E-Paper

সম্পাদক সমীপেষু: বিভেদবাণ ব্যর্থ এখানে

বঙ্গ রাজনীতির অলিন্দে যৌবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়টা কাটিয়ে দেওয়ার পর অভিজ্ঞ এক জন রাজনীতিবিদ যদি সেই রাজ্যের সাধারণ মানুষের অন্তরের কথা বুঝতে না পারেন, তবে তাঁকে সফল রাজনৈতিক নেতা বলা যায় কি?

শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০২৫ ০৬:৫১

‘দুর্জয় ঘাঁটি’ (১৫-১০) শীর্ষক সম্পাদকীয় প্রবন্ধের পরিপ্রেক্ষিতে কিছু কথা। ২০২৬ বিধানসভা নির্বাচনের অব্যবহিত পূর্বে এই রাজ্যের রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের জন্য প্রধান বিরোধী দলের চেনা অস্ত্রের ব্যবহারে একটুও ত্রুটি ধরা পড়ছে না। রাজ্য জুড়ে যেখানেই যে ঘটনা ঘটছে, সেই ঘটনাকেই সাম্প্রদায়িক চশমায় দেখার কৌশল একদা শাসক দলের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ নেতা, অধুনা বিরোধী দলনেতা রপ্ত করে নিয়েছেন। বঙ্গ রাজনীতির অলিন্দে যৌবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়টা কাটিয়ে দেওয়ার পর অভিজ্ঞ এক জন রাজনীতিবিদ যদি সেই রাজ্যের সাধারণ মানুষের অন্তরের কথা বুঝতে না পারেন, তবে তাঁকে সফল রাজনৈতিক নেতা বলা যায় কি? আগেও বলা হয়েছে, আরএসএস-এর অন্দরের মানুষ না হলে বিজেপিতে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আশা ক্ষীণ। এত সতর্কবার্তার পরেও তিনি সত্যটি বুঝতে নারাজ।

দুর্গাপুরে বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের পড়ুয়া নির্যাতন নিয়ে রাজনীতি তুঙ্গে। রাজ্যে আইনের শাসন নেই, এই রাজ্য অপরাধীদের মুক্তাঞ্চল ইত্যাদি প্রচারের পাশাপাশি অপরাধীদের জাত-বিচার প্রাধান্য পেয়েছে বিরোধী শিবিরে। আগে নেতারা মুখে যতই গণতন্ত্রের কথা বলে থাকুন, অন্তরে বিভাজন ছিলই। সাম্প্রদায়িক রাজনীতির লভ্যাংশ দু’হাত ভরে পেয়েছে বিজেপি, গোবলয় সব সময় বিজেপির পাশে থেকেছে। স্বভাবতই ‘হিন্দু হিন্দি হিন্দুস্থান’ স্লোগানে আস্থা রেখেছে বিজেপি এবং সারা ভারত জুড়ে প্রভাব বিস্তার করেছে। তাদের জয়যাত্রা রথযাত্রা দিয়ে শুরু হয়ে রামমন্দির নির্মাণ পর্যন্ত এক সুদীর্ঘ পথ পরিক্রমা করে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে ধর্মের সিলমোহর বসাতে উদ্যত। দু্ষ্কৃতী কিংবা উগ্রপন্থী মানেই মুসলিম— এই প্রচার অব্যাহত পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে। আশার কথা, প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হচ্ছে না এই সব প্রচার। পশ্চিমবঙ্গের মানুষ সাম্প্রদায়িক রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়, রাজনীতি সচেতন কিন্তু ধর্মীয় বিদ্বেষ সমর্থন করে না। ইদ আর দুর্গাপুজোর পার্থক্য করে না, স্কুল-কলেজের বন্ধুত্বে জাতিভেদ ফাটল ধরাতে পারে না। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তাই বার বার ব্যর্থ হন।

নজরুল ইসলাম, লালন ফকির, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আর শরৎচন্দ্রের বাংলায় বিভাজনের রাজনীতি যে ফলপ্রসূ হতে পারে না, সেটা বিরোধী দলনেতা যত তাড়াতাড়ি উপরমহলে বোঝাতে পারবেন ততই মঙ্গল।

রাজা বাগচী, গুপ্তিপাড়া, হুগলি

ধর্মের তাস

‘দুর্জয় ঘাঁটি’ শীর্ষক সম্পাদকীয়ের পরিপ্রেক্ষিতে কিছু কথা। বিলকিস বানো ধর্ষণ কাণ্ডে মুক্তিপ্রাপ্ত অন্যতম অপরাধীর বক্তব্য ছিল, আমাদের ধর্মের লোক ও-সব করে না, আমরা নির্দোষ। অর্থাৎ বিদ্বেষ বিভাজনের আড়ালেই বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা যে ধর্ষণ ইত্যাদি জঘন্য অপরাধকাণ্ড অন্য একটি সম্প্রদায়ের লোকেদের দ্বারা সংঘটিত হয়। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং ভারতীয় জনতা পার্টির তথ্য ও প্রযুক্তি কমিটির আহ্বায়ক অমিত মালবীয় রাজ্যে সংখ্যালঘু তোষণের স্বরূপটিকে উন্মোচিত করতে দুঃখজনক পরিস্থিতিকে বিদ্বেষ বিভাজনের বিষাক্ত রাজনীতির স্বার্থে ব্যবহার করতে চাইলেন।

আমাদের দেশের বিদ্বেষ বিভাজনের বিষে জারিত রাজনীতিতে সর্বদাই জনপরিসরে যে কোনও ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রদায়ভিত্তিক ভাষ্য তৈরি করাই একটা রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। সম্পাদকীয়তে যথার্থই বলা হয়েছে, বিজেপির দলীয় নেতৃত্বের মুখে পঞ্চম অভিযুক্তের নাম শোনা যায়নি হিন্দু বলে। কিংবা শোনা যায়নি চার সংখ্যালঘু অভিযুক্তের এক জনের দিদির কথা, যিনি নিজে পুলিশকে জানিয়ে দিয়েছেন তাঁর ভাইয়ের গোপন আস্তানার কথা। অর্থাৎ শাসক বারংবার ধর্মের তাসটি খেলতে গিয়ে বেআব্রু হয়ে পড়েন।

সংবিধান অনুসারে এখন আমাদের দেশ গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষ একটি রাষ্ট্র। সেখানে অপরাধীদের যদি ধর্মীয় বাতাবরণে দেখার প্রচেষ্টা শুরু হয় তা হলে তা অত্যন্ত বিপজ্জনক। একতাধর্মী সংস্কৃতি প্রবণতা গেরুয়া দলগুলিকে কট্টর ভারত দর্শনে উন্মত্ত করে তুলেছে। এই উত্তেজনার উৎস উগ্র হিন্দুত্ব। এই জঙ্গি হিন্দুত্ববাদীরা হিন্দুদের হিন্দু সংস্কৃতির মধ্যে পুনর্জাগরিত দেখতে চায়। শুদ্ধ, নিরঙ্কুশ, স্বয়ংসম্পূর্ণ হিন্দুকে শয়নে স্বপ্নে, সংসারে সমাজে সর্বত্র হিন্দু হতে হবে। গেরুয়া শিবির দেশের বিদ্বেষ বিভাজনের বিষে এখন শুধুই ধর্মীয় আবেগের বন্যা দেখতেই অভ্যস্ত। একদা ধর্মীয় আন্দোলনের ধ্বজা ধরা দলটি ধর্মের নামে দেশ জুড়ে এখন হিন্দুত্বের উন্মাদনা সৃষ্টি করতেই যেন বিদ্বেষ বিভাজনের রাজনীতিটি সুকৌশলেই জিইয়ে রাখতে চায়। এই নেতারা সেই রাজনীতিরই প্রতিনিধিত্ব করছেন। কোনও একটি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের লোকজনের উপর ঘৃণ্যতম অপরাধগুলির দায় চাপাতে থাকলেই কি দেশের সংখ্যাগুরুরা মহৎ প্রমাণিত হয়ে যান?

সঞ্জয় রায়, দানেশ শেখ লেন, হাওড়া

বিভেদের রাস্তা

দুর্গাপুরের ঘটনায় ধৃতদের মধ্যে কয়েক জন মুসলমানকে সাম্প্রদায়িক বিভেদে দাগিয়ে দিয়ে বিজেপি নেতাদের বিষোদ্গার করা অত্যন্ত নিন্দনীয়। ধর্মীয় মেরুকরণের খেলায় বিজেপি প্রশ্নাতীত ভাবে দড়। বিজেপি নেতাদের মনে রাখা দরকার অপরাধীরা যে ধর্মের লোকই হোক, তাদের একটাই পরিচয় তারা অপরাধী। আইনের বিচারে তাদের সমান সাজা পাওয়া দস্তুর। বিরোধী নেতার উচিত ঘটনার নিন্দা করা এবং অপরাধীদের কঠোর শাস্তির দাবিতে সরব হওয়া। কিন্তু তিনি বাঁকা পথে বিভাজনের রাজনীতি করে হিন্দু সম্প্রদায়কে উজ্জীবিত করার চেষ্টা করলেন। লক্ষ্য, আগামী দিনে রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন। অপরাধী কোনও সম্প্রদায়ভুক্ত হলেই গোটা সম্প্রদায়কে অপরাধী বলা যায় না। এই হুঙ্কারের ভাষা কি সমগ্র হিন্দু সম্প্রদায়ের ভাষা হতে পারে? বিজেপি নেতাদের এই ধর্মান্ধ রাজনীতির একটাই লক্ষ্য নির্বাচন। হিন্দু আবেগকে কাজে লাগাতে তাঁরা তৎপর। কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না এই বাংলা রবীন্দ্রনাথ-নজরুলের বাংলা, ঐতিহ্যবাহী সম্প্রীতির বাংলা।

সারনাথ হাজরা, হাওড়া

হতাশাব্যঞ্জক

‘ভেঙে পড়ার আগে’ (পৃ ৪, ২৬-৯) শীর্ষক সম্পাদকীয়টি বিভ্রান্তিকর এবং তথ্যগত ভাবে ঠিক নয়। এই প্রবন্ধে মেট্রো রেলওয়ের সামগ্রিক কাজকর্ম বিষয়ে যে নৈরাশ্যবাদী দৃষ্টিভঙ্গি ব্যক্ত করা হয়েছে, তা দেখে আমরা বিস্মিত। মেট্রো রেলওয়ে কলকাতার গর্ব, এটি দেশের মধ্যে সর্বপ্রথম মেট্রো পরিষেবা। এটির বয়স ৪১ বছর এবং স্বাচ্ছন্দ্যময় যাত্রা নিশ্চিত করতে বর্তমানে এই পরিষেবা উন্নততর এবং সংযোগকারী পরিকাঠামোকে মজবুততর বানানোর এক প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে চলছে। ইতিমধ্যেই লাইনগুলিতে আনুমানিক ১৫০১.৭৯ কোটি টাকা ব্যয়ে সিবিটিসি (কমিউনিকেশনস-বেসড ট্রেন কন্ট্রোল)-র কাজের জন্য অর্থ মঞ্জুর করেছে রেলওয়ে বোর্ড। সিভিল এঞ্জিনিয়ারিং সংক্রান্ত নির্মাণসামগ্রীর জন্যও একই রকম বরাদ্দ বিষয়ে ভাবনাচিন্তা চলছে। পুজো মরসুমে মেট্রো বিনা ঝঞ্ঝাটে যাতায়াত করেছে ৪৬.৬০ লক্ষ যাত্রী নিয়ে, যা গত বছরের তুলনায় ১৩.২৫ শতাংশ বেশি। অথচ, সেই বিষয়ে উৎসাহব্যঞ্জক কিছু উচ্চারিত হয়নি।

মেট্রোর দক্ষতা বিষয়ে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি হাজার হাজার মেট্রোকর্মীর কাছে খুবই হতাশাব্যঞ্জক। তাঁরা এই উৎসবের সময় দিন-রাত পরিশ্রম করেছেন, যাতে নিত্যযাত্রীরা কোনও রকম অসুবিধায় না পড়েন।

একান্ত অনুরোধ, কোনও ভুল তথ্য না ছড়িয়ে বা সরল মানুষের মনের সন্দেহকে উস্কে না দিয়ে আপনারা যাচাই করে সঠিক তথ্য পরিবেশন করুন।

এস এস কান্নান, মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক, মেট্রো রেলওয়ে, কলকাতা

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

RSS Politics

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy