Advertisement
E-Paper

অগণতন্ত্রের বাস্তব চেহারাই সামনে এসে পড়ল

যে ভিডিয়ো ইতিমধ্যে ভাইরাল হয়ে গিয়েছে তাতে দ্ব্যর্থহীন ভাবেই এক দেনা-পাওনার গল্প শুনিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা তথা ভোগালী-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান মোদাস্সর হোসেন।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০১৯ ০০:১০
দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভোগালী-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান মোদাস্সর হোসেনের বিরুদ্ধে নির্বাচনী বিধিভঙ্গের অভিযোগ উঠেছে।

দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভোগালী-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান মোদাস্সর হোসেনের বিরুদ্ধে নির্বাচনী বিধিভঙ্গের অভিযোগ উঠেছে।

ওপরের ন্যাপনচোপন আচমকাই সরে গিয়ে যদি খড়ের গোঁজা প্রকাশ্যে বেরিয়ে আসে, যে তীব্র অভিঘাত হবে, ঠিক সেটাই হল সোমবার, সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যাওয়া এক ভিডিয়োর মাধ্যমে। গণতন্ত্র-সুশাসন-নিরপেক্ষতার যাবতীয় ঢক্কানিনাদকে এক লহমায় মিথ্যা প্রমাণ করে দিলেন ভোগালী-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান মোদাস্সর হোসেন। অথবা এমনটা বললেও ভুল হবে না, চোখ খুলেও ঘুমিয়ে থাকা বিরাট একটা সমাজকে ধাক্কা দিয়ে তিনি জানিয়ে দিলেন, সত্যটা বস্তুত কী।

যে ভিডিয়ো ইতিমধ্যে ভাইরাল হয়ে গিয়েছে তাতে দ্ব্যর্থহীন ভাবেই এক দেনা-পাওনার গল্প শুনিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা তথা ভোগালী-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান মোদাস্সর হোসেন। এই পরিচয়ের মধ্যে একটা দ্বিচারিতা আছে। তিনি কি তৃণমূল কংগ্রেস নেতা নাকি তিনি ভোগালী-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান? প্রশ্নটা এই জন্যই যে, কেতাবি জ্ঞান অনুযায়ী গ্রাম পঞ্চায়েতের নির্বাচিত ওই প্রধান নির্বাচন পর্ব শেষ হয়ে যাওয়ার পর প্রধান সবারই, যেমন আমরারও তেমন ওরারও। এহেন প্রধানটি উচ্চনিনাদে যখন ঘোষণা করেন, সরকারি প্রকল্প বাবদ প্রাপ্য টাকাটি তাঁরা (এ ক্ষেত্রে তৃণমূল) দিচ্ছেন, তখন এক লহমায় এই সংবিধান ও গণতন্ত্র ধূলিসাৎ হয়ে যায়, অন্তত ওই বন্ধ কক্ষে। আমার ভাল থাকার জন্য আমি নির্বাচন করেছি এক সরকারকে, সেই সরকারের কর্তব্য আমাকে ভাল রাখা, কেননা সেই প্রতিশ্রুতিই আমাকে দেওয়া হয়েছিল, এই বোধ যদি শাসক ভুলে যায় এবং সরকারি কর্তব্যকে অনুপ্রেরিত আনুকূল্য বলে মনে করে, তা হলে যা হয় সেটাই হয়েছে ভোগালী-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের অফিসে। সরাসরি সরকারি অর্থের বিনিময়ে ভোট দাবি করেছেন ওই প্রধান। উল্টো দিক দিয়ে বলতে গেলে ভোট পাওয়ার জন্য ঘুষ হিসেবে ব্যবহার করেছেন সরকারি অনুদানকে। তাতেও যদি কাজ না হয়, প্রথাগত হুমকির সুরও বজায় রেখেছেন ওই অবিচলিত কণ্ঠে।

এক লহমায় গণতন্ত্রের মূল সুতোগুলোকে কী ভাবে ছিন্নভিন্ন করতে হয় সেটা দেখিয়ে দিয়ে গেলেন মোদাস্সর হোসেন।

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

এমনটা বললে খুব অন্যায় হবে, এই বাস্তব সত্যটা আমাদের নিতান্তই অজানা ছিল। তৃণমূলের দোর্দণ্ডপ্রতাপ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী অথবা আসানসোলের মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারি যখন দলীয় সভায় প্রকাশ্যেই সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রে লিড দেওয়ার ‘পুরস্কার’ ঘোষণা করেন, তখন কি আমরা বুঝতে পারি না এর অন্তর্নিহিত অর্থ কী? সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে এর পরেও জিতেন্দ্রবাবুরা যখন বলেন, তাঁদের বক্তব্যের অর্থ এটাই যে সরকারি ভাবে উন্নয়নের জন্য প্রাপ্য টাকা কতখানি বরাদ্দ করা হবে সেটাই নাকি তাঁরা বোঝাতে চেয়েছিলেন— তখনও কি নগ্ন হয়নি গণতন্ত্রের চেহারা? শাসককে জেতাতে পারলে বেশি বরাদ্দ হবে সরকারি টাকা, এই ঘোষণার মধ্যে এক অন্যায় ও সংবিধানবিরোধী অগণতান্ত্রিক আচারের পরিচয় রয়েছে। তখনও যাঁরা বুঝতে পারিনি আমরা, তাঁদের চোখটা খুলে দিলেন মোদাস্সর হোসেন। ভোট দাও, তবেই চেক নাও, কারণ চেক দিচ্ছি আমরাই— এর চেয়ে বেশি নিরাভরণ করা যেতে পারত না বাস্তবের ছবিটাকে।

আরও পড়ুন: চেক দিচ্ছি, ভোটটা না দিলে কিন্তু... ভাঙড়ে তৃণমূল নেতার হুমকি ভিডিয়ো ভাইরাল

যাঁরা তাঁকে দোষ দিচ্ছে দোষ দিন, মোদাস্সর হোসেনের কিন্তু ধন্যবাদটা প্রাপ্য রইল।

Newsletter Lok Sabha Election 2019 TMC Krishak Bandhu Scheme Election Commission লোকসভা ভোট ২০১৯ Anjan Bandyopadhyay অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy