‘স্পর্ধা ও বিনয়’ (৯-১১) শীর্ষক সম্পাদকীয়টি সময়োপযোগী। সত্যিই এক সময় ভারতের অন্য প্রদেশের মানুষ তো বটেই, এমনকি বিদেশিরাও বাঙালিকে তার শিক্ষা, সংস্কৃতি ও শিষ্টাচারের জন্য বিশেষ শ্রদ্ধার চোখে দেখতেন। পথেঘাটে, হাটে-বাজারে, অফিস-আদালতে সেই স্বভাবনম্র বাঙালি ভদ্রলোক শ্রেণির মানুষ যেন এখন বেমালুম হারিয়ে গেছেন। তখন ‘ভদ্রলোক নই, কমিউনিস্ট’— এ হেন দর্পিত বাক্য ছাপার অক্ষরে পড়েছি। তবে মনে হয়েছে তা নিতান্তই ব্যতিক্রমী এবং অনেকটাই ছিল কথার কথা। কেননা বাস্তবে দেখেছি, আচরণে বিনয় ও ভদ্রতাই ছিল বিদ্বান বক্তার প্রকৃত ভূষণ। জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক নেতাদেরও জনপরিসরে সুভদ্র আচরণই করতে দেখেছি। রুচিসম্মত নয়, এমন বাক্য বা আচরণের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে তখন প্রকাশ্যে দলের ভর্ৎসনাও শুনতে হত। আর এখন অমার্জিত আচরণ এবং অশালীন বাক্য-ব্যবহারকারীর দলের মধ্যে কদর যেমন কম নয়, তেমনই সমর্থকদের মধ্যেও জনপ্রিয়তার ক্ষেত্রে তিনি এগিয়ে।
দীর্ঘ তিন দশকের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, আগেও স্কুল-কলেজে ‘দুষ্টু’ ছেলেমেয়েরা থাকত, কিন্তু এখনকার মতো তারা এমন অস্থির, বদমেজাজি ও রূঢ় ছিল না। বাড়ির অভিভাবক, পাড়ার গুরুজন বা শিক্ষকদের আড়ালে তারা হরেক রকমের দস্যিপনা করে বেড়াত। কিন্তু তা সত্ত্বেও সাধারণ সহবত ও ব্যবহারে স্বাভাবিক সৌজন্যপূর্ণ আচরণ তারা বজায় রাখত। আর এখন দেখা যায়, শিক্ষকের সামনেই অশ্রাব্য ও অশোভন বাক্য ব্যবহারে ছাত্ররা লজ্জা পায় না, ভিড় বাসে বা ট্রেনে বসার জন্য নিজের জায়গা ছেড়ে দেওয়া তো দূরস্থান।
অর্থসম্পদের গরিমা বাঙালির কোনও দিনই তেমন ছিল না। এখন যদি শিক্ষা ও সংস্কৃতি-জাত সৌজন্য-শিষ্টাচারও সে হারিয়ে ফেলে, তা হলে বিশ্বে বাঙালির বলার মতো কিছুই আর অবশিষ্ট থাকবে না।
কৌশিক চিনা, মুন্সিরহাট, হাওড়া
আত্মসমীক্ষা চাই
‘স্পর্ধা ও বিনয়’ (৯-১১) সম্পাদকীয়টি বর্তমান সামাজিক বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং সময়োপযোগী। এক সময় বাংলা ও বাঙালির সংস্কৃতি, শিক্ষা, আচার-আচরণ ছিল গোটা ভারতে তথা বিশ্বেও আদৃত। শিক্ষা-সংস্কৃতি-সাহিত্যচর্চা’সহ সর্ব ক্ষেত্রে আদর্শ পীঠস্থান ছিল এই বাংলা। গোপালকৃষ্ণ গোখলের বলা সেই কথাটি স্মরণীয়, “বাংলা আজ যা ভাবে, সারা ভারত তা ভাবে আগামিকাল।” এই ছিল আমাদের বাংলা। কিন্তু আজকের বাংলার সামাজিক অবস্থান দেশবাসীর কাছে ঠিক কী বার্তা দিচ্ছে?
আজ অনেকে অসহিষ্ণুতার জন্য আন্তর্জালকে দায়ী করেন। সে কথা আংশিক সত্য হলেও, পুরোপুরি নয়। ছোটবেলা থেকে যে শিশু পারিবারিক শিক্ষার গণ্ডির মধ্যে থেকে ভদ্রতা, নম্রতা, বিনয়, শ্রদ্ধা, লঘু-গুরু জ্ঞান, পারস্পরিক মানবিক সহাবস্থানের পাঠ নিয়েছে, তার মধ্যে অবশ্যই এই সব শৃঙ্খলাবোধ থাকবে। সামাজিক পটপরিবর্তন বা আধুনিকতার ভিড়ে সে কখনও নিজেকে অবিবেচনায় ভাসিয়ে দেবে না। সেই কারণেই সমাজে এখনও কিছু মানুষ মেলে, যাঁরা চেতনাবোধ এবং নৈতিকতা জলাঞ্জলি দেননি। তবে এর মাঝে অভিভাবকদের নৈতিক অধঃপতনের বিষয়টিও উপেক্ষা করা যায় কি? অভিভাবকেরা নিজেরাই মোবাইলে ডুবে থাকলে, সন্তানের হাতে বইয়ের বদলে মোবাইল ধরিয়ে দিলে, অবক্ষয়ের দায় কি তাঁদের উপরেও বর্তায় না? সুপাঠ্য শিক্ষামূলক বই শিশুদের হাতে আমাদের ক’জনই বা তুলে দিই? শিক্ষামূলক আলোচনা, গঠনমূলক সময় কতটা দিই?
তেমনই এই যুক্তিও মানা যায় না যে, এই আচরণের দায় কেবল বাঙালিরই। কারণ, অনাচার-কদাচারে তো কোনও ‘জাতি’ভেদ নেই। বঙ্গের সমাজজীবনে অতীত ও বর্তমান ব্যবস্থার মধ্যে কত অধঃপতন হয়েছে, তা সর্বক্ষেত্রে আচার-আচরণ দিয়ে আমরা বুঝিয়ে দিচ্ছি। সেখানে শিষ্টাচার, বিনয়, নম্রতার পরিবর্তে অসহিষ্ণুতা যেন দৈনন্দিন সঙ্গী হয়ে উঠছে। তাই গোখলের সে দিনের কথা আজ যেন আমাদের কাছে কটাক্ষের সমান।
আজ প্রশ্ন একটাই— আমরা কি আত্মসমীক্ষা, আত্মসমালোচনা ও আত্মসংশোধনের পথে হাঁটব না? অতীতে সর্ব ক্ষেত্রে প্রথম সারিতে থাকা এই বাঙালি জাতি তার হৃতগৌরব পুনরুদ্ধারে সচেষ্ট হবে না? এক সময় যে বাঙালি ছিল সৃষ্টিশীলতার অগ্রদূত, আজ সে অন্যদের অনুকরণ করে। বাঙালি জাতির কাছে এই বিষয়গুলোই আজ ভাবনার বিষয়বস্তু হয়ে উঠুক।
শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, নবদ্বীপ, নদিয়া
ক্ষীণ অগ্রগতি
‘সেই ভেদাভেদ চলছেই’ (১৫- ১১) শীর্ষক অপর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রবন্ধ পড়ে চার দশক আগের সমাজের কিছু প্রথা বা নীতির কথা মনে পড়ে গেল। তখন গ্রামে একটি ছেলে আর একটি মেয়ের রাস্তায়, স্কুল-কলেজে একান্তে কথা বলা অপরাধ হিসাবে গণ্য করা হত। দুই ক্ষেত্রেই অভিভাবকদের প্রথম প্রশ্ন, ছেলেটি বা মেয়েটি কোন জাতের। আন্তঃবিবাহ জনিত ভীতি থেকেই মূলত উঠে আসত এই প্রশ্ন। কত ভালবাসা যে শুধুমাত্র জাতপাতের ভেদাভেদকে কেন্দ্র করে কুঁড়িতেই ঝরে গেছে, তার ইয়ত্তা নেই। আর যদি বা দু’-একটি ব্যতিক্রমী ক্ষেত্রে অসবর্ণ বিবাহ সম্পন্ন হয়েছে, পরবর্তী কালে তাদের কী পরিণতি হয়েছে, তা প্রবন্ধেই উল্লিখিত আছে। সাহিত্য বা চলচ্চিত্র আসলে সমাজেরই চালচিত্র। তথাকথিত এই সমাজ-দর্পণই উঠে এসেছে কালজয়ী সাহিত্যিকদের কলমে।
বর্তমানে আন্তঃবর্ণ বিবাহকে আইনগত ও সামাজিক সুরক্ষা প্রদানের জন্য সরকারি নীতি চালু হয়েছে, পরিবর্তন হয়েছে সামান্য হলেও মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির। সরকারি নীতি, স্বল্পসংখ্যক মানুষের উদারতা জাতিভেদ প্রথার মতো বিষবৃক্ষের শিকড়ে বিশেষ টান দিতে না পারলেও, গ্রামে এখন অসবর্ণ বিবাহ অনেকটাই ডালপালা মেলতে পেরেছে। আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতির হাত ধরে সমাজে জাতিভেদের বেড়া ভেঙে এই যে সামান্য অগ্রগতি, তা ক্ষীণ হলেও মনে আশা জাগায়। তবে এ ভাবে আর কতটুকু? সামগ্রিক পরিবর্তনের জন্য দরকার মানবিক চিন্তাভাবনার প্রসার।
মানবতাবাদের শ্রেষ্ঠ বাণী ‘সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই’। বৈষ্ণব কবি বড়ু চণ্ডীদাসের এই উক্তি অজানা— এমন মানুষের সংখ্যা খুব কম। তবু জাতি-ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্গের বৈষম্য জাঁকিয়ে বসে আছে সমাজের প্রতি স্তরে। মানবতাবাদের এই মহান বার্তা অন্তরে প্রতিষ্ঠিত না হলে জাতিভেদের এই অন্যায় খণ্ডন করা সম্ভব নয়। মানুষের প্রতি মানুষের ভালবাসা, সম্মান ও সাম্যই পারে এই ভেদাভেদ নির্মূল করতে।
কেকা চৌধুরী, হরিপাল, হুগলি
অবৈধ পার্কিং
কামারহাটি পুরসভার ২০ নম্বর ওয়র্ডের অধীন প্রিয়নাথ চ্যাটার্জি স্ট্রিটের বাসিন্দা আমরা। বেশ কিছু দিন হল এই স্বল্পপরিসরের রাস্তাটি অবৈধ পার্কিংয়ের কারণে প্রায় অবরুদ্ধ হয়ে থাকছে। রাস্তাটি আমাদের পুরসভার ১৯ এবং ২০ নম্বর ওয়র্ডের সংযোগকারী রাস্তা হওয়ায় এর গুরুত্ব অপরিসীম। এলাকার বাসিন্দাদের কখনও কোথাও গাড়ি নিয়ে যেতে হলে, সেই গাড়িকেও দূরে দাঁড় করাতে হচ্ছে। বিষয়টি আমাদের পুর-প্রতিনিধিকে জানিয়েছি এবং স্থানীয় থানাকেও (বেলঘরিয়া) চিঠি পাঠিয়েছি। কিন্তু কোনও সাড়া পাইনি। এই সমস্যার সুরাহা কে করবে?
বিজয় অধিকারী, কলকাতা-৫৬
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)