—ফাইল চিত্র।
‘দূষণের মহাপার্বণ’ (১২-১১) প্রবন্ধে পরিবেশদূষণ দূর করতে প্রবল সামাজিক অনীহার আড়ালে সামগ্রিক সমাজবিমুখতার চিত্র পাঠকদের কাছে তুলে ধরেছেন অমিতাভ গুপ্ত। প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা সাধারণ ভাবে যে কোনও সামাজিক কুঅভ্যাস বদলের জন্য এই অজুহাত দেন যে, সাধারণ মানুষেরা যদি সচেতন হয়ে সহযোগিতা না করেন, তা হলে কোনও প্রশাসনের দ্বারাই এই সামাজিক ব্যাধির মূল উপড়ানো সম্ভব নয়। সিঙ্গাপুরে দেখেছি, রাস্তায় ময়লা কেউ ফেলেন না। ফেললেই জরিমানা। লন্ডন শহরে গতি-ভিত্তিক সড়ক আছে, ধীর গতির সড়কে ঢুকে গতি বাড়ালেই উচ্চ অঙ্কের জরিমানা নিশ্চিত। আইন আছে, সেই আইন ভাঙলে মোটা অঙ্কের জরিমানার ভয় আছে। প্রবন্ধকার বলেছেন যে, এ দেশে আইন বানালে সেই আইনের ফাঁক বার করার কৌশল মানুষের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে আছে। তাই ওই রাস্তায় হেঁটে কাজ হাসিল হবে না।
তিনি বিকল্প ব্যবস্থা করার কথা বলেছেন, অর্থাৎ এমন অবস্থা সৃষ্টির পক্ষে সওয়াল করেছেন, যাতে সদর্থক সামাজিক অভ্যাস ক্ষতিকর অভ্যাসের চেয়ে অধিক লাভজনক হয়ে ওঠে। যেমন— গণপরিবহণ ব্যবস্থার উন্নতি ও সাইকেল চালানোর মতো রাস্তা তৈরি করা, যাতে গাড়ির ব্যবহার উল্লেখযোগ্য ভাবে কমানো যায়। ইউরোপের বেশ কিছু দেশে এই নীতি খুব কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। বাজির দূষণ কমানোর জন্য এই বিকল্প ব্যবস্থা করার উপায় নির্ধারণ তিনি পাঠককুলের কাছেই ঠেলে দিয়েছেন।
তবে প্রবন্ধকার প্রশাসনের চরিত্র-বিশ্লেষণ করেননি, বরং প্রশাসনকে সমাজ-উন্নতির একমাত্রিক যন্ত্র হিসাবেই চিহ্নিত করেছেন। যেখানে প্রশাসনের কর্তারাই কু-অভ্যাস তৈরি করতে উৎসাহ দেন, বা কু-অভ্যাসের ফলে লাভবান হন, সেখানে কু-অভ্যাস দূরীকরণের প্রশাসনিক উদ্যোগের উপর সাধারণ মানুষের ভরসা রাখা কতটা যুক্তিসঙ্গত? কলকাতার দুর্গাপুজোর উদাহরণই ধরা যাক। বড় বড় রাজপথ দীর্ঘ দিন বন্ধ রেখে জাঁকজমকপূর্ণ পুজো কোন প্রশাসন বন্ধ করবে? প্রশাসনে আসীন ব্যক্তিরাই যখন এই ধরনের পুজো ব্যবস্থাপনার মূল কান্ডারি হিসাবে নিয়োজিত থাকেন, তখন তার বিকল্প পথের অনুসন্ধান কে করবে? গরিব মানুষের উপকার করার জন্য রাজনীতি-করা নীতি নির্ধারকরা দেশে গরিবি দূরীকরণের কোন নীতি গ্রহণ করার জন্য সচেষ্ট হবেন? দেশে ধর্মীয় বিভাজন বজায় রেখে ক্ষমতা ভোগ করা যাঁদের একমাত্র উদ্দেশ্য, তাঁরা কোন লাভের আশায় সর্বসাধারণের মধ্যে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে শান্তির ললিত বাণী প্রচারে উৎসাহী হবেন? দূষণ দূরীকরণের এই আলোচনায় এই জাতীয় বিরুদ্ধ শক্তির কোনও উল্লেখ পেলাম না।
যে সর্ষের মধ্যে ভূত আছে, সেই সর্ষে দিয়ে যে ভূত তাড়ানো যায় না, সেটা কি প্রবন্ধকার ভুলে গেলেন?
তড়িৎ দাস, কলকাতা-৬
রোজ অষ্টমী
‘কেন এত আলোর দূষণ’ (১৭-১১) শীর্ষক প্রবন্ধে আকাশ বিশ্বাস ঠিকই বলেছেন, আলোর দূষণকে ঘিরে তেমন মাথাব্যথা দেখা যায় না। দুর্গাপুজোর প্রায় সাত দিন আগে থেকে এই কলকাতা আলোর বন্যায় যে ভাবে ভেসে যায়, তা কতখানি দূষণ তৈরি করছে, সেটা ভেবে দেখার সময় এসেছে। কালীপুজোয় আলোর রোশনাইও চোখধাঁধানো। পথের আলোকসজ্জা খোলা হয় না। এই প্রবল আলোকবর্ষণ কি পাখিদের নিদ্রায় বিঘ্ন ঘটাচ্ছে না? এই জোরালো নিয়ন আলো আমাদের চোখের এবং স্নায়ুর উপর যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলছে, তার প্রতিকারের পথ কে বলে দেবে?
দিলীপ কুমার সেনগুপ্ত, বিরাটি, উত্তর ২৪ পরগনা
অনেক বুধনি
‘উপেক্ষার স্মৃতি নিয়েই প্রয়াত পাঞ্চেতের বুধনি’ (১৯-১১) সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে এই চিঠি। সাংসদ আনন্দগোপাল মুখোপাধ্যায়ের উদ্যোগে প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর হস্তক্ষেপে বুধনির খোঁজ পড়ে, এবং তাঁকে ডিভিসিতে চাকরি দেওয়া হয়। তার পর এই কাহিনি বার বার সংবাদমাধ্যমে এসেছে। আমরা যখন দেখি সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় বিশাল মন্দির তৈরি হতে, সেখানে লক্ষ লক্ষ প্রদীপ জ্বালিয়ে দীপাবলি হচ্ছে, এবং ঠিক তার পাশেই দরিদ্র শিশুরা প্রদীপে অবশিষ্ট পোড়া তেল সংগ্রহ করছে সংসারে সাশ্রয়ের জন্যে, তখন বুধনির প্রসঙ্গ ফিরে আসে। মনে পড়ে যায় পাঞ্চেত জলাধার উদ্বোধনের পর এই সব বড় প্রকল্প সম্পর্কে জওহরলাল নেহরুর বিখ্যাত উক্তি, এগুলি নতুন ভারতের মন্দির (টেম্পল অব মডার্ন ইন্ডিয়া)। তার পর কী ভয়ানক পরিস্থিতিতে দিন কাটিয়েছিলেন বুধনি, আমরা দেখেছি। যখনই আমরা শাসকের আত্মসর্বস্বতা দেখব, তখনই মনে পড়ে যাবে বুধনি মেঝানের কথা।
ত্রিদিবেশ বন্দ্যোপাধ্যায়, শ্রীরামপুর, হুগলি
বিস্মৃতির পারে
প্রায় সাড়ে ছ’দশক আগে খড়বনার সাঁওতাল পল্লির মেয়ে ‘পণ্ডিত নেহরুর বৌ’ অপবাদে সমাজে উপেক্ষিত হয়েছিলেন। বেশ কিছু দিন তিনি কার্যত বিস্মরণের অন্তরালে চলে গিয়েছিলেন। ১৯৮৭ সালে আনন্দবাজার পত্রিকা-র একটি প্রতিবেদন, “নেহরু মালা পরানোর পর ছত্রিশ বছর একঘরে” প্রকাশিত হয়। বুধনির বয়স তখন পঞ্চাশের একটু বেশি। জানা যায়, তারও আট-ন’বছর আগে একটি সংবাদ প্রতিবেদন পড়ে বুধনির কঠিন যন্ত্রণাময় জীবনের কথা জানতে পারেন পুরুলিয়ার তৎকালীন সিপিএম সাংসদ, সদ্যপ্রয়াত বাসুদেব আচারিয়া। তিনি যোগাযোগ করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর সঙ্গে। আশির দশকে প্রধানমন্ত্রী ডিভিসিতে বুধনির চাকরির ব্যবস্থা করেন। সাঁওতাল সমাজ থেকে সমাজচ্যুত হয়েই লড়াই করে সম্মানের সঙ্গে চলে গেলেন বুধনি।
সুব্রত পাল, শালবনি, বাঁকুড়া
কার পুরস্কার?
“‘না’ বলবেন কবে?” (১৬-১১) খুবই প্রাসঙ্গিক। রাজনৈতিক বা ব্যক্তিগত স্বার্থ যাতে সরকারকে বিপথগামী করতে না পারে, সেটা নিশ্চিত করা অফিসারদের কাজ। দেবাশিস ভট্টাচার্য উদাহরণ দিয়েছেন, বাম জমানায় এক মুখ্যসচিব জ্যোতি বসুর মুখের উপর বলেছিলেন, তিনি অপরাধ দেখে গ্রেফতার করেছেন, দল দেখে নয়। প্রশ্ন হল, জ্যোতি বসু সেটা মেনে নিয়েছিলেন, না কি ওই আধিকারিককে তিরস্কৃত করেছিলেন? সেই সময়কালে এক আইএএস অফিসারের সঙ্গে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী অশোক মিত্রের মতবিরোধের কথা জানা যায়। পরবর্তী কালে সেই আমলা দিল্লি চলে যান। প্রবন্ধকার বলেননি, এখন সরকার তথা মন্ত্রিসভা কি সত্যিই ভাবমূর্তির বদল চাইছে? না কি তাদের ভুল কাজকর্মকে বৈধতা দেওয়া, বা তাদের হয়ে সাফাই গাওয়ার জন্য আধিকারিকরা সচেষ্ট হন, এটা চাইছে? দ্বিতীয়ের দিকে পাল্লা ভারী মনে হয়। নয়তো যে মুখ্যসচিবদের আমলে সরকারের ভাবমূর্তি খারাপ হয়েছে, তাঁদের কারও মেয়াদ বৃদ্ধি করে, বা ঘুরপথে সরকারের সঙ্গে জড়িয়ে রাখা হত না। এই বার্তাগুলো নীচের তলায় কী ভাবে পৌঁছেছে, এ বারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে ব্লক আধিকারিকদের প্রতি আদালতের ভর্ৎসনা দেখে বোঝা যায়।
সুদীপ মাইতি, কাঁথি, পূর্ব মেদিনীপুর
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy