গাড়িতে যাতায়াতের পথে ধাপার মাঠ দেখেছি। দেখেছি অনেক মহিলা, পুরুষ ও শিশুকে ওই আর্বজনার স্তূপের ভিতর থেকে প্লাস্টিক বা অন্য কোনও বিক্রয়যোগ্য জিনিস সংগ্ৰহ করতে। এ দেখা অতি সামান্য সময়ের। শুধু মনে হত, যে আর্বজনার গন্ধে আমরা অনেক দূরে থেকেও নাক বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছি, সেখানে ওঁরা এত অবলীলায় দিনের পর দিন কাজ করেন কী করে? মূলত জীবনধারণের তাগিদেই। সেই অসীম সত্যের সঙ্গে তাঁদের জীবনের, প্রতি দিনের যন্ত্রণার, শিশুদের দুর্দশার কথা আলোচিত হয়েছে স্বাতী ভট্টাচার্যের ‘মহানগরের নির্বাসিত’ (৩০-৬) প্রবন্ধে। প্রত্যেক দিনের সংবাদমাধ্যম, সমাজমাধ্যম ভরে থাকে রাজনৈতিক দাঙ্গা, হানাহানি, মারামারি, খুন, ধর্ষণ ইত্যাদি ঘটনায়। এর মাঝে প্রবন্ধকারের কথায়, ‘প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্র, সভ্য সমাজের কেউ নন’- দের নিয়ে ভাবার বা লেখার দায় কার আছে? প্রত্যেক শহরে একটি করে ধাপার মাঠ আছে। নাম আলাদা। সেখানে তাঁদের কাজ গুরুত্বহীন মনে হওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু একটু তলিয়ে ভাবলে দেখা যাবে, তাঁরাও সমাজকর্মী। তাই, তাঁদের কথা সভ্য সমাজকে, রাষ্ট্রকে জানাতে হবে। তাঁদের জন্য ভাবতে হবে। তাঁদের সংগঠিত করা, পরিচয়পত্র দেওয়া, সঙ্গত ও প্রয়োজনীয় দাবি মেটানো, শিশুদের লেখাপড়া ও সুস্থ ভাবে বড় হয়ে ওঠার যাবতীয় দায় সরকারকে নিতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত এই মানুষদের নিয়ে অহেতুক রাজনীতি না করে, সরকারের কাছে এঁদের দাবিগুলি পেশ করা।
তমলুক শহরের এক প্রান্তে রূপনারায়ণ নদীর গা ঘেঁষে এমন একটি বিস্তীর্ণ এলাকা আছে। সেই জঞ্জালের স্তূপ বহু বার দেখেছি। তার পাশ দিয়ে গেলে মুখে রুমাল চাপা দিতে হয়। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা হয় বর্ষাকালে। নদীর জল সেই জঞ্জাল স্তূপকে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। নদীদূষণ সাংঘাতিক ভাবে বেড়ে যায়। সেই জঞ্জালের মধ্যে অনেক শিশু, মহিলা ও পুরুষ কাজ করেন। জঞ্জাল থেকে সার ও অন্যান্য জিনিস বানানোর কাজ পুরসভা শুরু করলেও পরিমাণ অত্যন্ত কম। জঞ্জাল রিসাইক্লিং-এর কাজ আরও ব্যাপক হারে হওয়া দরকার। সেই সঙ্গে এই মানুষগুলোর উন্নয়নের কথাও ভাবুক প্রশাসন।
গৌতম পতি, তমলুক, পূর্ব মেদিনীপুর
নৈতিক অবক্ষয়
কসবা ল কলেজের ঘটনায় দিনের পর দিন যে সমস্ত হাড়হিম করা তথ্য সামনে এসেছে, তা থেকে প্রতীয়মান যে, মনোজিৎ মিশ্রের নির্দেশ মেনে নেওয়া ছাড়া ওই কলেজের ছাত্রছাত্রীদের অন্য কোনও উপায় থাকত না। বহু ছাত্রছাত্রীর জীবনবোধ, জীবনধারাই বদলে দিয়েছে এই মনোজিৎ। কেউ পড়াশোনা বন্ধ করে বিয়ে করে নিয়েছে, তো কেউ অ্যাডভোকেট হওয়ার ইচ্ছা শিকেয় তুলে রেখে সর্বভারতীয় পরীক্ষায় বসে অন্য কলেজে ভর্তি হয়ে গিয়েছে। এত ক্ষমতাধর ছিল এই মনোজিৎ যে, হাজার অভিযোগ উঠলেও তার বিরুদ্ধে কেস দিতে পুলিশ ভয় পেত অথবা দিলেও এত হালকা যে পর দিনই সে জামিন পেয়ে যেত। কলেজের গভর্নিং বডির সদস্যরাও তার কথার বিরুদ্ধাচরণ করার সাহস দেখাতেন না।
এত সাহস সে পেত কোথা থেকে? কোন নেতার হাত ছিল তার মাথায়? যদিও বর্তমান শাসকের আমলে এমন ঘটনা নতুন কিছু নয়। বীরভূমের এক অতি পরিচিত নেতা পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্তা এবং তাঁর মা-স্ত্রীকেও অশ্রাব্য, অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেছেন। তার আগে মেদিনীপুরের এক প্রাক্তন মন্ত্রীকে সরকারি আধিকারিকের প্রতি নিম্নরুচির শব্দ ব্যবহার করতে দেখা গিয়েছে। ঘটনা হল, এই সব নেতা-নেত্রী জেনে গিয়েছেন যে, প্রশাসন তাঁদের পাশে আছে, তাঁদের বিরুদ্ধে কেউ কোনও ব্যবস্থা করবে না। তাই, প্রশাসনকে অশ্রদ্ধা করা বা প্রশাসনকে আঙুলের ডগায় নাচানো— এ সবই দুর্বৃত্তদের ক্ষমতার প্রকাশ।
ভুললে চলবে না, নির্বাচনে যে যত পেশিশক্তি দিয়ে, এবং যত সহজ ভাবে রাজনৈতিক দলের ভোট বৈতরণি পার করে দিতে পারে, সে তত সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলের ‘কাছের মানুষ’ হয়ে ওঠে। নাগরিকের সমাজ সচেতনতা, অর্থনীতির সুচারু বিশ্লেষণ, মার্জিত ব্যবহারের গুরুত্ব এখন অতীত। অশিক্ষা, চোখরাঙানি, মানুষকে নিপীড়ন করার ক্ষমতা যার যত বেশি, রাজনৈতিক দলের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা তত বেশি। যদিও, বিশ্ব জুড়েই এখন এই ছবি। তাই আমেরিকার মতো দেশেও ট্রাম্পের মতো শাসক আবার জনগণের ভোটে জিতে যান। আমাদের দেশেও উচ্চশিক্ষিত বিনয়ী রাজনৈতিক নেতাদের তুলনায় দুর্বিনীত, মিথ্যাচারী নেতাদের জনপ্রিয়তা বেশি দেখা যায়।
যে কোনও ধরনের অন্যায় যদি অঙ্কুরেই বিনষ্ট না করা যায়, তবে সে তার ডালপালা মেলে ক্রমে পুরো সমাজকেই গ্রাস করতে উদ্যত হয়। চার পাশে পরিস্থিতি যা, তাতে মনে হয় সেই পথেই চলেছি আমরা।
সুরজিৎ কুন্ডু, উত্তরপাড়া, হুগলি
ছত্রছায়া
‘ক্ষমতার দৌরাত্ম্য’ (৩০-৬) সম্পাদকীয়ের পরিপ্রেক্ষিতে কিছু কথা। শাস্তিহীনতার নিশ্চিন্তি থাকলে কী হতে পারে, তা দেখিয়ে দিয়েছে আর জি কর কাণ্ড এবং কসবার ল কলেজ ক্যাম্পাসে গণধর্ষণ কাণ্ড। কসবা ল কলেজের ঘটনায় উঠে এসেছিল মনোজিৎ মিশ্রের নাম, যে আবার ওই কলেজেরই অস্থায়ী কর্মী এবং টিএমসিপি নেতাও বটে। নির্যাতিতার অভিযোগের ভিত্তিতে জানা যায় যে, মনোজিৎ এবং তার সঙ্গীদের বর্বরোচিত আচরণে নির্যাতিতা এক সময় অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করেন তিনি। তা সত্ত্বেও তাঁকে কলেজ ক্যাম্পাসের একটি ঘরে জোর করে আটকে রেখে যৌন নিগ্রহ করা হয়। প্রসঙ্গত, মনোজিৎ মিশ্র এর আগেও একাধিক অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত ছিল বলে অভিযোগ। তার নেতৃত্বেই বহিরাগতরা আলিপুর বার অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচনে ‘দাদাগিরি’ ফলাতে গিয়েছিল বলেও অভিযোগ উঠেছে। তা সত্ত্বেও কোনও এক অজ্ঞাত কারণে সে ছিল ধরাছোঁয়ার বাইরে।
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর ‘প্রাগৈতিহাসিক’ গল্পে ‘ভিখু’ চরিত্রের মধ্য দিয়ে একটি নৃশংস চরিত্রকে ফুটিয়ে তুলেছিলেন। লুণ্ঠন, হত্যা, ডাকাতি— কোনওটিতেই অরুচি ছিল না ভিখুর। বলা বাহুল্য, নিষ্ঠুরতা ও বর্বরতায় সাম্প্রতিক ঘটনাবলির অভিযুক্তরা ‘ভিখু’ চরিত্রের কথা মনে করিয়ে দেয়। ভাবতে অবাক লাগে, নানা ধরনের অপরাধে যুক্ত থাকার অভিযোগ যার নামে, সেই মনোজিৎ মিশ্র এর আগে কখনও গ্রেফতার হয়নি। আসলে শাসক দলের ছত্রছায়ায় থাকার বিনিময়ে অপরাধ করা সত্ত্বেও যদি শাস্তি এড়িয়ে যাওয়া যায়, তা হলে অপরাধীর অপরাধের মাত্রা দিন দিন বাড়তেই থাকে। এর ফলেই মনোজিৎ মিশ্র এবং তার সঙ্গীদের এই বাড়বাড়ন্ত। তবে আশঙ্কা হয় যে, রাজ্যে নারীহিংসার বৃহৎ চিত্রটির ডালপালা হয়তো আরও অনেক দূরে বিস্তৃত। সে ক্ষেত্রে কসবা আইন কলেজের ধর্ষণকাণ্ড অন্যায়ের হিমশৈলের দৃশ্যমান চূড়ামাত্র।
পরিশেষে বলা যায়, স্কুল জীবন থেকেই কিশোর-কিশোরীকে সুনাগরিক হিসাবে গড়ে তোলার জন্য আনুষ্ঠানিক শিক্ষাব্যবস্থার পাশাপাশি নীতি শিক্ষার উপরেও গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। আর, এ বিষয়ে শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং অভিভাবকদেরও উদ্যোগী হওয়া দরকার।
অজয় ভট্টাচার্য, বনগাঁ, উত্তর ২৪ পরগনা
দিঘার ট্রেন
বিগত কয়েক মাস ধরে দক্ষিণ-পূর্ব রেলওয়ে দিঘাগামী দু’টি গুরুত্বপূর্ণ ট্রেন তাম্রলিপ্ত এক্সপ্রেস ও কান্ডারি এক্সপ্রেসকে গুরুত্বহীন ভাবে চালাচ্ছে। যাত্রাপথটি ঘণ্টাতিনেকের, অথচ প্রতি দিন লেট করে পাঁচ-ছয় ঘণ্টা। এটা মানা যায় কি? অবিলম্বে নির্ধারিত সময়ে ট্রেন দু’টি চালানোর জন্য তৎপর হোক রেল।
সুবীর কুমার কর, কলকাতা-২৮
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)