E-Paper

বিকল্প উপায়

প্রতি দিন‌ই বোমাবাজি, পিস্তল, বন্দুক, লাঠি, বাঁশ ইত্যাদি নিয়ে বিপক্ষের প্রার্থীদের মনোনয়নে বাধার সৃষ্টি করা হয়েছে।

শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০২৩ ০৫:৪০
police.

ভাঙড়, ক্যানিং, ডোমকল-সহ বেশ কিছু এলাকা রণক্ষেত্রের চেহারা নিয়েছিল। —ফাইল চিত্র।

অবশেষে শেষ হল এই রাজ্যে ২০২৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়ন পর্ব। এই ক’দিন রাজ্যবাসী সাক্ষী থাকলেন সমাজবিরোধী ও দুষ্কৃতীদের হাড়হিম করা সন্ত্রাসের। প্রতি দিন‌ই বোমাবাজি, পিস্তল, বন্দুক, লাঠি, বাঁশ ইত্যাদি নিয়ে বিপক্ষের প্রার্থীদের মনোনয়নে বাধার সৃষ্টি করা হয়েছে। মারধর করা, রাজ্য পুলিশ প্রশাসনের এবং রাজ্য নির্বাচন কমিশনের নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করা, প্রচুর গাড়ি ও মোটরসাইকেল ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগ করা— এ সবই দেখতে হল। ভাঙড়, ক্যানিং, ডোমকল-সহ বেশ কিছু এলাকা যেন রণক্ষেত্রের চেহারা নিয়েছিল।

কিছুটা আশার আলো দেখিয়েছেন কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি উদয় কুমার। তাঁরা নির্দেশ দিয়েছেন, এ বারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে সারা রাজ্যেই কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করতে হবে। তবে অভিজ্ঞতা বলে, ভোটের দিন কেন্দ্রীয় বাহিনীকে কার্যত বসিয়ে রাখা হয়, কাজ করতে দেওয়া হয় না। কেন্দ্রীয় বাহিনী কাজ করে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ অনুসারেই। এ বারের সদ্যসমাপ্ত মনোনয়ন পর্বে রাজ্য নির্বাচন কমিশন এবং রাজ্যের পুলিশ-প্রশাসনের যে যুগলবন্দি দেখা গেল, তাতে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে নিষ্ক্রিয় করে রাখা হবে, সেই আশঙ্কা বাড়ছে ব‌ই কমছে না। অন্য কোনও উপায় নির্ধারণ করা যায় কি?

অমিতকুমার চৌধুরী, কলকাতা-৭৫

মৃত্যুর হিসাব

আমার বঙ্গ এখন মৃত্যু উপত্যকা, জল্লাদের উল্লাস মঞ্চ। ভোট উৎসবে চলে নরমেধ যজ্ঞ। চলে মৃত্যুর মিছিল। কত মায়ের কোল খালি হয়, তার হিসাব শাসক বা বিরোধী দল রাখে না। তারা শুধু হিসাব রাখে— কত জন তাদের দলের লোক। সেটাই সংবাদমাধ্যমে জাহির করতে হবে। আমরা এক বারও ভাবি না রাজনীতির ময়দানে যে সন্তানটি মারা গেলেন তাঁরও বাবা-মা রয়েছেন। তাঁদের যন্ত্রণার খোঁজ আমরা রাখি না। সম্মুখ-সমরে শাসকরা থাকেন না; তাঁরা থাকেন শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে। শুধু নির্দেশ যাবে, তাতেই ক্ষমতার উচ্চাসনে টিকে থাকা যাবে। “আমি তো আমার শপথ রেখেছি/ অক্ষরে অক্ষরে/ যারা প্রতিবাদী তাদের জীবন/ দিয়েছি নরক করে।” (‘সবিনয় নিবেদন’, শঙ্খ ঘোষ)। কোথায় আমার ডিজিটাল ভারত? স্বচ্ছ ভারত? আত্মনির্ভরশীল ভারত? মোদীজি কেবলই ভারতের মানবসম্পদ নিয়ে, মেধা নিয়ে বড়াই করেন। কিন্তু রক্ষাকবচ নেই। তাই গণতন্ত্র রক্ষা করার চেয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকার ফন্দি-ফিকির তাঁর অনেক বেশি। তাই হোক অনলাইন ভোট। আর কোনও মানুষের মৃত্যু নয়, নয় অর্থের অপচয়। কর্মদিবস আর নষ্ট নয়।

সূর্যকান্ত মণ্ডল, কলকাতা-৮৪

অনলাইনে হোক

হিংসা রক্তারক্তি এড়াতে এবং সুষ্ঠু ভাবে মনোনয়ন জমা ও ভোটদানপর্ব সারতে আমার প্রস্তাব মনোনয়ন জমা ও ভোটদানপর্ব অনলাইনে চালু হোক। মোদীজি তো চাইছেন ডিজিটাল ইন্ডিয়া। তা হলে ভোটপর্ব কেন অনলাইনে নয়? অনলাইনে মনোনয়ন জমা দেওয়ার ব্যবস্থা থাকলে প্রার্থীরা প্রায় বিনা বাধায় মনোনয়ন জমা দিতে পারবেন। নির্দিষ্ট কেন্দ্রে যেতে হবে না। দুর্নীতি কম হবে।

ভোটদানের ক্ষেত্রেও তাই হতে পারে। ভোটাররা বাড়িতে বসে বা সাইবার কাফেতে গিয়ে ভোট দিতে পারবেন। ভোটার কার্ড নম্বর বা আধার নম্বর ব্যবহার করে লগ ইন করে ভোট দিতে পারবেন ভোটাররা। নিজের জন্ম তারিখ, বা কোনও ডিজিটাল নম্বর যা শুধু ভোটারই জানবেন। মনোনয়ন জমা ও ভোটদান ঠিকমতো হলে নিজের ফোনে এবং ইমেল-এ মেসেজ আসবে। ব্যবস্থা এমন থাকবে, যাতে এক জন ভোটার কিছুতেই একাধিক ভোট দিতে পারবেন না। আবার এক জন প্রার্থী একাধিক মনোনয়ন জমা দিতে পারবেন না। বায়োমেট্রিক বা আঙুলের ছাপ দিয়েও এই কাজ করানো যেতে পারে। সাইবার কাফেতে মনোনয়ন জমা ও ভোট দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় খরচ সরকার বহন করবে। এতে দুর্নীতি অনেক কমে যাবে। শাসক দলের দাদাগিরি অনেক কমে যাবে। সব রাজনৈতিক দলের উচিত সানন্দে এগিয়ে আসা। সরকারের উচিত সর্বদল বৈঠক ডেকে এ ব্যাপারে বিশদে আলোচনা করে সংসদের উভয় কক্ষে এই বিল পাশ করিয়ে দ্রুত আইন চালু করা।

পঙ্কজ সেনগুপ্ত, কোন্নগর, হুগলি

ব্যর্থ প্রশাসন

“‘কেষ্ট’রা গোকুলে বাড়ে” (১৫-৬) শীর্ষক দেবাশিস ভট্টাচার্যের লেখাটি ভোট রাজনীতির বাস্তব চিত্র। লেখক খুব সত্যি কথাটি বলেছেন, শাসক দলের পরিবর্তন আসলে উর্দিধারীদের পরিবর্তন, আর এদেরই প্রশ্রয়ে কেষ্টরা গোকুলে বেড়ে ওঠে। ভেবে অবাক হচ্ছি, যদি মনোনয়ন ঘিরেই এত গুলি, বোমা, প্রাণহানি ঘটে; তা হলে নির্বাচনের ফল প্রকাশ পর্যন্ত আরও কত অশান্তি ঘটবে?

মনোনয়ন পেশ অনলাইনে করা যেত। কিন্তু সে দিকে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের কোনও আগ্রহ নেই। হিংসার পরিবেশ দেখে এবং নির্বাচন কমিশনের উদাসীনতায় হাই কোর্টকে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে। কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে নির্বাচন করানোর কথা হাই কোর্টের রায়ে বলা হয়েছে। অবাক লাগছে, রাজ্য পুলিশ প্রশাসন পঞ্চায়েত নির্বাচনের মনোনয়ন পেশের সময়েই হিংসা রুখতে ব্যর্থ! জানা যাচ্ছে, বাঁশ ও উইকেট মজুত করে রাখা হচ্ছে। প্রশাসনের অজানা কিছুই থাকতে পারে না। কিন্তু তারা অশান্তি বন্ধ করতে পারছে না। রাজনীতি এখন দুষ্কৃতী-নির্ভর, রাজনৈতিক কারবারিরা ক্ষমতা দখলের জন্য তাদের ব্যবহার করছে।

রাজনৈতিক ময়দানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হোক রাজনৈতিক শিষ্টাচার মেনে। মানুষকে স্বাধীন ভাবে মত দানের বা ভোট দানের সুযোগ করে দিতে হবে। কোনও রকম ভীতি প্রদর্শন কাম্য নয়। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে যথাযথ পদক্ষেপ করতে হবে এবং শাসক দলের সঙ্গে বিরোধী দলগুলোরও যথেষ্ট দায়িত্ব রয়েছে গোটা নির্বাচন প্রক্রিয়াকে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ রাখার জন্য। কাজেই সাধারণ নাগরিক হিসাবে আমরা চাইব শান্তিপূর্ণ পঞ্চায়েত নির্বাচন।

পরেশনাথ কর্মকার, রানাঘাট, নদিয়া

হিংসামুক্তির পথ

ভোটকেন্দ্রিক এই হিংসার ছবি নতুন নয়, কয়েক দশক ধরে ক্ষমতায় থাকা রাজনৈতিক দলগুলি তাদের মতো করে আরক্ষাবাহিনীকে ভয় দেখিয়ে নিজেদের পক্ষে কাজ করিয়েছে। স্বাধীন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে বা রাজ্যে প্রশাসনিক দৃঢ়তা দেখিয়ে কয়েক জন হয়তো সাংবিধানিক দায়িত্ব নিরপেক্ষ ভাবে পালন করার সাহস দেখিয়েছেন, বাকিরা স্রোতে গা ভাসিয়েছেন, এমন ছবি উঠে এসেছে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক বিশ্লেষকের মতে। পুলিশকে তাদের বিবেচনা বা স্ট্র্যাটেজি অনুযায়ী নিরপেক্ষ পদক্ষেপ করতে হবে। উদ্দেশ্য হোক আইনেরশাসন প্রতিষ্ঠা করা। নির্বাচনী সন্ত্রাসের যে ধারাবাহিকতা ও প্রবণতা রাজ্যে তৈরি হয়েছে বা বেড়ে চলেছে, যার দায় কোনও একটি দলের নয় যদিও, এর থেকে মুক্তি খুঁজতে হবে। প্রাণ যাচ্ছে সমর্থকদের, জমায়েতের ছবিগুলো দেখে খেটে-খাওয়া মুখগুলো ভেসে উঠছিল, এঁরা রাজনীতি কতটা বোঝেন, বা কিসের তাগিদে প্রাণ বলি দিতে যান? জিজ্ঞেস করলে হয়তো উত্তর দেবেন যে, এলাকার নেতা রেশন বা সরকারি বাড়ির টাকা পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। নেতাদের ফুলেফেঁপে উঠতে দেখলেও নিজের যে কিছু হওয়ার নয়, মাসে সামান্য দু’-পাঁচশো টাকা পাওয়া ছাড়া, তা বুঝেও তাঁরা মারেন ও মরেন। প্রতি ভোটে এমন মানুষরা প্রাণ হারান। এই কি গণতন্ত্র?

সৌম্যেন্দ্রনাথ জানা, কলকাতা-১৫৪

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

WB Panchayat Election 2023 police Bhangar

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy