সমস্ত জল্পনায় সিলমোহর দিয়ে উত্তরপ্রদেশ-সহ পাঁচ রাজ্যের ভোটের ফল বেরোনোর কয়েক দিনের ব্যবধানে স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতেই পেট্রল-ডিজ়েল’সহ রান্নার গ্যাস সিলিন্ডারের দাম বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। এক লাফে ৫০ টাকা বেড়ে ১৪.২ কিলোগ্রাম ভর্তুকিহীন রান্নার এলপিজি সিলিন্ডারের দাম এখন দাঁড়িয়েছে ৯৭৬ টাকায়। আর এই দামেই যে এক জন গ্রাহক সিলিন্ডার হাতে পান, তা-ও নয়। অনেক গ্রাহককেই মূল দামের সঙ্গে দিতে হয় অতিরিক্ত ডেলিভারি চার্জ, যা ধরলে এক-একটি সিলিন্ডারের দাম দাঁড়ায় ন্যূনতম হাজার টাকা। পরিসংখ্যান বলছে, গত দেড় বছরে ১৪.২ কিলোগ্রাম এলপিজি সিলিন্ডারের দাম বেড়েছে ৩৫৬ টাকা! আর গত বছরের জানুয়ারি থেকে ধরলে এখনও পর্যন্ত তা বেড়েছে ২৫৫ টাকা! অথচ, ভর্তুকির অঙ্ক কানাকড়িও বাড়েনি। বরং গত বছরে যে ভর্তুকির পরিমাণ ছিল ২৫০ টাকা, তা এখন কমে দাঁড়িয়েছে নামমাত্র ১৯ টাকা ৫৭ পয়সা। অর্থাৎ, চূড়ান্ত উচ্চবিত্ত ও প্রান্তিক মানুষের মধ্যে পার্থক্য হয়ে দাঁড়িয়েছে ওই ১৯.৫৭ টাকা। প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের ইউপিএ সরকারের তুলনায় ২০২২ সালের এনডিএ সরকারের আমলে গ্যাসের দাম বেড়েছে ১১৬ শতাংশ। অথচ, আশ্চর্যজনক ভাবে উল্টো দিকে ওই সময়কালেই বিশ্ববাজারে গ্যাসের দাম কমেছে প্রায় ২৬ শতাংশ।
গ্যাসের বিকল্প হিসেবে কেরোসিন, কয়লার মতো যে সব জ্বালানি রয়েছে, তার দরও একেবারে আকাশছোঁয়া। গত বছর কেন্দ্রীয় সরকার কেরোসিনের উপর থেকে সমস্ত রকম সরকারি ভর্তুকি তুলে নেওয়ায় এই মুহূর্তে রেশন দোকানে কেরোসিন বিক্রি হচ্ছে বাজার মূল্যে। ফলে এক প্রকার উপায়হীন হয়েই যে কোনও বর্ধিত মূল্যে গ্যাস সিলিন্ডার কিনতে বাধ্য হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। বর্তমান করোনা বিধ্বস্ত অর্থনীতি ও বেকারত্বের আবহে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত একটি পরিবারের পক্ষে হাজার টাকা খরচ করে একটা সিলিন্ডার কেনা কি আদৌ সম্ভব! কেন্দ্রীয় সরকারের ঢাকঢোল পিটিয়ে প্রচার করা ‘উজ্জ্বলা’ প্রকল্পের কার্যকারিতাও তো এখন প্রশ্নের মুখে। এই প্রকল্পের অর্ন্তগত পরিবারগুলিকে বিনা পয়সায় গ্যাসের সংযোগ ও প্রথম সিলিন্ডারটি প্রদান করা হয়। কিন্তু সর্বদা ‘উজ্জ্বলা’ প্রকল্পের সাফল্যের জয়গান করা কেন্দ্রীয় সরকার কখনও কি ভেবে দেখেছে, দারিদ্রসীমার নীচে থাকা পরিবারগুলি কী ভাবে পরবর্তী কালে এই বিপুল মূল্যে সিলিন্ডার কিনবে? সিলিন্ডারের মূল্য ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকলে বিনামূল্যে সংযোগ দিয়ে লাভটা কী? বলা বাহুল্য, করোনা ও লকডাউন-পরবর্তী পরিস্থিতিতে এক দিকে আর্থিক মন্দা আর তারই মধ্যে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির করাল গ্রাসে পড়ে নাজেহাল আমজনতা।
সুদীপ সোম, হাবড়া, উত্তর ২৪ পরগনা