যদি মানুষ প্রকৃত পক্ষে শ্রমের মর্যাদা দিত, তবে বোধ হয় পশ্চিমবঙ্গের (অন্যান্য রাজ্যের কথা বলতে পারব না) মানুষ বা ছাত্রছাত্রীরা সরকারি চাকরির উপর যেমন নির্ভর করত না, তেমনই, যে কোনও কাজ করতে দ্বিধা বোধ করত না। তবে সেই মর্যাদা যে দেওয়া হয় না, তা আমি রন্ধ্রে রন্ধ্রে অনুভব করছি।
এখন আমি নববারাকপুরের বিটি কলেজ থেকে সাজির হাট অটো চালাই। তার আগে ১৯৮৫ সালে, কোচিং খুলে, পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত বিজ্ঞানের বিষয়গুলি পড়াতাম। যে হেতু সেই সময় প্রতি ছাত্রছাত্রীর প্রদত্ত মাসিক বেতন খুবই কম ছিল এবং তাদের মধ্যে বেশির ভাগের তা-ও দেওয়ার ক্ষমতাই ছিল না, তাই ১৯৯৮ সালে একটি অটো কিনি চালক দিয়ে চালাব বলে। সঠিক চালকের অভাবে, কোচিং বন্ধ করে নিজে চালাতে বাধ্য হই।
কিছু দিন আগে, পুরনো বন্ধুদের অনুরোধে, তাদের সন্তানদের এবং অন্যদের পড়াতে শুরু করি এবং তারা পরীক্ষায় ভাল ফলও করে। অথচ বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে অভিভাবকদের কেউ কেউ আমার কাছ থেকে ছাত্রছাত্রীদের ছাড়িয়ে নিয়ে যান।
অনুসন্ধান করে জানতে পারি, যাদের পড়াই, তাদের অনেক বন্ধুবান্ধব প্রায়ই তাদের বলে, ‘‘তোর স্যরকে অটো চালাতে দেখলাম’’, কেউ কেউ চলতি ভাষায় বলে, ‘‘তোর স্যর তো অটোওয়ালা।’’ এর ফলে ওই ছাত্রছাত্রীরা যেমন লজ্জিত হয়, তেমনই মানসিক যন্ত্রণা ভোগ করে।
যদি অটো না চালিয়ে বেসরকারি সংস্থায় যেমন-তেমন একটা কাজ করতাম, তবে এই সমাজে আমার এবং আমার ছাত্রছাত্রীর এই মানসিক যন্ত্রণা ভোগ করতে হত না।
গৌতম পাল
কলকাতা-১৩১
বন্ধ নয়
‘বন্ধ নয় কেন’ (২৬-১) শীর্ষক চিঠি পড়লাম। স্পষ্ট ভাষায় এ কথাই বলতে হয়, সাধারণ মানুষ আর বন্ধ চাইছেন না। সমর্থনও করছেন না। তাই বন্ধ আর কোনও দিনই নয়। পত্রলেখক বন্ধ এবং ধর্মঘট সমার্থক করে ফেলেছেন। কিন্তু ধর্মঘট বা স্ট্রাইক সংবিধান ও আইন স্বীকৃত। কিন্তু বন্ধ-এর কোনও আইনি স্বীকৃতি নেই। মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট একাধিক মামলার রায়ে বন্ধকে বেআইনি ঘোষণা করেছে। কর্তৃপক্ষকে নোটিস দিয়ে ধর্মঘট বা স্ট্রাইক করা যায়, যদি ওই নোটিস পাওয়ার পর কর্তৃপক্ষ সমস্যা মেটাতে সমর্থ না হন। কিন্তু বন্ধের ফলে দেশের আর্থিক ক্ষতি হয়, মানুষও নানা সমস্যায় পড়েন।
গত ৮-১-১৯ এবং ৯-১-১৯, পর পর দু’দিন বিভিন্ন সংগঠন শ্রমিক ধর্মঘট ডেকেছিল। কিন্তু ওই ধর্মঘটকে যখন বন্ধের রূপ দেওয়ার চেষ্টা করা হল, তখনই সেই বন্ধ সাধারণ মানুষ ব্যর্থ করে দিলেন। ওই দু’দিন দেশে ডাক বিভাগ, ব্যাঙ্ক, কলকারখানায় ধর্মঘট হয়েছে, কিন্তু জনজীবনে তার প্রভাব পড়েনি। সকালের দিকে ট্রেন অবরোধের চেষ্টা হয়েছিল। পথ অবরোধেরও চেষ্টা হয়। কিন্তু সব অবরোধই কিছু ক্ষণ পর উঠে যায়। দোকান-বাজার সব কিছুই খোলা ছিল। সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে সাধারণ মানুষ আর বন্ধ চাইছেন না।
পত্রলেখক ১৯৯৮ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি এসইউসিআইয়ের ডাকা বাংলা বন্ধের সাফল্যের কথা উল্লেখ করেছেন। কিন্তু ১৯৯৮ সালের সঙ্গে ২০১৯ সালের তুলনা টানা অযৌক্তিক। আশি ও নব্বইয়ের দশকে যে রাজনৈতিক দলই বাংলা বন্ধ ডাকত, সেই বন্ধ সফল হত। মানুষ বাংলা বন্ধকে একটা বাড়তি ছুটির দিন হিসাবেই দেখতেন। তখন সরকারি মদতেও বাংলা বন্ধ হত।
কিন্তু ২০১১ সালে রাজ্যে পালাবদলের পর থেকেই চিত্রটা বদলাতে শুরু করেছে। সাধারণ মানুষই বন্ধ ব্যর্থ করেছেন। পত্রলেখক তাঁর চিঠিতে বন্ধকে সাধারণ মানুষের লড়াইয়ের শক্তিশালী হাতিয়ার বলে উল্লেখ করেছেন। এক সময় বন্ধ শক্তিশালী ও ধারালো হাতিয়ার থাকলেও বর্তমানে বহু ব্যবহারে বন্ধ নামক অস্ত্রটি ভোঁতা হয়ে গিয়েছে। এখন এই রসিকতা চালু হয়েছে যে বন্ধ সফল করতে হলে ‘‘মাঝরাত্রি থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত বন্ধ ডাকতে হবে।’’
সমর দাস
চুঁচুড়া, হুগলি
মার্ক্স
‘অশ্রদ্ধা’ শিরোনামে প্রকাশিত লন্ডনের হাইগেট সমাধিক্ষেত্রে হাতুড়ির ঘায়ে নষ্ট হওয়া কার্ল মার্ক্সের সমাধি-ফলকটির ছবি (৬-২) প্রসঙ্গে জানাই, বছর পাঁচেক আগে ইংল্যান্ডে বেড়াতে যাওয়ার সুবাদে ওই সমাধিক্ষেত্রটিতে পা-রাখার সুযোগ ঘটেছিল। তখনই জানতে পারি, ১৮৮৩ সালে মার্ক্সের মৃত্যুর পর তাঁকে এই সমাধিক্ষেত্রে তাঁর স্ত্রী জেনির সমাধির পাশেই সমাহিত করা হয় এবং সেখানে একটি সমাধি-ফলকও লাগানো হয়েছিল। অনেক অনুসন্ধানের পর শুকনো পাতাপত্রে ঢাকা সেই সমাধিটি খুঁজে বার করতে সক্ষম হই। এবং সেই সমাধিক্ষেত্রের প্রহরীর কাছে জানতে পারি, ১৯৫৪ সালের এক রাতে এক দল দুষ্কৃতী মার্ক্সের দেহাবশেষ-সহ কফিনটি মাটি খুঁড়ে তুলে নিয়ে যায়। তারও বছর দুয়েক বাদে সেই সমাধিস্থলের অনতিদূরে গ্রানাইট পাথরে গড়া মার্ক্সের একটি আবক্ষ মূর্তি বসানো হয় এবং তাতে একটি নতুন ফলক লাগানো হয়। সেই ফলকটিই সম্প্রতি দুষ্কৃতীর হাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
গণেশ বসু
কলকাতা-৩২
পরিমল দে
‘বাংলার ক্রীড়া প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের জন্য অনুদান রাজ্য সরকারের’ (২৯-১) শীর্ষক সংবাদে দেখলাম, রাজ্যের বিভিন্ন খেলার যে সকল সফল প্রাক্তন ও বর্তমান খেলোয়াড়কে নানা সম্মানে সম্মানিত করা হয়েছে তাঁদের মধ্যে ‘বাংলার গৌরব’ নামক সম্মানে ভারতের কিংবদন্তি প্রাক্তন ফুটবল নক্ষত্র পরিমল দে-র নামটি আশ্চর্যজনক ভাবে নেই।
তিনি কলকাতার বালি প্রতিভা (১৯৬০), উয়াড়ি (১৯৬১-৬৩), ইস্টবেঙ্গল (১৯৬৪-৭০ এবং ৭৩), মোহনবাগান (১৯৭১-৭২) দলে খেলেছেন। বাংলার হয়ে সন্তোষ ট্রফি (১৯৬৩-৬৯), ভারতের হয়ে ১৯৬৬ মারডেকা ও এশিয়ান গেমস, ১৯৬৫-তে দেশের মাটিতে রাশিয়ার বিপক্ষে পাঁচটি প্রদর্শনী ম্যাচ। ১৯৬৭-তে দেশের হয়ে শুভেচ্ছা সফরে বার্মার বিরুদ্ধে খেলা। এ ছাড়াও খেলেন হাঙ্গেরি, চেকোশ্লাভাকিয়া, পশ্চিম জার্মানির বিপক্ষে।
১৯৭০-এ আইএফএ শিল্ডে ইরানের প্যাস ক্লাবের বিপক্ষে তাঁর অবিস্মরণীয় গোলে ইস্টবেঙ্গলের শিল্ড জয়ের ইতিহাস চিরকাল স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
সুদীপ্ত মুখোপাধ্যায়
খড়দহ, উত্তর ২৪ পরগনা
এত দেরি
গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজগুলোর বি এ, বি এসসি, বি কম-এর পার্ট-১-এর রেজ়াল্ট ৯ মাস কেটে যাওয়ার পরেও প্রকাশিত হল না। রেজ়াল্ট প্রকাশ করা নিয়ে এই বিলম্ব গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এই প্রথম।
দেড় মাস আগে এক বার রেজ়াল্ট প্রকাশ করার পরেই মাত্রাতিরিক্ত ফেলের হার দেখেই রেজ়াল্ট প্রকাশ বন্ধ করে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ২০১৮-র পরীক্ষার ফলাফল ফেব্রুয়ারি মাসেও প্রকাশিত না হওয়ায় প্রায় ১২-১৪ হাজার ছাত্রছাত্রীর জীবনে নেমে এসেছে ঘোর অনিশ্চয়তা।
আবার ফার্স্ট ইয়ারের ভর্তিও চলল ৮-৯ মাস ধরে, অন্তত ৫ বার ভর্তির তারিখ ঘোষণা করে। ৮-৯ মাস পরে যারা ভর্তি হল, তাদের রেজিস্ট্রেশন এখনও হল না। ছাত্র ভর্তি এবং রেজ়াল্ট নিয়ে এত দীর্ঘসূত্রতার কারণে সেশন পিছিয়ে যেতে পারে দেড় বছরেরও বেশি। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে রেজ়াল্টের ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে, জবাব পাওয়া যায়, কাজ চলছে। আর দুই-আড়াই মাস বাদেই লোকসভার নির্বাচন। পরীক্ষা যদি লোকসভা নির্বাচনের পরেই হয় তা হলে সেশন পিছিয়ে যাবে প্রায় ২ বছর।
শান্তনু বসু
ইংরেজ বাজার, মালদহ
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy