সম্পাদকীয় প্রবন্ধ ‘ঘুম থেকে উঠে’ (৭-৯) গভীর আঁধারের মাঝে একবিন্দু আলোর ঠিকানা। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন একটি কলেজের শিক্ষিকাকে ভোররাতে একটি ‘অ্যাসাইনমেন্ট’ পাঠিয়েছেন তাঁরই কলেজের এক ছাত্র। ছাত্রের কর্মনিষ্ঠার প্রশংসায় কার্পণ্য না-করেও তিনি তাঁকে সুন্দর করে বুঝিয়েছেন— রাতের ঘুম ও শরীরের বিশ্রাম নিয়েও কাজটি করা যেত। সবার আগে, পড়াশোনারও আগে, নিশ্চিত করা দরকার নিজের ভাল থাকা।
শিক্ষক দিবসের কাছাকাছি সময়ে দিল্লির ঘটনাটি আশাপ্রদ নিশ্চয়ই। এ প্রসঙ্গে কিছু সংযোজন করতে চাই। এই যে প্রতি বছর ঘটা করে শিক্ষক দিবস পালন হয়ে আসছে, এর তাৎপর্য ঠিক কী, তা আমরা সাধারণ মানুষজন অনুধাবন করার চেষ্টা করেছি কখনও? স্কুলগুলোয় প্রধান শিক্ষক কচি-কাঁচাদের সামনে ভাষণ বিতরণ করেন। খাওয়াদাওয়া, উপহার, অনুষ্ঠানের মেলা। বেতার-দূরদর্শনও জমজমাট— সমীক্ষা ও গতানুগতিক আলোচনায়। সব জায়গায় সাধারণ ভাবে শিক্ষকদেরই উপস্থিতি। অন্য গুণিজনেরা থাকেন কখনওসখনও।
আজকালকার দিনেও পড়ুয়াদের শাস্তিস্বরূপ বেঞ্চের উপর দাঁড় করানো, নিল ডাউন, বেত্রাঘাতের মতো অন্ধকারাচ্ছন্ন ব্যবস্থা নিয়ে কিছু কিছু অভিযোগ শোনা যায়, তবে কার্যত এ সব বন্ধ হয়েছে। শাস্তিপ্রদানের অবাঞ্ছিত বিষয়ে যে সব শিক্ষক জড়িয়ে থাকেন, সন্দেহ হয় তাঁরা আদৌ ‘শিক্ষক’ তো? শিক্ষক দিবসের ভাবনায় আর একটি বিশেষ দিকের পর্যালোচনার যথেষ্ট সুযোগ থাকলেও সমাজকর্তারা আশ্চর্য উদাসীন। সেই প্রশ্ন হল, ‘শিক্ষক দিবস’টি শুধু ছাত্র-শিক্ষকের সম্পর্কে সীমাবদ্ধ থাকবে কেন? বিষয়টিকে বিজ্ঞানসম্মত করে তুলতে হলে ‘ত্রিভুজ’-এ রূপান্তর ঘটানো প্রয়োজন, যাতে করে পারস্পরিক আদানপ্রদান সম্পর্কস্থাপনের ক্ষেত্রে একটা পাকাপোক্ত সেতুনির্মাণ অনিবার্য হয়ে ওঠে।
সবচেয়ে বড় কথা— শিক্ষকদের দায়িত্ব এবং কর্তব্য যে অসীম, এটা আমরা অনুধাবন করি ক’জন? সমাজের বৃহত্তর ক্ষেত্রে পৌঁছনোর আগে শ্রেণিকক্ষের পরিবেশ ও ছাত্রছাত্রীদের স্বার্থের দিকটিতে সম্পূর্ণ মনোনিবেশ করলে সমাজ নানা ভাবে উপকৃত হতে পারে। শিক্ষক দিবসের গভীর ব্যঞ্জনায় সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ দিক বোধ হয় এটাই। আর একটা কথা। আদর্শ শিক্ষক দূরের কথা— ভাল শিক্ষক থাকলেই পড়ুয়াদেরও কর্তব্যবোধ নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার তেমন অবকাশ তৈরি হবে না। শিক্ষকদের বড় দায়িত্ব ছাত্রদের মানুষ হিসাবে গড়ে তোলা। তা ঠিক ভাবে হলে ‘এখনকার ছেলেপুলেরা কী-যে হচ্ছে’— জাতীয় সমালোচনার মুখ করার একটা পথ পাওয়া যাবে। পরিশেষে, সম্পাদকীয়ের একটি উক্তি প্রণিধানযোগ্য— ইউরোপ-আমেরিকায় শিক্ষার্থী সমাজ ও রাষ্ট্রের থেকে যে ‘সাপোর্ট সিস্টেম’টি পায়, আমাদের দেশে তার কণাটুকুও মেলে না। কর্তৃপক্ষ কথাটি শুনছেন?
শক্তিশঙ্কর সামন্ত, ধাড়সা, হাওড়া
আশা জাগল
‘ঘুম থেকে উঠে’ শীর্ষক সম্পাদকীয়টি পড়ে হৃদয় উদ্বেলিত হয়ে উঠল। কারণ এখন শিক্ষক ও ছাত্রের সম্পর্কে নেই সেই আন্তরিকতার ছোঁয়া। তবে প্রায় পঞ্চাশ বছর আগে, আমাদের ছাত্রজীবনেও দেখেছি, সমাজে শিক্ষকদের বিশেষ মর্যাদা ছিল। আমরা একটি বিদ্যালয়ের ছাত্র হয়েও পথে অন্য বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দেখলে শ্রদ্ধাবনত হতাম। তাঁদের কেউ কেউ পথে দাঁড়িয়ে আমাদের কুশল কামনা করতেন, আমি অন্য বিদ্যালয়ের ছাত্র জেনেও বলতেন, যদি কিছু বুঝতে অসুবিধা হয়, আমার কাছে এসো, বুঝিয়ে দেব। অনেক শিক্ষক-শিক্ষিকা দু’-তিন কিলোমিটার পথ হেঁটে বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ে যাতায়াত করতেন এবং বেশ কিছু ছাত্র-ছাত্রী তাঁদের সঙ্গে যেত। কিন্তু, হায়, সে দিন আর নেই! এখন সবাই ব্যস্ত, তাই অন্য বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সম্পর্কের কথা ছেড়ে দিলাম; নিজেদের বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে মধুর সম্পর্কও যেন আকাশ-কুসুম কল্পনার বিষয়।
কিছু শিক্ষককে বলতে শুনেছি, আমরা আগেকার মতো গুরুমশাই নই, আমরা এখন সরকারি কর্মচারী, আসি যাই মাইনে পাই, ঘরে পড়িয়ে ওভারটাইম করি। এ তাঁদের মনের কথা, না যন্ত্রণার শ্লেষ— জানা নেই।
এমন হতাশাগ্রস্ত সময়েই শুনলাম, এক জন ছাত্র ভোর রাতে শিক্ষিকার কাছে পাঠসংক্রান্ত বিষয় ইমেলে পাঠিয়েছিল। শিক্ষিকা ছাত্রের এই কাজে খুশি হয়েছেন আবার তাকে কিছু পরামর্শও দিয়েছেন, যা শরীর গঠনে ও মনের বিকাশের বিশেষ সহায়ক। যখন চারিদিকে নৈরাজ্য ও অন্ধকার বিরাজমান, সেই সময় এক জন শিক্ষিকার এমন ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে শিক্ষককুল উদ্ধুদ্ধ হলে দেশের মঙ্গল হবে।
প্রসন্নকুমার কোলে, শ্রীরামপুর, হুগলি
মশালবাহক
‘ঘুম থেকে উঠে’ শীর্ষক সম্পাদকীয় লেখাটি পড়ে মনে এল দার্শনিক রুশো-র বিখ্যাত উক্তি, শিশু হল এমন একটি বই শিক্ষককে যার প্রতিটি পৃষ্ঠা পড়তে হয়।
দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন একটি কলেজের এক শিক্ষিকা শিক্ষকতা ব্রতটিকে গৌরবান্বিত করেছেন। এখন তো চার দিকে সামাজিক অবক্ষয়ের জ্বলন্ত দৃষ্টান্তের ছড়াছড়ি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সমাজবিচ্ছিন্ন কোনও প্রতিষ্ঠান নয়, সমাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। তাই সেখানেও অবক্ষয়ের ছাপ তো পড়বেই, বাদ যাবে না। তবে অন্ধকার তো শেষ সত্য নয়, আলোও আসবে। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজের সেই শিক্ষিকা আলোর মশালধারী।
সত্যকিংকর প্রতিহার, যমুনা, বাঁকুড়া
অরুণাচলের দুর্গা
এই বছরের দুর্গাপুজো সম্পূর্ণটাই কাটালাম অরুণাচল প্রদেশের রাজধানী শহর ইটানগর ও অসাধারণ প্রকৃতির মাঝে, জ়িরো ভ্যালিতে। নিজের রাজ্য ছেড়ে পুজোর সময় গিয়েছিলাম সেই রাজ্যটায়, তবেই তো বিবিধের মাঝে মিলন মহানকে হৃদয়ে অনুভূত হল।
পশ্চিমবঙ্গ থেকে বহু দূরের এক রাজ্যের এক ছোট্ট জায়গা, চার পাশ পাহাড়ে ঘেরা অসাধারণ প্রকৃতির জ়িরো ভ্যালিতে নিষ্ঠাভরে মা দুর্গার আরাধনা দেখে এ বার মুগ্ধ হলাম। জানলাম যে, জাতিধর্ম নির্বিশেষে প্রত্যেকেই মা দুর্গার আগমন ও আরাধনায় মেতে ওঠেন এখানে।
ওই রাজ্যটি জুড়েই বেশ কয়েকটি দুর্গাপুজো হয়, বিশেষ করে ইটানগরের মিনিস্টার কলোনি-র প্রতিষ্ঠিত দুর্গামন্দিরের মা দুর্গার আরাধনা তো অপূর্ব। তবে, সেখানে কোথাও বোধনের আগেই পুজো শুরু হয়ে যায়নি।
অপরূপ প্রকৃতির কোলে, অসাধারণ মানুষজনের সঙ্গে, মা দুর্গার আরাধনায় যোগ দিতে পেরে মনে হয়েছিল, তাই তো, বাহ্যিক জাঁকজমক, আড়ম্বরের দেখনদারি নেই, তবুও প্রত্যেকের মনের বিশালতার পরিধিতে মা এখানে সত্যিই বিরাজ করছে। এখানেই তো মা দুর্গার আগমন ও সাধনা সার্থক।
সুপর্ণা ঘোষ, কলকাতা-৩২
বিলের স্বাস্থ্য
বর্তমান দিনে বিলের পরিধি দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে; অপরিকল্পিত নগরায়ণের জন্য প্রায় প্রতি জেলার বিলগুলি আজ হুমকির সম্মুখীন। কারণ বিলের রাস্তা সংলগ্ন জমিগুলি ক্রমশ ভরাট উঁচু হয়ে বাড়িঘর যথেচ্ছ ভাবে তৈরি হচ্ছে, যার পরিণামে পরিবেশে বিপদ সৃষ্টি হচ্ছে। গ্রামীণ আর্থ-সামাজিক স্তরেও এগুলি খুব খারাপ প্রভাব ফেলেছে। কারণ ভূমিহীন প্রান্তিক দরিদ্র মানুষগুলো বিলে অবাধ যাতায়াত থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, ফলে গবাদি পশু পালনে তাঁরা হিমশিম খাচ্ছেন। গ্রামের জল বিলে যাওয়া বন্ধ হওয়ার কারণে বর্ষার দিনে গ্রামীণ এলাকাতেও জলবদ্ধতার পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে। তাই এই ‘বিল-বন্দি’র প্রয়াস থেকে আমাদের বিরত থাকা আবশ্যক।
মাসুম আকতার মণ্ডল, ধলতিথা, উত্তর ২৪ পরগনা
সমর্থন নেই
দুর্গাপুর এনআইটি-তে পুরীর শঙ্করাচার্য নিশ্চলানন্দ সরস্বতীর দীক্ষাদানের কথা জানাজানির পরই সমালোচনার ঝড় উঠেছে, যা যুক্তিযুক্ত। গণতান্ত্রিক দেশে সরকারি কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মীয় প্রবচন, দীক্ষাদান— এ সব কর্মসূচির আয়োজনের বিরোধিতা করছি।
অজয় ভট্টাচার্য, বনগাঁ, উত্তর ২৪ পরগনা
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)