Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু: প্রথম সচিত্র বাংলা বই

ওই বছরই (১৮১৬) ফেরিস কোম্পানির প্রেস থেকে প্রকাশিত হয় আরও একটি সচিত্র বাংলা বই— গঙ্গাভক্তিতরঙ্গিণী।

শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০১৮ ০০:১৩
Share: Save:

‘উনিশ শতকের স্বদেশি ছবি’ (কলকাতার কড়চা, ৯-৪) লেখাটিতে বলা হয়েছে, বইয়ের সঙ্গে কাঠখোদাই ছবি ছাপা শুরু হতেও দেরি হয়নি, ১৮১৮-য় সঙ্গীততরঙ্গ বইয়েই ছবি রয়েছে। কিন্তু ১৮১৬ সালে কলকাতার ফেরিস কোম্পানির প্রেসে ছাপা ভারতচন্দ্রের অন্নদামঙ্গল প্রথম সচিত্র বাংলা বই। এতে মোট ছ’টি খোদাই করা ছবি ছিল, প্রতিটি ছবিতে বাংলা ও ইংরেজিতে পরিচয় দেওয়া। তিনটি ছবি কাঠখোদাই— ‘সুন্দরের বকুলতলায় বৈশন’, ‘বিদ্যাসুন্দরের দর্শন’ এবং ‘সুন্দর চোর ধরা’। বাকিগুলি ধাতুখোদাই, দু’টি ছবিতে লেখা শিল্পীর নাম— ‘Engraved by Ramchaund Ray’. (সুকুমার সেন, বটতলার ছাপা ও ছবি)।

ওই বছরই (১৮১৬) ফেরিস কোম্পানির প্রেস থেকে প্রকাশিত হয় আরও একটি সচিত্র বাংলা বই— গঙ্গাভক্তিতরঙ্গিণী। প্রথমেই ছিল মকরবাহিনী গঙ্গার ছবি। এটিও কাঠখোদাই, ছবিতে লেখা ‘Engraved by Ramchaund Ray’। ‘চিত্রখানি এখনকার উড ব্লকের মতো কাষ্ঠখণ্ডের উপর অঙ্কিত হইয়া যন্ত্রের সাহায্যে খোদিত ও তৎপরে কাগজে ছাপা হইয়াছিল।’ (প্রিয়লাল দাস, উনিশ শতকে বাংলা গ্রন্থচিত্রণ বইতে উদ্ধৃত)। সচিত্র বই প্রকাশের নতুন এই ধারার পরবর্তী বই রাধামোহন সেনের সঙ্গীততরঙ্গ (১৮১৮)। এতেও রামচাঁদ রায়ের খোদাই করা কয়েকটি ছবি ছিল।

চঞ্চল বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা-৩০

প্রথম ব্যবচ্ছেদ

দীপঙ্কর ভট্টাচার্যর লেখা ‘ভারতে প্রথম শব ব্যবচ্ছেদ তাঁর হাতে’ (রবিবাসরীয়, ২৯-৪)প্রতিবেদনটিতে কিছু ঐতিহাসিক তথ্যের প্রমাদ ঘটেছে বলে মনে করছি। প্রথমত, প্রতিবেদন অনুযায়ী মেডিক্যাল কলেজে শব ব্যবচ্ছেদ দু’বার হয়েছিল— প্রথম বার ১০ জানুয়ারি, ১৮৩৬, ডেমনস্ট্রেশন হিসেবে; দ্বিতীয় বার, আনুষ্ঠানিক ভাবে ২৮ অক্টোবর ১৮৩৬। এ রকম কোনও তথ্য ঐতিহাসিক ভাবে পাওয়া যায় না। একমাত্র ডা. শঙ্করকুমার নাথের লেখা কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের গোড়ার কথা ও পণ্ডিত মধুসূদন গুপ্ত (২০১৪) গ্রন্থটি ছাড়া আর কোথাও কখনও এ তথ্য উল্লেখিত হয়নি, এবং সে বইয়ে সুনির্দিষ্ট সাক্ষ্যপ্রমাণ ছাড়াই ঘটনার উপস্থাপনা করা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, মধুসূদন গুপ্তই প্রথম শব ব্যবচ্ছেদকারী— এ ধারণাটি স্বাভাবিক ভাবে ধরে নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে আমার বিকল্প গবেষণাপত্র ‘দ্য ফার্স্ট ডিসেকশন কনট্রোভার্সিজ’ ২০১১-র ১০ নভেম্বর ‘কারেন্ট সায়েন্স’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল।

মেডিক্যাল কলেজের প্রথম প্রিন্সিপাল ব্রামলি মেডিক্যাল কলেজের প্রথম বছরের রিপোর্ট তৈরি করেছিলেন। তাঁর অকালমৃত্যুর জন্য (জানুয়ারি ১৮৩৭) নিজে রিপোর্ট পেশ করতে পারেননি। কিন্তু তাঁর সহকর্মী ডা. গুডিভ এবং ডা. ও’শনেসি এ রিপোর্ট দেখে থাকবেন। ফলে রিপোর্টের গন্ডগোল থাকলে তাঁরা শুধরে দিতেন বলে ধরে নেওয়া যায়। ব্রামলি জানাচ্ছেন: ৩১ মার্চ ১৮৩৬ পর্যন্ত অস্থি, মস্তিষ্ক, নার্ভ, লিগামেন্ট, রক্তনালীর গঠন ইত্যাদি ভাল করে শেখানো হয়। ইউরোপে ব্যবহৃত বিভিন্ন অ্যানাটমিক্যাল প্লেট এবং মোমের তৈরি মডেল দিয়ে শিক্ষা চলে। ছাত্ররা ‘স্টারনোক্লিডোম্যাসটয়ডিয়াস’-এর মতো শক্ত শব্দ আয়ত্ত করতে শুরু করে। দ্বিতীয় পর্যায়ের অ্যানাটমি ক্লাস অক্টোবরে শুরু হয়। ব্রামলি জানাচ্ছেন, "on the 28th October … four of the most intelligent and respectable pupils, at their own solicitation, undertook the dissection of the human subject." এখানে at their own solicitation শব্দবন্ধটি লক্ষণীয়। কোনও গাইড বা শিক্ষকের, যেমন মধুসূদনের পথপ্রদর্শনের কোনও রকম উল্লেখ নেই। ব্রামলি আরও বলছেন যে, সামাজিক বিবমিষার ভয়ে তাঁর রিপোর্টে ছাত্রদের নাম প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকছেন। এ বিষয়ে বিস্তৃত যুক্তিনির্ভর আলোচনার জন্য মহেন্দ্রলাল সরকারের (১৮৬৩ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমডি) ‘ক্যালকাটা জার্নাল অব মেডিসিন’-এর জুন, ১৮৭৩ সংখ্যায় ‘দ্য ক্যালকাটা মেডিক্যাল কলেজ, তৃতীয় অংশ’ দ্রষ্টব্য।

ডেভিড আর্নল্ডের মতো গবেষকও জানান যে প্রথম শব ব্যবচ্ছেদের পরে ফোর্ট উইলিয়াম থেকে ৫০টি তোপধ্বনি করা হয়েছিল। তাঁর সূত্র ব্রহ্মানন্দ গুপ্তের প্রবন্ধ। কিন্তু ব্রহ্মানন্দ কোনও তথ্যসূত্র উল্লেখ করেননি। বিপরীতে, প্রমথনাথ বসু তাঁর আ হিস্ট্রি অব হিন্দু সিভিলাইজেশন ডিউরিং ব্রিটিশ রুল (২য় খণ্ড, ১৮৯৪)-এ জানান যে কলেজের গেটগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল "to prevent forcible interruption of that awful act" (পৃ ৩২)। ১৮৯৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নালে মেডিক্যাল কলেজের সার্জারি বিভাগের প্রধান হ্যাভেলক চার্লস তীব্র ভাবে জানান, "yet the Pundit is remembered; his predecessors (ছাত্ররা) are forgotten. Vixere fortes ante Agamemnona." মধুসূদন গুপ্ত নিজে ‘জেনারেল কমিটি অন ফিভার হসপিটাল অ্যান্ড মিউনিসিপাল ইম্প্রুভমেন্টস’-এর দ্বিতীয় সাব-কমিটির সামনে ২৭ ফেব্রুয়ারি, ১৮৩৭-এ সাক্ষ্য দেওয়ার সময় নিজের পরিচয় দিয়েছিলেন যে তিনি মেডিক্যাল কলেজের এক জন পণ্ডিত এবং ডা. গুডিভ এবং ডা. ও’শনেশি-র লেকচার বাংলায় ব্যাখ্যা করে সাহায্য করে থাকেন ইত্যাদি। কিন্তু এটা আশ্চর্যের, এক বছর আগে ঘটে যাওয়া সেই ঐতিহাসিক ঘটনার কোনও উল্লেখ তাঁর বক্তব্যে নেই। কারণ, এ কাহিনির জন্ম হয়েছিল আরও পরে, ১৮৪৮-১৮৫০-এর সময় বেথুনের অলঙ্কারবহুল, অনৈতিহাসিক বিবরণের মধ্য দিয়ে। মধুসূদনের প্রথম জীবনীকার যোগেশচন্দ্র বাগল লিখছেন (হয়তো স্বজাতিপ্রেম থেকে): “মধুসূদন বাদে বেথুনের অপেক্ষা ব্রামলির অন্য সব কথাই অধিকতর প্রামাণ্য বলিয়া মনে করি। একটি কথা উঠিতে পারে, দুই তারিখে দুইটি কার্য সম্পন্ন হইয়াছে কিনা। কিন্তু এরূপ ধারণা করিবার কারণ দেখি না। দুই দিনে দুইটি কার্য সম্পাদিত হইলে— এবং ইহা যুগান্তকারী বলিয়া ব্রামলি ও বেথুন দুইজনেই উল্লেখ করিয়াছেন— ব্রামলি প্রদত্ত বিবরণে নিশ্চয়ই উহার উল্লেখ থাকিত।’’ (সাহিত্যসাধক চরিতমালা, ৯৬)।

জয়ন্ত ভট্টাচার্য রায়গঞ্জ, উত্তর দিনাজপুর

‘ভারতীয়’ বলুন

পণ্ডিত মধুসূদন গুপ্ত-কৃত শব ব্যবচ্ছেদকে লেখক ‘এ দেশে প্রথম’ বললেন কেন? এটা স্বতঃসিদ্ধ যে ইংরেজ চিকিৎসকরা এ দেশে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে নিজে হাতে শব ব্যবচ্ছেদ করে ছাত্রদের শিক্ষা দিতেন। তখন ভারতীয় শিক্ষক বা ছাত্ররা শব স্পর্শ করতেন না। তাই মধুসূদন গুপ্তকে বলা যায় ‘প্রথম ভারতীয়’ হিসেবে শব ব্যবচ্ছেদকারী।

লেখক উল্লিখিত তাঁর চার ছাত্রও (রাজকৃষ্ণ দে, দ্বারকানাথ গুপ্ত, উমাচরণ শেঠ, নবীনচন্দ্র মিত্র) মধুসূদনকে শব ব্যবচ্ছেদে ওই দিন সক্রিয় ভাবে সাহায্য করেন। অথচ, প্রথম ভারতীয় শব ব্যবচ্ছেদকারী‌ হিসেবে মধুসূদনের নাম‌ই শুধু প্রচার করা হল। এর একটা কারণ বিশেষজ্ঞরা অনুমান করেন— হিন্দু সমাজের রোষটা মধুসূদন একাই নিজের কাঁধে নিতে চেয়েছিলেন। এখানেই মধুসূদনের মহত্ত্ব। আর একটি বিষয় উল্লেখ্য। মধুসূদন মেডিক্যাল কলেজের পরীক্ষা দিয়ে ১৮৪০-এ প্রথাগত ডিগ্রি লাভ করেন। কিন্তু তাঁর ওই চার ছাত্র ১৮৩৮ সালেই এই ডিগ্রি পান।

রঞ্জিতকুমার দাস বালি, হাওড়া

কতটুকু ডিএ

‘মহার্ঘভাতা’ (১২-৪) চিঠিতে লেখক লিখেছেন, ক্লাবের বাৎসরিক কিস্তি কমিয়ে সে টাকায় মহার্ঘভাতার কিস্তি দিলে উপকার হয়। সত্যি। কিন্তু ক্লাবগুলিকে বছরে যে অনুদান দেওয়া হয়, তার পরিমাণ ৪ কোটি টাকা। আর কর্মচারীদের ১% ডিএ দিতে গেলে সরকারের খরচ ২৫০ কোটি টাকা। কাজেই ওই টাকা বাঁচিয়ে কতটুকু ডিএ মেটানো সম্ভব?

রতন চক্রবর্তী উত্তর হাবড়া, উত্তর ২৪ পরগনা

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ই-মেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bengali book Pictorial book
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE