E-Paper

সম্পাদক সমীপেষু: অত্যাচার ফিরেছে

ধরা যাক, কোনও কলেজের ২৫০ জন ছাত্র আছে। আর সেই কলেজে মাত্র ১০ থেকে ১২ জনের উপস্থিতির হার সন্তোষজনক আর বাকিদের সবার উপস্থিতির হার উদ্বেগজনক।

শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০২৫ ০৬:২২

এক কলঙ্কজনক অধ্যায়ের পর বছর প্রায় ঘুরতে চলেছে। আর কিছু দিন বন্ধ থাকার পর আবারও সেই হুমকি-সংস্কৃতি শুরু হয়ে গেছে। প্রথম সারির হাতেগোনা মেডিক্যাল কলেজ ছাড়া কোনও কলেজের রেহাই হয়নি। অন্যায় ভাবে ছাত্রদের উপস্থিতির হার অত্যন্ত কম আছে বলে জানিয়ে সিনিয়রদের তরফ থেকে নানা ভাবে জুনিয়রদের উপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। অথচ, কলেজ কর্তৃপক্ষ শুধুই নীরবতা পালন করে চলেছেন। কিন্তু যদি কোনও নথি রাখার ব্যবস্থা থাকত, তা হলে দেখা যেত, অন্তত ৬০ শতাংশ ছাত্রছাত্রীকে ভুল ভাবে অনুপস্থিত দেখানো হয়েছে। ধরা যাক, কোনও কলেজের ২৫০ জন ছাত্র আছে। আর সেই কলেজে মাত্র ১০ থেকে ১২ জনের উপস্থিতির হার সন্তোষজনক আর বাকিদের সবার উপস্থিতির হার উদ্বেগজনক। এই উপস্থিতির প্রহসনের প্রধান কুশীলব ‘সিনিয়র’দের হাত থেকে রেহাই পাওয়ার উপায় জানা নেই।

ধরা যাক, প্রথম বর্ষে মোট তিনটি বিষয় পড়ানো হয়। ঘটা করে কলেজে প্রত্যেক তিন মাসে পরীক্ষা নেওয়া হলেও, একটি বিষয়ের নম্বর পরিষ্কার ভাবে বার করা হলেও বাকি দু’টি বিষয়ের নম্বর জানানোর কোনও ব্যবস্থা নেই। পরীক্ষার অনেক দিন পর সেই দু’টি বিষয়ের নম্বর না জানিয়ে শুধুমাত্র একটি নাম্বার রেঞ্জ-এর মতো দেওয়া হয়। যেমন, ৫০-৬০%’এ রয়েছে এত জন। বুঝতেই পারা যায় না ঠিক কোথায় কোথায় ভুল হয়েছে বা ঠিক কত নম্বর মিলেছে। ফলে আগের পরীক্ষা থেকে জেনে নিয়ে পরে ভুল শোধরানোর কোনও উপায় থাকে না। এই বিষয়েও কলেজ কর্তৃপক্ষ ছাত্রদের সম্পূর্ণ অন্ধকারেই রেখে দেন।

তাই পশ্চিমবঙ্গ স্বাস্থ্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে আবেদন, এই ধরনের অব্যবস্থা অবিলম্বে বন্ধ করা হোক, মেডিক্যাল কলেজগুলিতে আবার পড়াশোনার পরিবেশ ফিরিয়ে আনা হোক।

ঋতুজা ভট্টাচার্য, শ্রীরামপুর, হুগলি

মুখের খোঁজ

সিপিআইএম নেতাদের মুখে শোনা যাচ্ছে, মানুষের মধ্যে ক্ষোভ দানা বাঁধছে, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আরও অনেক মানুষকে জড়ো করতে পারলে তৃণমূল-বিজেপির অপশাসনের অবসান করা যাবে। অতীতে গৌতম দেব প্রমুখ নেতার মুখেও এ ধরনের হুঙ্কার শোনা গিয়েছে। হুঙ্কারই সার— রাজ্যে শাসক তৃণমূল বা বিরোধী বিজেপির দাপট উত্তরোত্তর বেড়েইছে। এ দিকে, লাল পতাকা গরিবের দল— এ বিশ্বাসকেও নতুন করে গড়ে তোলা যাচ্ছে না। জ্যোতি বসু, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মতো ‘ভোটক্যাচার’ নেতাও আজ আর নেই। যদিও মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়ের ‘জননেত্রী’ হিসাবে ভাবমূর্তি দলকে কিছুটা ভরসা জুগিয়েছে। দলের উপর আস্থা তেমন নেই, ব্যক্তি মীনাক্ষীতে যেন কিছুটা ভরসা— এ ধরনের একটা জনমত গড়ে উঠলেও মীনাক্ষী তো আগামী নির্বাচনের জন্য দলঘোষিত কোনও মুখ নন, এখনও পর্যন্ত। তবে ভোটে সুফলের আশা করা কেন? জনপ্রিয়তাবাদের রাজনীতিতে মানুষ নেতা বা নেত্রীর ভাবমূর্তিতেই ভরসা খোঁজে, সে ভরসাতেই দল বা প্রার্থীদের জেতায়। অবশ্য ২০২৬-র নির্বাচনে মীনাক্ষী সত্যি সত্যিই ‘ভোটক্যাচার’ হয়ে উঠতে পারবেন কি না, এ প্রশ্নও রয়েই যায়।

সন্দীপন চক্রবর্তীর লেখা “কাজের ধরনে কঠিন হচ্ছে আন্দোলন... প্রশ্ন যুব সম্মেলনে” (২৩-৬) শীর্ষক সংবাদ থেকে জানা গেল, যুব সংগঠনের কাজে সময় দেওয়ার লোক কমছে। এ কথা মেনেও বলতে হয়, আন্দোলনের ধরন বদলাতে না পারলে সংগঠনের চেহারা কোনও ভাবেই বদলাবে না। ‘আমরাও পারি’ এই বিশ্বাস জোগাতে কখনও কখনও বিক্ষোভ-আন্দোলন হয় বটে, ভোট-রাজনীতিতে তার কোনও প্রভাব লক্ষ করা যায় না। দলনেত্রী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় ২০২৬-এর ভোটকে ‘গুন্ডারাজ খতম’-এর লড়াই হিসাবে দেখতে চান। ওজস্বিনী নেত্রীসুলভ ভাবনা বটে। কিন্তু এ কাজের জন্য তাঁর হাতে তো ব্যাটনটা তুলে দিতে হবে। দলের তরফে তেমন কোনও উদ্যোগ লক্ষ করা যাচ্ছে না। সিপিআইএম দল শেষ পর্যন্ত লড়াই দেওয়ার সঙ্কল্প নিয়ে যত দিন না লড়াইয়ের ময়দানে অবতীর্ণ হচ্ছে, নির্বাচনী রাজনীতির বর্তমান ছবিটা তত দিন বদলাবে বলে মনে হয় না।

শিবাশিস দত্ত, কলকাতা-৮৪

ইতিবাচক দিক

অশোক ভট্টাচার্যের লেখা ‘দুই যুদ্ধের কিস্‌সা’ (৯-৬) একটি সুচিন্তিত এবং সুবিশ্লেষিত উপস্থাপনা। এ বিষয়ে আমার কিছু কথা। ভারত-পাকিস্তান দুই দেশের যুদ্ধ যুদ্ধ পরিবেশের অন্ত হল, শান্তিকামী সাধারণ মানুষ হাঁপ ছেড়ে বাঁচল। অতীতেও এই দুই দেশের একাধিক যুদ্ধ হয়েছে আবার দ্বিপাক্ষিক শান্তি-সমঝোতাও হয়েছে।

এ বার সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গি-তাণ্ডব নির্মূল করার উদ্দেশ্যে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনমতো কঠিন থেকে কঠিনতম সামরিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে সমর্থন জানিয়েছে দেশের সকল বিরোধী দল, অতীতে যা এ ভাবে দেখা যায়নি। পহেলগামে জঙ্গিহানার অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল সারা দেশ জুড়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করা, কিন্তু সেই উদ্দেশ্য ব্যর্থ হল। আমাদের সেনাবাহিনীর দুই নারী আধিকারিক পর্যাপ্ত দক্ষতা ও সংযম বজায় রেখে যে ভাবে বিবৃতি দিয়েছেন, তা অতীব প্রশংসনীয়। ভারত যে একটি ধর্মনিরপেক্ষ দেশ এবং ভারতবাসীর যে একটি গভীর ধর্মনিরপেক্ষ মূল্যবোধ আছে, তাও তাঁরা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। এ দেশে সকল ধর্মের সমান সম্মান, মর্যাদা ও অধিকার। স্বামীজি শিকাগোর ভাষণে সকল ধর্মবিশ্বাসের প্রতি ভারতের সহনশীলতার কথাই বলেছেন। মহাত্মা গান্ধী কোনও মানুষ, ধর্ম বা দেশের প্রতি বিদ্বেষ বা ঘৃণায় বিশ্বাস করতেন না। রবীন্দ্রনাথ ছিলেন সকল রকম যুদ্ধোন্মাদনা ও উগ্র জাতীয়তাবাদের বিপক্ষে।

ভারতে মানুষের যে কোনও ধর্মে বিশ্বাস করা ও সেই ধর্মের নিজস্ব নিয়মকানুন, প্রথা চালু রাখার পক্ষেই এই রাষ্ট্র। ভারতে ধর্মনিরপেক্ষতার অর্থ সর্বধর্মের প্রতি সমভাব, সর্বধর্মের সমঅধিকার, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের এক নিবিড় মেলবন্ধন।

এই পরিস্থিতির মধ্যেই যে অসামান্য মনোবল আমরা পেয়েছি, যে ভাবে জাতীয় ঐক্যকে সুরক্ষিত রাখার শিক্ষা অর্জন করেছি, যে ভাবে দেশকে অটুট, অখণ্ড রাখার দৃঢ় মানসিকতা ও বলিষ্ঠতায় দীক্ষিত হয়েছি, সে-ই আমাদের প্রকৃত প্রাপ্তি।

মানিক কুমার বসু, কলকাতা-১০৮

জিলিপি বিদায়

মাছে ভাতে নয়, বাঙালি তেলে ঝালে অম্বলে। বাঙালি শিঙাড়া কচুরিতে। বাঙালি চপ কাটলেটে। বাঙালি নিমকি জিলিপিতে। আজ জানতে পারলাম, দুনিয়ার যত রকম খাদ্য সংক্রান্ত বদভ্যাস আছে সব বাঙালির মধ্যে বিরাজমান।

কেন্দ্র জানিয়েছে তামাক জাতীয় পণ্যের গায়ে যেমন বিধিসম্মত সতর্কীকরণ থাকে ঠিক তেমন তেলেভাজা, শিঙাড়া, জিলিপি, লাড্ডু ইত্যাদি খাবারে কতটা তেল কতটা চিনি, দোকানদারকে প্রকাশ্যে বোর্ড ঝুলিয়ে জানিয়ে দিতে হবে। জনগণ সতর্ক হয়ে এ সব খাওয়া নিজেরাই বন্ধ করবে, সরকার এমন দায়িত্বশীলতাই প্রত্যাশা করে। মুশকিল হল গোটা দেশেই জিলিপি জনপ্রিয়। এখন বাঙালি বিয়েবাড়িতেও অবাঙালি বাড়ির মতো গরম গরম জিলিপি খাওয়ানো হয়। পূর্ব আর পূর্বোত্তর ভারতের রাজ্যগুলো ছাড়া বাকি দেশ লাড্ডু বলতে অজ্ঞান। গণেশ পুজোর নিবেদন অবশ্যই লাড্ডু।

বলরাম জাখরের মতো দুঁদে কংগ্রেস নেতাও নির্বাচনে চৌধরি দেবী লালের কাছে এক বার এক স্লোগানে কাত হয়ে গিয়েছিলেন— “দো জলেবি, এক সমোসা/ জাখর তেরা কেয়া ভরোসা।”

সেই তেলেভাজা জিলিপি যদি আমাদের মুখ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় তবে বিকেলের টিফিন, সকালের জলখাবার জোলো হয়ে যাবে।

পার্থ নন্দী, শেওড়াফুলি, হুগলি

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Education CPIM

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy