E-Paper

সম্পাদক সমীপেষু: কার জন্য এত উন্নতি?

লেখক, অধ্যাপক, শিল্পী ইত্যাদি মানুষজন এক সময় সমাজে বিবেকের ভূমিকা পালন করতেন।

শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০২৫ ০৭:৪০

মোহিত রায়ের প্রবন্ধ ‘একনায়কের নতুন অস্ত্র’ (২৮-৮) প্রসঙ্গে কিছু কথা। বর্তমান ভারতে ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব ও দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন বাড়বৃদ্ধির কারণে সংগঠিত সংস্থায় পর্যন্ত শ্রমিকের কাজের স্থায়িত্ব যথেষ্ট সংশয়ের মধ্যে রয়েছে, এবং অসংগঠিত ক্ষেত্রে চাকরির কোনও নিরাপত্তাই নেই। ফলত, অত্যন্ত সামান্য বেতনে দিনে বারো ঘণ্টা কাজ, সপ্তাহে এক দিনও ছুটি না থাকা, কাজে না এলে বেতন না পাওয়া একদম স্বাভাবিক, সাধারণ ঘটনা। এর পরেও রয়েছে শ্রমিকের প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা জমা না দেওয়া, যে কোনও দিন যে কোনও অজুহাতে কাজ থেকে বহিষ্কার ইত্যাদি। লেখক কি এর পরও আরও কষ্টকর কর্মব্যবস্থা চাইছেন? মালিকের প্রতি শ্রমিকের আরও বশ্যতা দাবি করছেন? মানবসমাজ ক্রমশ উন্নতি আশা করে, আশা করে তার ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত থাকবে এবং ভবিষ্যতের কথা ভেবেই কঠোর পরিশ্রম করে। বর্তমান ভারতের শ্রমিক কি ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখার মতো জায়গায় আদৌ আছে?

লেখক, অধ্যাপক, শিল্পী ইত্যাদি মানুষজন এক সময় সমাজে বিবেকের ভূমিকা পালন করতেন। সমাজে বা রাষ্ট্রের কোনও অন্যায় বা সাধারণ মানুষের উপর নিপীড়নের বিরুদ্ধে তাঁদের লেখনী সর্বদাই গর্জে উঠত। আজ বুদ্ধিজীবীরা অনেকেই বলেন, দেশের উন্নতির স্বার্থে ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। প্রশ্ন হচ্ছে, দেশ মানে কি শুধু একখণ্ড মাটি! আমরা তো জানি যে দেশ মানে আসলে দেশের মানুষ। তা হলে দেশের মানুষের যদি কোনও উন্নতি না হয়, সে উন্নতি কার কোন কাজে লাগে?

মনে প্রশ্ন জাগে, চিনের সাধারণ মানুষজন কিংবা শ্রমিকশ্রেণি যদি খুবই কম বেতনে কাজ করতে বাধ্য হয়, যদি সত্যিই আর্থিক নিপীড়নের শিকার হয়, তা হলে সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে তা পরিস্ফুট হতে বাধ্য। কিন্তু বাস্তবে আমরা দেখতে পাচ্ছি সর্বক্ষেত্রেই, যেমন বিজ্ঞানচর্চা, খেলা, সামরিক শক্তি, কূটনীতিতে চিনের সঙ্গে পাল্লা দেওয়া কঠিন। দেশের মানুষকে বঞ্চিত করে কি দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব? চিনের এত সমৃদ্ধি দেশের মানুষকে নিপীড়ন করে পাওয়া গিয়েছে বলে বিশ্বাস হয় না। পনেরো দিন বা এক মাসের জন্য ঘুরতে গিয়ে একটা দেশ সম্পর্কে সমুচিত ধারণা পাওয়া যায় না এ কথা ঠিক, কিন্তু একটা ইঙ্গিত তো পাওয়া যায়। পরিচিত এবং আত্মীয়স্বজন যাঁরা চিন ভ্রমণে গিয়েছেন, প্রত্যেকেই ওই দেশের মানুষের প্রভূত উন্নতি দেখে বিস্মিত হয়েছেন। একেবারে শেষে বলি, পরিবেশবিধি না মানার ফল কিন্তু আমরা নিজেরাই উত্তরাখণ্ড, হিমাচল প্রদেশ, জম্মু ও কাশ্মীরে হাতে-হাতে দেখতে পাচ্ছি।

সুরজিৎ কুন্ডু, উত্তরপাড়া, হুগলি

ভারসাম্য জরুরি

মোহিত রায়ের ‘একনায়কের নতুন অস্ত্র’ শীর্ষক প্রবন্ধ বিষয়ে কিছু কথা। ভারতের মতো বিশাল গণতান্ত্রিক দেশে জাতি, জনজাতি, ধর্ম-বর্ণ-সম্প্রদায় নির্বিশেষে বিভিন্ন ধরনের মানুষের বাস। যাতে এদের কেউ বঞ্চিত না হয়, প্রত্যেকের মত ও অধিকার যাতে সুরক্ষিত থাকে, আমাদের সংবিধান তা সুনিশ্চিত করে।

দেশের আদি বাসিন্দারা তো প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্যেই জীবনযাপনে অভ্যস্ত, এবং ওটুকুই তাঁদের বিচরণভূমি। আজ যদি আমাকে দোতলা সুন্দর বাগানবাড়ি থেকে হঠাৎ উৎখাত করে একটি অন্ধকার ঘুপচি ঘরে থাকতে দেওয়া হয়, তার মধ্যে যে কষ্ট বেদনা নিহিত, সেও ওঁদের ভূমিহীন হওয়ার কষ্ট ও সম্মানহানির সঙ্গে তুলনীয় নয়। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র তার ক্ষুদ্রতম জনজাতি গোষ্ঠীরও বাসস্থান ও সম্মানের সঙ্গে বেঁচে থাকার মৌলিক অধিকার রক্ষা করবে, সেটাই তো স্বাভাবিক। ভারত তো চিনের মতো কঠোর রাষ্ট্রশক্তি নয়।

আর পাহাড়-জঙ্গলের অধিকার শুধু জনজাতিভুক্তদের নয়, প্রত্যেক ভারতবাসীর। এগুলি জনগণের সম্পত্তি। আন্তর্জাতিক সংরক্ষণ আইনের সঙ্গে সাযুজ্য রেখেই দেশের পরিবেশ আইনগুলো তৈরি। এই আইনগুলির বিপরীতে গিয়ে বা লঙ্ঘন করে খননকার্য চালানো কতটা যুক্তিযুক্ত? তবে লাভের জন্য ও লোভের জন্য যথেচ্ছ ভাবে খনন করা আর বৈজ্ঞানিক ভাবে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার করে ন্যূনতম ক্ষতি করে খনন করা, দুটোর মধ্যে তফাত আছে। সেই পার্থক্য রাজনৈতিক ইচ্ছাশক্তি এবং দূরদর্শিতার। ভারসাম্যের ব্যবস্থা রাখাই উন্নয়নের মূলমন্ত্র, যা বৈচিত্রের দেশ ভারত এড়িয়ে যেতে পারে না।

শুভাশীষ মান্না, হাওড়া

পথিকৃৎ তিনি

অর্ক ভাদুড়ির ‘এক বিরল সমাজস্বপ্ন দ্রষ্টা’ (১৬-৯) শীর্ষক প্রবন্ধটি পড়ে ঋদ্ধ হলাম। যথার্থ বিশ্লেষণে বদরুদ্দীন উমরের কর্মজীবনে বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি জেলায় তাঁর সাংগঠনিক কাজের কথা আলোচিত। অনেক ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন অদ্বিতীয়, অনন্য।

সাধারণ মানুষের মতো ভীতি কিংবা মোহ তাঁকে গ্রাস করতে পারেনি। পার্থিব চাওয়া-পাওয়ার প্রতি মোহ না থাকায় তিনি নির্ভয়ে নিরন্তর জ্ঞান সাধনা করেছেন। আদর্শের প্রশ্নে অন্য দশ জন রাজনীতিকের থেকে ছিলেন অনেক এগিয়ে। তরুণ প্রজন্ম তাঁর থেকে কতটুকু শিখতে পেরেছে, তা ভবিষ্যৎই বলে দেবে।

সারা জীবন কেবল তিনি কাজের মধ্যে ছিলেন। ক্লান্তি কাকে বলে তা তিনি জানতেন না। সংগ্রামের জীবন থেকে কখনও বিচ্যুত হননি। ভাষা আন্দোলনে তাঁর সক্রিয় ভূমিকা, গবেষণা, ঔপনিবেশিক মানসিকতার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ এবং সমাজতান্ত্রিক দর্শনের প্রতি অবিচল নিষ্ঠা আমাদের সমৃদ্ধ করেছে।

উৎপল মুখোপাধ্যায়, চন্দননগর, হুগলি

নাড়ু ও বিসর্জন

এ বছরের মতো পুজো চলে গেল। রচিত হল কত স্মৃতি, কত গল্প, আনন্দ-বেদনা। তবু জানি না কেন আমার মনে হয়, ছোটবেলায় আমাদের পুজোর সেই দিনগুলো বেশি সুন্দর, বেশি মিষ্টি, নির্ভেজাল আনন্দে ভরপুর ও রঙিন ছিল। এক দিকে পুজো তো অন্য দিকে পরিবারের ছোটবড় সবাই মিলে গল্পগুজব, হাসিঠাট্টা। পাড়ার বন্ধুবান্ধব থেকে ভাইবোনদের সঙ্গে হাসি-তামাশায় মেতে ওঠা, এক সঙ্গে খেলা এবং পাল্লা দিয়ে পায়ে হেঁটে ঠাকুর দেখার কী আনন্দই যে ছিল!

দশমী এলেই মায়ের বরণের দৃশ্য দেখে মনখারাপের শুরু। দেবী দুর্গাকে বরণ করার পাশাপাশি একে অপরের গালে লাল টুকটুকে সিঁদুর লাগিয়ে শুভেচ্ছা বিনিময়ের পরিচিত দৃশ্যটি এই বঙ্গে যুগ যুগ ধরে বিরাজমান। বরণের সময় দেবী দুর্গার দুই গালে পানপাতার আলতো ছোঁয়া এবং কপালটিতে সিঁদুর মাখিয়ে দেওয়ায় মাতৃমুখখানি অপূর্ব সুন্দর দেখতে লাগে।

বরণের রীতিতে পার্থক্য চোখে না পড়লেও, আমূল পরিবর্তন এসেছে অন্য দিকে— মা দুর্গাকে মিষ্টিমুখ করিয়ে বিদায় জানানোর বিষয়টিতে। আগে একটা সময় ছিল যখন মা দুর্গাকে দশমীর দিনে বিদায় জানাতে বাড়িতে নিজের হাতে গড়া সুস্বাদু নারকেল নাড়ু দিয়ে প্রতিমাকে মিষ্টিমুখ করানো হত। ঘরে এখন আর কাউকেই সে ভাবে নারকেল নাড়ু বানাতে দেখা যায় না, তাই নারকেল নাড়ু দিয়ে মায়ের মিষ্টিমুখ করাতেও প্রায় আর কাউকেই দেখি না। সে গ্রাম হোক কিংবা শহর। তবে কিছু বাড়িতে এখনও সে চল রয়েছে। ইদানীং দেখছি যে, মা দুর্গাকে দশমীর মিষ্টিমুখ করাতে নারকেল নাড়ুর জায়গা দখল করেছে দোকান থেকে কেনা মিষ্টি কিংবা মাখা সন্দেশ। এখন ময়রার দোকান থেকে কেনা মিষ্টি ছাড়াও রেডিমেড প্যাকেটজাত নারকেল নাড়ু কিনে এনে বরণের শেষে মাকে মিষ্টিমুখ করিয়ে বাপের বাড়ি থেকে বিদায় জানাতে দেখছি। নারকেল নাড়ু দিয়ে মিষ্টিমুখ করানোর সেই অতীতের সুখের ও শান্তির দিনগুলো কোথাও যেন হারিয়ে গিয়েছে। কর্মব্যস্ত জীবনে মানুষের হাতে এখন সময়ের ভীষণ অভাব। কী আর করা!

সৌরভ সাঁতরা, জগদ্দল, উত্তর ২৪ পরগনা

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Unemployment Inflation

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy