ভডোদরা স্টেশনে সেই মর্মান্তিক ঘটনার পরে।
ভারতীয় রেল অকর্মণ্যতার পরিচয় অনেক দিন ধরেই দিচ্ছে। গত দু’আড়াই বছরে ছোট-বড় মিলিয়ে রেল দুর্ঘটনার সংখ্যা দেড়শো ছাড়িয়ে দু’শোর দিকে ছুটছে। মন্ত্রক বার বার ‘আর না হওয়া’র আশ্বাস দিচ্ছে। কিন্তু আশ্বস্ত হওয়ার উপায় দেখা যাচ্ছে না। কারণ বডোদরা স্টেশনের ঘটনা দেখিয়ে দিল, বিপদ আর শুধু রেলের ট্র্যাকে সীমাবদ্ধ নয়, বিপদ প্ল্যাটফর্মেও উঠে এসেছে।
এক পরিজনকে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য বডোদরা স্টেশনে যেতে হয়েছিল ফারহিদ খান পাঠানকে। বিশৃঙ্খল ভিড়ের চাপে পিষ্ট হয়ে স্টেশনেই মৃত্যু তাঁর। জখম আরও অনেকে।
এই বিশৃঙ্খলা, এই অযাচিত উপদ্রব এবং এই মৃত্যুর দায় অবশ্য একা রেল কর্তৃপক্ষের নয়। পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থা হিসেবে এই ঘটনার দায়িত্ব রেলকে নিজের কাঁধে নিতেই হবে। একই ভাবে এর দায় নিতে হবে এক পরিষেবা গ্রাহককেও। সে গ্রাহক বা গ্রাহকরা মহারথী গ্রাহক। তিনি বা তাঁরা পরিষেবা নিচ্ছিলেন বলেই কিন্তু এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনার অবকাশ তৈরি হল।
নতুন ছবি ‘রইস’-এর প্রচার জোরদার করার লক্ষ্যে ট্রেনে চেপে মুম্বই থেকে দিল্লি গেলেন শাহরুখ খানরা। ব্যবসা বাড়ানোর লক্ষ্যেই যে জনসংযোগের এই অভিনব পন্থা, সে নিয়ে কোনও সংশয় নেই। কিন্তু নির্মাতারা এত অপরিণামদর্শী হতে পারেন কী ভাবে? স্টেশনে স্টেশনে শাহরুখ খান জনসংযোগ করবেন, অথচ সে কর্মসূচি সুশৃঙ্খল ভাবে সম্পন্ন করার জন্য ছবির নির্মাতাদের কোনও সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা থাকবে না, এটা কোন ধরনের দায়িত্ববোধের পরিচয়? সুনির্দিষ্ট কোনও পরিকল্পনা যদি নেওয়া হয়েও থাকে, সে ক্ষেত্রেও যে পরিকল্পনা আসলে নামমাত্র ছিল, ফারহিদ খান পাঠান তা প্রমাণ করে গেলেন।
অন্য দিকে রয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। শাহরুখ খান নিজের ছবির প্রচার করতে ট্রেনে চেপে মুম্বই থেকে দিল্লি পর্যন্ত যাবেন, শাহরুখ খান নিজের ছবির প্রচারে স্টেশনে স্টেশনে অনুরাগীদের দেখা দেবেন, শাহরুখ খানকে দেখতে বেলাগাম ভিড় স্টেশনগুলিতে জড়ো হবে— এ সব কি রেল কর্তৃপক্ষ জানত না? এই বিষয়গুলো না জানার চেয়ে বড় অকর্মণ্যতা এবং বোধহীনতার নমুনা খুঁজে পাওয়া খুব শক্ত। আর সব জেনেও যদি স্টেশন চত্বরটুকু নিরাপদ রাখার মতো উপযুক্ত ব্যবস্থা রেল কর্তৃপক্ষ সুনিশ্চিত করতে না পেরে থাকে, তা হলে সে অপদার্থতার পরিমাপও অত্যন্ত কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
এক দৈত্যাকার পরিষেবা প্রদানকারী এবং এক আকাশচুম্বী পরিষেবা গ্রাহক এক বিন্দুতে মিললেন। মাঝে যেন পিষে গেল বেশ কিছু উলুখাগড়া। দায়িত্বশীল রাষ্ট্র এবং দায়িত্বশীল নাগরিক— দু’তরফেই সমপরিমাণ কাণ্ডজ্ঞানহীনতা দেখলাম।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy