Advertisement
E-Paper

সম্পাদক সমীপেষু: বিচ্ছিন্নতার বেদনা

ব্যথিত হলেন রবীন্দ্রনাথ। ‘লোকহিত’ প্রবন্ধে স্বদেশি আন্দোলনে হিন্দু-মুসলমান বিরোধের মূল কারণ চিহ্নিত করলেন— “বঙ্গ বিচ্ছেদ ব্যাপারটা আমাদের অন্নবস্ত্রে হাত দেয় নাই।

শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০২০ ০০:৫৮
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

শর্মিষ্ঠা দত্তগুপ্তের ‘রবীন্দ্রতীর্থে পরিব্রাজক’ (৯-৮) পড়লে আবারও মনে পড়ে, কত ব্যতিক্রমী ছিল রবীন্দ্রনাথের দেশপ্রেম। স্বদেশি আন্দোলনে এক হয়েছিল বাঙালি। কিন্তু ক্রমশ তা হিন্দুর ধর্মীয় আন্দোলনে পরিণত হল। বিপ্লবীদের বীরাষ্টমী ব্রতপালন, কালীমন্দিরের সামনে গীতা হাতে শপথ গ্রহণ, বঙ্গভঙ্গের দিন গঙ্গাস্নান ইত্যাদি অনুষ্ঠানে সঙ্গত কারণেই মুসলমানরা অংশগ্রহণ করতে পারেননি। যে আন্দোলন স্বাধীনতা সংগ্রামের শক্ত ভিত হতে পারত, তা আঞ্চলিক আন্দোলনে পরিণত হল।

ব্যথিত হলেন রবীন্দ্রনাথ। ‘লোকহিত’ প্রবন্ধে স্বদেশি আন্দোলনে হিন্দু-মুসলমান বিরোধের মূল কারণ চিহ্নিত করলেন— “বঙ্গ বিচ্ছেদ ব্যাপারটা আমাদের অন্নবস্ত্রে হাত দেয় নাই। আমাদের হৃদয়ে আঘাত করিয়াছিল। সেই হৃদয়টা যতদূর পর্যন্ত অখণ্ড, ততদূর পর্যন্ত তার বেদনা অপরিচ্ছিন্ন ছিল। বাংলার মুসলমান যে এই বেদনায় আমাদের সাথে এক হয় নাই তাহার কারণ তাহাদের সঙ্গে আমরা কোনদিন হৃদয়কে এক হতে দিই নাই।’’

প্রখর ছিল তাঁর দূরদৃষ্টি। হিন্দু-মুসলমান বিচ্ছিন্নতা ভয়ঙ্কর বিভেদে পরিণত হল। গ্রেট ক্যালকাটা কিলিং, পঞ্জাব দাঙ্গায় পাঁচ লক্ষ নিরীহ ভারতবাসীর বলিদান, এবং শেষ পর্যন্ত দেশভাগের নরক যন্ত্রণার সাক্ষী হলাম আমরা। তারই বিষে জারিত হচ্ছে গোটা উপমহাদেশ, আজও।

তৈয়েব মণ্ডল

হরিপাল, হুগলি

বিপজ্জনক

বাংলায় কিছু মনীষী-মুখ খুঁজে বার করার তাড়নায় রবীন্দ্রনাথের শরণাপন্ন হওয়াটা বিজেপির ক্ষেত্রে আত্মঘাতী হয়ে যাবে। বিজেপি মানুষের মধ্যে ধর্মীয় বিভাজনকে উৎসাহিত করে। বিপরীতে, রবীন্দ্রনাথ অসাম্প্রদায়িক ছিলেন, তিনি মানুষের মধ্যে ধর্মীয় বিভাজনজাত সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজেছেন। জমিদারি দেখাশোনার সূত্রে রবীন্দ্রনাথ মুসলমান প্রজাদের সঙ্গে মিশেছিলেন। ‘হিন্দু-মুসলমান’ প্রবন্ধে লিখেছেন, ‘‘আমার অধিকাংশ প্রজাই মুসলমান। কুরবানি নিয়ে দেশে যখন একটা উত্তেজনা প্রবল তখন হিন্দু যারা আমাদের এলাকায় সেটা সম্পূর্ণ রহিত করার জন্য আমার কাছে নালিশ করেছিল। সে নালিশ আমি সংগত মনে করিনি, কিন্তু মুসলমান প্রজাদের ডেকে যখন বলে দিলুম কাজটা যেন এমনভাবে সম্পন্ন করা হয় যাতে হিন্দুদের মনে অকারণে আঘাত না লাগে, তারা তখনই তা মেনে নিল। আমাদের সেখানে এ পর্যন্ত কোনো উপদ্রব ঘটেনি।’’

১৩৩২ সনে বিশ্বভারতীতে কবির এক বক্তৃতায় পাচ্ছি, ‘‘যে অন্ধকারে ভারতবর্ষে আমরা পরস্পরকে ভালো দেখতে পাইনে সেইটাই আমাদের সকলের চেয়ে দুর্বলতার কারণ।... ভারতবর্ষের সেই রাত্রি চিরন্তন হয়ে রয়েছে। মুসলমান বলতে কী বোঝায় তা সম্পূর্ণ করে আপনার করে অর্থাৎ রামমোহন রায় যেমন করে জানতেন, তা খুব অল্প হিন্দুই জানেন। হিন্দু বলতে কী বোঝায় তাও বড়ো করে আপনার করে, দারাশিকো একদিন যেমন করে বুঝেছিলেন, অল্প মুসলমানই জানেন। অথচ এই রকম গভীর ভাবে জানার ভিতরেই পরস্পরের ভেদ ঘোচে।’’

বিজেপি কি এ রকম করে ভাবে? গোরক্ষার নামে হিন্দুত্ববাদীরা মানুষকে পিটিয়ে মারে। এর তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। দৃঢ় ভাষায় বলেছিলেন, ‘‘নিজে ধর্মের নামে পশু হত্যা করিব অথচ অন্য ধর্মের নামে পশু হত্যা করিলেই নরহত্যার আয়োজন করিতে থাকিব, ইহাকে অত্যাচার ছাড়া আর কোনও নাম দেওয়া যায় না।’’

হিন্দুত্ববাদীরা প্রচার করে হিন্দুরা বিপন্ন, বাংলাদেশে, পাকিস্তানে হিন্দুরা মার খাচ্ছে। তাই ভারতের মুসলমানদের মারো, তাড়াও। এই আচরণ কি রবীন্দ্রনাথের অনুসারী? কবি জসিমউদ্দিনকে রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, ‘‘কেন যে মানুষ একের অপরাধের জন্য অপরকে মারে। ও দেশের মুসলমানেরা হিন্দুদের মারল। তাই এ দেশের হিন্দুরা এখানকার মুসলমানদের মেরে তার প্রতিবাদ করবে, এই বর্বর মনোবৃত্তির হাত থেকে দেশ কীভাবে উদ্ধার পাবে, বলতে পার?’’ রবীন্দ্রনাথ সহৃদয় সমাজ গঠনের স্বপ্নদ্রষ্টা। আন্তরিক বেদনায় রবীন্দ্রনাথ ‘হিন্দু-মুসলমান’ প্রবন্ধে বলেন, “...আমরা মুসলমানকে কাছে টানতে যদি না পেরে থাকি তবে সে জন্যে যেন লজ্জা স্বীকার করি।’’

এই রবীন্দ্রনাথ কি বিজেপিকে বিপদে ফেলতে যথেষ্ট নয়?

সুব্রত দাস

কলকাতা-৭৭

কেবল হিন্দি?

‘ভাষা হয়ে ওঠে ক্ষমতার হাতিয়ার’(১০-৮) নিবন্ধে আবাহন দত্ত লিখেছেন, গাঁধী-নেহরু-পটেলের রাজ্য পুনর্গঠন ভাবনা ভারতের বহুভাষী, বহু সংস্কৃতির ছন্দে বয়েছিল। কিন্তু ইতিহাস তার সাক্ষ্য দেয় না। ১৯৩৭ সালে তামিলনাড়ুর বিদ্যালয়গুলিতে কংগ্রেস সরকার বাধ্যতামূলক হিন্দি চাপায় এবং পরিকল্পনা ছিল সংবিধান গৃহীত হওয়ার ১৫ বছর পর থেকে শুধু হিন্দিই হবে ভারতের সরকারি ভাষা। স্বাধীনতার পরে ধর কমিশন ও নেহরু-পটেল-সিতারামাইয়া কমিটি ভাষার ভিত্তিতে রাজ্য পুনর্গঠন প্রত্যাখ্যান করে। তেলুগুভাষীদের জন্য অন্ধ্র রাজ্যের দাবিতে পট্টি শ্রীরামামুলু অনশনে মৃত্যুবরণ করলে কেন্দ্রীয় সরকার ওই দাবি মেনে নেয়। হিন্দিবাদীদের যুক্তি— বাংলায় মুসলিম ও ইংরেজ শাসনের সময়ে বাঙালি যথাক্রমে আরবি-ফার্সি ও ইংরেজিতে সরকারি কাজ করেছে। তবে এখন হিন্দিতে সরকারি কাজ করতে সমস্যা কোথায়?

প্রত্যুত্তরে বলা যায়, বাংলার অনেক সুলতান বাংলাভাষার উন্নয়নে সচেষ্ট ছিলেন। সুলতানের পৃষ্ঠপোষকতায় শ্রীকর নন্দী মহাভারত-এর অশ্বমেধ পর্বের বঙ্গানুবাদ করেন, মালাধর বসু শ্রীকৃষ্ণবিজয় কাব্য রচনা করেন। সাম্রাজ্যবাদী ডালহৌসিও ভারতে মাতৃভাষায় শিক্ষার প্রচলন করেন। উইলিয়াম কেরির প্রচেষ্টায় কৃত্তিবাসী রামায়ণ শ্রীরামপুর মিশনারি প্রেস থেকে মুদ্রিত হয়। কিন্তু স্বাধীন ভারতে ব্যাঙ্ক-ডাকঘরের ফর্মের ভাষা হিন্দি বা ইংরেজি। পশ্চিমবঙ্গে সাঁওতালি মাধ্যমে উচ্চ মাধ্যমিক দেওয়া যায়। এই রাজ্যের পার্বত্য এলাকার দফতরের ভাষা নেপালি। ইংরেজিও এখানে সরকারি ভাষা। কিন্তু বিজেপি আমলে তৈরি জনজাতি অধ্যুষিত ঝাড়খণ্ডের সরকারি ভাষা হিন্দি।

সনাতন পাঠক

ব্যারাকপুর, উত্তর ২৪ পরগনা

গর্ব হয়

আবাহন দত্ত যথার্থই বলেছেন, ‘‘ভারত এক অনুপম দেশ, যার জাতীয় প্রতীক কোনও ভাষা নয়, বহুভাষিকতা।’’ নিজ মাতৃভাষার প্রতি দুর্বলতা স্বাভাবিক। কিন্তু অন্য প্রাদেশিক ভাষাকেও শ্রদ্ধা করতে হবে। বাঙালিরা যেমন হিন্দিভাষীদের সঙ্গে হিন্দিতেই কথা বলার চেষ্টা করেন। তাঁদের বলতে শুনি না, ‘‘এত কাল বাংলায় থেকে বাংলায় কথা বলেন না কেন?’’ আমাদের গণতন্ত্র এ ভাবেই প্রসারিত হোক।

বিবেকানন্দ চৌধুরী

কাটোয়া, বর্ধমান

মতবিরোধ হয়নি

‘বিজেপির বৈঠকে দ্বন্দ্ব, সাংসদের নিশানায় দিলীপ’ (পৃ ৫, ২৯-৭) শীর্ষক সংবাদটি অসত্য। বিজেপির যে বৈঠকের কথা বলা হয়েছে, সেই বৈঠকে কোনও মতবিরোধ হয়নি। আমিও দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বা অন্য কোনও নেতার বিরুদ্ধে কিছু বলিনি। আমাকে এবং আমার দল বিজেপিকে অসম্মান করার উদ্দেশ্যে ওই সংবাদ পরিবেশিত হয়েছে বলে মনে করছি।

অর্জুন সিংহ

বিজেপি সাংসদ, ব্যারাকপুর লোকসভা

প্রতিবেদকের উত্তর: প্রকাশিত খবরটি পড়লেই দেখা যাবে সেখানে অর্জুনবাবুর বক্তব্য রয়েছে। তেমন কোনও ঘটনা সে দিন ঘটেনি, ওই দাবি তাঁর মুখেই লেখা হয়েছে। ফলে বিজেপি সূত্রে পাওয়া খবর এবং অর্জুনবাবুর প্রতিবাদ দু’টিই ওই প্রতিবেদনে লেখা হয়েছিল।

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

Letters To the Editor
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy