Advertisement
E-Paper

সম্পাদক সমীপেষু: তিনি কিন্তু পরিণত

অথচ কঠিন পরিস্থিতিতেও অভিষেক সংযত। নবীন প্রজন্মের নেতা অভিষেক একাধিক ভাষায় স্বচ্ছন্দ, সুবক্তা এবং কূটনীতিতে পরিপক্ব।

শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৭:০০
Share
Save

দেবাশিস ভট্টাচার্য “যে ধনে হইয়া ধনী...” (১৬-১) প্রবন্ধে যে মূল্যায়ন করেছেন, তাতে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে খানিকটা লঘু করে দেখা হয়েছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অভিষেক নিজেকে যথেষ্ট পরিণত করেছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আবেগের বশে অথবা আচমকা এখনও এমন মন্তব্য করেন, যা নিয়ে আলোচনা চলে। এমনকি মুখ্যমন্ত্রী তথা জননেত্রী হিসাবে তাঁর কিছু পদক্ষেপে সর্বভারতীয় স্তরে তাঁর ভাবমূর্তি প্রশ্নের মুখে পড়েছিল।

অথচ কঠিন পরিস্থিতিতেও অভিষেক সংযত। নবীন প্রজন্মের নেতা অভিষেক একাধিক ভাষায় স্বচ্ছন্দ, সুবক্তা এবং কূটনীতিতে পরিপক্ব। তাঁরই একক উদ্যোগে আই প্যাকের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে রাজনীতিতে তৃণমূলের লাভটুকু কি অস্বীকার করা যাবে? ‘দিদিকে বলো’, ‘দুয়ারে সরকার’, ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’— এ সবই তো আই প্যাকের মস্তিষ্কপ্রসূত। ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্রে অভিষেকের রেকর্ড ভোটে জয়লাভ, পঞ্চায়েত নির্বাচনে তাঁর এলাকায় ভাল ফল— এ সব কি ‘নিজের জোরে’ দলকে জেতানোর চেয়ে কোনও অংশে কম? প্রবন্ধে ইঙ্গিত করা হয়েছে দলের শীর্ষ পদ পাওয়ার পরই অভিষেক অধিকার ফলানোর চেষ্টা করেছেন। ক্ষমতা বা অধিকারবিহীন থেকে কোনও পদের দায়িত্ব এবং কর্তব্য পালন কি যথাযথ ভাবে রূপায়ণ করা সম্ভব? ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার অর্থ তো অন্যদের ল্যাম্পপোস্ট করে রাখা, যা দীর্ঘমেয়াদি ক্ষেত্রে ফলদায়ক নয়। হয়তো, দলনেত্রীর নীরবতাই অভিষেকের ‘অধিকার’ প্রাপ্তির সম্মতি। মতবিরোধ সব দলেই রয়েছে। কিন্তু পারস্পরিক স্বার্থে তা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই চরম আকার ধারণ করে না। মুকুল রায়ের পর তৃণমূলের চাণক্য যদি কেউ থাকেন, তিনি অভিষেক। তাঁর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা একনাথ শিন্দের পথ ধরবে না বলেই মনে হয় এবং মমতাও তা চাইবেন না। পারস্পরিক বোঝাপড়ায় উভয়ের মধ্যে সম্পর্কের শীতলতা এক সময় থিতিয়ে আসবে। না হলে কিন্তু দলের পক্ষে তা অত্যন্ত বিপজ্জনক হবে।

ধীরেন্দ্র মোহন সাহা, কলকাতা-১০৭

ভিন্ন পরিস্থিতি

দেবাশিস ভট্টাচার্যের লেখা প্রবন্ধ “যে ধনে হইয়া ধনী...” প্রসঙ্গে কিছু কথা। তিনি ঠিকই উল্লেখ করেছেন যে তৃণমূল দলটি গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জর্জরিত হলেও, এই দলে মমতাই শেষ কথা। শেষে লেখকের মত, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় একনাথ শিন্দের মতো দল ভেঙে বেরিয়ে যেতে পারেন। অবশ্য অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যে এমনটা করবেন, সে বিষয়ে লেখক নিশ্চিত নন। কিন্তু আমি নিশ্চিত যে, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দল ভাঙবেন না। কারণ, একনাথ শিন্দের পরিস্থিতি ও তাঁর পরিস্থিতি এক নয়। অভিষেক আর একনাথ শিন্দে এক নন। আর সেটা অভিষেক নিজেও জানেন। একনাথ শিন্দে শিবসেনা দলের প্রতিষ্ঠাতা বাল ঠাকরেকে পুঁজি করে দল ভেঙেছিলেন এবং উদ্ধব ঠাকরের থেকেও শিন্দের দিকে বেশি বিধায়ক চলে গিয়েছিলেন। শিন্দে বিজেপির সহযোগিতায় সেই সব বিধায়ককে নিয়ে অসমে গিয়ে উঠেছিলেন এবং তত দিন সেখানেই ছিলেন যত দিন না রাজ্যপাল উদ্ধব ঠাকরেকে বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রমাণ দেখাতে বলেন। স্বাভাবিক ভাবেই উদ্ধব বিধানসভার আস্থা অর্জন করতে পারেননি। একনাথ শিন্দে বিজেপির সমর্থনে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন।

অভিষেক ভালই জানেন যে তিনি ১০০ জন বিধায়ক নিয়ে দল ভাঙতে পারবেন না। শুধু শুধু তিনি মমতার বিরাগভাজন হতে কেন যাবেন? বরং উল্কার গতিতে উঠে এসে দলে তিনি যে জায়গা করেছিলেন, তা হারাবেন। এমনকি তাঁর রাজনৈতিক জীবনও শেষ হয়ে যেতে পারে। আসলে ব্যক্তিকেন্দ্রিক দলে কিছুটা গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব থাকে। গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বেশি মাথাচাড়া দিলে মমতা মিটিয়ে দিচ্ছেন এবং ভবিষ্যতেও দেবেন।

কমল চৌধুরী, কলকাতা-১৪০

সংঘাত থাকবে

“যে ধনে হইয়া ধনী...” শীর্ষক দেবাশিস ভট্টাচার্য লিখিত প্রবন্ধের পরিপ্রেক্ষিতে কিছু কথা। ২০০৮-এ ‘বাঙালি পরিবর্তন চায় কি চায় না’ শীর্ষক বিতর্কসভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, পরিবর্তনকে শৃঙ্খলে আবদ্ধ রাখা যায় না, পরিবর্তন ভবিষ্যৎকে উন্নত করে, প্রতিযোগিতার মান বাড়ায়, প্রতিষ্ঠানের বৃদ্ধি ঘটায়। ইতিহাসও তার সাক্ষ্য বহন করছে। রামমোহন তুলে দিয়েছিলেন সতীদাহ প্রথা, ঈশ্বরচন্দ্র বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে লড়াই করে জয়ী হয়েছিলেন। শ্রীরামকৃষ্ণ, বিবেকানন্দ, রবীন্দ্রনাথ, সুভাষচন্দ্র সকলেই ছিলেন নতুন এক-একটি যুগের পথিকৃৎ। সমগ্র জাতিও এক সময় জেগে উঠেছিল তেভাগা আন্দোলন বা খাদ্য আন্দোলনে। মমতার মত ছিল, বন্দুকের নল দিয়ে বাংলার পরিবর্তনকে রুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। তাই কলেজ স্বয়ংশাসনের অধিকার পাবে কি না, তা ঠিক করে পার্টি, কারা কোন পদে বসবেন, তাও ঠিক করে শাসক দল।

অবশেষে পশ্চিমবঙ্গে পরিবর্তন এসেছে। সেই পরিবর্তনও চোদ্দোটি বসন্ত অতিক্রম করতে চলল। নদী যেমন নানা ঘাত-প্রতিঘাত উপেক্ষা করে বিবিধ জায়গায় বাঁক নেয় কিংবা খানিক নিজেকে ভেঙেচুরে স্বাভাবিক চলনের পথ খোঁজে, তেমনই একটি রাজনৈতিক দলের ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পরবর্তী সময় থেকে দীর্ঘ চলনের গতিপথটিও ক্রমশ বদলাতেই থাকে। তৃণমূল কংগ্রেস নামক রাজনৈতিক দলটিও ব্যতিক্রম নয়।

লেখক তৃণমূল কংগ্রেস দলটির কান্ডারি-দ্বয়ের ব্যবধানটি বোঝাতে বলেছেন, কলেজে ছাত্র ইউনিয়ন থেকে ধরলে মমতার রাজনৈতিক জীবন কমবেশি পঞ্চাশ বছরের। অভিষেকের রাজনীতিতে সক্রিয় উপস্থিতি বছর দশেকের। অর্থাৎ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার নিরিখে তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দলের মূল কান্ডারির চেয়ে প্রায় চল্লিশ বছরের ব্যবধানে পিছিয়ে রয়েছেন। তবুও ভারতীয় রাজনীতির অভ্যাসবশত বংশের প্রদীপটিকে প্রজ্বলিত রাখার স্বার্থেই দলের হৃৎপিণ্ড তথা মুখ্যমন্ত্রী ২০২১-এর বিধানসভা জয়ের পর ভাইপোকেই দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক পদে বসিয়ে দিয়েছিলেন। লেখকের বক্তব্য অনুসারে— এ ভাবেই মমতার তুলে দেওয়া ‘ধন’-এ অভিষেক ‘ধনী’ হলেন।

সমাজজীবনে সিন্দুকে গচ্ছিত ধনটি বংশ-পরম্পরাতেই প্রবাহিত হয়। তাই, পিসির ‘সঞ্চিত ধন’ তো ভাইপোর নিকটেই যাবে। গচ্ছিত ধনটি হস্তান্তরের পরেই প্রাপকের প্রতিক্রিয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। লেখকের বক্তব্য অনুযায়ী, তৃণমূল কংগ্রেস এখন দু’টি ঠিকানায় বিভাজিত। এ ভাবেই পরিবারের গুরুজনের ধনে ধনী হয়ে ওঠা ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যখন ওয়াকিবহাল হয় যে ‘সিন্দুক’ খোলার চাবিকাঠিটি নিজের পকেটেও আছে, তখন সে গুরুজনদের বিপাকে কিংবা অস্বস্তিতে ফেলতেও পিছপা হয় না। দুই প্রজন্মের ব্যবধানের নিরিখে মানসিকতার ফারাক দলের মধ্যে যে ফাঁকফোকর তৈরি করে তার ফলেই তৈরি হয় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রকোষ্ঠ এবং গোষ্ঠী কোন্দল। আর সেই বিভেদ-বিভাজনকে ঢাকনায় চাপা দিতে উঠে পড়ে লাগেন দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব। তাই প্রবন্ধের শেষাংশ বিশেষ রূপে প্রণিধানযোগ্য— তৃণমূলে ভোটের মুখ আজও মমতা। বাকি সব নেপোয় মারে দই!

জয়ললিতা-প্যাটার্নে ব্যক্তিকেন্দ্রিক রাজনীতির হাত ধরে সমগ্র পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে মমতার মুখের জয় সর্বত্র। তিনি ঘোষণা করেছেন, তৃণমূল কংগ্রেসের চেয়ারপার্সন তিনি, দল ও সরকার চালাবেন তিনিই। নেত্রী বলেছেন, “আরও ১০ বছর আমিই চালাব।” অর্থাৎ ৭৫ বছর বয়স (যদি এখন ৬৫ হয়) পর্যন্ত তিনিই তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বেসর্বা থাকতে চান, তা পরিষ্কার। তাই সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হিসাবে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে চেয়ারপার্সনের প্রজন্মের ব্যবধানের সংঘাত ভবিষ্যতে বাড়বে বলেই মনে হয়।

সঞ্জয় রায়, দানেশ শেখ লেন, হাওড়া

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Mamata Banerjee TMC

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}