Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Book

সম্পাদক সমীপেষু: বই পড়া বাড়ুক

নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি থেকে অবক্ষয়ের শুরু। পাঠকক্ষে বসে গল্প করা, টিফিন খাওয়া, বিশ্রাম নেওয়া, মাঝে মধ্যে দুই-এক দিন আসা, ইত্যাদি দেখে নিজেই নিজেকে ধিক্কার দিতাম।

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০০:২১
Share: Save:

মাধবী মাইতির ‘বাঙালির এই দুর্দশার সূত্র কোথায়’ (১১-১) শীর্ষক নিবন্ধের প্রেক্ষিতে নিজস্ব কিছু অভিজ্ঞতার কথা সংযোজন করি।

কর্মসূত্রে আমি দীর্ঘ দিন একটি বিএড কলেজে গ্রন্থাগারের দায়িত্বে নিযুক্ত ছিলাম। বিগত সত্তর ও আশির দশকে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে গ্রন্থাগারে মজুতকৃত অমূল্য সম্পদ ব্যবহারে ছিল প্রবল আগ্রহ। কিন্তু নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি থেকে অবক্ষয়ের শুরু। পাঠকক্ষে বসে গল্প করা, টিফিন খাওয়া, বিশ্রাম নেওয়া, মাঝে মধ্যে দুই-এক দিন আসা, ইত্যাদি দেখে নিজেই নিজেকে ধিক্কার দিতাম।

সহজে হার না মেনে, নিজের উদ্যোগে একটি নিয়ম চালু করি। প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে কোর্স চলাকালীন ১০ মাস সময়ের মধ্যে লেন্ডি‌ং কার্ডে ৩০টি ও পাঠকক্ষে বসে রেফারেন্স কার্ডে ২৫টি বই, জার্নাল, ম্যাগাজিন ইত্যাদি সংগ্রহ করতে হবে; অন্যথায় সেন্ট-আপের পর ফাইনাল পরীক্ষা পর্যন্ত গ্রন্থাগারের সুবিধা পাওয়া যাবে না। এই নিয়মকে ঘিরে ছাত্রমহলে চাপা ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল। আমরা শুধু বিএড ডিগ্রিটা নিতে এসেছি, এত পড়তে হবে কেন? সে দিন এই ধরনের নেতিবাচক সব কথার কোনও গুরুত্ব দিইনি। যদিও বিষয়টি এখানেই থেমে থাকেনি। শিক্ষক হতে আসা ছাত্র-প্রতিনিধি কলেজ পরিচালন সমিতির সভায় এই নিয়মের বিরোধিতা করে বক্তব্য রেখেছিলেন। কিন্তু সমিতির সম্মাননীয় সদস্যগণ নয়া নিয়মাবলির অনুকূলে প্রয়োজনীয় মতামত ব্যক্ত করে বিষয়টিকে মান্যতা দিয়েছিলেন।

বস্তুত, নয়া নিয়মের ফলে ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতি বৃদ্ধি পায়। অনেক পড়ুয়ার ব্যক্তিগত সংগ্রহ ১৫০ কপি হতেও দেখেছি। পাশাপাশি কতিপয় ছাত্রের দায়সারা ভাবে ন্যূনতম ৫৫ সংখ্যাতে পৌঁছনোর অপচেষ্টা দেখে কষ্ট পেতাম। শিক্ষাঙ্গনে শুধু পরীক্ষার্থী নয়, তৈরি হোক আদর্শ শিক্ষার্থী।

রবীন্দ্রনাথ দে

শিমুরালি, নদিয়া

‘জাতি’ভেদ

‘‘জাতিবিদ্বেষের’ নালিশ ইতিহাসে’’ (২০-২) শীর্ষক প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে, এক শ্রমিক ঘরের সন্তান হিসেবে, আমার অভিজ্ঞতার কথা জানাতে ইচ্ছে করছে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস বিভাগে উচ্চশিক্ষা নিতে যাওয়ার পর বুঝি, পৃথিবী জুড়ে দুটো শ্রেণির মানুষ বাস করে, ধনী আর দরিদ্র। ক্লাসের ফার্স্ট বেঞ্চের দখল নেয় ভাল কলেজ থেকে আসা ধনী ঘরের ছাত্রছাত্রী, আর আমাদের বরাদ্দে পড়ে লাস্ট বেঞ্চ। ফার্স্ট বেঞ্চের ছেলেমেয়েদের খাওয়াদাওয়া, কাপড়, ভাষা, সবই যেন অন্য জগতের। আমাদের মতো ছাত্রেরা ক্রমশ হীনম্মন্যতায় ভুগতে আরম্ভ করে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন একটি বিষয়ে ফার্স্ট বেঞ্চের ছাত্রছাত্রীদের থেকে আমরা পিছিয়ে ছিলাম না, সেটা হল পড়াশোনা। আমি নিজে কলকাতার এন্ট্রান্সে তৃতীয় হয়েছিলাম, কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ছ’মাস পর মাকে বলেছিলাম, কলকাতা আমার মতো ছাত্রদের লেখাপড়ার জন্য নয়। আমাদের না আছে ইংরেজি ভাষাজ্ঞান, না আছে ভূরি ভূরি বই কিনে পড়ার সামর্থ্য।

এরই সঙ্গে, কয়েক জন অতি শিক্ষিত শিক্ষক থাকেন, যাঁরা পদে পদে বোঝাতে চান, এই বিশ্ববিদ্যালয় তোমাদের জন্য তৈরি নয়। তোমরা শুধুমাত্র সংরক্ষণ কোটার জন্যই এখানে আসতে পেরেছ। সব শিক্ষক এমন নন, কিন্তু ছাত্রকে কাস্ট নিয়ে খোঁটা দেওয়ার চল আজও দিব্যি আছে। প্রশ্ন উঠবে, ‘তুমি সংরক্ষণে ভর্তি হবে আর আমি সেই কথা বলতেও পারব না?’ আমি যদি উল্টে বলি, যুগে যুগে জ্ঞানচর্চায় আপনারা অলিখিত এক সংরক্ষণ আরোপ করে রেখেছেন, যার জোরে শিক্ষাব্যবস্থার মসনদে আপনারাই বসে আছেন? আপনাদের ছেলেমেয়েরা অলিখিত ভাবেই সেই সংরক্ষণটি পেয়ে যাবে, তাকে টিউশনি পড়িয়ে অথবা পার্ট টাইম কাজ করে তার শিক্ষার খরচ মেটাতে হবে না। ভারতের জনসংখ্যার এক বিরাট অংশ দলিত সম্প্রদায়ভুক্ত, এমনকি এই একবিংশ শতকেও এঁদের মধ্যে অনেকে তাঁদের প্রথম প্রজন্মের শিক্ষা নেওয়া সম্পূর্ণ করেননি, সেই ঘরের ছেলেমেয়েরা আপনাদের ঘরের ছেলেমেয়েদের সম্মুখীন হওয়ার সাহস দেখায় শুধুমাত্র সংরক্ষণের জোরে। লড়াই তো সমানে সমানে হয়, আর আমরা তো শুরুই করি পিছিয়ে থেকে।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে এমএ এবং এমফিল পাশ করার পর যখন কলেজ সার্ভিস কমিশন মারফত কলেজে সহকারী অধ্যাপকের চাকরি পাই, তখন আমার এক অতি প্রিয় মাস্টারমশাই নাকি বলেছিলেন, ‘‘আজকাল বস্তি অঞ্চলের ছেলেরাও প্রফেসর হচ্ছে!’’

এই ধরনের অসংখ্য বাধা পেরিয়ে যদিও বা এক জন দলিত বা শ্রমিক-কৃষক ঘরের ছেলেমেয়ে এই নামজাদা বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে প্রবেশ করতে সমর্থ হয়, তা হলে তাদের জীবনে এক নতুন ধরনের সমস্যা দেখা যায়: উচ্চশিক্ষার জন্য টাকা কোথা থেকে আসবে। ২০১৫-তে এমএ পাশ করার পর পড়া ছেড়ে দেওয়ারই কথা ছিল, যদি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের এক শিক্ষকের কাছ থেকে উৎসাহ না পেতাম; তিনি শ্রমিক ইতিহাসবিদ। তিনি বলেছিলেন, ‘‘তুমি গবেষণা করো, তোমার দ্বারা হবে।’’ অর্থনৈতিক সমস্যার কথা বললে স্যর বলেছিলেন, ‘‘ফেলোশিপ তো পাবে, তাতে হয়ে যাবে।’’ কিন্তু আমার পোড়া কপাল, যে বছর আমি এমফিল কোর্স করতে শুরু করি, সে বছরই কেন্দ্রীয় সরকার নন-নেট ফেলোশিপ বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দেয়। ফলে সেই ব্যাচের ইতিহাস বিভাগের কেউই আর ফেলোশিপ পেল না। সেই দু’বছর অসহনীয় কষ্টের মধ্যে কাটে। পার্ট টাইম কাজ করে পড়ার খরচ চালানোর আপ্রাণ চেষ্টা চলে। ইতিমধ্যে বাবার মৃত্যু এক নতুন সমস্যা সৃষ্টি করে। শুধুমাত্র স্যরের দেওয়া মনোবলে ভর করে লেখাপড়া চালিয়ে গিয়েছিলাম।

আমার মতো হাজার হাজার ছেলেমেয়ে প্রতিনিয়ত পড়ালেখা ছেড়ে দিচ্ছে শুধুমাত্র টাকার অভাবে। এ বার প্রশ্ন হল, সরকারের শিক্ষাখাতে ব্যয় সঙ্কোচন অথবা ফি-বৃদ্ধি দ্বারা কারা সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হবে? সরকার দেশে মোট ব্যয়ের মাত্র ৪.৬% শিক্ষাখাতে বরাদ্দ করলে, তথাকথিত করদাতাদের যদি মনে হয় যে তা অপব্যবহার, এই দলিত নিপীড়িত মানুষদের শিক্ষার কোনও ভার সরকারের নেওয়া উচিত নয়, তা হলে বলি, কোনও দেশে সম্পত্তির উৎপাদক হলেন সে দেশের কৃষক ও শ্রমিকেরা, আর তাঁদের সন্তানদের জন্য শিক্ষার ব্যবস্থা করাটা কোনও খয়রাতি নয়, তা তাঁদের প্রাপ্য অধিকার। খারাপ লাগে, যখন দেখি জাতিবিদ্বেষ আর শ্রেণিবিদ্বেষ একই সঙ্গে হাত-ধরাধরি করে চলছে।

পাশাপাশি এক অন্য চিত্রের কথা বলি। হাওড়া থেকে ৯০ কিলোমিটার দূরে আমার কর্মস্থল বালিচকের ডেবরা অঞ্চলে। বালিচক থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে বালিচক গার্লস হাই স্কুল। প্রতি দিন অসংখ্য ছাত্রী বালিচক স্টেশন থেকে টোটো করে স্কুলে যায়। কখনও টোটো-চালককে এক টাকা বা দু’টাকা দেয়, কখনও টাকা না থাকলে একটা সুন্দর হাসি মুখে টেনে বলে ‘টাকা নেই’, সেই হাসি বোধ হয় চালকদের প্রাপ্তি, তাঁরাও হেসে টোটো নিয়ে এগিয়ে চলেন। মনে প্রশ্ন জাগে, কারা প্রকৃত শিক্ষিত? শিশুবয়সে বিদ্যাসাগরের ‘সভ্য-অসভ্য’ পড়েছিলাম, তাঁর দু’শো বছর উদ্‌যাপনের উৎসবের মধ্যে ইদানীং সেই পাঠ বারবার মনে পড়ে।

শত্রুঘ্ন কাহার

গারুলিয়া, উত্তর ২৪ পরগনা

সূক্ষ্ম নির্যাতন

গার্হস্থ্য নির্যাতন বিশেষ কমেনি, সঙ্গে সূক্ষ্ম কিছু নির্যাতন চলেছে। আমি বেশ কিছু দিন বেতার প্রসারের জন্য কাজ করছি। আমার জানা একাধিক মহিলাকে বাড়ির লোকজন শুধুমাত্র রেডিয়ো শোনা ও রেডিয়োতে লেখালিখির জন্য নানা ভাবে হেনস্থা করেন। এমনকি বেতারে সেরা পত্রকারের সাক্ষাৎকার দিতে যেতে দেওয়া হয়নি, এমনও ঘটেছে।

আমাদের জেলারই জনৈক গৃহবধূ তাঁর নাবালিকা মেয়েকে নাচ আবৃত্তি ইত্যাদিতে ইতিমধ্যেই বেশ পারদর্শী করে তুলেছেন। কিন্তু আজকাল তাঁর এই কাজের প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছেন তাঁরই বাড়ির সবাই। যুক্তি: এ সব করে কী হবে?

সাধন মুখোপাধ্যায়

অরবিন্দনগর, বাঁকুড়া

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Book Library
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE