Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
assembly

‘নম্রতা’

সৌহার্দ যদি না-ও থাকে, অন্তত সৌজন্য সেখানে থাকিতেই হইবে। তাহার অত্যাবশ্যক অঙ্গ, বিরোধীর সমালোচনা শুনিবার ধৈর্য।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়।

শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০১৯ ০০:৪৪
Share: Save:

মুখ্যমন্ত্রী জানেন, নম্রতা কেবল একটি মানবিক গুণ নহে, রাজনীতির কৌশলও বটে। লোকসভা ভোটের পর মুখ্যমন্ত্রী দলীয় নেতাদের উপদেশ দিয়াছিলেন, মানুষের সহিত নম্র ব্যবহার করিতে হইবে। প্রয়োজনে অতীতের ভুলের জন্য ক্ষমাও চাহিতে হইবে। সম্প্রতি তিনটি উপনির্বাচনে বিজেপি হারিবার পরে মমতা ফের বলিয়াছিলেন, বাংলায় ঔদ্ধত্য চলে না। তাঁহার এই রাজনৈতিক প্রজ্ঞাকে সম্মান না করিয়া উপায় নাই। আক্ষেপ একটিই। মেঘের দ্বারা যেমন সূর্য আবৃত হইয়া যায়, তেমনই বিরুদ্ধতার প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর অসহিষ্ণুতা তাঁহার নম্রতার প্রকাশকে আচ্ছন্ন করিয়া দেয়। সম্প্রতি বিধানসভায় ডেঙ্গি লইয়া বিরোধীদের আক্রমণের সম্মুখে তাহার আরও একটি দৃষ্টান্ত দেখিল রাজ্যবাসী। তৃণমূল কংগ্রেস মশা নিয়ন্ত্রণ করে না, করিতে পারিলে বিরোধীদের কামড়াইতে বলিতেন, মন্তব্য করিয়াছেন মুখ্যমন্ত্রী। ডেঙ্গির মতো গুরুতর একটি বিষয়ে বিতর্কের জন্য সভাকক্ষে যথাযথ পরিবেশ প্রয়োজন। সৌহার্দ যদি না-ও থাকে, অন্তত সৌজন্য সেখানে থাকিতেই হইবে। তাহার অত্যাবশ্যক অঙ্গ, বিরোধীর সমালোচনা শুনিবার ধৈর্য। বিরোধীরা ভ্রান্ত কি না, তাঁহাদের কক্ষত্যাগ করা অনুচিত হইয়াছে কি না, এমন প্রশ্ন সরকার তুলিতে পারে। সরকারের তরফে যথাযথ তথ্য-পরিসংখ্যান দ্বারা উত্তর দিবার প্রস্তুতি থাকিলেই হইল। কিন্তু বিধানসভা কক্ষ দেখিল, মুখ্যমন্ত্রী অতীতের ভুল আবার করিলেন। সমালোচনা শুনিয়া ক্ষিপ্ত হইলেন, এবং বিধায়কদের কথা ‘কুৎসা’ বলিয়া উড়াইলেন। ইহাতে কাহার মর্যাদা বৃদ্ধি পাইল?

সভার অভ্যন্তরে যে আলোচনা, তাহার গুণমানই বিধানসভার মর্যাদারক্ষার পথ। মঙ্গলবার বিধানসভায় বিরোধী বিধায়করা প্রশ্ন করিবার পর একে একে কক্ষত্যাগ করিয়াছেন, উত্তরের অপেক্ষা করেন নাই। ইহাতে আলোচনা পূর্ণতা পায় নাই। সরকার যে ধারায় আলোচনার অবতারণা করিয়াছে তাহাতে ভোট দিয়া ভিন্নমত প্রকাশের অবকাশ নাই, বিরোধীদের এই আপত্তি যুক্তিগ্রাহ্য। কিন্তু বিধানসভায় ডেঙ্গি বিষয়ে একটি পূর্ণ আলোচনার সুযোগ নষ্ট না করিয়া, অন্য উপায়ে কি সেই ক্ষোভ প্রদর্শন সম্ভব ছিল না? তাঁহাদের কক্ষত্যাগে আলোচনা ক্ষতিগ্রস্ত হইল। অপর দিকে, মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের লঘুতা পীড়াদায়ক। ডেঙ্গিতে ‘মাত্র’ সাতাশ জনের মৃত্যু ঘটিয়াছে, অপর সংক্রামিত ব্যক্তিদের সরকারই বাঁচাইয়াছে, কোনও দায়িত্ববান প্রশাসকের নিকট এমন দাবি প্রত্যাশিত নহে। সংক্রামিত ব্যক্তির প্রাণরক্ষার কৃতিত্ব সরকার দাবি করে কোন বিচারে? সকলকেই সরকারি হাসপাতাল বাঁচায় নাই। সরকারি চিকিৎসার অব্যবস্থা লইয়াও কম অভিযোগ হয় নাই। আর এই ‘কৃতিত্ব’ যদি সরকারের হয়, পঁয়তাল্লিশ হাজার ব্যক্তির প্রাণসংশয় হইবার ‘দায়’ও সরকার এড়াইতে পারে না।

মশা নিয়ন্ত্রণে সরকার সফল হয় নাই, ইহা সত্য। স্বাস্থ্য দফতর এবং পুরসভাগুলি তাহা স্বীকার করিলেই মঙ্গল। ত্রুটি স্বীকার করিলে ত্রুটি কমিতে পারে। বিধানসভায় দাঁড়াইয়া তাহা অস্বীকার করিলে ত্রুটি কমাইবার পরিসরটি অতি সঙ্কীর্ণ হইয়া যায়। সঙ্কটের মুহূর্তে রাজনৈতিক ব্যঙ্গ-হুঙ্কার অপেক্ষা রাজ্যবাসীর বিপন্নতার প্রতি সহমর্মিতাই কি অধিক গুরুত্ব দাবি করিতে পারিত না? রোগযন্ত্রণায় কাতর এত জন, স্বজন-শোকে মুহ্যমান এত পরিবার। এই বিপুল বেদনার সম্মুখে নম্রতাই শোভা পায়, স্পর্ধা অসহ্য।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE