Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
India

সম্পাদক সমীপেষু: সাম্রাজ্যবাদ ঠেকাতে

দু’শো বছরের ইংরেজ-গোলামিকে প্রতিহত করে পঁচাত্তর বছর আগে আমাদের দেশ স্বাধীন হয়েছে। কিন্তু এখনও ভয় কাটেনি।

শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০২২ ০৪:১৪
Share: Save:

‘তোমার পতাকা’ (১-৮) শীর্ষক সম্পাদকীয়টি অত্যন্ত সময়োপযোগী। স্বাধীনতার পঁচাত্তর বছর পূর্তিকে স্মরণীয় করে রাখতে ‘আজ়াদি কা অমৃত মহোৎসব’-এর অঙ্গ, ‘হর ঘর তিরঙ্গা’ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। অগস্টের ১৩ থেকে ১৫, ভারতের প্রতিটি গৃহে যাতে ‘তিরঙ্গা’ ওড়ে, তার আহ্বানের প্রেক্ষিতে নাগরিকদের একাংশের মনে সংশয় দানা বেঁধেছে— কেউ যদি এই কর্মসূচি না মানে, তা হলে তার পরিণতি কী হবে?

প্রশ্নটা অমূলক নয়। কারণ, দু’শো বছরের ইংরেজ-গোলামিকে প্রতিহত করে পঁচাত্তর বছর আগে আমাদের দেশ স্বাধীন হয়েছে। কিন্তু এখনও ভয় কাটেনি। তার কারণ বৈদেশিক শক্তি এখনও ভারতের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে। বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের প্রাক্কালে রবীন্দ্রনাথ ‘সফলতার সদুপায়’ শীর্ষক প্রবন্ধে শাসক ও জনগণের চরিত্র-কর্তব্য ব্যাখ্যা করতে গিয়ে লিখেছিলেন, “ইম্পিরিয়ালতন্ত্র নিরীহ তিব্বতে লড়াই করিতে যাইবেন, আমাদের অধিকার তাহার খরচ জোগানো; সোমালিল্যান্ডে বিপ্লব নিবারণ করিবেন, আমাদের অধিকার প্রাণদান করা; উষ্ণপ্রধান উপনিবেশে ফসল উৎপাদন করিবেন, আমাদের অধিকার সংস্থায় মজুর জোগান দেওয়া।”

সাম্রাজ্যবাদ বিস্তারের কৌশল শুধুমাত্র ভারতেই নয়, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সমান ভাবে সক্রিয়। কখনও লুটপাট, কখনও ব্যবসাবাণিজ্য, কখনও ধর্ম বিস্তার, আবার কখনও জঙ্গি কার্যকলাপ— বিভিন্ন রূপে এরা সক্রিয় থাকলেও আদতে এদের চরিত্র এক, অর্থাৎ যেন তেন প্রকারেণ দেশের ক্ষমতা দখল করা। উগ্র জাতীয়তাবাদ, ধর্মান্ধতা, মৌলবাদ— সুস্থ-নিরীহ ভারতকে বিপন্ন করেছে বার বার। সেই কারণেই, ‘স্বদেশী সমাজ’ শীর্ষক প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, যে শক্তি বাইরে থেকে প্রত্যহ সমাজকে আত্মসাৎ করতে উদ্যত, তা ঐক্যবদ্ধ এবং দৃঢ়। বিদ্যালয় থেকে শুরু করে দোকানবাজার— সমস্ত কিছুই সে দখল করতে চায়, এবং সর্বত্র একাধিপত্য সব রকম ভাবে কায়েম করতে চায়।

রবীন্দ্রনাথের এই যুক্তির ১১৮ বছর এবং স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরেও ‘উদ্যত শক্তি’-র সক্রিয়তা টের পাই আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের পরতে পরতে। তাই, কেন্দ্রীয় সরকারের ‘হর ঘর তিরঙ্গা’ কর্মসূচি পালন করে যদি সেই সাম্রাজ্যবাদী শক্তিকে ঠেকানো যায়, তাতে আখেরে লাভ আমাদের নয় কি?

অমরেশ পাল, পশ্চিম বলাগড়, হুগলি

দেশবাসীর দায়িত্ব

আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ডাক দিয়েছেন ‘হর ঘর তিরঙ্গা’ কর্মসূচির। তিনি টুইটও করেছেন— ১৩ থেকে ১৫ অগস্ট ভারতের প্রতিটি ঘরে জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং পতাকা লাগানোর আহ্বান জানিয়ে। এ ছাড়া সরকারি দফতর, বেসরকারি সংস্থার কার্যালয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শপিং মল, রেস্তরাঁ, টোল প্লাজ়া, থানায় জাতীয় পতাকা তোলার আহ্বান জানিয়েছেন। স্বাধীনতার পঁচাত্তর বছর পূর্তির দিনটিতে জাতীয় পতাকার সঙ্গে দেশবাসীর একাত্মবোধ দৃঢ় করতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর এই বিশেষ আহ্বান। এর মধ্যে তো কোনও অন্যায় নেই। অন্য কোনও উদ্দেশ্য খুঁজতে যাওয়াও উচিত নয়।

অথচ, সম্পাদকীয় কলমে এই আহ্বানের বিরুদ্ধেই প্রশ্ন তোলা হয়েছে। দেশবাসীকে চোখ রাঙিয়ে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করতেই নাকি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই পরিকল্পনা। এ কথা ঠিক যে, জোর করে ঘরে-বাইরে জাতীয় পতাকা তোলার জন্য চাপ দেওয়া যায় না আর জাতীয় পতাকা উত্তোলনই দেশপ্রেমের একমাত্র জ্বলন্ত দৃষ্টান্তও নয়। তবুও আমরা জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে তার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করি। জাতীয় পতাকার প্রতি সম্মান জানানো প্রত্যেক দেশবাসীর দায়িত্ব এবং কর্তব্য। আমাদের প্রত্যেকের উচিত, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই বিশেষ কর্মসূচিকে স্বাগত জানানো ও বাস্তবায়িত করা।

সত্যকিঙ্কর প্রতিহার, যমুনা দেশড়া, বাঁকুড়া

পতাকার মর্যাদা

প্রতি বছর দেখা যায় ১৫ অগস্ট বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বা সরকারি প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয় এবং তার সঙ্গে সাইকেল, মোটরসাইকেল, অন্যান্য গাড়িতেও ছোট পতাকা লাগানো হয়। অথচ, সেই দিনটি পার হলেই পতাকাগুলি ভূমিতে পদদলিত হতে দেখা যায়। বিভিন্ন যানবাহনের চাকায় তা পিষ্ট হতে থাকে। এটা খুব স্বাভাবিক ঘটনা যে, কোনও দিবস পালনের পরের দিন তার আর তেমন গুরুত্ব থাকে না। তাই, এই বছর বাড়ি বাড়ি পতাকা উত্তোলনের যে বার্তা সরকারের তরফ থেকে দেওয়া হয়েছে, তার পরিণতি কী হতে পারে, কে জানে। প্রত্যেক বাড়ি পতাকা তোলা হলে পতাকার মর্যাদাহানি আরও বেশি হবে না তো?

মঞ্জুশ্রী মণ্ডল, রামনগর, হুগলি

অপুষ্টির ছবি

২ অগস্ট পিঙ্গালি বেঙ্কাইয়াজির জন্মদিন। আমাদের জাতীয় পতাকার নকশা তিনিই প্রস্তুত করেছিলেন। তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে আহ্বান জানিয়েছেন, ঘরে ঘরে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করার জন্য। এই জাতীয় পতাকার সঙ্গে জড়িয়ে আছে আমাদের আবেগ। বিশ্বসভায় যখন ভারতের জাতীয় পতাকা পতপত করে উড়তে থাকে, তখন এক জন ভারতবাসী হিসেবে গর্বে আমার বুকটা ফুলে ওঠে। আবার স্বাধীনতা দিবস বা প্রজাতন্ত্র দিবসের মতো বিশেষ দিনে বিশেষ অনুষ্ঠানে আমরা দেখতে পাই অনেকের হাতেই কাগজের তৈরি জাতীয় পতাকার ছোট সংস্করণ শোভা পায়। কিন্তু অনুষ্ঠানের শেষে তার ঠাঁই হয় রাস্তার পাশের নর্দমায়। এ দৃশ্য বড় বেদনার। তাই বলা যায়, জোর করে কারও মধ্যে দেশাত্মবোধের জাগরণ ঘটানো সম্ভব নয়। দেশাত্মবোধ আসে মানুষের ভিতর থেকে।

স্বাধীনতার এই পঁচাত্তর বছর পূর্তিতেও আমরা দেখছি দারিদ্র, অনাহার আর অপুষ্টির ছবিই ছড়িয়ে আছে এই দেশের সর্বত্র। ভারতের একটি বড় অংশের মানুষই যেখানে অপুষ্টির শিকার, সেখানে দাঁড়িয়ে ১৩ থেকে ১৫ অগস্ট দেশের প্রতিটি গৃহে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করার প্রধানমন্ত্রীর এই আহ্বানে কত শতাংশ মানুষ সাড়া দিতে পারবেন, সেই বিষয়ে সন্দেহ আছে।

প্রদ্যুৎ সিংহ , মানিকনগর, উত্তর ২৪ পরগনা

স্কুলেই পড়ুক

কৌশিক দাসের ‘বিকল্প কই’ (২৭-৭) চিঠির সঙ্গে একমত হতে পারলাম না। ১৯৬৫ সালে আমি স্কুল ফাইনাল পরীক্ষা দিয়েছি প্রত্যন্ত গ্রামের একটি স্কুল থেকে। তখন স্কুলে শিক্ষকের সংখ্যা ছিল কম। তাঁদের বেতন ছিল আরও কম। তবু শিক্ষকদের পড়ানোর আগ্ৰহের কোনও খামতি ছিল না। সেই সময়ে প্রাইভেট পড়ার চল ছিল না। স্কুলে পড়েই প্রায় প্রতি বছর প্রচুর ছেলেমেয়ে আমাদের স্কুল থেকেই স্টার পেয়ে পাশ করেছে। কোনও কোনও বছরে প্রথম দশ জনের মধ্যেও দু’-এক জন থেকেছে। সেই সময় থেকে আজ অবধি লক্ষ করে দেখেছি, আমাদের স্কুলে শিক্ষাবর্ষের মধ্যেই সিলেবাস শেষ করা হয়। গ্রামীণ এলাকার অন্য স্কুলগুলোরও প্রায় প্রত্যেকটিতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সিলেবাস শেষ করা হয়। এ ব্যাপারে স্কুলশিক্ষকদের পাঠদানে নিষ্ঠাবান হওয়া দরকার।

বিদ্যালয় শিক্ষকদের গৃহশিক্ষকতা করার ক্ষেত্রে দেখেছি, তাঁরা নীতিভ্রষ্ট হয়ে যান। তাঁদের কাছে যে সব ছাত্রছাত্রী পড়ে, পক্ষপাতিত্ব করে তাদের বেশি নম্বর দেওয়া হয়। অন্যরা তাদের চেয়ে ভাল লিখলেও কম নম্বর পায়। এই কথা এখন সব ছেলেমেয়েই জানে। এর একমাত্র বিকল্প পথ, স্কুলশিক্ষকদের গৃহশিক্ষকতা বন্ধ করা। স্কুলে পড়ানোর উপরেই জোর দিতে হবে।

রাসমোহন দত্ত, মছলন্দপুর, উত্তর ২৪ পরগনা

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

India imperialism
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE