স্বাগতম দাস তাঁর লেখা ‘অদৃশ্য শৃঙ্খলের চাপে’ (২৫-৮) প্রবন্ধে পিএইচ ডি শিক্ষার্থীদের বা গবেষকদের ক্রমাগত আত্মহননের কথা নজরে এনেছেন, তা সত্যি উদ্বেগের কারণ। উচ্চশিক্ষার এমন স্তরে আত্মহত্যার ঘটনা কোথাও যেন প্রতিষ্ঠানের বা তত্ত্বাবধায়কদের অনৈতিক চাপে অসহন হয়ে নিজের জীবন নিবিয়ে দেওয়ার চরম প্রকাশ বলেই মনে হয়। সাধারণত পিএইচ ডি স্তরে শিক্ষার্থীদের দক্ষতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করার জায়গা নেই, কারণ তাঁরা প্রত্যেকেই কোনও না কোনও বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ স্তরে পিএইচ ডি লাভ করার জন্য কোনও একটি বিষয় নিয়ে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে বিষয়ের জটিলতার উপর তিন থেকে ছয় বছর ধরে গভীর অধ্যয়ন বা গবেষণা চালিয়ে যেতে হয় কোনও অধ্যাপক বা গাইড বা সুপারভাইজ়রের তত্ত্বাবধানে। গবেষণামূলক অধ্যয়নের জন্য প্রায় সব শিক্ষার্থী স্কলারশিপের জন্য আবেদন করে। বিভিন্ন সরকারি সংস্থা বা বিশ্ববিদ্যালয়ে শক্তিশালী গবেষণা প্রস্তাব ও সে বিষয়ে শিক্ষার্থীর জ্ঞান ও আগ্রহের নিরিখেই তাঁর যোগ্যতা বিবেচনা করে প্রদান করা হয়। ফলে পিএইচ ডি ডিগ্রিস্তরের ছাত্র-ছাত্রীদের আর্থিক সঙ্কট কিছুটা মোচন হয়। তবু যাঁরা ভাতা পান না বা যদিও বা পান তাঁদের অ্যাকাউন্টে সময়মতো টাকা না ঢোকাও একটা আর্থিক সমস্যার সৃষ্টি করে। সময়মতো স্কলারশিপের টাকা না পাওয়াটাও একটা প্রচ্ছন্ন চাপের বিষয়, বিশেষত যখন শিক্ষার্থীর গবেষণার অগ্রগতির উপর নির্ভর করে এই ঘটনা ঘটে। সমীক্ষায় জানা যাচ্ছে যে পিএইচ ডি ডিগ্রি লাভ করতে গেলে সবচেয়ে বেশি সহায়তার দরকার সুপারভাইজ়র বা গাইডের। তাঁদের সঙ্গে নবীন গবেষকদের সুসম্পর্ক জরুরি, তা অধিকাংশ ক্ষেত্রে চাকরির সম্ভাবনা নির্ধারিত করে। কিন্তু মুশকিল হল যে এই সুযোগ নিয়ে কোনও কোনও গাইড কোনও কোনও শিক্ষার্থীর প্রতি এতটাই অসন্তোষ বা বিরূপ মনোভাব দেখান বা অশালীন ব্যবহার করে মানসিক চাপ প্রদান করেন যে গবেষকরা পরিস্থিতির শিকার হয়ে যান। সাম্প্রতিক সমীক্ষায় এও জানা যাচ্ছে যে সাধারণ মানুষের তুলনায় এক জন পিএইচ ডি শিক্ষার্থী ছ’গুণ বেশি উদ্বেগ ও বিষণ্ণতায় ভোগেন। এমতাবস্থায় কোনও গবেষকের প্রতি সুপারভাইজ়রদের চরম অশালীন ব্যবহার ও অসহযোগিতার ফলে যখন কোনও শিক্ষার্থী বুঝতে পারেন যে, তাঁদের ডিগ্রি লাভের পথে গাইডই একমাত্র প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াচ্ছেন, তখন নিরুপায় হয়ে সেই শিক্ষার্থী আত্মহননের পথ বেছে নিতে পারেন।
তবে এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম যে নেই তা নয়। অনেক ক্ষেত্রেই গবেষকদের ল্যাবের পরিবেশ ভাল, বন্ধুর মতো পরামর্শ, বিশ্বাস ও সহানুভূতি দিয়ে গবেষণার সাফল্যকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করেন গাইড বা অধ্যাপকরা। শিক্ষার্থীরা উপযুক্ত পরিবেশ পেয়ে গবেষণার পাঠ অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে শেষ করতে পারেন ও গবেষণাপত্র জমা দেন। ফলে সাফল্য আসে। ঠিক এই জায়গাতেই যদি গাইড বা প্রতিষ্ঠান অসহযোগী হয়ে ওঠে, তবে সত্যিই তরুণ গবেষকদের দাঁড়ানোর বা বাঁচার জায়গা নিয়ে সঙ্কট তৈরি হয়।
স্বরাজ সাহা, কলকাতা-১৫০
ইচ্ছা-অনিচ্ছা
উত্তর কলকাতার অধিকাংশ পুজোই হয় রাস্তা আটকে। বিশেষত গলিতে হলে পুরো জায়গা দখল করে নামমাত্র সরু কুমড়োর ফালির মতো একেবারে ধারে একটু জায়গা ছাড়া হয়। তাতে এক জনের অতিরিক্ত দু’জনের পক্ষে কোনও ভাবেই যাতায়াত করা সম্ভবপর নয়। এর উপর যদি হাতে লটবহর থাকে তবে তো আরও কষ্টকর। কিন্তু প্রশ্ন হল কে কাকে বলবেন? বছর বছর এ ভাবেই পুজো হচ্ছে বলে ফি বছর এ জিনিস কি মানতেই হবে?
পুজো উদ্যোক্তাদেরই উচিত এ বিষয়ে বিশেষ সাবধান হওয়া। তা না করলে স্থানীয়রা প্রচুর কষ্ট স্বীকার করতে বাধ্য হচ্ছেন ও আরও কষ্টের শিকার হবেন। ঘুরপথে পাঁচ মিনিটের রাস্তা বললেও তা অনেকটাই প্রাণশক্তি ও সময় নেয়। বয়স্কদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণও। কিন্তু বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে!
দক্ষিণ কলকাতা-সহ শহরতলির বিভিন্ন গলি খুঁজলেও পাওয়া যাবে এরূপ দৃশ্যাবলি। আগামী দিনে এর কি একটু সমাধান, নিদেনপক্ষে বিকল্প ব্যবস্থা করা যায় না! মণ্ডপের পাশে যে সরু রাস্তা রাখা হয় সেটিকে আরও একটু বাড়ালে অসুস্থ রোগী স্ট্রেচারে করে যাতে নিয়ে আসা-যাওয়া করা যেতে পারে সে দিকটা সর্বপ্রথম ভেবে দেখাটা জরুরি নয় কি? জানি না এর সমাধান কোথায়?
কিন্তু মানুষ ইচ্ছে করলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। যেমনটি আমরা দেখলাম হাওড়ার দাশনগরে। সেখানে ডাকঘর বিলীন করে সেই জমির উপর প্রোমোটার চক্রের বহুতল গড়ে তোলার স্বপ্নকে ধূলিসাৎ করতে সেখানকার স্থানীয়রাই বড় ভূমিকা নিলেন। আদা-জল খেয়ে লেগে থেকে ডাকঘরটিকে ফিরিয়ে আনলেন খাদের ধার থেকে। এই ঘটনা সত্যিই গর্বের ও আনন্দের। ধন্যবাদ জানাই সেই মানুষদের ও হাওড়ার প্রধান ডাকঘর শাখার সুপারিন্টেন্ডেন্টকে, যাঁর সদিচ্ছায় পুনর্জন্ম পেল ঐতিহাসিক ডাকঘরটি। আবার প্রমাণ হয়ে গেল সদিচ্ছায় সব সম্ভব।
গৌতম মুখোপাধ্যায়, কলকাতা-১০১
ভাষানদী
‘বৈচিত্রই ভাষার জান’— ভাষা সম্পর্কে এই অমোঘ উক্তিটি আবার স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন স্নিগ্ধেন্দু ভট্টাচার্য, তাঁর ‘কাঁটাতারে ভাষা ভাঙে না’ (৩১-৮) শীর্ষক প্ৰবন্ধের মাধ্যমে। শুধু তা-ই নয়, বক্তব্যের সমর্থনে বেশ কিছু চেনা আরবি বা ফারসি শব্দের বাংলা অভিধানে অন্তর্ভুক্তির বিষয়টাও এই প্রবন্ধে তিনি উল্লেখ করেছেন। ঠিকই তো। ভাষা তো বহতা নদীর মতোই। মুখের চলতি ভাষায় বিভিন্ন উপাদান মিশতে মিশতে কালক্রমে সেই সব শব্দই মূল ভাষায় স্থান করে নেয়— এ আমরা অনেকেই জানি। কিন্তু, আবেগের স্রোতে অনেক সময়ই যে বিষয়টা আমাদের মাথা থেকে হারিয়ে যায়, তা হল প্রামাণ্য ভাষার স্বরূপ এবং উপভাষাগুলোর থেকে তার স্বাতন্ত্র্য। লেখক ‘বাংলা অভিধান’-এর প্রসঙ্গ এখানে উত্থাপন করেছেন। প্রশ্ন ওঠে যে, বাংলার জেলায় জেলায় বাংলার যে এত উপভাষা প্রচলিত, সেই সমস্ত শব্দের কি আজকের বাংলা অভিধানে ঠাঁই হয়েছে?
ভাষাচর্চার নিরিখে এই সব তথাকথিত উপভাষাগুলিকে কী চোখে দেখা উচিত— সেটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। ভাষা ও উপভাষা কি এক ও অভিন্ন? না কি তারা কিছুটা হলেও পরস্পরের থেকে পৃথক? হিন্দির ক্ষেত্রে কিন্তু তার উপভাষার বাড়বাড়ন্তকে ‘নিন্দনীয়’ হিসাবেই ভাবা হয়। সেটা কি সমীচীন? বলা হয়, হিন্দির উপভাষার সংখ্যা এখন অর্ধশতকের কাছাকাছি। এই সব ভাষার স্বাতন্ত্র্য থাকা সত্ত্বেও হিন্দির উপভাষা হিসাবে এদের স্বীকৃতি প্রাপ্তি নিয়ে বিতর্ক চলছে।
তবে কোনও ভাষাকে একটা নির্দিষ্ট ধর্মের বলে দাগিয়ে দিয়ে, সেই ভাষায় যাবতীয় শব্দ বর্জন করার জন্য যদি কেউ তৎপর হয়ে ওঠে, তবে তাকে রবীন্দ্রনাথ হাস্যকর বলে মনে করেছিলেন। তিনি এও বলেছিলেন, “ভাষার নিজস্ব প্রাণধর্ম আছে। কিন্তু ধর্ম যদি ভাষার উপরে চেপে বসে, তবে সেই প্রাণই হাঁপিয়ে ওঠে।” তৎসমই হোক, কিংবা আরবি-ফারসিই হোক, যে ভাবে নানা গোষ্ঠীর শব্দসমূহ বাংলা ভাষায় সহজ ভাবে অঙ্গীভূত হয়ে গিয়েছে, ভাষা কিন্তু আসলে সেই সহজ যোগেরই কথা বলে। সেখানে হিন্দুর বা মুসলমানের ভাষা বলে দাগিয়ে রাখা, উভয়ই অর্থহীন।
নারায়ণ দেব, কলকাতা-৭৪
মোড়কে বিপদ
এখন বিভিন্ন গরম তেলেভাজা, রুটি বা গরম কচুরি খবরের কাগজ থেকে তৈরি ঠোঙায় দেওয়া হয়, শসা কেটেও কাগজে মুড়ে দেওয়ার চল। কিন্তু নিউজ় প্রিন্টের কালিতেও রাসায়নিক থাকে। খাবারের জন্য নিরাপদ এবং অন্য পরিবেশ-বান্ধব মোড়ক ব্যবহার করা উচিত।
পার্থ প্রতিম মিত্র, ছোটনীলপুর, পূর্ব বর্ধমান
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)