সোমা মুখোপাধ্যায় তাঁর ‘বিশ্বাসটাই যদি না থাকে?’ (১৪-১) শীর্ষক প্রবন্ধে রাজ্যের স্বাস্থ্যব্যবস্থায় ভগ্নপ্রায় পরিকাঠামোর অপরিবর্তনের কথা যথাযথ ব্যক্ত করেছেন। গত অগস্টে আর জি কর কাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের যে জনজোয়ার শাসক দলের উপর আছড়ে পড়েছিল, তাতে রাজ্যের সাধারণ স্বাস্থ্যব্যবস্থার পরিকাঠামোর পরিবর্তন আশা করা হয়েছিল। কিন্তু পরিবর্তন তো দূর, একের পর এক মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসায় নানা গুরুতর অভিযোগ উঠে আসছে। ফিরে আসছে হুমকি বা ত্রাসের সংস্কৃতিও। পাশাপাশি চিকিৎসা সংক্রান্ত জিনিস, যেমন— ইনজেকশনের সিরিঞ্জ, সেলাইয়ের সুতো অত্যন্ত নিম্নমানের ব্যবহার করা হচ্ছে। ইদানীং শিরোনামে উঠে এসেছে পশ্চিমবঙ্গ ফার্মাসিউটিক্যাল-এর ‘আর এল’ নামক স্যালাইন ও রক্তক্ষরণ ঠেকাতে ‘অক্সিটোসিন’, যা প্রায়ই শল্য চিকিৎসায় রোগীদের ক্ষেত্রে অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়ে।
চিকিৎসা সংক্রান্ত জিনিসপত্র ও জরুরি কিছু ইনজেকশন বা ওষুধ সরবরাহকারী সংস্থা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে স্বাস্থ্যব্যবস্থার দুর্নীতি চক্রের সঙ্গে কোনও না কোনও ভাবে যুক্ত। নয়তো এমন সব নিম্নমানের জিনিস কী করে চিকিৎসাকেন্দ্রে সরবরাহ করা হয়? আর এটাও দেখার, কী করেই বা সরবরাহকারী সংস্থাগুলি উন্নতমানের জিনিসপত্র দেবে যেখানে সরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার রন্ধ্রে রন্ধ্রে কাটমানির খেলা চলে। এমন অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলেই হুমকি বা সরকারি ক্ষমতার অপপ্রয়োগে শাস্তি জুটবেই যেমনটি আর জি করের ক্ষেত্রেও দেখা গিয়েছে। সেই কারণেই বোধ হয় সম্প্রতি মেডিক্যাল স্নাতকোত্তর পর্বের পরীক্ষা প্রক্রিয়ায় অভূতপূর্ব চরম কঠোরতা, যা নিয়ে পরীক্ষার্থীরা অভিযোগ জানিয়েছেন। কঠোরতা অবশ্যই প্রয়োজন, তবে দুর্নীতিমূলক কাজকর্মের ক্ষেত্রেও তার প্রয়োগ করা গেলে চিকিৎসাব্যবস্থার স্বাস্থ্য ফিরত। অথচ, আমরা কী দেখছি— রোগীদের স্থিতিশীল না করেই রেফার, রাতে হাসপাতাল চত্বরে মদের আসর, দালাল চক্রের রমরমা ও বিনা চিকিৎসায় রোগী ফেলে রাখা। আর জি কর কাণ্ডে প্রায় ছ’মাস অতিক্রান্ত হওয়ার পরও হুমকি সংস্কৃতির পরিবর্তন বা গুরুতর অভিযোগের ক্ষেত্রে প্রতিকারের উদ্যোগ এখনও সে ভাবে দেখা যায়নি। বরং অন্যতম দুই অভিযুক্তের জামিনে ছাড়া পাওয়াটা কোথাও যেন দুর্নীতি, অনিয়মপূর্ণ ব্যবস্থাকে চালিয়ে যাওয়ার প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত বহন করে।
স্বরাজ সাহা, কলকাতা-১৫০
জয়ের লক্ষ্যে
‘বিশ্বাসটাই যদি না থাকে?’ শীর্ষক প্রবন্ধে বলা হয়েছে, রাজ্যের স্বাস্থ্যক্ষেত্রে কোনও বদলই চোখে পড়ছে না। হুমকি প্রথা পূর্বের অবস্থানে অনেকটাই ফিরে এসেছে। তা ছাড়া ম্যালেরিয়া পরীক্ষার কিট নিয়ে সরবরাহকারী সংস্থার দুর্নীতি থেকে শুরু করে ইনজেকশন দেওয়ার সময় সিরিঞ্জ ভেঙে যাওয়া, সেলাই করার সময় সুতো ছিঁড়ে যাওয়া বা অ্যান্টিবায়োটিক-সহ নানা ওষুধে সে ভাবে কাজ না হওয়ার মতো ঘটনাবলি অনেকটাই বলে দেয় সবই চলছে আগের মতো রমরমিয়ে। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে নিষিদ্ধ পশ্চিমবঙ্গ ফার্মাসিউটিক্যাল-এর ‘আর এল’ স্যালাইনের ব্যবহার, যার ফলে প্রসূতি মামণি রুইদাসের মৃত্যু, অনেক প্রসূতির মরণাপন্ন অবস্থা আরও স্পষ্ট করে দিয়ে গেল স্বাস্থ্যব্যবস্থার ভিতরের দুর্নীতির ব্যাপকতা এবং গভীরতাকে। চোখ-কান বন্ধ রেখে রেফার করার অভ্যাসও স্বমহিমায় ফিরে এসেছে। সিবিআই চার্জশিট জমা না দেওয়ার কারণে সন্দীপ ঘোষ-অভিজিৎ মণ্ডলের জামিন, সঞ্জয় রায় ছাড়া অন্য কোনও অভিযুক্তকে চিহ্নিত করতে না পারা, অভয়ার বাবা-মায়ের ন্যায়বিচারের দাবিতে আদালতের দরজায় ঘুরে বেড়ানো— সব মিলিয়ে মানুষের বিশ্বাসে ফাটল ধরেছে।
তবে এ ক্ষেত্রে আর একটি সত্যকেও মূল্য দিতে হবে— বিশ্বাসকে দৃঢ় করতে না পারলে, নিজেদের মধ্যে হতাশাকে প্রশ্রয় দিতে থাকলে অন্যায়কারীদের পোয়া বারো। হতাশা আমাদের অন্ধকারের দিকে নিয়ে যেতে পারে। অন্যায়কারীরা এটাই চায়। হতাশা বস্তুত নিজেদের পায়ে নিজেদের কুড়ুল মারার শামিল। তা কি হতে দেওয়া যায়? জুনিয়র ডাক্তাররা সব সময় একই ভাবে এই আন্দোলনকে নেতৃত্ব দিয়ে যাবেন আর আমরা তাঁদের পিছনে থেকে সহযোগিতা করে যাব— এমনটা যদি না-ও হয়, তবুও তো এই আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে। প্রয়োজনে আমাদেরই নেতৃত্ব দিতে হবে। আরও বড় অংশের মানুষকে এই আন্দোলনে যুক্ত করার প্রয়োজনে জনজীবনের অন্য দাবিগুলিকেও এই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। কেননা, আন্দোলনকে জয়ের লক্ষ্যে নিয়ে যাওয়া ছাড়া সাধারণ মানুষের কাছে দ্বিতীয় কোনও পথ খোলা নেই।
অনেকের মতে, নির্বাচনের মাধ্যমে এক দলকে সরিয়ে আর এক দলকে ক্ষমতায় আনলে এই সমস্যার সমাধান হবে। ইতিহাস কিন্তু সে কথা বলে না। দেখা গিয়েছে, নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসে নতুন সরকার তার পূর্বতন সরকারের পথকেই অনুসরণ করেছে। আর জি কর আন্দোলনের দিকে যদি আমরা তাকাই দেখব যে, জুনিয়র ডাক্তার-সহ সমাজের বিভিন্ন অংশের মানুষের যোগদানে যে আন্দোলন ইতিমধ্যে হয়েছে তাতে আমরা কিছুই পাইনি, তা নয়। সে পাওয়া নিশ্চয়ই আমাদের চাহিদার কাছাকাছি আসতে পারেনি। কিন্তু যেটুকু পেয়েছি তার উপর ভিত্তি করে নিজ নিজ বিশ্বাসের ভিতকে দৃঢ় করে পূর্ণ বিজয়ের লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে হবে। আন্দোলনের মাধ্যমে যে কোনও বিজয় অর্জনের ইতিহাস সেই কথা বলে।
গৌরীশঙ্কর দাস, খড়্গপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর
সকলে মিলে
আর জি কর কাণ্ডকে কেন্দ্র করে শুরু থেকে আজ পর্যন্ত ঘটে চলা ঘটনাপ্রবাহ দেখেশুনে বিজ্ঞানের প্রত্যাবর্তী ক্রিয়ার কথা মনে পড়ে। এত আন্দোলন সত্ত্বেও রাজ্যের স্বাস্থ্যক্ষেত্রটি দৃশ্যত কোনও বদল ছাড়াই পূর্বের অবস্থায় ফেরত গিয়েছে। অনেকেই আন্দোলনে ক্ষান্ত দিয়ে ফিরে গিয়েছেন নিজেদের কাজে। রাত জাগার কর্মসূচিতে যাঁরা জেগেছিলেন, তাঁরাও শেষ পর্যন্ত ঘুমিয়ে পড়েছেন নতুন ভোরের আশায়।
শাসক ঠিক এটাই চেয়েছিলেন। তার জন্যই শাসক সময়ের উপর ভরসা রেখেছিলেন। সময় গভীর বিষাদকেও মিলিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। সময়ের হাত ধরেই শাসক অপেক্ষায় ছিলেন উপনির্বাচনের ফলাফল কতটা নিজের অনুকূলে আসে, দেখে নেওয়ার এবং প্রমাণের খোঁজে সিবিআই কতটা কালক্ষেপ করতে পারে, জেনে নেওয়ার। যদিও সিবিআই তদন্তের ফল কী হতে চলেছে, তার ইঙ্গিত মিলেছিল আগেই। দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ কলকাতায় এসেও আর জি কর কাণ্ডকে গুরুত্ব দেননি। ‘কেন্দ্রের শাসক দলের শক্তি বৃদ্ধির হাতিয়ার যে সিবিআই’— এই অভিযোগকে সিবিআই কখনও মিথ্যা প্রমাণ করার সাহস দেখাতে পারেনি। একটি অন্যায়কে চেপে দেওয়ার প্রচেষ্টা যে কতটা গভীরে পৌঁছতে পারে তা আন্দাজ করা গিয়েছিল তদন্তের গতিপ্রকৃতি দেখে। তবে, কিছুই হল না বা কিছুই হবে না, এমন নেতিবাচক ভাবনায় ভর করে ন্যায়বিচার আদায় করা যায় না।
বরং হওয়ার অনেক কিছুই ছিল বা আছে। কিন্তু সেটা করতে হবে সকলে মিলেই। যা দেখিয়ে দিয়েছিল নাগরিক সমাজের আন্দোলন। আন্দোলনে যত দিন ঝাঁঝ ছিল তত দিন তদন্তে সিবিআই তৎপর ছিল, শাসক আন্দোলনকারীদের দাবি পূরণে সদিচ্ছা দেখিয়েছিলেন। কিন্তু আন্দোলনের তীব্রতা কমতেই দুর্বলের উপর সবলের নিপীড়ন মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।
অজয় ভট্টাচার্য, বনগাঁ, উত্তর ২৪ পরগনা
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy