E-Paper

সম্পাদক সমীপেষু: শরতের সঙ্গীত

রেডিয়োর যুগ শেষ হয়ে গেল। পরিবর্তন এল গানের কথা ও সুরে। সবচেয়ে বড় কথা, দূরদর্শন ঘরে ঘরে ঢুকে পড়ার পর রেডিয়ো হয়ে গেল দুয়োরানি। ক্রমশ হারিয়ে যেতে লাগল ‘অনুরোধের আসর’ শোনার স্মৃতি।

শেষ আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০২৫ ০৬:০০

অলক রায়চৌধুরীর লেখা ‘গানই বাঙালির প্রাণের পুজো’ (২৭-৯) প্রবন্ধটি যেন আমাদের মনের কথার আশ্চর্য প্রতিফলন। এ কথা ঠিক যে, পুজোর সঙ্গে ‘পুজোর গান’-এর একটা সম্পর্ক আছেই। আমাদের যৌবনে তখন ছিল হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, উৎপলা সেন, শ্যামল মিত্র, মান্না দে, আরতি মুখোপাধ্যায়, বনশ্রী সেনগুপ্ত, মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়, সতীনাথ মুখোপাধ্যায়, পিন্টু ভট্টাচার্যের যুগ। এঁদের পাশাপাশি আরও কিছু শিল্পী ছিলেন, যাঁদের গানও ছিল আকর্ষণীয়। তখন টিভি ছিল না, তাই রেডিয়োই ছিল পুজোর গান শোনার একমাত্র ভরসা। সেটা ছিল ‘অনুরোধের আসর’-এর যুগ। পুজোর আগে প্রকাশিত হত ‘শারদ অর্ঘ্য’, সেখানে শিল্পীদের ছবি-সহ গানগুলি মুদ্রিত হত। ‘অনুরোধের আসর’-এ সেই গান বাজার আগেই গানগুলো আমাদের মুখস্থ হয়ে যেত। তার পর শুরু ‘অনুরোধের আসর’ শোনার আকুল প্রতীক্ষা। একই সঙ্গে সেটা ছিল গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার, পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়দের যুগ। আহা, কী সব অনবদ্য গান সৃষ্টি হয়েছে এই সময়ের গীতিকারদের কলমে! তেমনই ছিলেন সুরকাররা। সলিল চৌধুরী অন্যতম।

তার পর একটা সময় রেডিয়োর যুগ শেষ হয়ে গেল। পরিবর্তন এল গানের কথা ও সুরে। সবচেয়ে বড় কথা, দূরদর্শন ঘরে ঘরে ঢুকে পড়ার পর রেডিয়ো হয়ে গেল দুয়োরানি। ক্রমশ হারিয়ে যেতে লাগল ‘অনুরোধের আসর’ শোনার স্মৃতি। সময় দ্রুত বদলেছে। কিন্তু স্বর্ণযুগের সেই সব গান শুনলে একটা আশ্চর্য পুলক জাগত মনে। বলতে দ্বিধা নেই, সেই সব গানই কিন্তু ছিল প্রাণের গান। আজও তারা যেমন প্রাণে দোলা দেয়, এখনকার বেশির ভাগ গানে সেটা খুঁজে পাই না। তবে এটাও স্বীকার্য, এই সময়ে কেউ কেউ নিশ্চয়ই চমকে দিচ্ছেন গানে, বা গানের কথায়। তাঁরাই আজ আমাদের ভরসার জায়গা।

বিজয়কুমার দাস, সাঁইথিয়া, বীরভূম

অবিচ্ছেদ্য

অলক রায়চৌধুরীর লেখা ‘গানই বাঙালির প্রাণের পুজো’ শীর্ষক প্রবন্ধ প্রসঙ্গে কিছু কথা। আমরা যারা ষাটের বা সত্তরের দশকে বড় হয়েছি তারা সকলেই জানি যে গান পুজোর আনন্দের সঙ্গে কী ভাবে মিলেমিশে থেকে পুজোর একান্ত অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছিল। রেডিয়োতে সনৎ সিংহের সেই গান বাজত, “এক এক্কে এক/ দুই এক্কে দুই/ নামতা পড়ে ছেলেরা সব/ পাঠশালার ওই ঘরে,/ নন্দীবাড়ির আটচালাতে/ কুমোর ঠাকুর গড়ে।” পুজোর আনন্দে এই গান এক আলাদা মাত্রা এনে দিত। স্কুলের পড়াশোনায় মন বসত না।

পুজোর কিছু দিন আগেই সেই সব পুজোর গান আমরা শুনতে পেতাম রেডিয়োয়। তখন রেডিয়োই ছিল বাঙালি জীবনে একমাত্র বিনোদনের উৎস। পুজোর পর পাড়ায় পাড়ায় হত আধুনিক গানের আসর, যেখানে মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়, বনশ্রী সেনগুপ্ত, উৎপলা সেন, সতীনাথ মুখোপাধ্যায়ের মতো শিল্পীরাও গেয়ে যেতেন, গানের অনুরোধ রাখতেন। এত ধরাছোঁয়ার মধ্যে এসেও তাঁদের বিভা তাতে একটুও কমেনি।

এ ছাড়াও সে সময়ের ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের কৌতুকী নব-রামায়ণ, টেলিফোন বিভ্রাট প্রভৃতি মণ্ডপে মণ্ডপে বাজত, যা এক নির্মল আনন্দে ভরিয়ে তুলত সবার মন।

দিলীপ কুমার সেনগুপ্ত, বিরাটি, উত্তর ২৪ পরগনা

পুজোতেও ভানু

অলক রায়চৌধুরীর লেখা ‘গানই বাঙালির প্রাণের পুজো’ প্রবন্ধটি প্রসঙ্গে ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের কৌতুক-নকশার রেকর্ডটির বিষয়ে উল্লেখ করতে চাই।

জনপ্রিয়তার নিরিখে পুজোয় প্রকাশিত বাংলা গানের সঙ্গে সেই রেকর্ডটিও সমানে পাল্লা দিত। পুজোয় প্রকাশিত বাংলা গানের সঙ্গে মিন্টু দাশগুপ্তের প্যারডি এবং সমসাময়িক নানা বিষয়ে ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের কৌতুক-নকশা সে কালের গানপ্রিয় বাঙালিরা আজও মনে রেখেছে। সম্প্রতি ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের শতবর্ষ পেরিয়ে এলাম। মহান শিল্পীকে জানাই অন্তরের শ্রদ্ধা।

মানস কুমার সেনগুপ্ত, কলকাতা-৭৪

প্রতিবাদ চাই

কবি, গীতিকার জাভেদ আখতারকে উর্দু অ্যাকাডেমির অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়। পরে তা স্থগিত রাখা হয়।

হয়তো ফের মনে করাতে হবে যে আমরা একটি গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ দেশে বসবাস করি। সেই দেশের অন্তর্গত একটি রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অন্তর্গত রাজ্যের উর্দু অ্যাকাডেমি। বামফ্রন্ট সরকারের আমলেই মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য কারও তোয়াক্কা না করেই মাদ্রাসা আধুনিকীকরণের মতো জনকল্যাণমূলক পদক্ষেপ করেন। এই রাজ্য প্রগতিশীলতা, জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা ও বামপন্থী আন্দোলনের পীঠক্ষেত্র, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, রাষ্ট্রগুরু সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো নেতাদের জন্মভূমি, যাঁরা নিজেদের জীবনে ধর্মনিরপেক্ষতাকে এক স্বাভাবিক ও সুবিশেষ স্থান দিয়েছিলেন।

বাম দলগুলি এই ঘটনার তীব্র বিরোধিতা করেছে এবং ভারতের ছাত্র ফেডারেশন এবং অন্যান্য বাম ছাত্র সংগঠন এর প্রতিবাদে দিল্লিতে বক্তৃতার আয়োজন করে। তাতে জাভেদ আখতার আমন্ত্রিত ছিলেন। এই সত্যটুকু বলা দরকার, উর্দু বা যে কোনও ভাষা কোনও মৌলবাদী কট্টরপন্থীর সম্পত্তি নয়। প্রত্যেকটি ভাষা শিল্পকলার উন্মুক্ত উদ্যান, মানুষকে তা সতত বিকশিত করে।

প্রয়াস মজুমদার, কলকাতা-৩৪

ঘোলা জলে

জিএসটি সংক্রান্ত প্রতিবেদন ‘কড়া নজরদারি’ (৫-১০) প্রসঙ্গে আমার কিছু ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা জানাতে চাই।

দুর্গাপূজার দু’দিন আগে স্থানীয় একটি ওষুধের দোকানে লক্ষ করলাম, দোকানের কর্মচারী বোতল কিংবা মোড়কে ছাপা পুরনো এমআরপি যোগ করেই দাম নির্ধারণ করলেন। সামগ্রিক দামের উপর ১০% ছাড় দিলেন, যেটা তাঁরা আগেও দিতেন। জিএসটি ছাড় দিলেন না। জানালেন, “নতুন জিএসটি ছাপা ওষুধ এখনও আসেনি, এলে আপনারা সেই দামে কিনবেন।” বললাম, তা হওয়ার কথা নয়। ২২ সেপ্টেম্বর তারিখ থেকে বাজারে মজুত সব ওষুধের ক্ষেত্রেই জিএসটি হ্রাস কার্যকরী। দোকানের মালিক বললেন, “ডিস্ট্রিবিউটর ২২ তারিখের আগের ওষুধ সরবরাহ বাবদ যে সমস্ত বিল দিয়েছেন, আমার কাছ থেকে তার পুরো টাকাটাই নেবে। ছাড়টা দেব কোথা থেকে!”

পুজোর পরে অন্য একটি দোকান থেকে ওষুধ নিলাম। পুরনো ‘প্রিন্টেড এমআরপি’ থেকে নির্দিষ্ট জিএসটি ছাড় দিয়ে নতুন এমআরপি বিলে ছেপে দিলেন। তবে আগে তাঁরা ক্রেতাকে দামের উপর একটা ১০% ছাড় দিতেন। সেটা মাত্র ৪% করে দিয়েছেন। দুই ক্ষেত্রেই ক্রেতাদের হাতে পেনসিল ছাড়া কিছু রইল কি?

দৈনন্দিন খাদ্যপণ্য যেখান থেকে কিনি, সেখানেও প্যাকেটের উপর ছাপা এমআরপি অনুসারে দাম নিচ্ছে। বিক্রেতা বললেন, ভাল জানেনই না কোন কোন জিনিসের দাম কমেছে। যে দাম দিয়ে জিনিস কিনেছেন, সেই অনুসারে তা বিক্রি করছেন। মজুত থাকা পণ্যের ক্ষেত্রে কেউ ছাড় দিতে বলেনওনি, আর ছাড় দিচ্ছেন কি দিচ্ছেন না সে কথাও কেউ এসে জিজ্ঞাসা করেননি।

ভোগ্যপণ্যের ক্ষেত্রে বিষয়টা আরও গোলমেলে। তার কারণ, যে দামে পণ্য বিক্রি হয় তার সঙ্গে এমআরপি-র যোগাযোগ অত্যন্ত ক্ষীণ। টিভি, ফ্রিজ, ওয়াশিং মেশিন তার বাক্সে ছাপা এমআরপি থেকে এমনিতেই যদি ২৫-৩০ শতাংশ কম দামে বিক্রি হয়, তা হলে সেখানে জিএসটি ছাড়ের সুবিধা পাওয়া গেল কি না, বোঝে কার সাধ্য? সরকারের পক্ষ থেকে দোকানে দোকানে খুব যে কড়া নজরদারি চলছে, এ রকম কিন্তু চোখে পড়েনি বা সংবাদপত্রেও খবর হয়নি। আশা করব আমি যা দেখলাম তা নিশ্চয়ই সামগ্রিক বাস্তবচিত্র নয়। ব্যতিক্রমী দু’-একটা ঘটনা বাদ দিয়ে সাধারণ ভাবে জিএসটি ছাড়ের সুবিধা সবাই ইতিমধ্যেই বাজারজাত সকল পণ্যের ক্ষেত্রে পাচ্ছেন। দেখা যাবে, এই সব কথাবার্তা চলতে চলতেই ২২ সেপ্টেম্বর বা তার পরে প্রস্তুত পণ্য বাজারে চলে আসবে, আর আস্তে আস্তে আগের পুরো বিষয়টা ধামাচাপা পড়ে যাবে।

বিশ্বদীপ কর রায়, কলকাতা-৫৪

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

song Singers lyricist

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy