E-Paper

সম্পাদক সমীপেষু: অমর্যাদার কাজ নয়

একটা বাঁধন থাকা কি জরুরি নয়, যা পরিচারিকা এবং ‘বাবুদের বাড়ি’কে একই সুতোয় বেঁধে রাখবে? মাতৃত্বকালীন ছুটি বলে কিছু নেই, কাজ চলে যাওয়াই দস্তুর।

শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০২৫ ০৫:২২

“সব দোষ ‘বাবুদের বাড়ি’র?” (১২-১০) শীর্ষক প্রবন্ধে রূপালী গঙ্গোপাধ্যায় গৃহশ্রমিক, বিশেষ করে পরিচারিকাদের বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরে সেগুলির কারণ খোঁজার চেষ্টা করেছেন, যা সমস্যা দূরীকরণে পরিচারিকাদের তথা আমাদের মতো পরিচারিকা সংগঠনগুলিকে বিভিন্ন দিক থেকে সাহায্য করবে। ঠিকই যে, শ্রমজীবী পরিচারিকাদের সমস্যা অন্যান্য শ্রমজীবীর থেকে অনেকাংশে ভিন্ন। এখানে নিয়োগকর্তা ‘বাবুদের বাড়ি’। সব বাড়ির মানসিকতা এক হবে না, স্বাভাবিক। এই মানসিকতার একটা ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটছে, এটাও ঠিক। কিন্তু এর একটা সুনির্দিষ্ট নিয়ন্ত্রণ থাকা প্রয়োজন, যেখানে রাষ্ট্রের ভূমিকা থাকা জরুরি। বছরে এক বার বোনাস সব পরিচারিকা পান না। যাঁরা পান, তাঁরাও কোনও নিয়ম মেনে পান না। সবটাই বাবুদের ইচ্ছামাফিক। মাসিক বেতন ঠিক হয় দরাদরির ভিত্তিতে, যেখানে উভয় পক্ষই ঠকে যাওয়া থেকে যতটা সম্ভব বেঁচে যেতে চান। সেখানে একটা বাঁধন থাকা কি জরুরি নয়, যা পরিচারিকা এবং ‘বাবুদের বাড়ি’কে একই সুতোয় বেঁধে রাখবে? মাতৃত্বকালীন ছুটি বলে কিছু নেই, কাজ চলে যাওয়াই দস্তুর। সামাজিক সুরক্ষা যেটুকু খাতায়-কলমে আছে, তার নানা জটিলতা সব পরিচারিকাকে সেই সীমানায় ঢুকতে দেয় না। নির্দিষ্ট বয়সে পেনশনের দাবি নিয়ে সরকারের যেন কোনও মাথাব্যথা নেই। সব পরিচারিকা কাজের বাড়িতে শৌচালয়ের সুবিধা পান না। এখানেও সরকার নীরব।

অথচ, ২০১৭ সালে এ নিয়ে একটি বিল প্রস্তুত হয়েছিল। তা নিয়ে সেই সময় একটু হইচই হলেও পরে তাকে কোনও এক অজ্ঞাত কারণে ঠান্ডা ঘরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই বিল আইনে পরিণত হলে পরিচারিকাদের বর্তমান সমস্যা, বিশেষ করে পারিশ্রমিক সমস্যার একটা সামঞ্জস্যপূর্ণ সমাধান মিলত। যদিও কাজের ধরন অনুযায়ী পারিশ্রমিকের তারতম্য করা খুব সহজ ব্যাপার নয়। তবে, অন্যান্য সমস্যা সমাধানে তার কিছুটা হলেও কার্যকর ভূমিকা থাকত।

পরিশেষে বলি, এ জাতীয় প্রত্যেক কাজেরই একটা মর্যাদা রয়েছে, কিংবা বলা ভাল মর্যাদা থাকা উচিত। শুধু পরিচারিকা কেন, কুলি, মেথর, ডোমরাও স্বেচ্ছায় এই পেশায় আসেন না, তাঁদের সন্তানদেরও এই পেশায় আনতে চান না। তাই বলে এই পেশার মান কমে যায় না। এ সব পেশায় আসার পর, কোনও কারণেই সেই পেশাকে অসম্মান করা চলে না। যে কৃষক তাঁর ছেলেকে ডাক্তার বানাতে চান, তিনি কৃষি পেশাকে অসম্মান করেন, এমনটা তো নয়। নিজের সন্তানকে এক জন সুদক্ষ মর্যাদাসম্পন্ন শ্রমজীবী হিসাবে দেখতে যেমন পরিচারিকাদের আপত্তি নেই, তেমনই মাকে পরিচারিকা হিসাবে সম্মান জানাতেও সন্তানের আপত্তি থাকার কথা নয়। শ্রমদান কোনও অমর্যাদার কাজ নয় বলেই আয়ের লক্ষ্যে কলেজ পড়ুয়া তরুণীদেরও কেউ কেউ পরিচারিকার কাজ করেন সঙ্কোচ না করেই।

জয়শ্রী চক্রবর্তী, সম্পাদক, সারা বাংলা পরিচারিকা সমিতি

অনেক সহজ

রূপালী গঙ্গোপাধ্যায়ের “সব দোষ ‘বাবুদের বাড়ি’র?” প্রবন্ধ প্রসঙ্গে বলি, এই শ্রমজীবীদের বিস্তৃত শ্রমক্ষেত্রটির নানা অসুবিধা, সমস্যা লেখাটিতে সুন্দর ভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এই ক্ষেত্রে আমার নিজস্ব কিছু বিশ্লেষণের কথা বলি। প্রথমত, আমাদের আগের প্রজন্মের মালতির মা, মিনুর মায়েদের জায়গায় তাঁরা এখন স্বনামেই কাজ করেন। এখন বেতন ও শ্রমদানের সময়, শ্রমের কাঠামোর সঙ্গে অনেকটাই সাযুজ্যপূর্ণ, অবশ্যই সব ক্ষেত্রে নয়। বাড়ির কর্তা এখন আর বাবু নন। কাকু, কাকিমা, দাদা, বৌদি নামেই তাঁদের ডাকা হয়। পারস্পরিক সম্পর্ক অনেকটাই সহজ।

দ্বিতীয়ত, শ্রমের মূল্য নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে বাসস্থানের অবস্থান, দুই পক্ষের আর্থ-সামাজিক অবস্থান, সেই সময়ের চাহিদা ও জোগানের মধ্যে এত রকম সমীকরণ কাজ করে যে, তাদের এক সূত্রে বাঁধা বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। কোনও পক্ষ তাতে উপকৃত হলেও কোনও কোনও ক্ষেত্রে এক পক্ষের কাজ হারানোর বা অন্য পক্ষের সহায়িকা রাখার ক্ষমতা হারানোর মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। এক নিয়মে সব পক্ষ একই রকম লাভবান হবেন না।

তৃতীয়ত, ছুটির ক্ষেত্রে পারস্পরিক প্রয়োজনভিত্তিক ছুটির ব্যবস্থা করা অবশ্য কর্তব্য। বাৎসরিক বোনাস যা সাধারণত এক মাসের বেতন হয়, দিতে হবে। প্রতি বছর নিয়ম মেনে টাকা বাড়ানো অবশ্যই উচিত। শৌচাগার ব্যবহারের ক্ষেত্রে বাইরের বিভিন্ন ধরনের কাজে নিযুক্ত মহিলাদের কথাটাও সরকারি পর্যায়ে ভাবা দরকার। সেখানে টোটোচালক, আনাজ বিক্রেতা-সহ সম পর্যায়ের বাইরের কাজে মহিলারা নিযুক্ত থাকেন। বরং আবাসনগুলিতে সহায়িকাদের জন্য কিছু ব্যবস্থা থাকলেও থাকতে পারে।

নিবেদিতা নাগ, কলকাতা-১২৫

ছোট কাজ নয়

“সব দোষ ‘বাবুদের বাড়ি’র?” প্রবন্ধে প্রসঙ্গে বলি, পরিচারিকারা দৈহিক শ্রমের বিনিময়ে বেতন পান। তাঁদের শ্রমিক বলতে কোনও বাধা নেই। তবে তাঁদের নিয়োগকর্তারা বেশির ভাগই মধ্যবিত্ত পরিবার। তাই কোটিপতিদের গৃহে সহায়িকা বা সহায়কদের যে বেতন হবে, মধ্যবিত্ত বাড়ির ক্ষেত্রে তা সমান হবে না। বছরের দু’বার, নববর্ষ এবং পুজোর সময় তাঁদের অনেক কাজের বাড়ি থেকেই বোনাস, নতুন জামাকাপড় দেওয়া হয়। বাড়ির সহায়িকাটি অসুস্থ হলে কাজের বাড়িগুলি থেকে অনেক সময়ই সাধ্যমতো চিকিৎসার জন্য অর্থ সাহায্যও করা হয়। এঁদের বেতন কাজের চাপ অনুসারে হতে পারে। যেমন— দু’জনের জন্য যে পরিমাণ রান্না করতে হবে, নিশ্চয়ই পরিবারে দশ জন থাকলে তার চেয়ে অনেক বেশি রান্না করতে হবে। সে ক্ষেত্রে সহায়িকার মাইনের তারতম্য হবে। কাপড় কাচার জন্য এক রকম বেতন, বাসন মাজার জন্য এক রকম, ঘর পরিষ্কারের জন্য আর এক রকম। মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে বেতন দিতে হবে। মাসে দু’দিন সবেতন ছুটি থাকবে। অসুখ করলে সেই ছুটিও তাঁকে দিতে হবে।

যে হারে বেকারত্ব বাড়ছে, তাতে কেউ যদি বেতনের বিনিময়ে গৃহকর্মে নিযুক্ত হতে চান, তাতে লজ্জার কিছু নেই। বিদেশে বহু শিক্ষার্থী হাতখরচের জন্য লোকের বাড়িতে ঘাস ছাঁটে, বাসন মাজে, ঘর পরিষ্কারও করে। তা হলে এ দেশে কেন এটি সম্মানজনক পেশা হবে না?

সর্বানী গুপ্ত, বড়জোড়া, বাঁকুড়া

সম্মানহানি

‘পার্সি-ইতিহাসে এ বার অগ্নিকাণ্ডের জবরদখল!’ (পৃ ৮, ১৭-১১) শীর্ষক সংবাদ প্রসঙ্গে এই অভিযোগপত্র। খবরে আমার বাবা জেমি এস বিলিমোরিয়ার উদ্ধৃতিতে যা লেখা হয়েছে তা ভুল এবং উস্কানিমূলক। আমার বাবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকের দেখা হয়নি, সাক্ষাৎকার দেওয়ারও প্রশ্ন ওঠে না। কোনও সময় বা পরিস্থিতিতেই তিনি আপনাদের সংবাদপত্রের কাউকে কোনও বিবৃতি দেননি। তাঁকে উদ্ধৃত করে যা কিছু লেখা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও মনগড়া, এবং যাচাই না করে এমন কথা তাঁর নামে লিখে দেওয়ায় তাঁর এবং আমাদের প্রভূত ক্লেশ ও সম্মানহানি হয়েছে।

আয়েশা জে বিলিমোরিয়া, কলকাতা-৫৩

প্রতিবেদকের উত্তর: গত শনিবার অনলাইনে পাওয়া পার্সি ক্লাবের +৯১ ৯৮৩০০ ১৮২১৮ এই নম্বরে ফোন করি। সেখান থেকে পার্সি চার্চ ভস্মীভূত হয়ে যাওয়ার ঘটনা, এই চার্চের ইতিহাস সম্পর্কে অবগত— এমন কারও সঙ্গে কথা বলতে চাই। সেখান থেকে এক জনের সঙ্গে ফোনে আমাকে কথা বলানো হয়। তিনি নিজের পরিচয় দেন জেমি বিলিমোরিয়া নামে। তাঁর সঙ্গে বেশ কিছু ক্ষণ কথা হয়। আগুনটি লেগেছে, না কি লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে, সে ব্যাপারে তদন্ত হওয়া প্রয়োজন বলে দাবি করেন। তা প্রতিবেদনে রয়েছে। এর জন্য কোনও সমস্যা বা ভুল বোঝাবুঝি হয়ে থাকলে আমরা দুঃখিত।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Workers Women Safety

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy