পশ্চিমবঙ্গে বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) ফর্ম ভর্তিতে কিছু সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তা হচ্ছেও। বর্তমান ভোটার তালিকা অনুযায়ী ফর্মের উপরিভাগ মুদ্রিত আর সেইমতো ভোটারের নাম, এপিক নম্বর সমেত তার নীচের অংশটিও পূরণ করা যাচ্ছে। সমস্যার শুরু পূর্বের অর্থাৎ ২০০২-এর এসআইআর অনুসারে তৃতীয় অংশ পূরণে। গত শতকে প্রথম যে ভোটার কার্ড হয়, তা রেশন কার্ডের নাম নিয়ে। সেখানে ব্যক্তির প্রথম ও মাঝের নাম ঠিক থাকলেও পদবি বা উপাধি নিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। পঞ্চাশ-ষাটের দশকে জন্ম শংসাপত্র না থাকায় বাড়ির রীতি মেনে অনেকের রেশন কার্ডে ‘ব্যানার্জি’, ‘চ্যাটার্জি’, ‘গাঙ্গুলি’ ইত্যাদি লেখা হত, যা ভোটার কার্ডেও রয়ে গেছে কয়েক দশক, এমনকি ২০০২-এর এনুমারেশনের সময়েও। পরে আধার কার্ড তৈরির সময় এগুলো বোর্ডের সার্টিফিকেট অনুসারে বন্দ্যোপাধ্যায়, চট্টোপাধ্যায় ইত্যাদি হয়, যা পরবর্তী ভোটার কার্ডে প্রতিফলিত। সে রকম ইংরেজি বানানের ক্ষেত্রে ‘ঘোষ’, ‘বোস’, ‘মিত্র’, ‘রায়’, ‘সরকার’ ইত্যাদি বানান বা ‘বসু’, ‘বাসু’, ‘রয়’, ‘রে’ প্রভৃতি পদবি নামে ভিন্নতা রয়েছে।
অনেক ক্ষেত্রে ভোটারের পদবি আর অভিভাবকের পদবিতে এ ধরনের গরমিল থাকে। সংখ্যালঘু ও জনজাতি সম্প্রদায়ের সমস্যা রয়েছে পদবি আর তার বানানে। পদবি, বানান বাংলা আর ইংরেজি হরফে ভিন্ন হয়ে গেছে অনেক ক্ষেত্রে। পদবি, উপনাম ও উপাধি নিয়ে সমস্যায় পড়ছেন প্রবীণেরা। এ সমস্যা সমাধানের একটা উপায় অবশ্যই করতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। মনে রাখতে হবে, আগের এবং পরের উপাধি ‘সমার্থক, এক ও অভিন্ন’। কথাটি ভোটারকে ফর্মে লিখতে অনুমতি দেওয়া হোক অথবা সেটা মেনে নিয়ে কমিশন প্রচারমাধ্যমে জানাক। ফর্ম এই কারণে বাতিল যেন না হয় বা ভোটারকে ডেকে না পাঠানো হয়, কারণ অনেকেই শারীরিক কারণে ছোটাছুটি করতে অপারগ।
অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা-১০৪
মহার্ঘ বিমানভাড়া
বর্তমানে বিমান পরিষেবার ক্ষেত্রে ‘ডায়নামিক ফেয়ার’-এর মতো যে নীতি চালু হয়েছে, তা কতটা অমানবিক হতে পারে, উত্তরবঙ্গের বন্যাকবলিত স্থান থেকে ফিরতে চাওয়া পর্যটকদের কল্পনাতীত সঙ্কট থেকেই বোঝা গিয়েছে। মাঝখান থেকে ব্যবসায়িক সংস্থা প্রদত্ত সুযোগ-সুবিধা যাঁরা পান, তাঁরা ব্যতীত অন্যরা পড়লেন মুশকিলে। বিশেষ প্রয়োজনে যাঁদের ভ্রমণ করতে হয় তাঁদের সময়কে প্রাধান্য দিতে গিয়ে ভাড়ার কারণে পকেটে টান পড়ে। এই নীতি যখন শুরু হয়, তখন উৎসবের মরসুমে কিংবা সন্তানদের স্কুল ছুটির সময় ভাড়া বাড়ার আশঙ্কা করেছিলেন সাধারণ মানুষ। কিন্তু অদ্ভুত ভাবে এখন বিমানভাড়া যে ভাবে চড়ে থাকে, তাতে মনে হয় সারা বছর ‘ডায়নামিক ফেয়ার’কে পুঁজি করেই বিমান সংস্থাগুলো ভাড়া আদায় করছে যাত্রীদের থেকে। যে-হেতু সরকারের তরফ থেকে এই বর্ধিত ভাড়ার কোনও ঊর্ধ্বসীমা নির্ধারণ করা হয়নি, তাই সুযোগ বুঝে বিমান সংস্থাগুলি নিজেদের খেয়ালখুশি মতো বিভিন্ন রুটে বিমানভাড়া নিয়ে চলেছে।
দুঃখের বিষয়, উত্তরবঙ্গে বন্যার সময়ও বিমান সংস্থাগুলি কোনও রকম সহানুভূতি না দেখিয়ে নির্দয় ভাবে ভাড়া তিন থেকে চার গুণ অবধি বাড়িয়ে রাখে। উপায়ান্তর না থাকায় অনেককে ওই দামেই টিকিট কিনতে হয়েছিল। বিমানের পর বেসরকারি বাস, এমনকি কিছু ট্রেনের ক্ষেত্রেও একই নীতি চালু হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বহুকাল ধরেই আলোচনা চললেও সরকারকে এই বিষয়ে নীরব থাকতেই দেখা যাচ্ছে। তার মানে কি ধরে নিতে হবে যে সরকারেরও এই বিষয়ে প্রশ্রয় রয়েছে? যদি সরকার সত্যিই সাধারণ মানুষের কথা ভাবতে চায়, তবে অবিলম্বে সর্বক্ষেত্রেই ‘ডায়নামিক ফেয়ার’ নীতি বন্ধ করা প্রয়োজন।
সুব্রত সেনগুপ্ত, কলকাতা-১০৪
খামতি
বর্তমানে ডিজিটাল লেনদেনের মাধ্যম সারা পৃথিবীতে ব্যবহারকারীদের মধ্যে যথেষ্ট জনপ্রিয়। আমিও নানা ধরনের টাকাপয়সার লেনদেন তথা অন্যান্য সরকারি ও বেসরকারি পরিষেবা পাওয়ার কাজটি ডিজিটাল মাধ্যমে করে থাকি। এ ক্ষেত্রে দেখেছি, কেন্দ্রীয় সরকার পরিচালিত ডিজিটাল ব্যবস্থার সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ সরকার পরিচালিত ডিজিটাল ব্যবস্থাপনার পার্থক্য। কেন্দ্রীয় সরকার পরিচালিত ডিজিটাল ব্যবস্থার দায়িত্বপ্রাপ্তরা এই ব্যবস্থাকে মসৃণ রাখতে সদা তৎপর। তাই উপভোক্তা কোনও অসুবিধার কথা তাঁদের মেল আইডিতে (আইআরসিটিসি, ইউপিআই, ইউআইডিএআই, ইন্ডিয়াপোস্ট ইত্যাদি) পাঠালে, তাঁরা তৎপরতার সঙ্গে সমস্যার সমাধান করেন এবং ‘ফিডব্যাক’ ফর্ম উপভোক্তার মেল আইডিতে পাঠিয়ে দেন। যে কোনও পরিষেবার ক্ষেত্রটি এমন মসৃণ হওয়াই কাম্য।
কিন্তু এ রাজ্যে অনলাইনে কোনও টাকা অর্থাৎ জমির খাজনা, পুরসভার সম্পত্তি করের টাকা ইত্যাদি যথাযথ ভাবে পাঠিয়ে দেওয়ার পরও যদি কোনও সমস্যা হয়, তার সমাধান কী ভাবে হবে, সে ব্যাপারে দায়িত্বপ্রাপ্তরা অনেক সময়ই নীরব ভূমিকা পালন করেন। কোনও কোনও অ্যাপ তো আবার সহজে খুলতেই চায় না, যদিও ঢাকঢোল পিটিয়ে এগুলির যথেষ্ট প্রচার করা হয়। আর এই সব সমস্যা সমাধানের জন্য যখন সংশ্লিষ্ট দফতরের মেল আইডি-তে (যেমন, পেনশন, সম্পত্তি কর সংক্রান্ত) অভিযোগ জানানো হয়, তখন অনেক সময়ই সেখান থেকে কোনও ব্যবস্থা করা হয় না, এমনকি কিছু সময় সৌজন্য দেখিয়ে কোনও উত্তরও দেওয়া হয় না।
কমলেন্দু ঘোষ, নতুনডিহি, ঝাড়গ্রাম
অন্য বাস্তব
পূর্ব রেলওয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিধাননগর রোড স্টেশনে কয়েকটি এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রাবিরতি বন্ধ করা হচ্ছে। কারণ হিসেবে পরোক্ষ ভাবে বলা হচ্ছে— এই স্টেশনে পর্যাপ্ত টিকিট বিক্রি হয় না। কিন্তু বাস্তব সম্পূর্ণ অন্য কথা বলে। বিধাননগর থেকে অসংখ্য যাত্রী প্রতি দিন এই এক্সপ্রেস ট্রেনগুলিতে ওঠানামা করেন। কিন্তু সমস্যা হল, এই এক্সপ্রেস ট্রেনের টার্মিনাল শিয়ালদহ হওয়ায়, অনলাইন বা কাউন্টারে টিকিট কাটলে অনেক যাত্রী জেনেশুনেই শিয়ালদহ পর্যন্ত টিকিট বুক করেন। কারণ, বিধাননগর ও শিয়ালদহের ভাড়া সমান, অতিরিক্ত কোনও খরচ পড়ে না। কিন্তু বাস্তবে সেই যাত্রীরা ট্রেনে ওঠেন বা নামেন বিধাননগর রোড থেকেই।
ফলে পরিসংখ্যান বলে, বিধাননগরে টিকিট বিক্রি কম। অথচ, এই স্টেশন দিয়ে যাতায়াতকারী অসংখ্য যাত্রী রয়েছেন, তাঁরা শুধু ‘অন্য স্টেশন’-এর নামে টিকিট কাটছেন। এই পরিস্থিতিতে বিধাননগরে ট্রেন না থামানো সমস্যার সমাধান নয়, বরং, শিয়ালদহ স্টেশনে আরও অপ্রয়োজনীয় ভিড় বাড়বে। আর, বিধাননগর সংলগ্ন যাত্রীদের সুবিধা মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। রেল কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন, বাস্তব পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক। টিকিটের তথ্য নয়, রেলযাত্রীদের বাস্তব চলাচলকে গুরুত্ব দেওয়া হোক। প্রয়োজনে অন্য কোনও উপায় ভাবা যেতে পারে কিন্তু যাত্রাবিরতি তুলে দেওয়া কোনও ভাবেই যুক্তিসঙ্গত নয়।
দেবরাজ সরকার, কলকাতা-৫০
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)