পথসভায় রাজনাথ সিংহের সঙ্গে অমিত শাহ। ছবি: পিটিআই।
সুখী পরিবারের সমৃদ্ধশালী ছবি তুলে ধরার চেষ্টা হল। তুলে ধরা যে গেল না, তা নয়। নক্ষত্রের সমাবেশে মধ্যমনি হয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। কিন্তু অমিত শাহের মনোনয়ন দাখিল পর্ব ঘিরে উৎসাহ-উদ্দীপনার স্ফূরণ যতটা স্পষ্ট ভাবে দেখা গেল, গাঁধীনগর আসনের জন্য বিজেপির ব্যাটন হস্তান্তরের প্রক্রিয়াটা ততটা স্পষ্ট হল কি? এই প্রশ্নটা রয়ে গেল অস্বস্তিকর খচখচানি হয়ে।
বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ যে এ বার গাঁধীনগর লোকসভা আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন তা আগেই ঘোষিত হয়েছিল। সভাপতির মনোনয়নপত্র দাখিলকে স্মরণীয় করে রাখতে দল সব রকম ভাবে সক্রিয় হয়েছিল। অতএব, অমিত শাহকে ঘিরে শনিবার হাজির থাকলেন রাজনাথ সিংহ, নীতিন গডকরী, অরুণ জেটলিদের মতো বিজেপির সর্বোচ্চ স্তরের নেতারা। হাজির থাকলেন বিজেপির সবচেয়ে পুরনো দুই শরিক দল শিবসেনা ও অকালির শীর্ষনেতা উদ্ধব ঠাকরে এবং প্রকাশ সিংহ বাদল। অর্থাৎ শুধুমাত্র সুখী বিজেপি-ঐক্যবদ্ধ বিজেপি নয়, সুখী এনডিএ-ঐক্যবদ্ধ এনডিএর ছবি সঙ্গে নিয়ে গাঁধীনগর থেকে মনোনয়ন দাখিল করলেন অমিত শাহ। নির্বাচনের বাজারে এই রকম ছবির প্রতীকী তাৎপর্য যথেষ্টই। গোটা দল তথা গোটা জোটকে আরও বেশি উজ্জীবিত করে তোলার ক্ষমতা রাখে এই রকম ছবি। কিন্তু ছবিটা কি নিখুঁত হল আদৌ? গাঁধীনগরের বিজেপি প্রার্থী হিসেবে যাঁর হাত থেকে ব্যাটনটা নিলেন অমিত শাহ, সেই লালকৃষ্ণ আডবাণী কোথাও রইলেন না ছবিতে? মনোনয়ন দাখিল পর্বে শাহের পাশে একটা বারের জন্যও আডবাণীকে দেখতে পাওয়া গেল না? সুবিশাল স্ফটিক পাত্রে রাখা শ্বেতশুভ্র দুধকে বিন্দু পরিমাণ বিষাক্ত উপকরণ নষ্ট করে দিল না কি?
যে আসন থেকে অমিত শাহ প্রার্থী হলেন, লালকৃষ্ণ আডবাণী সেখানকার ছ’বারের সাংসদ। কোন লালকৃষ্ণ আডবাণী? যে লালকৃষ্ণ আডবাণী বিজেপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, যে লালকৃষ্ণ আডবাণীর প্রখ্যাত বা কুখ্যাত রথযাত্রায় সওয়ার হয়ে বিজেপির রাজনৈতিক উত্থান শুরু, যে লালকৃষ্ণ আডবাণী ভারতের প্রাক্তন উপ-প্রধানমন্ত্রী, যে লালকৃষ্ণ আডবাণী ২০০২ সালের গুজরাত দাঙ্গার পরে নরেন্দ্র মোদীর মুখ্যমন্ত্রিত্ব টিকিয়ে ছিলেন তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে, যে লালকৃষ্ণ আডবাণীর মনোনয়ন দাখিল পর্বে তাঁর আশেপাশে এককালে দেখা যেত নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহদের। সেই আডবাণী এ বার আর টিকিট পেলেন না গাঁধীনগরে, পেলেন অমিত শাহ এবং অমিত শাহের মনোনয়ন দাখিলের দিনে তাঁর পাশে অভিভাবক হিসেবেও দেখা গেল না আডবাণীকে। এই ঘটনা দৃষ্টিকটূ লাগল ঈষৎ। উজ্জ্বল নক্ষত্র সমাবেশের মাঝেই কৃষ্ণগহ্বরের অস্তিত্ব ধরা পড়ল যেন।
সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
আরও পড়ুন: গাঁধীনগরে মনোনয়নপত্র জমা দিলেন অমিত শাহ, এনডিএ-র গ্র্যান্ড শো, নেই শুধু আডবাণী
লালকৃষ্ণ আডবাণী এবং মুরলী মনোহর যোশীর মতো দুই প্রবীণতম নেতার সঙ্গে বিজেপি কী আচরণ করল, তা নিয়ে দেশের রাজনৈতিক শিবিরে বিতর্ক বেশ কিছু দিন ধরেই চলছে। আডবাণী নীরবই থেকেছেন। কিন্তু যোশী সে পথে হাঁটেননি, নিজের উষ্মা-অসন্তোষ-অপমানবোধ গোপন করেননি। বিজেপির বর্তমান নেতৃত্বের জন্য কম অস্বস্তিকর ছিল না যোশীর সেই অসন্তোষ। কিন্তু অমিত শাহের মনোনয়ন দাখিল পর্বে আডবাণীর অনুপস্থিতি সম্ভবত আরও অস্বস্তিকর হল। আডবাণী নীরব রইলেন ঠিকই, কিন্তু এই নীরবতার চেয়ে বেশি বাঙ্ময় আর কী হতে পারত? সমৃদ্ধির শিখরে থাকা এক পরিবারের ছবি তুলে ধরতে চেয়েছিলেন বিজেপির বর্তমান নেতৃত্ব। কিন্তু ছবিটা ঠিক কী রকম দাঁড়াল? বিজেপি নেতৃত্ব এ ছবিতে সন্তুষ্ট থাকতে পারছেন তো?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy