Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু: বেদনার নেপথ্যে

হঠাৎ এক অভিভাবক বলে উঠলেন, ‘‘আপনি সভা ডেকে আমার দৈনিক মজুরি ৩০০ টাকা থেকে বঞ্চিত করলেন। কে আমার ৩০০ টাকার ক্ষতিপূরণ দেবে? খেতে না পারলে শিক্ষা হয়?’’

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০১৯ ০০:০১
Share: Save:

‘নেপথ্য বেদনা’ (৩-১২) শীর্ষক পত্রের প্রেক্ষিতে এই পত্র। আমি কর্মসূত্রে এ রকমই এক বেদনাময় পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছিলাম। মধ্যশিক্ষা পর্ষদের নির্দেশ অনুযায়ী ২০১৮ সালে দ্বিতীয় পর্যায়ক্রমিক মূল্যায়নের পরে প্রধান শিক্ষক মহাশয় হিসেবে একটি অভিভাবকসভা আহ্বান করেছিলাম। অভিভাবকসভার শুরুতে প্রারম্ভিক ভাষণ দিয়ে কাজ শুরু করতে হবে, হঠাৎ এক অভিভাবক বলে উঠলেন, ‘‘আপনি সভা ডেকে আমার দৈনিক মজুরি ৩০০ টাকা থেকে বঞ্চিত করলেন। কে আমার ৩০০ টাকার ক্ষতিপূরণ দেবে? খেতে না পারলে শিক্ষা হয়?’’ আমি বললাম, আপনি না আসতে পারলে আপনার স্ত্রীকে পাঠাবেন। তিনি বললেন, ‘‘আমরা দু’জনে মিলে গায়েগতরে খেটে সংসার চালাই, স্ত্রী এলেও তো একই ক্ষতি। আপনাদের হাতে ছেলেমেয়েকে দিয়েছি, আপনারা যেমন পারেন তেমন মানুষ করুন, না পারলে বলে দিন আমি ওদের বিদ্যালয় থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে ছেলেকে ব্যাগের কাজে দেব, মেয়ের বিয়ে দিয়ে দেব।’’ হতবাক, বাক্‌রুদ্ধ হয়ে পড়ি। তার পর থেকে সভায় হাজিরার জন্য জোরাজুরি করি না।

শোভনাভ ভট্টাচার্য

কলকাতা-১১৮

মিথ নয়, বাস্তব

‘মিথ ও কিছু তথ্য’ (২৯-১১) শীর্ষক পত্রটিতে যা বলা হয়েছে, তাতে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জনের উচ্চতা অনেকটাই খাটো হয়। আসল ঘটনা জানতে গেলে নেপথ্যে প্রবেশ দরকার। চিত্তরঞ্জন যখন ব্যারিস্টার হয়ে আইন ব্যবসা শুরু করেন, পিতা ভুবনমোহন দাশের অগাধ ঋণ, ‘দেউলিয়া’ অপবাদে পরিবারটিও লজ্জিত, সঙ্কুচিত। এই অপমান দূরীকরণে বদ্ধপরিকর চিত্তরঞ্জন অর্থ উপার্জনে মন দেন। ১৬ বছরের আপ্রাণ চেষ্টায় ১৯১৩ সালের জুলাইয়ে তিনি পিতৃঋণের ৬৭,৭৩৯ টাকায় অবশিষ্ট শেষ অঙ্কটি শোধ করতে সমর্থ হন। তাই মনে রাখতে হবে, যে অবস্থার প্রেক্ষিতে ১৯০৮-এ চিত্তরঞ্জনকে ‘আলিপুর বোমা ষড়যন্ত্র মোকদ্দমা’টি হাতে নিতে হয়, পারিবারিক কারণেই তখন তাঁর টাকার প্রয়োজন ছিল, তবে এ ব্যাপারে কখনও অর্থলিপ্সায় মত্ত হননি। যদি হতেন, অনেক আগেই পিতৃঋণ শোধ করতে সক্ষম হতেন।

কারাবন্দি জামাতা অরবিন্দের মুক্তির জন্য রায় বাহাদুর ভূপালচন্দ্র বসু, ব্যারিস্টার ব্যোমকেশ চক্রবর্তীকে নিয়োগ করেন। মামলা চালাবার জন্য তৈরি হয় ‘ডিফেন্স ফান্ড’। অরবিন্দ-ভগ্নী সরোজিনী ঘোষ কষ্টে জোগাড় করে হাজার পঁচিশেক টাকা তুলে দেন। শ্যামসুন্দর চক্রবর্তী-সহ অন্যান্য বন্ধু উপর্যুপরি অনুরোধ করলেও, ভূপালবাবুরা ‘জুনিয়র’ চিত্তরঞ্জনের কাছে যাননি। একটি মারাত্মক কারণ ছিল। তা হল, চিত্তরঞ্জনের প্রতি ‘সঞ্জীবনী’ পত্রিকায় সম্পাদক কৌঁসুলি কৃষ্ণকুমার মিত্রের বিরূপতা। এই কৃষ্ণকুমার ছিলেন অরবিন্দের আপন মেশোমশাই। এ ভাবে অবজ্ঞাত হলেও চিত্তরঞ্জন কিন্তু পরে সেই মামলার দায়ভার গ্রহণ করেন।

কেন এবং কী ভাবে তাঁর এ বিষয়ে যাত্রা শুরু, স্বয়ং চিত্তরঞ্জনের জবানিতেই শোনা যাক, ‘‘যখন ডিফেন্স ফান্ডের অর্থ ফুরাইয়া গেল, কৌঁসুলিরা একে একে হাল ছাড়িতে লাগিলেন, এই সময়ে আমার কাছে ব্রিফ আসিল। কন্‌সাল্টের সময় আমার উপস্থিতির ব্যাপারেও যাঁহারা নাসিকা কুঞ্চন করিতেন, তাঁহারা ছাড়িয়া গেলে অরবিন্দের বন্ধুগণ ছয় হাজার টাকা আমার হাতে গুঁজিয়া দিয়া অনেক অক্ষমতা ও ত্রুটি জ্ঞাপন করিলেন। ...ক্রমে অর্থাভাবে গাড়িঘোড়া বেচিলাম। বিলাসব্যসন কমাইয়া ফেলিলাম এবং চক্ষু বুজিয়া হুণ্ডি কাটিতে লাগিলাম।’’ চিত্তরঞ্জনকে এই মামলা চালাতে হয় প্রায় দশ মাস। ‘‘এই সময় মধ্যে ৩৭ হাজার টাকার নোট এবং অন্যান্য খুচরা হাওলাতে সর্বসমেত পঞ্চাশ হাজার টাকা তাঁহাকে ঋণ করিতে হয়।’’ মামলা লড়তে গিয়ে তিনি শুধু নিজের আর্থিক অনটনই ডেকে আনেননি, যে নিষ্ঠা একাগ্রতার পরিচয় দেন, তা-ও ছিল বিস্ময়কর।

সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিশ্লেষণের স্বার্থে আইনের বইপত্র ঘাঁটতে গিয়ে তাঁকে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে। সময়ের অপচয় হবে বলে কোনও সাক্ষাৎপ্রার্থী এলে বিরক্ত হতেন। বাড়ির কারও অসুখ হলেও খবর দেওয়া ছিল বারণ। অভাবনীয় এই ত্যাগ অরবিন্দকেও নাড়া দেয়। তাই চিত্তরঞ্জনকে দেবতার আসনে বসাতেও তিনি কুণ্ঠিত হননি, ‘‘আমার উদ্ধারের জন্য স্বয়ং নারায়ণ আসিয়া উপস্থিত হইয়াছেন।’’

চিত্তরঞ্জনের অচ্ছেদ্য যুক্তিজালে শেষ পর্যন্ত সরকারপক্ষ ধরাশায়ী হয়। ১৯০৯-এর ৬ মে বিচারপতি বিচক্রফ্ট-এর অন্য বিচারে কিন্তু বিপ্লবী বারীন-উল্লাসকরের মৃত্যুদণ্ড হয়। তাঁদের হয়ে মামলাটি লড়েছিলেন ব্যারিস্টার পি মিত্র, জে এন রায় প্রমুখ। বারীনদের প্রাণ বাঁচাবার জন্য বিনা পয়সায় তখন কঠিন হাতে হাল ধরেন চিত্তরঞ্জন। বিচারপতি লরেন্স জেংফিস আর লন্সেট স্যান্ডারসনের সামনে তিনি যে ভাবে বুদ্ধিদীপ্ত সওয়াল করেন, স্বয়ং বিচারপতিদ্বয় মুগ্ধ হন, বাধ্য হন মৃত্যুদণ্ড রদ করতে। বারীন-উল্লাসকরের তখন দ্বীপান্তর হয়। তাই এটা কোনও ভাবেই অনৈতিহাসিক নয় যে, চিত্তরঞ্জনই নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে অরবিন্দ-বারীনদের ছাড়িয়ে আনেন।

এ-ও মনে রাখতে হবে, শুরুতে তাঁর হাতে গুঁজে দেওয়া ছ’হাজার টাকা ছাড়া চিত্তরঞ্জন আর কোনও পারিশ্রমিক নেননি, অথচ দীর্ঘ সময় ধরে তিনি তাঁদের পক্ষে আইনি লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন। বিনা খরচে এ-হেন লড়াই কেবল সম্ভব হয়েছিল তাঁর গভীর দেশাত্মবোধের জন্য, যে বোধের সনিষ্ঠ-উদার তাড়নায় তিনি বিসর্জন দিয়েছিলেন অর্থ উপার্জনের স্বপ্ন, আর স্বেচ্ছায় বরণ করেছিলেন অপ্রত্যাশিত কঠোর দারিদ্র। শুধু অর্থ নয়, সব দিক থেকে চিত্তরঞ্জনের এমন অসামান্য আত্মত্যাগ সত্যিই এক বাস্তব ঘটনা, কোনও ভাবেই যাকে ‘মিথ’ বলা যায় না।

বাণীবরণ সেনগুপ্ত

শ্যামনগর, উত্তর ২৪ পরগনা

পোর্টাল

২০১৯ সালের শুরু থেকে পশ্চিমবঙ্গ স্কুল শিক্ষা দফতরের তত্ত্বাবধানে পশ্চিমবঙ্গের সব সরকারি ও সরকার পোষিত প্রাথমিক, উচ্চ প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়কে ই-পোর্টাল 'Banglarshiksha'-এর অধীনে যাবতীয় তথ্য upload সবেমাত্র সমাপ্ত হল। এবং ই-পোর্টালটির সুবিধা সর্বজনবিদিত। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ মাদ্রাসা শিক্ষার অধীনে থাকা মাদ্রাসাগুলি এই ই-পোর্টালে প্রবেশ করতে পারছে না। যদিও শুরুতে অনেক মাদ্রাসার ছাত্রছাত্রী ডেটা আপলোড করেছিল। পরে জানা যায় এই সুবিধাটি মাদ্রাসার জন্য নয়। অথচ পশ্চিমবঙ্গ স্কুল শিক্ষা দফতর কর্তৃক বলা হচ্ছে, ছাত্রছাত্রীদের যাবতীয় সুযোগসুবিধা এই ই-পোর্টাল দ্বারা সম্পাদিত হবে।

মাননীয় উচ্চতম অধিকর্তা, পশ্চিমবঙ্গ মাদ্রাসা শিক্ষা মহাশয়কে অনুরোধ, ই-পোর্টাল— Banglarshiksha-র মতো সব মাদ্রাসার জন্য একটি পোর্টাল ২০২০ শিক্ষাবর্ষ থেকে শুরু করলে মাদ্রাসার ছাত্রছাত্রীরাও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের সুবিধা উপভোগ করতে পারত।

ফরমান আলি

হুগলি

মৃত্যুদিন

‘কলকাতার কড়চা’য় (২৫-১১) শতবর্ষে পদার্পিত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী, প্রাক্তন রাজ্যপাল সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ের মৃত্যুদিন ২০১০-এর ৬ ডিসেম্বর বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু তাঁর প্রয়াণ ঘটেছিল ৬ নভেম্বর।

বাবলু নন্দী

সভাপতি, দমদম টাউন কংগ্রেস

অনেক আগেই

‘দেবব্রতর আধুনিক’ (৫-১২) চিঠি প্রসঙ্গে এই পত্র। দেবব্রত বিশ্বাসের আধুনিক গানের ক্যাসেট (এ প্রজন্ম ও প্রজন্ম)-এর অনেক আগেই সলিল চৌধুরীর কথা ও সুরে মেগাফোন থেকে ৭৮ আরপিএম (রেকর্ড নং ৬১৫৬)-এ প্রকাশিত হয়েছিল ‘আমার প্রতিবাদের ভাষা’।

হীরালাল শীল

কলকাতা-১২

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE