Advertisement
E-Paper

সম্পাদক সমীপেষু: বিয়ের পদ্য কত রকম

কবি সুনির্মল বসু কবি রমেশ দাসের বিবাহে: “...হঠাৎ পেলাম চিঠির খাম/ উপরে তার আমার নাম/ খুলেই দেখি- হুর্ রে – বাহবা/ হোহো হুর্ রে- বাহবা।/ বন্ধু কবি রমেশ দাস,/ পরছে গলায় বিয়ের ফাঁস,/এই বোশেখেই— আল্লা হো তোবা।’’

শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০১৮ ২২:৫৫

‘...বিয়ের পদ্যে ঠাঁই সবার’ (রবিবাসরীয়, ১৫-৪) পড়ে, আরও কিছু বলার লোভ হল। “...আমাদের বিবাহের সময় কন্যাপক্ষ যে রুমাল-পদ্য ছাপাইয়াছিল তাহাতে নলিনী দিদি তাঁহার আশীর্বাদে রজনীকে ‘চিনিপাতা দই’ বলিয়া উল্লেখ করিয়াছিলেন...।’’ বিমল কর ‘বালিকা বধূ’ ‘চিনি’র সঙ্গে পাঠকের পরিচয় করিয়েছেন এ ভাবেই।

কবি অক্ষয় কুমার বড়াল, সুরেশচন্দ্র সমাজপতির বিয়েতে লিখলেন— “তোমরা কে হে/ লভিছ অমর সুখ এই মর দেহে/ নয়নে নয়নে হয়/ কিবা প্রাণ বিনিময়/ কি মধুর লীলা-ছল সাধের সন্দেহে।’’ রবীন্দ্রনাথ, সুরেন্দ্রনাথ-কন্যা জয়শ্রীর বিবাহে লেখেন ‘পরিণয় মঙ্গল’: “তোমাদের বিয়ে হল ফাগুনের চৌঠা,/ অক্ষয় হয়ে থাক সিঁদুরের কৌটা/ সাত চড়ে তবু যেন কথা মুখে না ফোটে/ নাসিকার ডগা ছেড়ে ঘোমটাও না ওঠে,/ শাশুড়ী না বলে যেন কি বেহায়া বৌটা।’’

কবি সুনির্মল বসু কবি রমেশ দাসের বিবাহে: “...হঠাৎ পেলাম চিঠির খাম/ উপরে তার আমার নাম/ খুলেই দেখি- হুর্ রে – বাহবা/ হোহো হুর্ রে- বাহবা।/ বন্ধু কবি রমেশ দাস,/ পরছে গলায় বিয়ের ফাঁস,/এই বোশেখেই— আল্লা হো তোবা।’’

বিয়ের পদ্যের প্রকৃত স্বরূপটি ধরা পড়ে, যদি তা লেখেন ঠাকুমা, দিদিমা, বৌদিদিরা। কাব্যরসকে ছাপিয়ে যায় আবেগ। যেমন, কনের ঠাকুমা লিখছেন— “জীবন সাগরে ঝড় ওঠে যদি/ নাবিক পেয়োনা ভয়/ ঠাকুমার কথা স্মরণীয় তথা/ সংশয় কর জয়।’’ কনের মা লিখছেন— “মা, তুই মোর হৃদয়ের ধন/ চিরদিন তাই তোরে করেছি যতন।/ শিবপূজা করেছিলে/ মনোমত শিব পেলে/ সেবিও, পূজিও তারে অমূল্য রতন।’’

“শুনছি নাকি ও ঠাকুরপো আজকে তোমার বি.এ./ বৌ আনতে যাচ্ছ তুমি ফ্রেন্ড ষ্টাফ নিয়ে...’’— এ পদ্যের সম্বোধন আর লঘু রসিকতার সুরটাই বলে দেয়, লেখিকা জনৈকা বৌদিদি। আবার বরের বন্ধু লেখেন, “দেখে শুনে সামলে চলিস/ কিসের এত তাড়া?/ ও বুঝেছি মনের ভিতর/ কে দিয়েছে সাড়া।’’

পিতার দ্বিতীয় বিয়ে উপলক্ষে পুত্র লেখে: ‘‘আজি বৈশাখে দোলে শাখে শাখে/ দোলনচাঁপার ফুল/ তারি সাথে সাথে ফোটে আজি বাবা/ তোমার বিয়ের ফুল।/ এ শুভ লগনে মায়েরে হারায়ে লাগিতেছে সব ফাঁকা/ কোথা তুমি বাবা কোথা নতুন-মা রাখিব দুঃখ ঢাকা।’’

গৌরব বিশ্বাস

কলকাতা-৫১

বিজ্ঞানসম্মত?

‘পঠনপাঠনের ত্রুটি খুঁজবে রাজ্য’ শীর্ষক সংবাদে (২১-৫) বলা হয়েছে, “২০১৩ সালে স্কুল স্তরে নতুন পাঠ্যক্রম চালু হয়েছিল, যা ‘বিজ্ঞানসম্মত’ বলে দাবি করা হয়।’’ সেই পাঠ্যক্রম যে ‘বিজ্ঞানসম্মত’ নয় তার কয়েকটি উদাহরণ এখানে তুলে ধরছি।

১) তৃতীয় শ্রেণির বাংলা বই ‘পাতাবাহার’–এর ৬২ থেকে ৬৮ পৃষ্ঠায় ‘গাছেরা কেন চলাফেরা করে না’ বলে যে গল্পটি আছে তাতে বলা হয়েছে, “এক সময় পৃথিবীতে গাছেরা চলাফেরা করতে পারত। শেকড়বাকড় মাটির নীচে চালাচালি করে দিব্যি তারা ঘুরে বেড়াত। ...এমনকি মানুষ চাইলে তার জিনিস তার গ্রামে পৌঁছে দেবার কাজও করত এই সব উপকারী গাছেরা। ঠিকমত গাছেদের ডালে জিনিস রেখে তাদের নির্দেশ দিলেই গাছ হেঁটে গিয়ে সেই জিনিসপত্র ঠিক ঠিক লোকের বাড়িতে পৌঁছে দিত। ...এমনকি বুড়ো লোকেদের গাছের ডালে বসিয়ে তাদের ঠিকমত পৌঁছে দিত।’’ কেন গাছ এখন চলাফেরা করে না তার ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে: “একবার এত ভারি জিনিসপত্র চাপিয়ে দেওয়ায় গাছের ডালপালা ঝুলে পড়ল। তাই দেখে মানুষ হো হো করে হেসে উঠল। সেই বিদ্রুপের হাসি গাছ সহ্য করতে পারল না। সেই থেকে গাছ আর চলাফেরা করে না।’’

২) বইটির ১০৪-১১০ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে, “কোমরে সুতো বেঁধে কাঠ পিঁপড়েকে ঝুলিয়ে রেখেছিল বলেই কাঠ পিঁপড়ের মাঝখানের পেটটা অমন সরু হয়ে গেল।’’

৩) ২৭ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে, ‘‘এখনো নাকি ফুলপরিরা নেমে আসে পৃথিবীতে।’’

৪) চতুর্থ শ্রেণির ইংরাজি বই Butterfly–এ ১নং পাঠে বলা হয়েছে, “Long ago, everybody could touch the sky... ” কেন আকাশ ওপরে উঠে গেল তার ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে: এক বার এক বুড়ি এমন ঝাঁট দিতে শুরু করল যাতে প্রচুর ধুলো উড়তে লাগল। তার পর থেকে আকাশ ওপরে উঠে গেল।

এ সবের সঙ্গে বিজ্ঞানের কোনও সম্পর্ক আছে কি?

প্রদীপ কুমার দত্ত

কলকাতা-৭৩

গল্পটার মতো

সেমন্তী ঘোষের ‘‘কাকে বলে ‘দলিত বিকাশ’’’ নিবন্ধটি পড়ে লীলা মজুমদার-এর ‘খেরোর খাতা’ বইয়ের ‘গরীবের ঘোড়া-রোগ’ গল্পে জমিদার ও তার মোসায়েবের আলাপের কথা মনে পড়ল। জমিদারের ছেলের প্রাণের বন্ধু মুহুরির ছেলে যত একের পর এক স্কুল-কলেজের সাফল্যের গণ্ডি পার হয়, ততই জমিদারের ঈর্ষা ও আক্রোশ ঝরে পড়তে থাকে: ‘‘দেখিস তোরা, ওকে পাঠশালার গণ্ডী পার হতে হবে না!’’, ‘‘পাশ নিশ্চয় করতে পারবে না, তা না হয় মাঝিগিরি করে খাবে!’’, ‘‘ছোটলোকের ছেলে সিরেফ কপালজোরে এতটা উঠেছে। বি.এ পাশ ওকে করতে হবে না দেখো।’’, (সেই ছেলে বিএ পাশ করে পুরস্কার আর সোনার মেডেল পেয়েছে শুনে) ‘‘তা পেতে পারে। কিন্তু ছোটলোকের ছেলে তো চাকরিবাকরি পাবে না এই আমি বলে দিলাম।’’ (মোসায়েবের মুখে বছর দুই পরে সেই ছোকরা সাব ডেপুটি হয়েছে শুনে) ‘‘হে হে ধ্যাড়ধেড়ে গোবিন্দপুরের সাব ডেপুটি হয়ে কি আমাদের মাথা কিনে নেবে?’’ (ডেপুটি হয়ে মুহুরির ছেলে কুষ্ঠিয়াতেই আসছে শুনে) ‘‘...বল কি! ব্যাটার তো কম আস্পদ্দা নয়! ...তাহলে ব্যাটা নিশ্চয় মরে যাবে!’’

পশ্চাদপদ সমাজের অগ্রগতি রোধের চেষ্টা হাজার হাজার বছর ধরেই ‘হিন্দু হেজিমনি’ করে আসছে, কিন্তু তারা যে সফল নয় তার প্রমাণ ২০১৮-র ভারতেও এদের প্রতিভূ দলের দলিত-দরদের মেকি প্রদর্শন।

অরূপকুমার দাস

অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ,

কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়

আয়ুর্বেদ

‘‘যথেচ্ছ ‘ক্রসপ্যাথি’র ধন্দ সরকারি ক্ষেত্রেও’’ (২০-৫) প্রতিবেদনটিতে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দফতরের অধীনে কর্মরত আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকদের বাস্তব অবস্থানটি চমৎকার ফুটে উঠেছে। আমাদের বলতে কোনও দ্বিধা নেই যে, পশ্চিমবঙ্গ সরকার আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকদের যখন যেমন প্রয়োজন কাজে লাগিয়েছেন, কিন্তু তাঁদের কাজের কোনও সমাদর বা স্বীকৃতি দেননি। আশা করা যায় এটা কোনও সরকারি নীতির ফল নয়, কিছু স্বার্থান্বেষীর অভ্যাসের ফল।

প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকরা অস্ত্রোপচার বা সেলাইও করতে পারবেন না। এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই। বহু অস্ত্রোপচার এবং ক্ষত সেলাইয়ের পদ্ধতির উৎস হল আয়ুর্বেদ। এবং আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকের পূর্ণ অধিকার আছে এগুলি করার।

ডা. অসীম সাহু, ডা. নজরুল ইসলাম

অল বেঙ্গল বিএএমএস ডক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন

প্রতিবেদকের উত্তর: গত ২০১৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের ডিরেক্টর জেনারেল (আয়ুষ) ও সচিব একটি নির্দেশিকা জারি করেন। তাতে স্পষ্ট বলা হয়, আয়ুর্বেদ চিকিৎসকেরা ইন্ট্রাভেনাস ইঞ্জেকশন ও আইভি ড্রিপ দিতে পারবেন না। ‘ক্ষারসূত্র’ ছাড়া অন্য কোনও ধরনের অস্ত্রোপচার করতে পারবেন না এবং রোগীকে রক্ত চালানোর অধিকারী হবেন না। এ ব্যাপারে যথেষ্ট বিতর্ক তখনও হয়েছে, এখনও হচ্ছে এবং বিভ্রান্তিও ছড়িয়েছে। খবরে সেটাই লেখা হয়েছে। আয়ুর্বেদ চিকিৎসকেরা প্রশ্ন তুলেছেন, কেন তাঁরা ক্ষত সেলাই করতে পারবেন না বা আইভি ড্রিপ দিতে পারবেন না। কিন্তু এর কোনও যথার্থ উত্তর এখনও স্বাস্থ্য দফতর দিতে পারেনি।

Education Wedding Rhymes
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy