Advertisement
E-Paper

সম্পাদক সমীপেষু: বন্‌ধ নয় কেন?

রাস্তাঘাটে, চায়ের দোকানে, বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়-পরিজনদের সঙ্গে দেখা হলে আমরা আমাদের প্রতিবাদ আমাদের মতো করে উগরে দিই। এতে কাজের কাজ কী হয়, জানি না। 

শেষ আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০১৯ ০০:৩০

প্রতীক চৌধুরী বলছেন, ‘বন্‌ধ ডাকবেন না’ (১৪-১)। বন্‌ধ না ডাকার কারণ হিসাবে তিনি সুজয়, মিত্তিরবাবু, রানাবাবুকে সামনে নিয়ে এসেছেন। সামনে নিয়ে এসেছেন মুদির দোকানি থেকে ভিখারি, বাস ড্রাইভার থেকে রিকশাওয়ালা, মুটে-মজুর, বাড়ির কাজের মেয়ে, এমনকি কাজের মেয়ে না এলে বিপদে পড়া গৃহিণীকে পর্যন্ত। পরিশেষে আবার তিনি বলেছেন, ছাত্রমৃত্যু, ধর্ষণ, পেট্রলের দামবৃদ্ধি-সহ প্রতিটি বিষয়ে অবশ্যই প্রতিবাদ হোক। কী ভাবে, তা অবশ্য কিছু বলেননি। ঘটনা হল, এ সবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হয়। রাস্তাঘাটে, চায়ের দোকানে, বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়-পরিজনদের সঙ্গে দেখা হলে আমরা আমাদের প্রতিবাদ আমাদের মতো করে উগরে দিই। এতে কাজের কাজ কী হয়, জানি না।

তবে এর বাইরে রয়েছে সংগঠিত প্রতিবাদ। এর নানা ধরন আছে। মিছিল, সভা, অবস্থান, ধর্না, আইন অমান্য, ইত্যাদি। এগুলো করলেও আবার কারও না কারও অসুবিধা হবেই। বিভিন্ন রুটে যান চলাচল বন্ধ বা ব্যাহত হবে। ফলস্বরূপ যানজট, যা সাধারণ মানুষকে যথেষ্ট বিপাকে ফেলবে। তা ছাড়া এগুলো করেই বা কী হবে? পত্রকার তো এক জায়গায় প্রশ্ন তুলেছেন, বন্‌ধ ডেকে কি কোনও প্রতিকার কোনও কালে হয়েছে? তা যদি না হয়, তবে অন্যান্য প্রতিবাদে কি কাজ হওয়ার কোনও আশা আছে? আবার অন্যান্য প্রতিবাদ করেও যদি কিছু সুফল না মেলে, তবে আমাদের কী করার আছে? আমরা কি কেবল নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করব?

বন্‌ধ করে কিছু কাজ হয় না এমনটা বোধ করি জোর দিয়ে বলা যায় না। আমি ১৯৯৮ সালের ৩ ফেব্রুয়ারির ধর্মঘটের কথা স্মরণ করতে বলব। প্রাথমিক স্তরে ইংরেজি এবং পাশ-ফেল পুনঃপ্রবর্তনের দাবিতে দীর্ঘ ১৯ বছর ধরে প্রতিবাদী আন্দোলন করে যখন কোনও কাজ হল না, তখন এসইউসিআই (সি) রাজ্যব্যাপী এক দিনের হরতালের ডাক দিয়েছিল। সে দিন কোথাও বন্‌ধ আহ্বায়কদের জোর-জবরদস্তি না থাকা সত্ত্বেও, সারা রাজ্য বন্‌ধের চেহারা নিয়েছিল। মানুষ তাঁদের অব্যক্ত কথা বলার, সরকারি নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর একটা সুযোগ গ্রহণ করতে পেরেছিলেন। আর তার ফলেই বরফ গলতে শুরু করে। যে বামফ্রন্ট সরকার বলেছিল, কিছুতেই প্রাথমিক স্তরে ইংরেজি, পাশ-ফেল ফেরান হবে না, তারাই শেষ পর্যন্ত প্রথম শ্রেণি থেকে ইংরেজি পঠনপাঠন চালু করতে বাধ্য হয়। বন্‌ধ একমাত্র আন্দোলন নয়— এটাও যেমন ঠিক, তেমনি সব রকম প্রচেষ্টা ফলপ্রসূ না হলে বন্‌ধের রাস্তায় যাওয়া ছাড়া অন্য কোনও পথ খোলা থাকে না।

২০১৭ সালের ১৭ জুলাই ওই একই দলের পক্ষ থেকে প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাশ-ফেল চালুর দাবিতে ধর্মঘট ডাকা হয়েছিল। রাজ্য সরকার সাত-তাড়াতাড়ি দাবি মেনে নেওয়ার অঙ্গীকার করে, বন্‌ধ-আহ্বায়কদের বন্‌ধ থেকে সরে আসার আবেদন করেছিল। সেই আবেদনে সাড়াও মিলেছিল। আজ যদি পাশ-ফেল ফিরে আসে তবে সে দিনকার ধর্মঘটের আহ্বানকে আমাদের যথাযথ পদক্ষেপ হিসাবে ভাবতেই হবে।

তাই বন্‌ধের রাজনীতির ধরন পাল্টাতে পারে, কিন্তু বন্‌ধের রাজনীতি বন্ধ করে সাধারণ মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারকে পরিহার করার প্রস্তাব কখনই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। রাজনীতির অঙ্গনে বহু খারাপ লোক আছে, সে কারণে দেশ থেকে রাজনীতি নিষিদ্ধ করা উচিত— এ কথা যেমন বলা যায় না, কিছু শিক্ষিত মানুষ দুষ্কর্ম করছে বলে শিক্ষাব্যবস্থা তুলে দেওয়া হোক— এমন যুক্তি যেমন ধোপে টেকে না, তেমনই, বন্‌ধ-আহ্বায়ক এবং বন্‌ধ-বিরোধীদের গা-জোয়ারির ফলে সাধারণ মানুষের যে অসুবিধা হয় তা দেখে সাধারণ মানুষের লড়াইয়ের এমন এক শক্তিশালী হাতিয়ারকে আমরা দূরে সরিয়ে রাখতে পারি না।

এতে টোটো চালকদের আয় কমবে, অফিসে না গেলে বন্‌ধ-বিরোধীদের হাতে হেনস্থা হতে হবে, চিকিৎসা-ক্ষেত্রেও সমস্যা আসবে। কিন্তু প্রতি দিনকার, প্রতি মুহূর্তের যে সমস্যা, মূল্যবৃদ্ধি, বেকারি, শ্রমিকের ন্যায্য মজুরি ও সামাজিক সুরক্ষার অভাব, ফসলের ন্যায্য দাম না পাওয়া, মদের ব্যাপক প্রসার, নারী নির্যাতন প্রভৃতি জ্বলন্ত সমস্যা থেকে মুক্ত হতে এটুকু মূল্য দিতেই হবে। এখানে আদর্শের প্রশ্ন যুক্ত রয়েছে, রয়েছে এ পথ ঠিক কি বেঠিক তা নিয়ে বিতর্কও। কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না, যুগে যুগে সমাজ পরিবর্তনে যাঁরা অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন তাঁরা নিশ্চিত মৃত্যুর সামনে দাঁড়িয়েও হাসতে হাসতে জীবনের জয়গান গেয়েছিলেন; সুউচ্চে তুলে ধরেছিলেন এক উন্নত মূল্যবোধ।

গৌরীশঙ্কর দাস

সাঁজোয়াল, খড্গপুর

অবসরের বয়স

কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে পশ্চিমবঙ্গের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, এর আগে অবসরের বয়স ৬০ বৎসর থেকে ৬২ বৎসর করা হয়েছিল এখন তা বাড়িয়ে করা হচ্ছে ৬৫ বৎসর। এই পদক্ষেপ শিক্ষাক্ষেত্রে উন্নয়নেরই এক প্রচেষ্টা। কারণ বয়সের সঙ্গে বাড়ে অভিজ্ঞতা, বাড়ে জ্ঞান। সুতরাং এই সিদ্ধান্তে ছাত্রছাত্রীরা যথেষ্ট উপকৃত হবেন। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়, ১০০ ভাগ শিক্ষক-শিক্ষিকা কি এই সিদ্ধান্তে খুশি? আংশিক সময়ের বা অতিথি শিক্ষক-শিক্ষিকা, অথবা যাঁরা শিক্ষকতাকে পেশা হিসাবে নিয়ে জীবনে উন্নতি করতে চান কিন্তু এখনও সুযোগ পাননি, তাঁরা কি হতাশ হবেন না? অবসর না হলে পদ খালি হবে না। আর পদ খালি না হলে নতুনরা কী করেই বা সুযোগ পাবেন?

শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মধ্যে কয়েক জন অবশ্যই থাকবেন, যাঁরা অসুস্থ হওয়া সত্ত্বেও চাকরি করতে বাধ্য হচ্ছেন। অবসরের জন্য দিন গুনছিলেন, কবে ৬০ বৎসর পূর্ণ হবে। তাঁরা অবশ্যই হতাশ হয়ে পড়বেন।

যদি এই ৬০ বৎসরের অধিক অবসরের মেয়াদ আবশ্যিক না করে ঐচ্ছিক করা হয়, বোধ হয় সব দিক রক্ষা হয়।

সুধাময় দে

শিল্পসমিতি পাড়া, জলপাইগুড়ি

অন্য শিক্ষকেরা?

মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘৬০ বছরেই কাজ ফুরিয়ে গেল, এটা আমি মানতে রাজি নই। এখন তো মানুষের গড় আয়ু ৮৫ হয়ে গিয়েছে।’’ আমার প্রশ্ন, তাঁর এই উপলব্ধি শুধুমাত্র কি পশ্চিমবঙ্গের কলেজ আর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ? এই রাজ্যের সরকার-পোষিত এবং সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত বিভিন্ন প্রাথমিক, উচ্চ প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নিযুক্ত কয়েক লক্ষ শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের বিষয়ে তাঁর ভাবনা কী? এ কথা স্বীকার করতেই হবে যে, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতায় মানুষ সমৃদ্ধ হয়, যা সুচিন্তিত ভাবে তাঁকে কাজ করতে সাহায্য করে। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মতো স্কুল শিক্ষকদের অবসরের বয়স কিছুটা শিথিল করলে, কিছুটা হলেও এই সমস্যার সুরাহা হতে পারে। আবার, পশ্চিমবঙ্গের লক্ষ লক্ষ শিক্ষিত বেকার ছেলেমেয়েদের বিষয়েও রাজ্য সরকারের নির্দিষ্ট পরিকল্পনা থাকবে তো?

সুরঞ্জন ঘোষ

রায়গঞ্জ, উত্তর দিনাজপুর

এঁদের বেলায়

চিকিৎসা ইত্যাদি নানা পরিষেবা ক্রেতা সুরক্ষা আইনের আওতায় পড়ে। কিন্তু অর্থ বা দক্ষিণার বিনিময়ে পুরোহিত, জ্যোতিষদের দেওয়া পরিষেবা সে আইনের আওতায় রাখা হচ্ছে না কেন? পুরোহিতের দ্বারা পূজাপাঠ করেও যদি কারও সন্তান না হয়, অথবা জ্যোতিষের ব্যবস্থামতো পাথর আঙুলে গলিয়ে যদি সন্তানের বিয়ে বা চাকরি না হয়, তা হলে ক্রেতা সুরক্ষা আইন অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ পাওয়া যাবে না কেন? ক্রেতা সুরক্ষা আইনে জ্যোতিষ পুরুতদের পরিষেবাও যোগ করা হোক।

অশোক কুমার দাস

কলকাতা-৭৮

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ইমেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

Genetal Strike Democratic Movement
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy