সঙ্কট, জ্বালানি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের অভাব। জনরোষ, গণআন্দোলনে একটি সরকারের পতন ঘটে। দু’বছর বাদে ২০২৪ সালে বাংলাদেশে হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভে সরকারের পতন ঘটে। এই পতনের মূল কারণ কোটা সংস্কারের আন্দোলন হলেও, দীর্ঘদিন হাসিনা সরকারের অপশাসন, দমন-পীড়ন ও অগণতান্ত্রিক মনোভাবও প্রকট হয়ে উঠেছিল। আর এ বছর নেপালের তরুণ প্রজন্মের (জেন জ়ি) আন্দোলন সে দেশের সরকারের পতন ঘটাল। বেকারত্ব, শাসক দলের স্বজনপোষণ, দুর্নীতি কোথায় পৌঁছলে এমন জনরোষের বিস্ফোরণ ঘটতে পারে!
ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলির এমন পরিণতি থেকে আমাদের দেশ ও তার অঙ্গরাজ্যগুলির শাসকদের কি কিছুই শেখার নেই? আমাদের রাজ্য-সহ গোটা দেশের শিক্ষিত যুবসমাজের কাছে বেকারত্ব একটা বড় সমস্যা। এ ছাড়াও আছে অর্থনৈতিক অসাম্য বৃদ্ধি। শাসক শ্রেণির দুর্নীতি ও সীমাহীন প্রতিপত্তি বৃদ্ধি শিক্ষিত, সচেতন, সমাজমাধ্যমে আসক্ত প্রজন্মের চোখ এড়িয়ে যাচ্ছে না। তাই এই ক্ষোভ ও হতাশা দাবানলের মতো ছড়ানোর আগেই তার কারণ বিশ্লেষণ ও যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। ভোটের আগে প্রতিশ্রুতি এবং ভোট মিটলে বিস্মৃতি নেতাদের কাছে যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। শাসকের মনে রাখা উচিত, ‘চিরদিন কাহারও সমান নাহি যায়, আজিকে যে রাজাধিরাজ কা’ল সে ভিক্ষা চায়’। নেপালের এই আন্দোলন আত্মধ্বংসী না নতুন পথের দিশারি, সময় বলবে।
রাজেশ মুখোপাধ্যায়, বিষ্ণুপুর, বাঁকুড়া
দুর্নীতির ফল
নেপালের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতা প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গিয়ে সব্যসাচী বসুরায়চৌধুরী তাঁর প্রবন্ধে মূলত দু’টি বিষয়ের উপর আলোকপাত করেছেন— এক, ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর ‘মাত্রাছাড়া দুর্নীতি এবং স্বজনতন্ত্র’ ও তার সঙ্গে দেশে চরম আর্থিক বৈষম্য ও বেকারত্ব; দুই, পূর্ববর্তী প্রজন্মগুলির মতো রাষ্ট্রীয় এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলির উপরে জেন জ়ি-র বিন্দুমাত্র আস্থা না রাখা। প্রথম ক্ষেত্রে শাসকগোষ্ঠী আর দ্বিতীয় ক্ষেত্রে একটা উল্লেখযোগ্য অংশের শাসিত সম্প্রদায় দায়ী হলেও, উপরোক্ত দু’টো কর্মকাণ্ডই দেশের পক্ষে খুব বিপজ্জনক। পৃথিবীর কয়েকটি দেশের ইতিহাস তুলে ধরে প্রবন্ধকার সঠিক ভাবেই বলার চেষ্টা করেছেন, এ রকম হঠকারী এবং বিধ্বংসী আন্দোলনের মাধ্যমে উন্নততর বিকল্পের সন্ধান লাভ করা কখনও সম্ভব নয়। ফরাসি বিপ্লবের পরে দীর্ঘ অরাজকতার উদাহরণও তিনি দিয়েছেন।
সমস্যা সমাধানে সে দেশের যুবসম্প্রদায়-প্রদর্শিত পন্থা নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও, সমস্যার গভীরতা নিয়ে প্রশ্নের অবকাশ নেই। সমাজবিজ্ঞানী ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা এ বিষয়ে একমত যে, বছরের পর বছর ধরে চলতে থাকা সরকারের দুর্নীতি এবং তরুণদের অর্থনৈতিক সুযোগ প্রদানে ব্যর্থতাই এই অস্থিরতার মূল কারণ। বিভিন্ন দেশে, বিশেষত উন্নয়নশীল দেশে আচরণগত ভাবে দুর্নীতি কোনও আলাদা বিষয় নয়, তা সমাজব্যবস্থারই অঙ্গ। দেশের সরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহ যদি দুর্বল হয় এবং সেখানে প্রাপ্ত সুযোগ-সুবিধার পরিমাণ যদি বেশি থাকে, তবে আর্থিক ও রাজনৈতিক দুর্নীতির সম্ভাবনা সেখানে বেশি মাত্রায় দেখা যায়। দুর্নীতি হটাতে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার প্রয়োজন, যার মাধ্যমে দেশের বিধিবদ্ধ প্ৰতিষ্ঠানগুলিতে মানুষের যোগদান নিশ্চিত করে গণতন্ত্রকে আরও প্রসারিত করা যায়।
রাষ্ট্রের দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করা সহজ কাজ নয়। তবে রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি নষ্ট করে, রক্তগঙ্গা বইয়ে, আপাত-স্বচ্ছ ভাবমূর্তির কোনও অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে শাসকের আসনে মনোনীত করাও স্থায়ী সমাধান নয়। নীতিনিষ্ঠ বিরোধী রাজনৈতিক দলের সহযোগে, সুস্থ বোধসম্পন্ন নাগরিকের সমর্থনপুষ্ট হয়ে, ঐক্যবদ্ধ দীর্ঘমেয়াদি সংগ্রামের মধ্য দিয়েই পৌঁছনো যেতে পারে স্বচ্ছ শাসনব্যবস্থার অভীষ্ট লক্ষ্যে।
গৌতম নারায়ণ দেব, কলকাতা-৭৪
সতর্কবাণী
‘পালাবদলের ঝাঁকুনি’ (১২-৯) শীর্ষক সম্পাদকীয়টি ভারতের সর্বোচ্চ আদালতের মাননীয় প্রধান বিচারপতির করা একটি সাম্প্রতিক মন্তব্য উল্লেখ করে শেষ হয়েছে। শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ ও অতি সম্প্রতি নেপালে গণঅভ্যুত্থান তথা বিশৃঙ্খলার পরিস্থিতিতে ভারতের শাসকদের জন্য মহামূল্যবান তাঁর এই মন্তব্য তথা উপদেশ। তিনি বলেছেন, “গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠানই ভারতের প্রধান রক্ষাকবচ, তাকে সুরক্ষিত রাখাই কিন্তু সবচেয়ে বড় কাজ।”
গণতন্ত্রের কণ্ঠরোধ করে ৫০ বছর আগে জরুরি অবস্থা জারি করে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী যে ভুল করেছিলেন, তার চরম খেসারত তাঁকে দিতে হয়েছিল পরবর্তী নির্বাচনে তাঁর ও কংগ্রেস দলের নিদারুণ পরাজয়ের মাধ্যমে। বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিও বিরোধীদের ‘অঘোষিত জরুরি অবস্থা’ জারির অভিযোগ রয়েছে। সরকারের আইন বদলে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে কব্জা করার ঝোঁকও দেখা যাচ্ছে। নেতা-মন্ত্রীদের ঔদ্ধত্য ও গাজোয়ারি কার্যকলাপ নজরে পড়ছে। এমনকি কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে নির্বাচনে কারচুপির মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের মতো অভিযোগও সম্প্রতি উঠেছে।
অভিজ্ঞ মহলের মতে, শাসনক্ষমতায় থাকা ব্যক্তিদের লাগামহীন দুর্নীতি, স্বজনপোষণ ও উৎকট বৈভব প্রদর্শন, অন্য দিকে বেকারত্ব ও দারিদ্রে ক্ষুব্ধ যুবসম্প্রদায় নেপালে গণঅভ্যুত্থানে প্রধান ভূমিকা নিয়েছিল। নেপাল সরকার জনরোষ থামাতে প্রথম দিকে সমাজমাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। তাতে ক্ষোভে ঘৃতাহুতি পড়ে। গণবিক্ষোভ হিংস্র হয়ে ওঠে, পুলিশের গুলিতে কয়েক জন বিক্ষোভ-আন্দোলনকারীর মৃত্যুতে। নেপালের পরিস্থিতি তখন গত বছরের বাংলাদেশের মতোই অস্থির হয়ে ওঠে।
ভারতের চার দিকে অবস্থিত প্রতিবেশী দেশগুলোর কোনওটাতেই কখনও সুদৃঢ় গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়নি। প্রতিবেশী দেশগুলিতে অতীতেও স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে বার বার জনরোষ আছড়ে পড়েছে। সেখানে ভারতে স্বাধীনতা লাভের পর প্রায় আট দশক কেটে গেলেও কিছু ব্যতিক্রমী ঘটনা ব্যতীত মোটের উপর গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার কাঠামোটি বজায় আছে। কিন্তু সাম্প্রতিক কালে ভারতে আর্থিক বৈষম্য ও বেকারত্ব যে ভাবে বেড়েছে, তাতে দেশের নাগরিক সম্প্রদায়ের মধ্যেও ক্ষোভ জমছে। সে ক্ষেত্রে এ দেশের জনগণেরও ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ বাংলাদেশ ও নেপালের দৃষ্টান্ত অনুসরণে ঘটার আশঙ্কা রয়েই যায়।
প্রতিবেশী দেশগুলির অবস্থা দেখে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলি কি বুঝতে পেরেছে, বিস্ফোরণের জন্য ‘ক্ষোভ’ নামক বারুদে সামান্য অগ্নিসংযোগই যথেষ্ট?
কৌশিক চিনা, মুন্সিরহাট, হাওড়া
ভাঙা স্তম্ভ
চন্দননগর স্ট্যান্ডে অনেকগুলি আলোকস্তম্ভ আছে। একটি অনেক দিন আগে ভেঙে গিয়েছে। সেটির বৈদ্যুতিক তার বহু দিন যাবৎ প্লাস্টিকের বস্তা দিয়ে বিপজ্জনক ভাবে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। সামনে জগদ্ধাত্রী পুজো, প্রচুর লোকসমাগম হবে। অবিলম্বে উপযুক্ত ব্যবস্থা না করলে, যে কোনও মুহূর্তে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার ঘটনা ঘটতে পারে।
জয়ন্ত সমাদ্দার, ভদ্রেশ্বর, হুগলি
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)