E-Paper

সম্পাদক সমীপেষু: বিরাট পুরুষ

২০১৫-২০১৯— এই সময়কালে ক্রিকেটের তিন ফরম্যাট মিলিয়ে বিরাট যে উচ্চতায় আরোহণ করেন, তা বিশ্বের আর কোনও ব্যাটারের পক্ষে সম্ভব বলে মনে হয় না।

শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০২৫ ০৫:৫৯
Share
Save

মার্টিন ক্রো উদ্ভাবিত ‘ইয়ং ফ্যাব ফোর’-এর মধ্যে বিরাট কোহলিই প্রথম টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় জানালেন। থামতে হল দশ হাজার রানের গণ্ডি টপকানোর আগেই। এটা অনস্বীকার্য যে, গত পাঁচ বছরে আমরা যে বিরাটকে চাক্ষুষ করেছি, তিনি প্রাক্-অতিমারির সেই অতিকায় বিরাটের ছায়াও নন। ২০১৫-২০১৯— এই সময়কালে ক্রিকেটের তিন ফরম্যাট মিলিয়ে বিরাট যে উচ্চতায় আরোহণ করেন, তা বিশ্বের আর কোনও ব্যাটারের পক্ষে সম্ভব বলে মনে হয় না। তাঁর কেরিয়ার গ্রাফ অনেকটা অস্ট্রেলিয়ার রিকি পন্টিংয়ের মতো— দু’জনেই পাঁচ-ছয় বছর খেলার সর্বোচ্চ শিখরে বিচরণ করে হঠাৎই যেন ফর্মহীনতার অতল গহ্বরে হারিয়ে গেলেন।

আজ বিরাট ৪৬.৮ গড় নিয়ে টেস্ট ক্রিকেট থেকে সরে দাঁড়ালেন। অনেকেই বলছেন তিনি ‘অ্যাভারেজ’। তবে, নিছক সংখ্যাতাত্ত্বিক পরিসংখ্যান দিয়ে এক জন ক্রিকেটারের মূল্যায়ন সম্পূর্ণ হয় না। সচিনও দু’শো টেস্ট খেলতে গিয়ে অযথা নিজের কেরিয়ারকে দীর্ঘায়িত করে যখন ব্যাটিং গড় নামিয়ে আনেন, তখন তিনিও নিজের অলক্ষ্যেই সমালোচকদের বলার সুযোগ করে দেন যে, জ্যাক কালিস বা কুমার সঙ্গকারা তাঁর চেয়েও বড় মাপের ব্যাটার। সচিন শুধু ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম শক্তিশালী ব্যাটারই নন, তিনি সেই ব্যক্তি যিনি এক ক্রিকেট-জ্বরে আক্রান্ত জাতির আবেগ ও গগনচুম্বী প্রত্যাশাকে অক্লান্ত ভাবে বহন করে গিয়েছেন বছরের পর বছর। একই ভাবে টেস্ট ক্রিকেটার বিরাট কেবল এক ঐতিহ্যবাহী যুগের প্রতিনিধি নন— তিনি সেই যুগের কেন্দ্রস্থলও। এই বিরাট সচিন-দ্রাবিড়-লক্ষ্মণের মতো পরিশীলিত টেকনিকের অধিকারী, ধীর, নম্র, স্থিতধী নন। তিনি উদ্ধত, আগ্রাসী, কখনও কখনও দাম্ভিকও। এই বিরাট যেন ভারতীয় জার্সিতে এক অস্ট্রেলীয়— যিনি স্লেজিংয়ের জবাবে স্লেজ করতে জানেন, প্রতিপক্ষকে শুধু ব্যাটেই নয়, শরীরী ভাষার মাধ্যমেও দমিয়ে দিতে জানেন। তিনি ক্রিজ়ে শুধু টিকে থাকার জন্য আসেন না, আসেন দখল নিতে।

বিরাট হলেন সেই মানুষটি, যিনি এক সময়ে টেস্ট ক্রিকেট থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া জাতিকে আবার টেস্ট ক্রিকেট নিয়ে চর্চা ও মাতামাতিতে বাধ্য করেছেন। নিস্তব্ধ বাইশ গজ যেন তাঁর নেতৃত্বে, গর্জনে, উদ্দীপনায়, উন্মাদনায় মুখরিত হয়ে রূপ নিত এক সত্যিকারের যুদ্ধক্ষেত্রে। শুধু ব্যাটিং করে নয়, ফিটনেস, ফিল্ডিং, শরীরী ভাষার মাধ্যমে তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন, দল গড়তে হলে নিজেকে নিংড়ে দিতে হবে, উজাড় করে দিতে হবে সর্বস্ব। তাঁর অধিনায়কত্বের একমাত্র সীমাবদ্ধতা— দলের বাকি সদস্যদের কাছে তিনি তাঁর মতো অপরিমিত আবেগ, নিষ্ঠা ও প্রয়াস আশা করেছিলেন। এ প্রত্যাশা হয়তো সব সময় বাস্তবসম্মত নয়। কিন্তু বিরাট ছিলেন অনন্য। তিনি ক্রিকেটকে শুধু খেলা নয়, এক অগ্নিপরীক্ষায় পরিণত করেছিলেন— যেখানে শুধু জয় নয়, প্রতি বলেই নিজেকে প্রমাণ করা ছিল তাঁর দর্শন।

সামন্ত সরকার, বলরামপুর, কোচবিহার

শেষ তারকা

সম্পাদকীয় ‘বিরাট পর্ব’ পড়ে কিছু কথা। টেস্ট ক্রিকেট থেকে বিদায় নেওয়ার জন্য বিরাট কোহলি সঠিক সময়ই বেছে নিয়েছেন বলে মনে করি। এ বার ক্রীড়া সাংবাদিকগণ এবং বিজ্ঞাপন সংস্থাগুলি ভারতীয় ক্রিকেটের পরবর্তী ঈশ্বরের খোঁজে ব্যস্ত হয়ে পড়বেন বটে, তবে বিরাট ক্রিকেটের এক জন সত্যিকারের সুপারস্টার। যদিও গত ত্রিশ বছর ধরে ক্রিকেট খেলাটা আর ঠিক ‘খেলা’ নেই। বিনোদন পেরিয়ে তা চলে গিয়েছে এক বিশাল ব্যবসার ছত্রছায়ায়। তাই আর শুধু ব্যাটিং গড় দিয়ে সেরার বিচার করা যাবে না। চাই কর্পোরেট ব্র্যান্ড ভ্যালু-ও। সমকালীন সেরাদের মধ্যে মাঠের মধ্যে বা মাঠের বাইরে বিরাটের মতো শরীরী ভাষা আর কারই বা ছিল। তিনি কেরিয়ারের প্রথম আট বছরে গড়ে ৫৪-র বেশি রান করলেও, গত পাঁচ বছরে তাঁর ব্যাটিংমানে যথেষ্ট অবনতি হয়েছে। তবু বিরাটের ‘ব্র্যান্ড ভ্যালু’ এতটুকু কমেনি।

সম্পাদকীয়ের সঙ্গে আংশিক তাল মিলিয়ে বলতে হয়, কোহলি তাঁর অধিনায়কত্বে ভারতীয় দলকে এক অপরাজিত শক্তিতে পরিণত করার চেষ্টায় কোনও খামতি রাখেননি। সম্পাদকীয়তে লেখা হয়েছে, সত্তরের দশকের ক্লাইভ লয়েড বা নব্বইয়ের দশকের স্টিভ ওয়-র অধিনায়কত্বের কথা। তবে সে ছিল অন্য যুগ। বলা বাহুল্য, ওয়ান ডে ফরম্যাট যখন টেস্ট খেলার উত্তেজনার জায়গা দখল করতে শুরু করে, তখন প্রতিটি দেশের টেস্ট ম্যাচ ক্রিকেটে বিশ্বমানের খেলোয়াড়ের সংখ্যা ক্রমশ কমতে থাকে। অনেক বছর আগে থেকে সেই পতনের শুরু, যা বিরাটের যুগে এসে আরও স্পষ্ট ভাবে দেখা যাচ্ছে। ক্রিকেট খেলিয়ে দেশের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া সত্ত্বেও সমগ্র বিশ্বে মাত্র চার-পাঁচ জন বিশ্বমানের খেলোয়াড় রয়ে গিয়েছেন। যেমন, এ বি ডি ভিলিয়ার্স, স্টিভ স্মিথ, জো রুট, কেন উইলিয়ামসন, বাবর আজ়ম এবং অবশ্যই আমাদের বিরাট কোহলি। কর্পোরেটের চাদরে মোড়া এই ব্যবসার ক্রিকেট প্রমাণ করেছে যে, টেস্ট ক্রিকেট অবশ্যই বিলুপ্তির পথ ধরে এগিয়ে চলেছে। বিরাট সম্ভবত সেই ফরম্যাটের শেষ সুপারস্টার।

সোমনাথ মুখোপাধ্যায়, কলকাতা-৫৭

প্রশ্রয়ের ফল

‘বিদেশ সচিবের নামে কুৎসা, সরব নেটপাড়ার একাংশ’ (১২-৫) সংবাদটি পড়ে এক জন ভারতবাসী হিসাবে অত্যন্ত লজ্জাবোধ করছি। ‘দেশদ্রোহী’, ‘বিশ্বাসঘাতক’ বলে ‘এক্স হ্যান্ডেল’-এ যে সব কুৎসিত ভাষা তাঁর বিরুদ্ধে প্রয়োগ করা হয়েছে, সেগুলির কোনওটিই কি তাঁর প্রাপ্য? ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে বিরতির যে সিদ্ধান্ত ভারত সরকার নিয়েছে, সেটিই তিনি ঘোষণা করেছেন মাত্র। যদিও তার আগেই আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তা ঘোষণা করে দেন। দেশের বেশির ভাগ মানুষ এই যুদ্ধবিরতিকে স্বাগত জানান। কারণ যুদ্ধ মানেই ধ্বংস এবং নিরীহ মানুষের মৃত্যু। তা শুধু বিরোধী পক্ষেরই ঘটবে— এমন যে কখনও হয় না, এ কথা কারও অজানা নয়। তা সত্ত্বেও সমাজের অতি মুষ্টিমেয় মানুষ, যাঁরা এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাতে পারেননি এবং যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার পক্ষেই সওয়াল করেছিলেন, তাঁদের উগ্র যুদ্ধোন্মাদ ছাড়া আর কিছু বলা চলে কি? এঁদের হয় যুদ্ধের ভয়াবহতা সম্পর্কে কোনও ধারণাই নেই, নয়তো কোনও বিশেষ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই এই কাজ করেছেন। বস্তুত, বিদেশ সচিবের নামে কুৎসা এক সময় এমন মাত্রায় পৌঁছয় যে তাঁকে তাঁর অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিতে হয়।

পহেলগামে নিহত নৌবাহিনীর লেফটেন্যান্ট বিনয় নারওয়ালের স্ত্রী হিমাংশী যখন জঙ্গিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেও সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ না ছড়ানোর কথা বলেন, তখন তাঁর ব্যক্তিগত যন্ত্রণার কথা বিস্মৃত হয়ে এঁরাই তাঁকে ক্রমাগত আক্রমণ করতে থাকেন। আশ্চর্যের বিষয়, তাঁকে এই ভাবে ব্যক্তিগত আক্রমণের এবং সমাজে বিদ্বেষ ছড়ানোর বিরুদ্ধে পুলিশ-প্রশাসন যেমন ব্যবস্থা নেয়নি, তেমনই শাসক দলের কোনও নেতা-মন্ত্রীও তাঁদের নিরস্ত করতে এগিয়ে আসেননি। বরং প্রশাসনের নীরবতায় এবং কিছু নেতার বক্তব্যে তাঁরা উৎসাহিতই হয়েছেন। অর্থাৎ, তাঁদের প্রশ্রয় দেওয়া হয়েছে। এই প্রশ্রয়ই ক্রমে ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইনের আকার ধারণ করে বিদেশ সচিবকে আক্রমণ করে বসল।

ইন্দ্র মিত্র, কলকাতা-৩১

বিনা ভাড়ায়

দিল্লি পরিবহণ নিগম মহিলাদের বিনা ভাড়ায় যাতায়াতের সুবিধা দেয়। প্রত্যেক মহিলা যাত্রীকে নিঃশুল্ক ‘পিঙ্ক টিকিট’ দেওয়া হয়। এটি আপ সরকার চালু করলেও বিজেপি সরকার এখনও এই ব্যবস্থা চালু রেখেছে। এ রাজ্যেও মহিলাদের সরকারি বাসে এই পরিষেবা দেওয়ার কথা ভাবা যেতে পারে।

নীলাঞ্জন চৌধুরী, কলকাতা-৫৪

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Virat Kohli Indian Cricket

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে আপনার সাবস্ক্রিপশন আপনাআপনি রিনিউ হয়ে যাবে

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।