E-Paper

সম্পাদক সমীপেষু: স্মৃতির খোলা চিঠি

‘চিঠি’-কে আমরা ভালবাসতাম। তা নানা রকমের হত— শুভকামনার চিঠি, বাবা-মায়ের স্নেহভরা এবং সন্তানের স্বাস্থ্য বিষয়ে উদ্বেগে-মোড়া ব্যাকুল চিঠি।

শেষ আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০২৫ ০৬:০৯

‘চিঠির বিদায়’ (২৭-৭) শীর্ষক সম্পাদকীয়টি পড়ে কত স্মৃতি ভিড় করল মনে। বহু দিনের বন্ধ ঘরের জানলা খুলে তার সামনে দাঁড়ালে যে গন্ধ শরীরকে জুড়িয়ে দেয়, ঠিক তেমনই কত ভাললাগার পরশ কিছু সময়ের জন্য অতীতের দিনগুলোতে টেনে নিয়ে গেল। বর্তমান প্রজন্ম প্রযুক্তির দাপটের কাছে হেরে গিয়ে চিঠিকে বিদায় দিতে পেরেছে। কিন্তু আমরা যারা ডিজিটাল যুগের আগের মানুষ, তারা কিছুটা বাধ্য হয়ে, আবার কিছুটা অসহায়তার সঙ্গে এই মুহূর্তকালীন যোগাযোগের আদান-প্রদানে অভ্যস্ত হতে চেষ্টা করে চলেছি— কেউ খানিকটা পেরেও উঠেছি, কেউ বা পযুর্দস্ত হয়ে হাল ছেড়ে অন্যের মুখাপেক্ষী হচ্ছি।

‘চিঠি’-কে আমরা ভালবাসতাম। তা নানা রকমের হত— শুভকামনার চিঠি, বাবা-মায়ের স্নেহভরা এবং সন্তানের স্বাস্থ্য বিষয়ে উদ্বেগে-মোড়া ব্যাকুল চিঠি। শুভ-নববর্ষ বা বিজয়ার প্রীতি-শুভেচ্ছা-প্রণাম জানিয়ে দু’কলম লিখে পাঠানো ছিল একটা অবশ্যকর্তব্য। আর ছিল, প্রিয় বন্ধুর ভালবাসা মাখা লম্বা চিঠি এবং খামের ভিতর উষ্ণ প্রেমের চিঠি। প্রতিটি চিঠি আলাদা বার্তা বয়ে আনত ও তার রেশ মনকে কয়েক দিন সজীব করে রাখত। তাই বলা যায় ‘চিঠি’-র মধ্যে ছিল হৃদয়ের বাস।

‘চিঠি’-কে সাহিত্যের একটি অংশ বলা হত। খুব সুন্দর হস্তাক্ষরে-ভাষার মাধুর্য মেশানো চিঠি কারও কাছ থেকে পেলে তা বার বার পড়ার লোভ সামলানো যেত না। আবার লেখার ভাবপ্রকাশের মধ্য দিয়ে একটা মানুষকে চেনা যেত, বোঝা যেত তার রুচি বা অন্তরের গভীরতা। এখন শুনি সবার বড় সময়াভাব। আসলে মুঠোফোন-নামক যন্ত্রটি আমাদের সময়কে নিয়ন্ত্রণ করছে যে! না হলে দশ-পনেরো দিনের মধ্যে কিছু ক্ষণ সময় একটা চিঠির জন্য আমরা রাখতে পারি না, এ আমাদের দুর্ভাগ্য।

মৌসুমী ঘোষ ভট্টাচার্য, পান্ডাপাড়া, জলপাইগুড়ি

অন্ধকার-শিক্ষা

সম্পাদকীয় ‘ন্যায্যতার ক্ষতি’ (২৩-৮) শীর্ষক প্রবন্ধটিতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উপস্থাপিত হয়েছে। প্রথমত, রাজ্য সরকার এসএসসি-র দুর্নীতিকে নিজেদের ঘাড়ে যেমন নেয়নি, তেমনই তাকে ‘স্বশাসিত সংস্থা’ বলে উল্লেখ করে গোটা কাণ্ডটিকে ‘একটি ভুল’ হিসাবে লোকসমক্ষে বর্ণনা করেছে। একই সঙ্গে সরকার ও শাসক দল নিজেদের মানবিক দেখাতে সমস্ত চাকরিহারার চাকরি ফিরিয়ে দিতে আদালতে লড়াই করেছে। সেখানে সৎ ভাবে চাকরি পাওয়া ব্যক্তিরা যেমন আছেন, তেমনই অসৎ ভাবে চাকরি পাওয়ারাও আছেন। বোঝাই গিয়েছিল শাসক দল তথা এসএসসি এই সৎ ও অসৎদের পৃথক তালিকা কোনও অজুহাতেই প্রকাশ করবে না। কারণ, কোনও শাসকই বিরোধীদের সুযোগ করে দেয় না। অথচ, এই বেনিয়মের পরিপ্রেক্ষিতেও শাসক দলের অবস্থান আরও মজবুত হয়েছে একের পর এক নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে।

দ্বিতীয়ত, যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় রাজ্য প্রশাসনের উপর কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ সব সময় ন্যায্য না হলেও এক সময়ে কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন সিবিআই এবং ইডির হাতে প্রাথমিক থেকে শুরু করে এগারো-বারো শ্রেণির শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী নিয়োগ নিয়ে এসএসসি-সহ বিভিন্ন শিক্ষা দফতরের দুর্নীতির তদন্তের ভার তুলে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বহু বছর পরও কয়েক জন পদাধিকারী ব্যক্তিকে জেলে ঢুকিয়েও তাঁদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত চার্জশিট দিতে না পারায় আদালত তাঁদের জামিন দিতে বাধ্য হয়। সাধারণ মানুষের কাছে ওই কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলির কার্যকারিতার প্রতি সন্দেহের পাশাপাশি এটিও জনমনে প্রভাব বিস্তার করে যে, বর্তমান বঙ্গের শাসক দলের প্রতি আনুগত্য দেখালে দুর্নীতি করেও রেহাই পাওয়া যায়।

তৃতীয়ত, যে ‘স্বশাসিত’ প্রতিষ্ঠানটির অপদার্থতার জন্য দেশের সর্বোচ্চ ন্যায়ালয়ের নির্দেশে প্রায় ছাব্বিশ হাজার শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর চাকরি বাতিল হল, যার মধ্যে সৎ ভাবে চাকরি পাওয়া ব্যক্তিরাও আছেন, সেই সংস্থাকেই নতুন ভাবে চাকরির পরীক্ষা নেওয়ার ক্ষেত্রে বাধা না দিয়ে, আসল অপরাধীদের কিছুটা হলেও ছাড় দেওয়া হচ্ছে না কি? এসএসসি যে পুনরায় ‘ভুল’ করবে না, সে বিষয়ে চাকরিহারারা কি নিঃসন্দেহ হতে পেরেছেন?

তাপস মুখোপাধ্যায়, কলকাতা-৫৪

বাতানুকূল-যাত্রা

শহরতলির লোকাল ট্রেনের যাত্রীদের নিত্যযাত্রাকে আরামদায়ক করার উদ্দেশ্যে, শিয়ালদহ উত্তর ও মূল শাখায় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত লোকাল ট্রেন চালু হয়েছে। যার দ্বিতীয় পর্যায়ে শিয়ালদহ থেকে রানাঘাট হয়ে বনগাঁ এবং সেখান থেকে শিয়ালদহ পর্যন্ত একটি এসি লোকাল দেওয়া হয়েছে। বনগাঁ থেকে শিয়ালদহ পর্যন্ত দৈনিক এবং মাসিক টিকিটের ভাড়া সাধারণ লোকাল ট্রেনের ভাড়ার তুলনায় সাত থেকে নয় গুণ পর্যন্ত বেশি। এবং সকাল ও বিকেলের একটি নির্দিষ্ট সময়ে একটিমাত্র ট্রেন বরাদ্দ আছে। ফলে বনগাঁ সেকশনের নিত্যযাত্রীদের নিত্যযাত্রা কতটা আরামদায়ক এবং সাশ্রয়ী হল— সে প্রশ্ন থেকেই যায়। মাঝেমধ্যে যাতায়াত করেন এমন যাত্রীদের জন্য এসি লোকালের দৈনিক টিকিট বিক্রি হলেও, দৈনিক এবং মাসিক টিকিট কেনার ক্ষেত্রে অধিকাংশ নিত্যযাত্রী আগ্রহী হবেন কি না, সন্দেহ আছে। সকাল ও বিকেলে এই এসি লোকালের সময় সারণির কাছাকাছি কিছু ট্রেনের সময় সারণির আংশিক পরিবর্তন করা হয়েছে। যদিও এর ফলে সেই ট্রেনগুলো প্রায় প্রতি দিনই লেট লতিফ হয়ে গন্তব্যে পৌঁছচ্ছে। এর সমাধানের পথ খোঁজা দূরের কথা, কৃতিত্বের দাবিদারেরা এই খোঁজটুকুও রাখেন বলে মনে হয় না। এ দিকে হাতেগোনা টিকিট পরীক্ষক এবং রেলসুরক্ষা কর্মী দিয়ে বারো কামরার একটি লোকাল ট্রেনে অবৈধ যাত্রীদের চিহ্নিত করার কাজটি যথেষ্ট কঠিন। সে ক্ষেত্রে বৈধ যাত্রীদের বঞ্চিত হওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করার উপায় থাকে না। এ ছাড়া, বারো মাসে তেরো পার্বণের মতো কলকাতায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সমাবেশ সংঘটিত হয়। সে সময় এসি লোকালের কামরায় রাজনৈতিক দলের কর্মী-সমর্থকদের টিকিটবিহীন বলপূর্বক অবাধ উপস্থিতি যাতে না ঘটে, তার দায়িত্ব কে বা কারা নেবেন কিংবা আদৌ নেবেন কি না, সে প্রশ্নটাও থাকল।

অরিন্দম দাস, হরিপুর, উত্তর ২৪ পরগনা

জবরদখল

‘লন্ডন নাহয় না-ই হল’ (১২-৯) শীর্ষক প্রবন্ধে জহর সরকার হকারদের রাস্তা দখল নিয়ে মন্তব্য করেছেন— যখন দশকের পর দশক বাংলায় কোনও চাকরিই নেই, এটাই নিশ্চয়ই সবচেয়ে ফলপ্রসূ কর্মসংস্থান স্কিম। প্রসঙ্গত, কলকাতার অদূরে নদীর ও-পারে হাওড়া স্টেশন সংলগ্ন বাসস্ট্যান্ড চৌহদ্দির অবস্থা দেখলে কারও মনে হবে কি এটাই পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতার প্রধান প্রবেশপথ? ভারতের আর কোনও রাজ্যে এমন গুরুত্বপূর্ণ রেলস্টেশন সংলগ্ন বাসস্ট্যান্ডে এত নোংরা আছে কি? হাওড়া জেলার বালির দিক থেকে বিবেকানন্দ সেতু পার হলেই দক্ষিণেশ্বরে রাস্তার বাঁ-দিক ত্রিশ-চল্লিশ বছর আগেও জঙ্গলে ঢাকা ছিল, বিভিন্ন ঋতুতে নাম-না-জানা ফুলের উপর মৌমাছি-প্রজাপতি উড়ে বেড়াত। এখন সেই বুনো ঝোপঝাড় উঠিয়ে বসতি গড়ে উঠেছে, আর রাস্তার অপর পারে রেললাইনের ধার ঘেঁষে ওদের ফেলে দেওয়া উচ্ছিষ্টের দুর্গন্ধে যানজটে আটকে পড়া মানুষদের প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়ে ওঠে। অথচ, অহরহ কত না ভিআইপি যাচ্ছেন এই পথ ধরে! প্রশ্ন হল, বিড়ালের গলায় ঘণ্টাটি বাঁধবে কে?

এখন সময় এসেছে, জবরদখলকারীদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে তাঁদের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেওয়া। নয়তো পঞ্চাশ বছর পরে এই রাজ্যের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাঘাট, ফুটপাত জবরদখলকারীতে ভরে যাবে। শহর আরও অপরিচ্ছন্ন হবে।

প্রসন্নকুমার কোলে, শ্রীরামপুর, হুগলি

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Letters Literature Communication

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy