‘নাম ও দুর্নাম’ (৩০-৮) শীর্ষক সম্পাদকীয়ের পরিপ্রেক্ষিতে একটা পুরনো ঘটনা মনে পড়ে গেল। তখন মেট্রোরেল সবে গড়িয়া পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয়েছে এবং স্টেশনগুলির স্থানীয় নামের পরিবর্তে নানা মনীষী অথবা তাঁদের কীর্তির নামে নামকরণ করা হয়েছে। সে সময় এক দিন যাচ্ছিলাম কুঁদঘাট। খোঁজখবর নিয়ে আগেই জেনেছিলাম, মেট্রোর নতুন নামকরণে সেটা নেতাজি হয়েছে। অতএব দমদম স্টেশন থেকে নেতাজি-র টিকিট চাইলাম। কিন্তু সেখানে পৌঁছে পড়লাম বিপাকে। মেশিনে টিকিট প্রবেশ করালেও গেট খুলল না। আমাকে পাশ কাটিয়ে অন্য যাত্রীরা বেরিয়ে গেলেন। শেষে এক মেট্রোকর্মী এসে আমাকে এক বিশেষ দরজা দিয়ে উদ্ধার করলেন। তাঁর সহৃদয়তার জন্য ধন্যবাদ জানতে যাব, এমন সময় তিনি আমাকে স্টেশন মাস্টারের ঘরে যেতে বললেন। ভিতরে গিয়ে জানতে পারলাম, আমি এক ভয়ানক অপরাধ করে ফেলেছি। কম ভাড়ার টিকিটে বেশি দূরত্ব ভ্রমণ করেছি। আমি বার বার বোঝানোর চেষ্টা করলাম যে আমি কাউন্টারে নেতাজি স্টেশনের টিকিটই চেয়েছিলাম এবং যা ভাড়া চাওয়া হয়েছিল, সেটাই দিয়েছিলাম। কিন্তু কোনও কথাই ওঁরা শুনলেন না।
অগত্যা সে যাত্রায় আড়াইশো টাকা জরিমানা এবং ‘শর্ট টিকেটিং’-এর জন্য অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে তবে নিষ্কৃতি মেলে। পরে জেনেছিলাম, এই বিভ্রাট প্রথম নয়, একই পথে একই মানুষের নামে দুটো স্টেশন, তাই বলা অথবা শোনার ভুলে ‘নেতাজি’-র বদলে ‘নেতাজি ভবন’-এর টিকিট পেয়ে আগেও অনেকে একই বিপদে পড়েছেন। মেট্রো স্টেশনগুলির খামখেয়ালি নামকরণের কুফল সে দিন হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছিলাম।
তূর্য বাইন, কলকাতা-১২৪
টাকা পাইনি
অগস্টের গোড়ায় পেটে অসহ্য ব্যথা ও সোডিয়াম কমে যাওয়ায় আমার ছেলেকে কলকাতার আনন্দপুরে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়। প্রথমেই ওর ব্যক্তিগত বিমা পলিসি-র ক্যাশলেস কার্ড হাসপাতালে জমা দিই। পরের দিন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, বিমা কোম্পানি ক্যাশলেস অনুমোদন দেয়নি। কারণ হিসেবে জানানো হয়— তারা সন্দেহ করছে আমার ছেলের অসুখটি বিমা নেওয়ার আগে থেকেই ছিল। আরও বলা হয় এটি প্যাংক্রিয়াটিক রোগ, যা পলিসি নেওয়ার পর দুই বছর পর্যন্ত কভার হবে না। অথচ, ডিসচার্জ সার্টিফিকেটে এ ধরনের কোনও উল্লেখই ছিল না।
আমি হাসপাতালের পাঠানো সমস্ত নথি পরীক্ষা করি। সেখানে স্পষ্ট ভাবে লেখা ছিল অ্যাকিউট হেপাটাইটিস। আমি বিমা কোম্পানির ক্লেম বিভাগে বার বার জানাই যে, তারা ভুল করছে এবং এই অসুখের কারণে ক্যাশলেস আটকানোর কোনও যুক্তি নেই। আমি অনুরোধ করি তারা যেন হাসপাতালে প্রতিনিধি পাঠিয়ে বিষয়টি যাচাই করে। কিন্তু কোনও পদক্ষেপ ছাড়াই তারা আমাকে ক্যাশলেস সুবিধা থেকে বঞ্চিত করে।
পরবর্তী কালে আমি ওই সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও গ্রিভান্স সেলে লিখিত অভিযোগ করি, কিন্তু কোনও সুরাহা হয়নি। এ দিকে দুই দিনে চিকিৎসা খরচ দাঁড়ায় প্রায় দেড় লক্ষ টাকা। শেষ পর্যন্ত, কোনও উপায় না দেখে আমি বৌমার স্বাস্থ্যসাথী কার্ড দিই। কিন্তু হাসপাতাল সেটিও নিতে অস্বীকার করে।
আমি স্বাস্থ্যসাথী বিভাগে ফোন করলে তাঁরা কার্ড নম্বর নিয়ে জানান যে, হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ করে ব্যবস্থা করবেন। কিন্তু কোনও সহায়তা মেলেনি। বাধ্য হয়ে বহু কষ্টে টাকা জোগাড় করে ছেলের চিকিৎসা অসম্পূর্ণ রেখেই ওকে হাসপাতাল থেকে বাড়ি নিয়ে আসতে হয়।
আমার প্রশ্ন— বিমার টাকা দেওয়া সত্ত্বেও ওই বিমা সংস্থাটি কেন একটি প্রকৃত দাবি এত দিন ধরে আটকে রাখল? কেন কোনও তদন্ত হল না? ‘পসিবিলিটি আছে’— এই সন্দেহের ভিত্তিতে কি এক জন রোগীকে বঞ্চিত করা যায়, যখন নথি বলছে রোগটি নতুন?
অন্য দিকে, স্বাস্থ্যসাথী কার্ডটি কি শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রচারের হাতিয়ার? স্বাস্থ্যসাথী দফতর কি জনগণের জন্য, না রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য? সাধারণ মানুষকে এই ভাবে আর কত দিন সুচিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হতে হবে?
পার্থময় চট্টোপাধ্যায়, কলকাতা-৯৪
পুজোর জেরে
‘সমন্বয় বৈঠকে বেআইনি পার্কিং নিয়ে ক্ষোভ মেয়র পারিষদের’ (৯-৯) শীর্ষক সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে জানাই, পুজোর সামনে গলি থেকে রাজপথ প্যান্ডেলে ছেয়ে গিয়েছে। গাড়ি নিয়ে চলা তো দূরের কথা, হাঁটার রাস্তাই পাওয়া দুষ্কর। যাঁদের বাড়িতে গাড়ি আছে, তাঁরা বাড়ির গ্যারাজে গাড়ি রাখতে পারছেন না। অগত্যা রাস্তাতেই পার্কিং করা ছাড়া উপায় থাকছে না। এর উপর যাঁরা গাড়ি চালিয়ে প্রয়োজনীয় কাজ করতে বেরোচ্ছেন, তাঁরাও গাড়ি পার্ক করার নির্ধারিত জায়গা না পেয়ে রাস্তাতেই গাড়ি রাখতে বাধ্য হচ্ছেন। গত দু’মাস ধরে নাগরিকদের এই বেহাল অবস্থা চলছে। আরও মাসাধিক কাল এটা চলবে। জনপ্রিয়তা অর্জনে সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ, ফলে প্রশাসন সেই মতোই কাজ করে। কলকাতাবাসীর এই দুর্ভোগ বছরের পর বছর চলছে। আজকাল কোনও উৎসব এলেই মানুষের হৃৎস্পন্দন বেড়ে যায়, কারণ স্বাভাবিক জীবন যাপন প্রভাবিত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল থাকে। কষ্টটা আরও বেশি হয় প্রবীণ, রোগী ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের।
ভাবতে কষ্ট হয়, এক দিন রাস্তার দু’ধারে পার্কিং-এ গাড়ি দাঁড়িয়ে থেকেছে বলে মেয়র পারিষদ বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। অথচ, এই দুর্ভোগ জনসাধারণকে রোজ ভোগ করতে হয়। মেয়রের কথামতো পুলিশ বেআইনি পার্কিং-এর অজুহাতে গাড়ির মালিকদের হেনস্থা করতে শুরু করলে নাগরিকদের জীবন আরও সঙ্কটাপন্ন হবে। অথচ রাস্তায় প্যান্ডেল করে পুজো বন্ধ করার কোনও প্রচেষ্টা বা পরিকল্পনা প্রশাসনের নেই। রাস্তার অধিকার নাগরিকদের, কোনও ক্লাব বা দলের নয়— এই সরল কথাটি বোঝার জন্য শিক্ষা আমাদের কোনও কালে ছিল না, আজও নেই। রাস্তা দখল করেই আমাদের আনন্দ, প্রতিবাদ— সবই প্রকাশ পায়। গণতান্ত্রিক দেশেও নির্বাচিত রাজা আর নির্বাচক প্রজাদের বৈষম্য থেকেই যায়।
অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা-১০৪
আরও পরিবহণ
বেহালা চৌরাস্তা থেকে শিবরামপুর, ডাকঘর, ময়নাগড় ইত্যাদি জায়গায় যাওয়ার জন্য অটো পরিষেবা অত্যন্ত অপ্রতুল। বাস খুবই অনিয়মিত। উল্লিখিত অঞ্চলে জনসংখ্যা অনেক গুণ বেড়েছে। সেই কারণে সন্ধে সাতটার পর অফিসযাত্রী ও অন্যান্যকে খুবই অসুবিধায় পড়তে হয়। এমনকি প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে একটি অটোতে পাঁচ জন যাত্রী নেওয়া হয়। অটো স্ট্যান্ডটি বর্ষাকালে নরকে পরিণত হয়। পাশেই একটি পরিত্যক্ত পার্কে অটো স্ট্যান্ড করলে এই পথে নিত্যযাত্রীরা উপকৃত হবেন। পরিবহণ দফতরকে এই রুটের যাত্রীদের পরিবহণের সুব্যবস্থার জন্য অনুরোধ করছি।
রণেন চৌধুরী, কলকাতা-৬১
বাজিমাত
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের ‘স্নায়ুযুদ্ধে ইস্পাতের মতো কঠিন’ (৫-৮) লেখাটির পরিপ্রেক্ষিতে আমার এই চিঠি। এ বারের ভারত-ইংল্যান্ড ক্রিকেট টেস্ট সিরিজ়ের প্রতিটি ম্যাচ টানটান উত্তেজনা বজায় রেখেছিল। অবশেষে নাটকীয় সিরিজ়ের মহানাটকীয় সমাপ্তি হল। বাজিমাত করল তারুণ্যের শক্তি, আমাদের প্রিয় টিম ইন্ডিয়া। স্বদেশের মাটিতে ইংল্যান্ডের ঔদ্ধত্য ও দম্ভের মিনার জোর ধাক্কা খায় ভারতীয় ক্রিকেটের যোদ্ধাদের পরাক্রমে।
প্রদীপ কুমার সেনগুপ্ত, ব্যান্ডেল, হুগলি
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)