E-Paper

সম্পাদক সমীপেষু: ক্রিকেটেরই জয় হল

শুভমন গিলের নেতৃত্বে তরুণ ভারতীয় দলের লড়াইও অনেকটা অপ্রত্যাশিত এই ফলাফল আমাদের বিস্মিত ও মুগ্ধ করেছে। জুগিয়েছে উত্তেজনার রসদ।

শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৫:৫৫

শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের লেখা ‘স্নায়ুযুদ্ধে ইস্পাতের মতো কঠিন’ (৫-৮) ও একই দিনে প্রকাশিত প্রতিবেদন ‘শপথ নিয়েছিলাম, আমিই খেলার মোড় ঘোরাব’ প্রসঙ্গে কিছু কথা। ভারতীয় ক্রিকেটের নতুন তারা মহম্মদ সিরাজ (ছবি)। আজ তিনি দেড়শো কোটি ভারতবাসীর নয়নের মণি। আর হবেন না-ই বা কেন? তিনিই তো টেস্ট সিরিজ় ড্রয়ের কারিগর। ছয় রানে ভারতের রুদ্ধশ্বাস জয় ছিনিয়ে এনে ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নিয়েছেন। দুরন্ত ফর্মে থাকা হ্যারি ব্রুকের ক্যাচ ফেলে যিনি আগের দিনই খলনায়ক বনে গিয়েছিলেন, তিনিই শেষ দিনে ইংল্যান্ডের কফিনে শেষ পেরেকটি পুঁতে দেন। যেন ফিনিক্স পাখির মতো মনোবেদনার আগুনে পুড়ে ছাই থেকে সৃষ্টি করেছেন রূপকথা। পাঁচ ম্যাচের সিরিজ়ে সর্বোচ্চ ২৩টি উইকেট নিয়ে সিরিজ়ে সমতা ফিরিয়ে বিরাট ভূমিকা পালন করেছেন। প্রায় রাতারাতি হয়ে গিয়েছেন ‘ভারত হৃদয় সম্রাট’। কিন্তু ভুললে চলবে না, এই টেস্টেই নৈশপ্রহরী ব্যাটার হিসাবে আকাশ দীপের ৬৬ রানের কথা, ওয়াশিংটন সুন্দরের অলরাউন্ড পারফরম্যান্স-এর কথা। এবং অবশ্যই আসবে যশস্বী জায়সওয়ালের শতরানের প্রসঙ্গ। এ ছাড়া আলাদা করে অবশ্যই উল্লেখযোগ্য কে এল রাহুল, রবীন্দ্র জাডেজা, ঋষভ পন্থের পারফরম্যান্স। সারা সিরিজ়ে তাঁদের নিষ্ঠা, ধারাবাহিকতায় ভারত এ-হেন সাফল্যের স্বাদ পেয়েছে। কে এল রাহুলের ধ্রুপদী ব্যাটিং, ঋষভ পন্থের ভয়ডরহীন ক্রিকেট আর যশস্বীর আগ্রাসনে মুগ্ধ সমস্ত ক্রিকেটপ্রেমী। আর তাতেই এত আনন্দ! এ সিরিজ়ে ভারত বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মাকে পায়নি। শুভমন গিলের নেতৃত্বে তরুণ ভারতীয় দলের লড়াইও অনেকটা অপ্রত্যাশিত এই ফলাফল আমাদের বিস্মিত ও মুগ্ধ করেছে। জুগিয়েছে উত্তেজনার রসদ।

পাশাপাশি মনে রাখতে হবে, শেষ টেস্ট কিন্তু ইংল্যান্ড প্রায় দশ জনে খেলেছে। সিরিজ় নির্ণায়ক এই ম্যাচে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড় বেন স্টোকসকেও পায়নি। ব্যান্ডেজ বাঁধা এক হাত সোয়েটারে গুঁজে রেখে প্রায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ক্রিস ওকস মাঠে নেমে সৃষ্টি করেছেন অনন্য এক নজির। তাঁর দায়বদ্ধতা ও দেশপ্রেমে মুগ্ধ সমগ্র বিশ্ববাসী।

সব মিলিয়ে অসাধারণ ক্রিকেট জাদুর রেশ এখনও কাটেনি ক্রিকেট-বিশ্বে, বহু দিন বাদে তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করা গেল একটা দুর্দান্ত টেস্ট সিরিজ়। সর্বোপরি জয় হল কিন্তু ক্রিকেটেরই। টেস্ট ক্রিকেটের মাহাত্ম্য বোধ হয় এখানেই! ২০০১-এ অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ইডেন টেস্টে ভিভিএস লক্ষ্মণ ও রাহুল দ্রাবিড়ের অবিশ্বাস্য ব্যাটিং এবং হরভজন সিংহের বোলিং-এ ভর করে ভারতের জয় আজও আমাদের স্মৃতিমেদুর করে। কপিল দেব, অনিল কুম্বলে, সচিন তেন্ডুলকর, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, বীরেন্দ্র সহবাগ, মহেন্দ্র সিংহ ধোনি, বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মারাও অবিশ্বাস্য কিছু জয়ের কারিগর ছিলেন। তবে মনে রাখতে হবে ক্রিকেটে ধারাবাহিকতা বজায় রাখাই শেষ কথা এবং অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ ঠিকঠাক দল নির্বাচন। ওভাল টেস্টে ৬ রানে জয় এবং সিরিজ় ড্র আপাতত অনেক প্রশ্নের উত্তর খোঁজা থেকে বিরত রাখলেও কে বলতে পারে ভবিষ্যতে জবাবদিহি করতে হবে না!

এশিয়া কাপে নতুন ফর্ম্যাটে এ বার অন্য এক পরীক্ষা।

সুদেব মাল, তিসা, হুগলি

পুনরুজ্জীবিত

ভারত ও ইংল্যান্ডের মধ্যে আয়োজিত পাঁচ ম্যাচের টেস্ট সিরিজ়টি দর্শক ও ক্রিকেটমোদীদের মনে চিরন্তন হয়ে থাকবে। আধুনিক ডিজিটাল যুগের ব্যস্ততা, দৈনন্দিন জীবনযাত্রার নানাবিধ জটিলতার মধ্যে মানুষের হাতে অবসর বিনোদনের সময় কমে গিয়েছে অনেকটাই। বলা যায়, বিনোদন এখন অন্য রকম হয়ে গিয়েছে। খেলা দেখার আগ্রহ কমতে দেখা যাচ্ছে। আর খেলাটা যদি পাঁচ দিনের টেস্ট ম্যাচ হয় তা হলে দর্শকের অনীহা আরও বেড়ে যায়। তাই টেস্ট ক্রিকেট যখন ক্রমাগত তার প্রাসঙ্গিকতা ও আকর্ষণ হারিয়ে ঝিমিয়ে পড়ছে, ফাঁকা গ্যালারিতে যখন কতিপয় দর্শক দীর্ঘক্ষণ বাদে বাদে একটা বাউন্ডারির শট দেখে হাততালি দিচ্ছেন অথবা দিনশেষে বিনা উইকেটে দু’শো রান উঠতে দেখে বা একটি-দু’টি উইকেটের পতন দেখে নিঃশব্দে বাড়ি ফিরছেন, ঠিক তখনই ক্রিকেটের জন্মভূমিতে ভারত বনাম ইংল্যান্ডের মধ্যে আয়োজিত টেস্ট সিরিজ় ক্রিকেটের যাবতীয় মশলা, বিনোদন, আবেগ ও উত্তেজনাকে ফিরিয়ে আনল। মন্থরতার অপবাদ ঘুচল। টেস্ট ম্যাচ আবারও প্রাণবন্ত ও উজ্জীবিত হয়ে উঠল।

এই ইংল্যান্ড সফর নানা কারণে উল্লেখযোগ্য। হেডকোচ গৌতম গম্ভীরের অভিভাবকত্বে, তরুণ ও অনভিজ্ঞ শুভমন গিলের নেতৃত্বে ভারতসেনা ক্রিকেটের ধাত্রী ভূমি ইংল্যান্ডে পাড়ি দেয়। ব্রিটিশরা ঘরের মাঠে বাউন্স ভরা সবুজ পিচ দিয়ে তরুণ ভারতীয় দলকে স্বাগত জানায়। দল নির্বাচন নিয়ে দেশ ও সমর্থকদের মধ্যে সমালোচনা ছিলই। তায় ইংল্যান্ডের বাজ়বল হুঙ্কারের আবহ, ভারত কিছুটা যেন পিছিয়েই শুরু করল। প্রথম টেস্ট হেরেও গেল। তবে, সবাইকে অবাক করে দ্বিতীয় টেস্টে টিম ইন্ডিয়া দারুণ ঘুরে দাঁড়াল। তৃতীয় টেস্টে ম্যাচ জেতার খুব কাছাকাছি গিয়েও টানটান উত্তেজনার মধ্যে ম্যাচ হেরে গেলাম আমরা। ইংল্যান্ড ২-১ সিরিজ়ে এগিয়ে গেল। চতুর্থ টেস্টে ওয়াশিংটন সুন্দর ও রবীন্দ্র জাডেজার অসামান্য বাটিং দক্ষতায় ভর করে ভারত এই টেস্ট ড্র করতে সক্ষম হয়। মনে রাখতে হবে, ইংল্যান্ড তখনও সিরিজ়ে ২-১’এ এগিয়ে। তাই, সাংঘাতিক উত্তপ্ত আবহে ওভালে পঞ্চম তথা শেষ টেস্ট খেলতে নামে ভারতীয় দল। পরাক্রমী ইংল্যান্ড মাত্র ৬ রানে হেরে যায়।

এমন আকর্ষক সিরিজ় শেষ কবে দেখেছি, মনে পড়ে না। তাই, পাঁচ ম্যাচের টেস্ট সিরিজ়ের ২৫ দিনই গ্যালারিতে উপচে পড়া ভিড় দেখলাম। ক্রিকেটপ্রেমী দর্শকদের ভরপুর বিনোদন, আনন্দ ও শিহরন প্রদানের মাধ্যমে টেস্ট ক্রিকেট প্রমাণ করল যে, সে এখনও অদম্য।

হারান চন্দ্র মণ্ডল, ব্যারাকপুর, উত্তর ২৪ পরগনা

ফিরে আসা

শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের ‘স্নায়ুযুদ্ধে ইস্পাতের মতো কঠিন’ লেখাটির সূত্রে দু’-চারটি কথা। শেষ দিনের ম্যাচের নায়ক বোলার মহম্মদ সিরাজ যখন চতুর্থ দিন ব্রুকের ক্যাচটা ধরেও ভারসাম্য হারিয়ে বাউন্ডারির সীমা পেরিয়ে যান এবং ব্রুক আউট হওয়ার বদলে আরও ছয় রান ইংল্যান্ডের খাতায় যোগ হয়, তখন ভারতের জেতার আশা আরও একটু ক্ষীণ হয়ে গিয়েছিল।

এক সময় ভারতীয় বোলার ও ফিল্ডারদের শারীরিক ভাষা দেখে মনে হচ্ছিল তাঁরা যে হেরে যাবেন এক রকম নিশ্চিত। কিন্তু ওই যে সকলে বলেন ক্রিকেট অনিশ্চয়তার খেলা, তা আরও এক বার শেষ টেস্টে প্রমাণিত হল। সময় যত এগিয়েছে, ততই জয়-পরাজয় নিয়ে দোলাচল, উত্তেজনার পারদও বৃদ্ধি পেয়েছে। অবশেষে দিনের নায়ক সিরাজ যে নৈপুণ্যে মাথা ঠান্ডা রেখে ইয়র্কারে অ্যাটকিনসনের উইকেটখানি উপড়ে দিয়ে জয় ছিনিয়ে আনলেন তা ক্রিকেট ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠবে।

মিহির কানুনগো, কলকাতা-৮১

অকেজো

বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়েতে দক্ষিণেশ্বরমুখী উড়ালপুলটি বারো বছর ধরে বন্ধ। বিমানবন্দরমুখী উড়ালপুলেও ভারী যান চলাচল বন্ধ। ফলে, নীচের রাস্তায় প্রতি দিন অসহনীয় জ্যাম-যন্ত্রণা ভোগ করেন মানুষ। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের এক কিলোমিটারের মধ্যে একটি ফ্লাইওভার বারো বছর বন্ধ এবং আর একটি ফ্লাইওভার ছয়-সাত বছর ধরে আংশিক বন্ধ রয়েছে। ফলে এলাকার যান চলাচলে ভয়ঙ্কর প্রভাব পড়ছে। দুর্ঘটনার আশঙ্কা প্রতি মুহূর্তে। সমস্যার আশু সমাধান প্রয়োজন।

সমীর বরণ সাহা, কলকাতা-৮১

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

indian team india cricket team

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy