Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু: দেওয়াল লিখন কেন?

পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনের প্রাক্কালে দেওয়াল লিখনের হিড়িক পড়ে যায়।

শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০১৯ ০০:০০
Share: Save:

পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনের প্রাক্কালে দেওয়াল লিখনের হিড়িক পড়ে যায়। কিন্তু সাম্প্রতিক কালে সোশ্যাল মিডিয়ার যে রমরমা, ফেসবুক, টুইটার, হোয়াটসঅ্যাপে নির্বাচনের যে পরিমাণ প্রচার সম্ভব, তাতে দেওয়ালগুলোকে কুৎসিত করার আর কোনও প্রয়োজন নেই। প্রসঙ্গত, দক্ষিণ ভারতের কোনও রাজ্যে নির্বাচনী প্রচারে দেওয়াল লিখনের রেওয়াজ নেই। পশ্চিমবঙ্গেও এই উদাহরণ অনুসরণ করলে হয় না?

তুষার ভট্টাচার্য

কাশিমবাজার, মুর্শিদাবাদ

শ্রমের অসম্মান

‘সাম্মানিকের অসম্মান’ শীর্ষক সম্পাদকীয় (১২-৩) এক নির্মম বাস্তবের নিখুঁত প্রতিফলন। এই নিষ্ঠুর বাস্তবতা যেমন মিড ডে মিল কর্মীদের জীবনে নেমে এসেছে, তেমনই নেমে এসেছে আশা, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী-সহ বহু কর্মীর জীবনে। শ্রম দিলেও এঁরা কেউ সরকারি মাপকাঠিতে শ্রমিক নন। শ্রমিক হিসাবে স্বীকৃতি দিলে যে হেতু ন্যূনতম পারিশ্রমিক দেওয়ার দায় সরকারের উপর এসে পড়ে, তাই কোনও সরকারই চাইছে না এঁদের শ্রমিকের মর্যাদা দিতে। এর বাইরেও আছেন এক বিরাট সংখ্যক অসংগঠিত কর্মক্ষেত্রের কর্মী, যাঁদের শ্রমিক হিসাবে স্বীকার করতে সরকারের কুণ্ঠা। সংগঠিত শিল্পেও কর্ম ও কর্মী সঙ্কোচনের নানা পদ্ধতি অনুসৃত হচ্ছে। সঙ্গে রয়েছে বেতন সঙ্কোচন। সমকাজে সমবেতনের নীতি পদে পদে লঙ্ঘিত। স্থায়ী কাজে স্থায়ী কর্মী নিয়োগের ধারণাকে নস্যাৎ করে, চুক্তির ভিত্তিতে নিযুক্ত অস্থায়ী কর্মীর সংখ্যা দিনের পর দিন বাড়িয়ে তোলা হচ্ছে। অস্থায়ী কর্মীদের স্থায়ীকরণেরও কোনও পরিকল্পনা নেই ব্যাঙ্ক, বিমা, রেল প্রভৃতির মতো সংগঠিত ক্ষেত্রে। ন্যূনতম বেতনের নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে, এঁদের স্বল্প বেতনে অধিক পরিশ্রম করতে বাধ্য করা হয়। এর পর আছে ‘হায়ার অ্যান্ড ফায়ার’ নীতি। যখন খুশি এঁদের ছাঁটাই করা রেওয়াজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটা দেখার দায়িত্ব নাকি জনগণের দ্বারা নির্বাচিত সরকারের নয়। মুখ্য নিয়োগকর্তারাও তাঁদের নির্বাচিত বিভিন্ন নিয়োগকারী এজেন্ট বা ভেন্ডরদের দেখিয়ে সব দায়িত্ব ঝেড়ে ফেলে হাত-পা ধুয়ে বসে আছেন। সে কারণে ন্যায়সঙ্গত প্রতিবাদী আন্দোলন করতেও এই নিষ্পেষিত কর্মচারীরা ভয় পান। তথাকথিত রাজনৈতিক নেতাদের কাছে আবার এ সব আন্দোলন অন্যায়; উন্নয়নের গতিকে রুদ্ধ করে। কিন্তু কার উন্নতি? বোধ করি বিধায়ক-সাংসদদের উন্নতি, যাঁদের সিংহভাগের অর্থাভাব না থাকলেও বিনা আন্দোলনেই মাসিক বেতন সময়ে সময়ে ভাল পরিমাণে বেড়ে যায়। সরকারি বদান্যতায় সম্পদের পরিমাণও দ্রুত বেড়ে চলেছে এ দেশের বৃহৎ সম্পদশালীদের। এক সমীক্ষা বলছে, বর্তমানে এ দেশের মোট সম্পদের ৭২ শতাংশের মালিক দেশের মাত্র ১ শতাংশ মানুষ। অন্য দিকে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বের ১১৯টি ক্ষুধার্ত দেশের মধ্যে ভারতের স্থান আগে ছিল ১০০ নম্বরে, এখন আরও পিছিয়ে হয়েছে ১০৩। এই হচ্ছে অগ্রগতি। আমরা বিস্মৃত হই, শ্রমিকরাই এই সমাজ-সভ্যতার স্রষ্টা। বিশাল সম্মান যাঁদের প্রাপ্য, তাঁরাই আজ সবচেয়ে অবহেলিত-বঞ্চিত-নিপীড়িত। গোটা দেশ এ ভাবেই খণ্ডিত। তবুও এ দেশের চালক হিসাবে নেতা-মন্ত্রীদের যেন গর্বের সীমা নেই। দেশের অখণ্ডতা রক্ষায় নেতাদের অক্লান্ত চেষ্টার নানা ছবি প্রতিনিয়ত ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা চলছে স্রেফ মানুষকে বিভ্রান্ত করতে।

গৌরীশঙ্কর দাস

সম্পাদক, ব্যাঙ্ক এমপ্লয়িজ় ইউনিটি ফোরাম, পশ্চিমবঙ্গ, কলকাতা-১৩

বৌদ্ধদের কথাও

সম্প্রতি লোকসভা ভোটের দিন ঘোষণা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে ১৯ মে মোট ন’টি লোকসভা কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া চলবে। কিন্তু সামগ্রিক ভাবে তারিখ ঘোষণা করতে গিয়ে সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের পবিত্র রমজান মাসের কথা যেমন ভাবা হয়নি, তেমনই ১৮ মে সংখ্যালঘু বৌদ্ধদের একমাত্র উৎসব বুদ্ধপূর্ণিমাকেও গ্রাহ্য করা হয়নি। ২০১৭ সাল থেকে বুদ্ধপূর্ণিমাকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী পূর্ণদিবস ছুটি ঘোষণা করেন, শুধু তা-ই নয় ২৫৬১তম বুদ্ধজয়ন্তী অনুষ্ঠানে নিজে উপস্থিত থেকে শান্তি, মৈত্রীর আদর্শ ছড়িয়ে দেন। এর পর থেকে প্রতি বছর রানি রাসমণি রোডে বুদ্ধপূর্ণিমার অনুষ্ঠান পালিত হয়ে আসছে। এই বছরেও ১৮ মে বৌদ্ধ ভক্তরা রানি রাসমণি রোডে সমবেত হয়ে এই উৎসব পালন করার কথা ভেবেছেন। কিন্তু নির্বাচনী নির্ঘণ্ট জেনে তাঁরা দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। এক দিকে যেমন অনুষ্ঠানের অনিশ্চয়তা, অন্য দিকে পরের দিনেই গণতন্ত্রের উৎসবে শামিল হওয়া। এর জেরে বহু বৌদ্ধ চাকরিজীবীকে ধর্ম ছেড়ে ভোটকর্মে যেতে হবে। গণতন্ত্রের উৎসবে শামিল হতে গিয়ে সংখ্যালঘু মুসলিম ও বৌদ্ধ জনগণকে কেন নিজেদের উৎসবে ব্রাত্য থাকতে হবে?

ইন্দ্রনীল বড়ুয়া

কলকাতা-১৫

একটি প্যারডি

শিবাজীপ্রতিম বসুর ‘আশ্চর্য আড্ডার ভুবন’ (রবিবাসরীয়, ১৭-৩) পড়ে নস্টালজিয়ায় আচ্ছন্ন হলাম। একটি ঘটনার কথা মনে পড়ল। আশির দশকে মিন্টু দাশগুপ্ত যেমন জনপ্রিয় প্যারডি গায়ক ছিলেন, তেমনই ছিলেন বুদ্ধ রক্ষিত। সেই সময় ‘গুমনাম’ ছবিতে একটি সুপারহিট গান ছিল, ‘হম কালে হ্যায় তো কেয়া হুয়া দিলওয়ালে হ্যায়’। ১৯৭০ সালে রবীন্দ্র সরোবর স্টেডিয়াম হল-এ সেই গানটির প্যারডি গাইছেন বুদ্ধ রক্ষিত: ‘যারা খাবার চেয়ে পেল বুলেট গুলি গো, বলো কেমন করে তাদের আমরা ভুলি গো।’ দর্শকাসনে উপস্থিত ছিলাম। এমন সময়ে এক রাজনৈতিক দলের নেতা দলবল নিয়ে মঞ্চে উঠে ভাঙচুর করে গানটি বন্ধ করে দিলেন। বুদ্ধবাবুও শারীরিক নিগ্রহের হাত থেকে রক্ষা পাননি।

শোভনলাল বকসি

কলকাতা-৪৫

যুদ্ধ কাকে বলে

পুলওয়ামা কাণ্ড ঘটার পর থেকে সর্বত্র দেশপ্রেমের জোয়ার। সে দিন বাসে এক সহযাত্রী (পেশায় শিক্ষক) যুদ্ধের পক্ষে জোর সওয়াল করছিলেন। ওঁরই এক সহকর্মী তখন তাঁকে বললেন, ‘‘আপনার তো দু’টি ছেলে। একটিকে সেনাবাহিনীতে ভর্তি করান।’’ দেখা গেল, তিনি রাজি নন। তখন সহকর্মীটি বললেন, ‘‘আপনি যুদ্ধের পক্ষে, অথচ নিজের ছেলেকে যুদ্ধে পাঠাতে রাজি নন। তার মানে, অন্যের ছেলে যুদ্ধে মরলে আপনি মোমবাতি নিয়ে মিছিল করবেন!’’ উনি চুপ।

এটাই সত্যি। এই প্রসঙ্গে এরিখ মারিয়া রেমার্ক-এর ‘অল কোয়ায়েট অন দ্য ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট’ উপন্যাসটির কথা মনে পড়ে গেল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরুর সময় জার্মানির বহু মানুষ, বিশেষত কিশোর, তরুণ, যুবকেরা যুদ্ধের পক্ষে মত প্রকাশ করত। তাদের কাছে যুদ্ধ মানে রঙিন দুনিয়া, সেনাবাহিনীতে নাম লেখাতে পারলে নিজের দেশপ্রেমের বড় সার্টিফিকেট পাওয়া যাবে। সৈন্যদের ঝাঁ চকচকে পোশাক, কাঁধে আধুনিক অস্ত্র দেখে তাদের আর তর সয় না। কিন্তু যুদ্ধে গিয়ে অচিরেই তাদের মোহভঙ্গ হয়। তখন আর উপায় নেই। ওরা খুঁজতে ব্যস্ত হয়, যুদ্ধ কেন হয়? এক দেশ অন্য দেশকে অপমান করলে যুদ্ধ হয়। কেউ বলে, দেশ মানে, নদী, পাহাড়, বন। তার মানে, এক দেশের নদী অন্য দেশের পাহাড়কে অসম্মান করলে যুদ্ধ হয়? না কি অন্য দেশের মানুষ, যাদের আমরা চিনি না, জানি না, যারা আমাদের মতোই পরিশ্রম করে দিনযাপন করে, তারা আমাদের অসম্মান করে! শেষে বোঝা যায়, এক দেশের রাজনৈতিক নেতারা অন্য দেশের রাজনৈতিক নেতাদের অসম্মান করলেই যুদ্ধ শুরু হয়। অর্থাৎ রাজনৈতিক ধান্দাবাজ নেতারা নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্যই যুদ্ধ শুরু করে। লেখক এও লেখেন, একটা বড় ফাঁকা মাঠে দু’দেশের রাজনৈতিক নেতাদের যুদ্ধে নামিয়ে জয়-পরাজয় নির্ধারণ করা উচিত। তা হলে এত ক্ষয়ক্ষতি হবে না।

অমিতাভ চক্রবর্তী

সুভাষপল্লি, খড়্গপুর

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Lok sabha election 2019 Vote
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE