Advertisement
E-Paper

সম্পাদক সমীপেষু: বাংলা চর্চা ছিলও

তা বলে হিন্দু কলেজের সকলেই কিন্তু বাংলা বিমুখ ছিলেন না। বরং তাঁদের অনেকের হাত ধরেই প্রগতির পথে বাংলা যাত্রার শুরু। হিন্দু কলেজের আদি পর্বের ছাত্র তারাচাঁদ চক্রবর্তী ইংরেজির পাশাপাশি বাংলার গুরুত্ব বুঝেছিলেন বলেই ১৮২৭-এ সঙ্কলন করেছিলেন বাংলা-ইংরেজি অভিধান।

শেষ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:০০

‘হিন্দু কলেজেও’ (১২-১) শীর্ষক চিঠির প্রেক্ষিতে কিছু বক্তব্য। পত্রলেখক বলেছেন, হিন্দু কলেজে বাংলা চর্চার কোনও গুরুত্ব ছিল না। এর অবশ্য কারণও ছিল। সে সময়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের বড়ই দুর্দিন। দাশু রায়-ভারতচন্দ্র প্রমুখের সাহিত্যে স্বাভাবিক ভাবেই উনিশ শতকের সামাজিক প্রতিফলন না থাকারই কথা। আবার তখনকার সাহিত্য হলেও ঈশ্বর গুপ্তের রচনা ছিল বাস্তববর্জিত। ফলে ইংরেজি শিক্ষিত বাঙালি সমাজ সে দিকে টান অনুভব করেনি। তা ছাড়া তখন পর্যন্ত যে ভাষা উৎকর্ষে খুব একটু পুষ্ট হয়ে ওঠেনি, তাকে নিয়ে মাতামাতি না করাটাও অনেকে সঙ্গত মনে করেছেন।

সমাজে ইংরেজরা ‘অভিজাত অংশ’ বলে গণ্য হওয়ায় ইয়ং বেঙ্গল গোষ্ঠী যে তাঁদের দিকে ঝুঁকবে— তেমনটাও প্রত্যাশিত। সমৃদ্ধ সংস্কৃত সাহিত্যও তাই তাঁদের কাছে বিশেষ পাত্তা পায়নি। এই সব নেতিবাচক দিক ফুটে উঠেছে দুই কট্টরপন্থী বাঙালি লেখকের কথায়, যাঁরা শুধু ইংরেজিতেই লিখতেন। এঁরা হলেন শশীচন্দ্র দত্ত ও ভোলানাথ চন্দ্র। ভোলানাথ তো সরাসরি বলেই ফেললেন, ‘‘রোমান্স ভাল, কিন্তু রুটি যেমন আরও ভাল, তেমনই আবেগ ভাল, কিন্তু কাজের জিনিস আরও ভাল। এই মনোভাব নিয়ে আমি ভূদেব মুখোপাধ্যায়ের সংস্কৃত টোলের উত্তরাধিকার গ্রহণ করতে পারব না; অতে ইয়ং বেঙ্গলের অগ্রগতিতে ঘোড়ার আগেই গাড়ি জুড়ে দেওয়া হবে।’’ (দ্র. হিন্দু কলেজ, প্রসাদ সেনগুপ্ত, পৃ ৩২০)।

তা বলে হিন্দু কলেজের সকলেই কিন্তু বাংলা বিমুখ ছিলেন না। বরং তাঁদের অনেকের হাত ধরেই প্রগতির পথে বাংলা যাত্রার শুরু। হিন্দু কলেজের আদি পর্বের ছাত্র তারাচাঁদ চক্রবর্তী ইংরেজির পাশাপাশি বাংলার গুরুত্ব বুঝেছিলেন বলেই ১৮২৭-এ সঙ্কলন করেছিলেন বাংলা-ইংরেজি অভিধান। বাংলায় যাঁরা স্বচ্ছন্দ ছিলেন না, শুধু ভালবাসার টানেই তাঁরা আবার অন্যের সাহায্য নিয়ে ১৮৩১-এর জুন মাসে বার করেন ‘জ্ঞানান্বেষণ’। এই সাপ্তাহিক পত্রিকাটির সম্পাদক ছিলেন ডিরোজ়িয়োর ‘ছাত্রশিষ্য’ দক্ষিণারঞ্জন মুখোপাধ্যায়। আদালতে ফারসির বদলে বাংলা চালু করার দাবি জানিয়ে পত্রিকাটি যে দৃঢ় মত ব্যক্ত করে, তাতে দুঃসাহসিক বাংলাপ্রীতির পরিচয়ই প্রকাশ পেয়েছে। তদানীন্তন প্রেস আইনের বিরোধিতা করে পত্রিকাটি যেমন সংবাদপত্রের স্বাধীনতার পক্ষে মত তুলে ধরেছে, তেমনই সমাজ সংস্কারের পরিসরেও এর উদার দৃষ্টি মেলে ধরার গৌরবময় পরিচয় পাওয়া যায়। (দ্র. উনিশ শতকের বাংলা সংবাদ সাময়িক পত্র, স্বপন বসু, পৃ ১৭৯-৮০)।

শুধু পত্রিকা নয়, ‘সব কাজেই বাংলা ব্যবহারের চেষ্টা করার’ উদ্দেশ্য নিয়ে ১৮৩২-এর শেষে গড়ে উঠেছিল ‘সর্বতত্ত্বদীপিকা সভা’। এর সভাপতি ও সচিব ছিলেন যথাক্রমে রাজা রামমোহনের পুত্র রমাপ্রসাদ ও প্রিন্স দ্বারকানাথের সন্তান দেবেন্দ্রনাথ। দু’জনেই তখন হিন্দু কলেজের ছাত্র, বয়স মাত্র পনেরো বছর।

উদাহরণের তালিকা দীর্ঘায়িত না করে তাই শুধু এটুকু বলা যায় যে, ‘হিন্দু কলেজে বাংলা ক্লাসের কোনও গুরুত্ব ছিল না’— এ কথা যেমন ঐতিহাসিক সত্য, তেমনই এই কলেজের অনেক ছাত্রই যে বাংলা ভাষার উন্নতিতে নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন, এও এক অবিস্মরণীয় ইতিহাস।

বাণীবরণ সেনগুপ্ত

শ্যামনগর, উত্তর ২৪ পরগনা

ওঁরা অজ্ঞ নন

‘সিঙ্গুর নিয়ে ভাবনা’ (২৯-১২) শীর্ষক চিঠিতে আমার বক্তব্য ছিল বিপুল টাকা খরচ করে ন্যানো কারখানার জমিকে শেষ পর্যন্ত কৃষিজমিতে পরিণত না করে ল্যান্ডবন্ডের বিনিময়ে ওই জমি চাষির কাছ থেকে গ্রহণ করে সেখানে বিপুল সম্ভাবনাময় ও অপেক্ষাকৃত শ্রম নিবিড় ইলেকট্রনিক যন্ত্র, যন্ত্রাংশ ও হোম অ্যাপ্লায়েন্সের এক শিল্পতালুক গড়ে তোলা রাজ্যের পক্ষে মঙ্গলজনক। এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ‘সিঙ্গুর’ শিরোনামে প্রকাশিত (৫-১) চিঠিটিতে কমল চৌধুরী মন্তব্য করেছেন একাধিক কারণে এই তালুক গড়া সম্ভব নয়। এর প্রথম কারণটি হল, ‘‘ল্যান্ডবন্ড জিনিসটা কী— খায় না গায়ে মাখে, তা-ই অধিকাংশ কৃষক জানেন না।’’

সিঙ্গুর-সহ কলকাতার নিকটবর্তী অঞ্চলের তিন ফসলি জমির কৃষককে এতটা অজ্ঞ ভাবাটা কিন্তু ভুল।

২০১৩ থেকে হুগলি জেলার একাধিক গ্রামে সমীক্ষা চালিয়ে দেখেছি যে চাষিদের ল্যান্ডবন্ড ব্যবস্থা বোঝাতে আদৌ বেগ পেতে হচ্ছে না। সম্পূর্ণ নতুন ধারণা হওয়া সত্ত্বেও এক বার বলতেই বিষয়টা বুঝে যাচ্ছেন অধিকাংশ চাষি। কারণ এই জেলার আলুচাষিরা কোল্ড স্টোরে আলু রাখার বিনিময়ে আলুর বন্ড নিয়ে থাকেন। প্রয়োজন হলে আলু রাখার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ওই আলু অন্য কাউকে বিক্রি করে দেন বন্ড হস্তান্তরের মাধ্যমে। বন্ডের দাম আলুর বাজারদর অনুযায়ী ওঠানামা করে। তাই আলুচাষিরা প্রায় প্রতি দিন বাজারে আলুর কী দাম সে খোঁজ রাখেন। তা ছাড়া বীজ, সার, ওষুধের দাম, শ্রমিকের মজুরি, সম্ভাব্য উৎপাদনের পরিমাণ ও তার আনুমানিক মূল্যের হিসেব কষা চাষিকে প্রতিনিয়ত স্থানীয় কৃষি অর্থনীতির চর্চা করতে হয়; সে তার স্কুল-কলেজের ডিগ্রি থাক বা না থাক।

শুধু কি কৃষি অর্থনীতি? ফসল ফলাতে গিয়ে চাষি ধীরে ধীরে ফলিত কৃষিবিজ্ঞানে পারদর্শী হয়ে যান। গ্রাম থেকে এসে কলকাতার ফুটপাতে পটল-মুলো বেচতে বসা হতদরিদ্র বিক্রেতা কত অনায়াসে ৩৭ টাকা কিলো দরে কোনও সব্জির ৩৫০ গ্রামের দাম মুখে মুখে হিসাব করে দেন। উল্টো দিকে ক্রেতা হিসেবে দাঁড়ানো শহুরে ডিগ্রিধারী বাবুদের অনেকেরই কিন্তু ওই হিসেবটুকু কষতে গলদঘর্ম অবস্থা।

অনেকে ভাবতে ভালবাসেন যে গ্রামের গরিব চাষি চরম সাদাসিধে, কিছুটা বোকা এক মানুষ। একই ভাবে চাষিরা ল্যান্ডবন্ড খায়, না গায়ে মাখে তা বুঝতে পারবে না ভাবাটা এক শহুরে ফ্যান্টাসি।

ব্যক্তিগত সমীক্ষা থেকে বলতে পারি, সিঙ্গুর-সহ সমগ্র হুগলি জেলার অধিকাংশ চাষি ভালই বোঝেন, ল্যান্ডবন্ডের বিনিময়ে দেওয়া জমিতে শিল্পতালুক হলে সেখানে জমির দাম দশ বা বিশ গুণ বাড়বে। ফলস্বরূপ জমিদাতা চাষির ল্যান্ডবন্ডের দামও একই হারে বাড়বে। এই ব্যাপারটা চাষির কাছে আকর্ষক হলেও, জমি দেওয়ার ব্যাপারে বহু চাষি দ্বিধাগ্রস্ত, কারণ তাঁরা ভরসা পান না সরকার নিয়মিত ডিভিডেন্ড দেবে, এবং প্রয়োজনের মুহূর্তে ল্যান্ডবন্ড কিনে চাষিকে সত্বর ওই বন্ডের দাম মেটাবে। চাষির বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করে জমি নিতে সরকারকে কী করতে হবে, সে বিষয়ে চাষিদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে লেখা আমার একটি চিঠি ‘সম্পাদক সমীপেষু’ বিভাগে প্রকাশিত হয়েছিল (১৭-৮-১৮) ‘ল্যান্ডবন্ড শর্ত’ শিরোনামে। চিঠিতে উল্লিখিত সাতটি শর্ত সরকার গ্রহণ করলে হয়তো সিঙ্গুরে এক ইলেকট্রনিক শিল্প তালুক তৈরি করা সম্ভব। এই তালুক গড়ার পথে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া সিঙ্গুরের চাষি কিন্তু প্রধান বাধা নয়।

আসলে সরকারপক্ষ বিন্দুমাত্র ঝুঁকি নিতে চায় না। বিরোধীরাও জোর গলায় দাবি তোলার সাহস করেন না যে ন্যানো কারখানার ওই জমিতে শিল্পই চাই; শুধু বলেন ‘শিল্প চাই’। কোন জমিতে চায়, কী ভাবে অধিগ্রহণ হবে সে বিষয়ে তাঁরা নিরুত্তর। আর জনগণ মেলা, খেলা ও হরেক উৎসবের আনন্দে মত্ত।

মানসেন্দু কুণ্ডু

সান্টা বারবারা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

হাসিমুখে যুযুধান

গত ২-২ তারিখের পত্রিকার ৫ নম্বর পাতায় যুযুধান দুই পার্টির দুই প্রধান নেতার হাসিমুখের ছবি দেখে খুব খুশি হয়েছি। ভোট আসন্ন। সব পার্টির বড়, মেজো, সেজো, ছোট নেতাদের কাছে আমার অনুরোধ, নিজেদের মধ্যে পার্মুটেশন-কম্বিনেশন করে এ রকম অনেক ছবি হাসিমুখে তুলে, সমস্ত পার্টি অফিসে ঝুলিয়ে রাখুন। তা দেখে অন্তত অশিক্ষিত ক্যাডাররা নিজেদের মধ্যে লড়াই করে অন্যকে শারীরিক আঘাত করা থেকে কিছুটা হলেও বিরত থাকবেন। দিনের শেষে অন্তত এক জন অন্য জনকে দেখে ঘৃণা সরিয়ে হাসিমুখ দেখাবেন।

দীপ ভট্টাচার্য

বেহালা

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ইমেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

Language Research Bengali Hindu School
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy