বেহালা ইউনিক পার্ক সংলগ্ন এলাকার আশৈশব বাসিন্দা। করোনার সময় থেকে অসুস্থতার কারণে চার বছর ধরে অন্যত্র থাকি। তা হলেও ইউনিক পার্ক এলাকায় প্রতি মাসে কয়েক দিনের জন্য এক বার করে আসি। কয়েক মাস আগে আসার সময় চোখে পড়ল এলাকায় ঢোকার মুখেই একটি মদের দোকান ও বার খোলা হয়েছে। প্রতি সন্ধ্যায় উঠতি তরুণদের আনাগোনা। পাশেই দোকানের ‘বাহুবলী’-রা পাহারায় আছে। অনতিদূরেই তিনটি স্কুল রয়েছে। দেখে শিউরে উঠলাম। শুনেছিলাম প্রতিবাদ হয়েছিল। সর্বস্তরে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছিল। উদ্বোধনের দিন এলাকার লোক বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশ এবং বাহুবলীদের উপস্থিতিতে সব ঠান্ডা করে দেওয়া হয়। এ রাজ্যের সরকার মদের দোকান খোলার পক্ষে, মদের দোকানের আয় সরকারের রাজকোষে জমা পড়ার কারণে। সমাজ-পরিবেশ কলুষিত করার দায় তাদের নেই। স্কুল এলাকায় জনবসতির মধ্যে মদের দোকান খোলা বিধিসম্মত কি না, তা প্রশাসন দেখে না। দেখালেও চোখ বন্ধ করে থাকে। যারা শাসনের দায়িত্বে আছে, এবং নিজেদের ভোটের স্বার্থে নিজেদের এলাকা কড়া-নজরে রাখে, তারাই এতে মদত জোগায়। একের পর এক কাণ্ডে সমাজের ভয়াবহ চিত্র উন্মোচিত হচ্ছে, কিন্তু শাসকের বিবেককে সে সব পীড়া দেয় না। এমনকি স্কুল অঞ্চলেও ঢালাও মদের দোকান খোলার অনুমতি দিয়ে চলেছে তারা। এমনিতে অবশ্য সরকারি স্কুল নিয়ে সরকারের মাথাব্যথা শূন্য। এমন অবস্থায় শিক্ষাবঞ্চিত শিশুরা যে আগামী দিনের দুষ্কৃতী হয়ে উঠবে না, তা কে বলতে পারে?
তপন চক্রবর্তী, কলকাতা-৩৪
বিমার খরচ
‘নিত্যপণ্যে জিএসটি ছাড়-চিন্তা’ (৩-৭) খবরটি পড়ে জানা গেল, সরকার গিজ়ার, ওয়াশিং মেশিন বা ভ্যাকুয়াম ক্লিনারের মতো বৈদ্যুতিক পণ্যের পাশাপাশি জামাকাপড়, চটিজুতো, টুথপেস্ট থেকে খাবারদাবার— বহু ক্ষেত্রে ধার্য পণ্য ও পরিষেবা কর কমানোর কথা ভাবছে। আনন্দের খবর। বেশ কিছু দিন ধরেই বিক্রিবাটা তলানিতে পৌঁছনোয় বিষয়টি চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে নীতি নির্ধারকদের। ভারত এখন বিশ্বের বৃহৎ অর্থনীতিগুলির অন্যতম হলেও নাগরিকদের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের ক্রয়ক্ষমতা যে ক্রমহ্রাসমান ছিল, তা অনস্বীকার্য।
এই উদ্দেশ্যে কিছু দিন আগে আয়কর ছাড় দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তার সুবিধা পেতে এখনও কিছুটা দেরি। তাই এখন পরোক্ষে নাগরিকদের উপর করভার লাঘবের চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু এ প্রসঙ্গে আর একটি জরুরি বিষয়ের প্রতি নীতিপ্রণেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। স্বাস্থ্যবিমার প্রিমিয়াম। এর উপর ধার্য ১৮% জিএসটি। এমনিতেই বয়সকালে বিমার প্রিমিয়াম বেশি হয়। তার উপরে আরও ১৮ শতাংশ জিএসটি দেওয়া প্রবীণদের পক্ষে খুবই কষ্টসাপেক্ষ। যে দেশে সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা ভাল নয়, সেখানে এটুকু মানবিক বিবেচনা কি সরকারের কাছ থেকে মানুষ আশা করতে পারেন না? আশা করি, কর্তৃপক্ষ এই দুঃসহ ভার লাঘবের বিষয়টি সহানুভূতির সঙ্গে ভেবে দেখবেন ও কিছু সদর্থক পদক্ষেপ করবেন।
আশিস সেনগুপ্ত, কলকাতা-৩৭
বৈষম্য কেন
সম্প্রতি আমার স্ত্রী, বৃদ্ধা মা ও শিশুকন্যা বর্ধমান থেকে সন্ধেবেলায় করুণাময়ী-গামী এসবিএসটিসি বাসে চেপে ফিরছিলেন। রাত প্রায় আটটার সময়, বৃষ্টি ও অন্ধকারে ঘেরা পরিবেশে তাঁরা বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ের কাছে এসে চালককে দুর্গানগরে নামানোর অনুরোধ করেন। জায়গাটা আমাদের বাড়ির খুব কাছে ও নিরাপদও। কিন্তু সরকারি ভাবে সেখানে স্টপ না থাকায় কন্ডাক্টর তাঁদের অনুরোধ রাখেননি। বরং, তাঁদের নামানো হয় ডানলপে।
অথচ, যাত্রাপথেই এক হকারকে অঘোষিত স্থান থেকে তোলা ও নামানো হয়। এই বৈষম্য দুঃখজনক। জরুরি পরিস্থিতিতে প্রবীণ নাগরিক, একা মহিলা বা শিশু-সহযাত্রীদের ক্ষেত্রে বাসে ওঠানামার বিষয়টিতে একটু নমনীয়তা দেখানো উচিত। আমার অনুরোধ, এসবিএসটিসি কর্তৃপক্ষ যেন সংশ্লিষ্ট কর্মীদের এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়ে রাখেন এবং রুট অনুযায়ী নির্ধারিত স্টপের তালিকা জনসমক্ষে প্রকাশ করেন।
দেবারুণ লাহিড়ী, কলকাতা-৪৯
কম স্টেশন
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে গত ১ জুলাই পুরুলিয়া থেকে বাঁকুড়া ও মশাগ্রাম হয়ে সরাসরি হাওড়া পর্যন্ত রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু হয়েছে। জঙ্গলমহল, বিশেষত বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চলের যাত্রীদের জন্য এ এক অত্যন্ত সুবিধাজনক ও জরুরি পদক্ষেপ। তা সত্ত্বেও, সদ্য চালু হওয়া এই ট্রেনটি সম্পর্কে কয়েকটি কথা বলা অতি আবশ্যক হয়ে পড়েছে।
প্রথমত, এই ট্রেনটির কোচগুলির মধ্যে শৌচাগারের ব্যবস্থা থাকলেও শৌচাগারের ভিতরে জলের কোনও ব্যবস্থা নেই। ফলে, এক দিকে যাত্রীদের দুর্ভোগ যেমন বাড়ছে, অন্য দিকে ট্রেনের মধ্যে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ তৈরি হচ্ছে।
দ্বিতীয়ত, সময়। পুরুলিয়া থেকে হাওড়া পর্যন্ত আসতে সাড়ে সাত ঘণ্টারও বেশি সময় লাগছে, যা কখনওই কাম্য নয়। সে ক্ষেত্রে পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ার মধ্যে সব ক’টি স্টেশনে দাঁড়ানোর কোনও যৌক্তিকতা নেই। কারণ, পুরুলিয়া থেকে হাওড়া যাওয়ার জন্য অন্য রুটে অসংখ্য এক্সপ্রেস ও সুপারফাস্ট ট্রেন চলাচল করে। তা ছাড়া, মশাগ্রাম ও হাওড়ার মধ্যেও সব ক’টি স্টেশনে দাঁড়ানো নিতান্তই অপ্রয়োজনীয়। কেননা, বর্ধমান-হাওড়া কর্ড লাইনেও বহু ট্রেন রয়েছে। কাজেই, ওই দু’টি অংশের মধ্যে থাকা স্টেশনগুলির সব ক’টিতে না দাঁড়িয়ে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনে ট্রেনটির দাঁড়ানোর ব্যবস্থা করা যায়। এতে কিছুটা সময় বাঁচিয়ে অন্তত এক ঘণ্টা আগে হাওড়া স্টেশনে ঢুকতে পারলে অধিকাংশ নিত্যযাত্রীরই সুবিধা হবে। নানাবিধ প্রশাসনিক, ব্যবসায়িক ও চিকিৎসা সংক্রান্ত কাজে কলকাতায় আগত মানুষদের স্বার্থে এই দিকগুলি বিবেচনা করা উচিত রেল কর্তৃপক্ষের।
হিন্দোল চট্টোপাধ্যায়, সোনামুখী, বাঁকুড়া
অদৃশ্য ফুটপাত
শহর বা শহরতলিতে সাধারণত মানুষের একমাত্র হাঁটার রাস্তা ফুটপাত। কিন্তু সেগুলোর যা দুরবস্থা দাঁড়িয়েছে সাম্প্রতিক কালে, তাতে নিশ্চিন্তে হাঁটার উপায় থাকে না। প্রায় সব ফুটপাত হয় হকার কিংবা দোকানদারদের দখলে। কোথাও কোথাও তো এঁদের কারণে পুরো ফুটপাতটাই অদৃশ্য হয়ে যায়। ফলে, ঠেলাঠেলি, ধাক্কাধাক্কি লেগেই থাকে। ভিড় ঠেলে পথচারীদের হাঁটা প্রায় অসম্ভব হয়ে ওঠে। তখন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গাড়ির রাস্তায় নেমে আসতে হয়। এ যেন এক ঝুঁকিপূর্ণ ‘মাদারির খেলা’।
মজার কথা হল, অলি-গলি দিয়ে হাঁটতে গেলেও দেখা যায় ভ্যান-অটো-টোটোর দৌরাত্ম্য। কলকাতার বড়বাজার চত্বর, ধর্মতলা, চাঁদনি চক থেকে ব্যারাকপুর, রানাঘাট স্টেশন সংলগ্ন প্রায় সমস্ত রাস্তাই দীর্ঘকাল ধরে একই চিত্র বহন করে আসছে। অন্যান্য জায়গার অবস্থাও বোধ করি কমবেশি একই রকম। এই সমস্যার মধ্যে একটি কঠিন বাস্তব চিত্র লুকিয়ে আছে— চাকরির আকাল, বেকার সমস্যার অস্বাভাবিক বৃদ্ধি। অধিকাংশ কর্মহীন যুবক এখন হয় অটো টোটো নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়ছেন অথবা ক্ষুদ্র পুঁজির পসরা সাজিয়ে রাস্তায় বসে পড়ছেন। সে ক্ষেত্রে ওঁদের যেমন পুরোপুরি দোষ দিয়ে লাভ নেই, তেমনই পথচারী হিসাবে আমাদের আপস করা ছাড়া গতি নেই। সরকারের উচিত এই বিষয়ে নজর দেওয়া।
তপন কুমার দাস, কলকাতা-১২২
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)