Advertisement
E-Paper

বেশ মরিয়া দেখাচ্ছে তাঁকে

নরেন্দ্র মোদীর ক্ষেত্রেও বিজেপি নিশ্চয়ই মাথায় রাখছে, গত চার বছরের প্রায় অপ্রতিরোধ্য গতিতে ছোটা বিজেপির অশ্বমেধ ঘোড়া কয়েক মাস আগেই থমকে গেছে এমন কয়েকটি রাজ্যে, যেখানে বিজেপি’র আধিপত্য সংশয়াতীত বলে মনে করা হয়েছিল। 

জয়ন্ত বসু

শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০১৯ ২৩:৫৭

একটা প্রশ্ন কয়েক দিন ধরে ভাবাচ্ছে। ভোটতাত্ত্বিকদের হিসেবমতো যদি সত্যিই নরেন্দ্র মোদীর পরিস্থিতি হয় ‘লড়লাম, জিতলাম, প্রধানমন্ত্রী হলাম’, তা হলে ভোটের ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই তিনি ও তাঁর বাহিনী কেন এত মরিয়া হয়ে উঠছেন? বালাকোটের সার্জিকাল স্ট্রাইক-এর কথাই ধরা যাক। যে ভাবে প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর দল সার্জিকাল স্ট্রাইককে ভোটের বাজারে মূলধন করছেন, তা থেকে স্পষ্ট, বালাকোটকে যে করে হোক ভোট-রাজনীতির কেন্দ্রে নিয়ে এসে ফেলতে চান তাঁরা। জাতীয়তাবাদের ঢেউ তুলে বিজেপির নির্বাচন ইস্তাহারের কেন্দ্রবিন্দুতে তাকে আনা হল, প্রচারের মূল অস্ত্র করে তোলা হল। বিজেপি নেতানেত্রীরা তো বটেই, প্রধানমন্ত্রী মোদীও নির্বাচন কমিশনের লক্ষ্মণরেখাকে তোয়াক্কা না করে প্রথম বার ভোট দিতে যাওয়া তরুণ-তরুণীদের আহ্বান করলেন, পুলওয়ামা ও বালাকোটকে স্মরণ করে ভোট দিতে! কেন? তবে কি প্রধানমন্ত্রী ভয় পাচ্ছেন যে দেশের বদলে নিজেদের ভবিষ্যতের কথা ভাবলে এই তরুণরা ভোটমেশিনে অন্য বোতাম টিপতে পারেন?

এরই মাঝে আবার চলে এল ‘মিশন শক্তি’। জাতীয়তাবাদের ঢেউকে আরও সচল করতে প্রধানমন্ত্রী ‘ব্রেকিং নিউজ’ দিলেন, ভারত উপগ্রহ ধ্বংস করার ক্ষমতা অর্জন করেছে! এবং গত নির্বাচনের আগে প্রচারের তুঙ্গে থাকা এবং আগামী প্রজন্মকে স্বপ্ন দেখানো ‘চায়েওয়ালা’ ঘোষণা করলেন, দেশকে নিরাপদ রাখার জন্য তিনি এ বার ‘চৌকিদার’-এ পরিণত! শুধুমাত্র নরেন্দ্র মোদীর প্রচারের জন্য নমো টিভি এল। নির্বাচনের ঠিক মুখে মুখে, প্রধানমন্ত্রীর ওপর তৈরি সিনেমা প্রকাশ করার চেষ্টাও হল। এখন প্রশ্ন— নরেন্দ্র মোদীর জয় যদি নিশ্চিতই হয়ে থাকে, তবে এত মরিয়া চেষ্টা কেন? তবে কি পরিস্থিতি এত সহজ সরল নয়?

প্রসঙ্গত মনে পড়ছে, প্রয়াত পূর্বতন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর কথা। যখন বাজপেয়ীর দ্বিতীয় বার প্রধানমন্ত্রী হওয়া শুধু সময়ের অপেক্ষা বলে মনে করা হচ্ছিল, সেই ২০০৪ সালে বিজেপি সরকার মুখ থুবড়ে পড়ার আগেও কিন্তু ভারত-পাকিস্তান কার্গিল যুদ্ধ হয়েছিল, এবং তা নিয়ে যথেষ্ট জাতীয়তাবাদী প্লাবন জনমানসে ছড়ানো হয়েছিল। নরেন্দ্র মোদীর ক্ষেত্রেও বিজেপি নিশ্চয়ই মাথায় রাখছে, গত চার বছরের প্রায় অপ্রতিরোধ্য গতিতে ছোটা বিজেপির অশ্বমেধ ঘোড়া কয়েক মাস আগেই থমকে গেছে এমন কয়েকটি রাজ্যে, যেখানে বিজেপি’র আধিপত্য সংশয়াতীত বলে মনে করা হয়েছিল।

পাশাপাশি খেয়াল রাখতে হবে, বিহারে কংগ্রেস-আরজেডি ও উত্তরপ্রদেশে অখিলেশ-মায়াবতীর একসঙ্গে নির্বাচন লড়ার সিদ্ধান্তকেও। রাহুল গাঁধীর পরিপক্কতা বৃদ্ধি ও প্রিয়াঙ্কা গাঁধীর সম্মুখসমরে নামার সিদ্ধান্তও হয়তো নতুন চাপ তৈরি করেছে। কংগ্রেসের ইস্তাহারে ‘ন্যায়’-এর মতো বিষয়ের উপস্থিতি রাজনীতির সমীকরণ পরিবর্তনের আভাস দিচ্ছে। এবং এই সবের মধ্যেই আছে পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশার মতো রাজ্যে বিজেপির ঝাঁপিয়ে পড়ার সিদ্ধান্তের উৎস, সরকারবিরোধী ভোট ও হিন্দু ভোটকে পাথেয় করে আগের তুলনায় বেশি আসন পাওয়ার চেষ্টা। বালাকোট-মার্কা জাতীয়তাবাদের সঙ্গে যে গড়পড়তা ভোটারের মনে নোটবন্দি, জিএসটি, রাফাল কাটাকুটি খেলতে নামবে, সেটা বুঝতে খুব বড় রাজনৈতিক বিশ্লেষক বা সমীক্ষক, কিছুই হতে হয় না।

ঠিকই, বিজেপির সবচেয়ে বড় সহায় হল— মোদীর উল্টো দিকে বিরোধী পক্ষের কোনও দলেই প্রধানমন্ত্রী পদের কোনও স্পষ্ট দাবিদার না থাকা। কিন্তু শুধু এইটুকুর ওপর দাঁড়িয়েই যুদ্ধ জয় হয়ে যাবে, এমনটা হয়তো তাঁরাও ভাবতে পারছেন না। ভারত তো এর আগে বহু বার এমন প্রধানমন্ত্রী পেয়েছে, পি ভি নরসিংহ রাও থেকে মনমোহন সিংহ অবধি, যাঁদের নাম সেই সময়কার নির্বাচনের আগে জনতার সুদূরপ্রসারী ভাবনাতেও ছিল না।

আসলে মোদীর চ্যালেঞ্জটা দ্বিমুখী; প্রথমটা যদি হয় কংগ্রেস ও বিভিন্ন আঞ্চলিক দলগুলিকে পিছনে ফেলা, তবে দ্বিতীয়টা হল ২৭২-এর ম্যাজিক নম্বরের অনেকটা কম আসন পেলে কেমন করে বাকি আসনের সঙ্গী জোটানো যায়, তা স্থির করা।

অমিত শাহ ও নরেন্দ্র মোদীর যুগলবন্দির একাধিপত্য নিয়ে তাঁদের দলের মধ্যেই অনেক প্রশ্ন উঠেছে বলে শোনা যাচ্ছে। বিজেপির আসনসংখ্যা ২৭৩ থেকে যত দূরে থাকবে, ততই সেই বিরোধিতা জোরদার হবে, বলাই বাহুল্য। তেমন পরিস্থিতিতে হয়তো শরিক দল বা নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে ‘বন্ধু’ হতে-চাওয়া দলও দাবি জানাতে পারে, মোদীকে বাদ দিয়ে অন্য কোনও প্রধানমন্ত্রী খোঁজার!

নরেন্দ্র মোদীই এই সমীকরণগুলি সবচেয়ে বেশি ভাল করে জানেন। সেই জন্যই বোধহয় এ বারের এই মরিয়া প্রচার অভিযান।

Lok Sabha Election 2019 Narendra Modi BJP Nationalism
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy