Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু: প্রেম নিয়ে ফতোয়া

স্কুল বা কলেজে সরস্বতী পুজোর কোনও লিখিত অনুমোদন হয় না। এটি সম্পূর্ণ ভাবে ছাত্রছাত্রীদের উদ্যোগ এবং বহু দিনের রীতিমাত্র।

শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৫:২৮
Share: Save:

‘জুটি বেঁধে ঘুরলে কড়া ব্যবস্থা, পোস্টার হুগলিতে’ (১৭-২) দেখে আতঙ্কিত ও হতাশ হলাম। যে কোনও সমাজ সচেতন নাগরিকই এতে আশঙ্কিত হবেন। বর্তমান ভারতের রাজনীতি উগ্র হিন্দুত্ববাদের শিকার। আর বজরং দল (বিশ্ব হিন্দু পরিষদের যুব বাহিনী) হল হিন্দুত্ববাদী রাজনৈতিক দলের আদর্শে চলা একটা অংশ। উত্তরপ্রদেশবাসী ওদের ফতোয়ায় অতিষ্ঠ। বেশ কিছু দিন আগে কৃষ্ণনগরে বজরং দলের পক্ষ থেকে পোস্টার সেঁটে হিন্দুদের নিষেধ করা হয়, যাতে কেউ চার্চে না যায়। এ বার শুরু হল উত্তরপাড়ায়। প্রেমিক প্রেমিকারা গঙ্গার ধারে ঘুরতে যায়, বসে গল্প করে। এতেই বজরং দল চটেছে। রীতিমতো হুমকি দিয়েছে, ঘুরতে আসা যুগলদের।

প্রাপ্তবয়স্ক ছেলেমেয়েরা কী করবে না করবে, তার উপর ফতোয়া জারি ভারতীয় সংবিধান বিরোধী। সংবিধানের ২১ নম্বর ধারায় ভারতীয় নাগরিকদের জীবন ও ব্যক্তিগত স্বাধীনতার কথা স্বীকার করা হয়েছে। এই ধারায় বলা হয়েছে, আইনসঙ্গত পদ্ধতি ছাড়া কোনও ব্যক্তিকে তার জীবন ও ব্যক্তিগত স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। প্রাপ্তবয়স্ক ছেলেমেয়ে এক সঙ্গে চলাফেরা করবে, কথা বলবে। তাতে কারও আপত্তি তোলা বা হুমকি দেওয়া উচিত নয়। এখন থেকেই যদি এই ফতোয়াধারীদের বাড়বাড়ন্ত আটকানো না যায়, তা হলে এরা উত্তরপ্রদেশের মতোই বাংলাতেও ভয়ঙ্কর রূপ নেবে। রাজ্য সরকার এদের বিরুদ্ধে কঠোরতম ব্যবস্থা করবে, এই
আশা রাখি।

প্রতাপ চন্দ্র দাস

নবদ্বীপ, নদিয়া

অর্বাচীন

‘জুটি বেঁধে ঘুরলে কড়া ব্যবস্থা, পোস্টার হুগলিতে’ প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে এই চিঠি। বজরং দল, রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ, বিশ্ব হিন্দু পরিষদের মতো সংগঠনগুলি উনিশ শতকের ভাবনা এই একুশ শতকেও লালন করে চলে। চূড়ান্ত রক্ষণশীলতার নীতি নিয়ে সমাজের ‘গুরুঠাকুর’ হয়ে বসতে চায়। এরা ধর্মের নামে পুণ্যব্রত পালনের লক্ষ্যে দেশের প্রাচীন প্রথাগুলিকে ফিরিয়ে আনতেও দ্বিধা করে না। এদের ধ্বজাধারী দল বিজেপিও বঙ্গে ক্ষমতার স্বাদ পাওয়ার পূর্বেই সমাজ সংস্কারকের ভূমিকা নিতে চাইছে। তবে বঙ্গসংস্কৃতি সচেতন ও রুচিশীল, এখানে এমন সব অর্বাচীনের দল চিরকালই প্রত্যাখ্যাত হয়ে এসেছে।

সঞ্জয় রায়

দানেশ শেখ লেন, হাওড়া

চিন্তার মুক্তি

বিতান সানার ‘পুজো নয়, পিকনিক’ (১৭-২) চিঠিটির উত্তরে কিছু কথা। স্কুল বা কলেজে সরস্বতী পুজোর কোনও লিখিত অনুমোদন হয় না। এটি সম্পূর্ণ ভাবে ছাত্রছাত্রীদের উদ্যোগ এবং বহু দিনের রীতিমাত্র। স্কুলের শিক্ষকরা উপস্থিত থাকলেও কলেজে সাধারণত কোনও শিক্ষক-শিক্ষিকা উপস্থিত থাকেন না। দিনটিকে ছুটির দিন বলেই ধরা হয়। বলা যেতে পারে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অলিখিত ভাবেই সরস্বতী পুজোর আয়োজন করা হয়, যার আয়োজক ছাত্রছাত্রীরা। মুসলিমদের বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানের দিনগুলিতে হিন্দুরাও ছুটি উপভোগ করেন। আমাদের রাজ্যে হিন্দুদের কোনও আচার-অনুষ্ঠানে মুসলিমদের অংশগ্রহণে বাধানিষেধ নেই। এই বছরই বারাসত কালীকৃষ্ণ স্কুলে সরস্বতী পুজোর ভার নিয়েছিল স্কুলেরই এক জন মুসলিম ছাত্রী। এটি একটি দৃষ্টান্ত। এতে কোনও রাজনৈতিক দলের অনুপ্রেরণা নেই। এই পরম্পরা আমাদের রাজ্যে বহু যুগ ধরে চলে আসছে।

বিজ্ঞানমনস্ক মানুষমাত্রেই বিধর্মী হবেন, এই যুক্তিও অবান্তর। পৃথিবীর তাবড় বৈজ্ঞানিকরাও কোনও না কোনও ধর্মাবলম্বী, আর তাঁর ধর্ম তাঁর নিজের মতো করে পালন করা ব্যক্তি স্বাধীনতা এবং মৌলিক অধিকারের মধ্যে পড়ে। স্বামী বিবেকানন্দের মতো মনীষীরও বিজ্ঞানমনস্ক, যুক্তিবাদী মানসিকতা ছিল। তবে তাঁর ধর্মকে তিনি কখনও ছোট করে দেখেননি। উদার এবং মুক্তচিন্তা হিন্দুধর্মের উৎকর্ষ প্রমাণ করে, গোঁড়ামি নয়। ২৬ জানুয়ারি, ১৫ অগস্ট আমাদের রাজ্যে এখন জাতীয় পিকনিকের দিনে পরিণত হয়েছে। সরস্বতী পুজোর দিনটিকে অন্তর্ভুক্ত না করলেই নয়?

পিনাকী রুদ্র

কলকাতা-১২৪

রক্ষণশীল চিন্তা

বিতান সানার চিঠি পড়ে বিস্মিত হলাম। স্কুল-কলেজে বা শিক্ষাকেন্দ্রে সরস্বতী পুজো ধর্মনিরপেক্ষতার পরিপন্থী ভাবা গোঁড়ামির নামান্তর। ওই দিনই পড়লাম বাংলায় মহাভারতের লেখক কাশীরাম দাসের স্মরণোৎসব কমিটি ও তাঁর স্মৃতিকে রক্ষা করছেন মুসলিম সম্প্রদায়ের উদারমনস্ক মানুষেরা (‘কাশীরামের স্মৃতি আগলান হাবিবরা’, ১৭-২)। রামপুরহাটের শিক্ষক শিক্ষণকেন্দ্রে বাগ্‌দেবীর দায়িত্ব নিয়েছেন হাসনাত শেখ ও সিমরান। এ ছাড়াও বহু দুর্গাপুজোর দায়িত্বে থাকেন মুসলিম মানুষজন। কারখানায় বিশ্বকর্মা পুজোতে মুসলিম কর্মীরা সমান অংশ নিয়ে থাকেন।

বদ্রীনাথ দাস

কলকাতা-২৮

নিমন্ত্রণ

বিতান সানা বলেছেন, তাঁর স্কুলজীবনে সরস্বতী পুজোর দিন ইসলাম ধর্মাবলম্বী বন্ধুরা স্কুলে আসতেন না। আমার বহু ইসলাম ধর্মাবলম্বী বন্ধু আছেন, যাঁরা আমাদের বাড়িতে পুজোর নিমন্ত্রণে আসেন। আমিও ইদের নিমন্ত্রণে তাঁদের বাড়ি যাই। বিতানবাবুর প্রশ্ন, ছেলেমেয়েদের বিজ্ঞানমনস্ক না-করে কেন পুজো-অর্চনা, অঞ্জলি দেওয়ার শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে? আমার বক্তব্য, বিজ্ঞানমনস্ক মানে ধর্মাচরণ করব না, তা নয়। সকল ধর্মে যে মূল্যবোধ, নীতিশিক্ষার ভিত্তি লুকিয়ে, তাকে উন্মোচিত করাই প্রকৃত বিজ্ঞানমনস্কতার উদ্দেশ্য।

উদ্ধারণ মণ্ডল

বৈঁচিগ্রাম, হুগলি

চাই শুভবুদ্ধি

‘সাহবাজের কাঁধেই স্কুলের সরস্বতীর ভার’ (১৬-২) শীর্ষক সংবাদে উঠে এল সারস্বত সাধনা ও সম্প্রীতির এক উদার বাঙালিয়ানা। ভোটমুখী এ বঙ্গে ধর্মীয় আবেগে সুড়সুড়ি দেওয়ার যে তৎপরতা প্রতিনিয়ত ক্ষতবিক্ষত করছে সুস্থ চেতনাকে, দেবী আরাধনায় ব্রতী দুই ভিন্ন ধর্মের পড়ুয়ার কর্মযোগ তাকে মুহূর্তে ভুলিয়ে দেয়। বৃহত্তর চেতনার প্রকাশ পায় সাহবাজের কথায়, “নমাজ পড়া, আল্লাকে ডাকার সঙ্গে মা সরস্বতীর পুজোর তো কোনও বিরোধ নেই। সবই এক ঈশ্বরের রূপ।” মনে পড়ল, গত কালীপুজোয় দুর্গাপুর মুক্ত সংশোধনাগারের আবাসিক মহম্মদ নাসিরের আলপনা দেওয়ার চিত্র। সহৃদয় সাহচর্যের চিত্র উঠে এসেছে করোনার সময়েও। দাহকর্মে এগিয়ে এসেছেন মুসলিম ভাইয়েরা, কবরস্থানের জন্য নিঃশর্তে জমি দান করেছেন প্রবীণ হিন্দু ব্যক্তি।

এই সকল ঘটনাক্রমে বাঁধা পড়ে মহামিলনের এক টুকরো ভারতবর্ষ। সংগঠিত ঘৃণা ও অসহিষ্ণুতার বিরুদ্ধে ছাত্রাবস্থাতেই জাগ্রত হোক শুভবুদ্ধি। পথ দেখাক বাংলার শিক্ষাঙ্গন।

সুপ্রতিম প্রামাণিক

আমোদপুর, বীরভূম

স্মৃতি

১৯৭১ সালে আমি দশম শ্রেণির ছাত্র। ক্লাসে আমরা মাত্র চার জন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। সেই সময় আমি ছাত্র সম্পাদক হিসেবে সরস্বতী পুজোর দায়িত্ব নিই। ভাঙাচোরা মাটির রাস্তায় প্রায় ৩০ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে ঘাটাল থেকে পুজোর উপকরণ কিনে এনেছিলাম। বন্ধুরা মিলে দলবেঁধে দেবদারু পাতা গাছ থেকে কেটে এনে, বাড়ি বাড়ি ঘুরে শাড়ি-ধুতি সংগ্রহ করে মণ্ডপ সাজাতাম। এক সঙ্গে এগজ়িবিশনের আয়োজন, খিচুড়ি খাওয়া— সে এক অনির্বচনীয় আনন্দ।

সৈয়দ আনসার উল আলাম

গোপীগঞ্জ বাজার, পশ্চিম মেদিনীপুর

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE