Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪
Editorial News

কতটা বারুদ জমে থাকলে এমন বিস্ফোরণ সম্ভব!

যে হলিউডি প্রযোজক দীর্ঘ দিন ধরে একের পর এক অভিনেত্রীকে বা সহকর্মীকে নিজের যৌন লালসার শিকার বানিয়ে গিয়েছেন বিনা বাধায়, প্রতিবাদের দমকা ঝড় সেই হার্ভি ওয়াইনস্টেইনকে বিশ্ব মঞ্চে বেপর্দা তো করলই, হার্ভি রাতারাতি হারালেন একাধিক আন্তর্জাতিক মর্যাদাও।

ছবি: সংগৃহীত।

ছবি: সংগৃহীত।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০১৭ ০০:৩৬
Share: Save:

আলোড়ন উঠেছে একটা। আক্ষরিক অর্থেই আলোড়ন। ‘আমিও’— এই ছোট্ট একটা হ্যাশট্যাগ যেন শত-সহস্র ম্লান, মূক মুখে লহমায় দৃপ্ত ভাষা জুগিয়ে দিয়েছে। এক মার্কিন অভিনেত্রী স্ফুলিঙ্গটা ছুড়লেন, বারুদের সুবিশাল স্তূপ অলক্ষ্যে যেন প্রস্তুতই ছিল, চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে এ মহাপৃথিবীর প্রায় সব প্রান্ত থেকে আওয়াজ উঠল— ‘মি টু’।

যে হলিউডি প্রযোজক দীর্ঘ দিন ধরে একের পর এক অভিনেত্রীকে বা সহকর্মীকে নিজের যৌন লালসার শিকার বানিয়ে গিয়েছেন বিনা বাধায়, প্রতিবাদের দমকা ঝড় সেই হার্ভি ওয়াইনস্টেইনকে বিশ্ব মঞ্চে বেপর্দা তো করলই, হার্ভি রাতারাতি হারালেন একাধিক আন্তর্জাতিক মর্যাদাও। তবে এই লোলুপদের তালিকা কিন্তু হার্ভিতে শুরু হয় না, হার্ভিতে শেষও হয় না। হঠাৎ উৎসারিত প্রতিবাদে মর্যাদার মঞ্চ থেকে হার্ভি ওয়াইনস্টেইনের বিতাড়ন নিঃসন্দেহে ইতিবাচক মোড় এনে দিল লজ্জার সুদীর্ঘ ইতিহাসটায়। কিন্তু জঞ্জাল ইতিউতি ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে আরও অনেক। সে সবও এই বানের তোড়েই যত বেশি সম্ভব ভাসিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে।

আরও পড়ুন:#আমিও ঝড়ে নড়ে বসল কলকাতা পুলিশও

কাস্টিং কাউচ— হলিউডে শুধু নয়, বলিউডেও অত্যন্ত পরিচিত শব্দবন্ধ এটি। টলিউডেই বা নয় কেন? অসহায়তার সুযোগ নিতে উদগ্র অনেকে, অনাকাঙ্খিত যৌন সমঝোতার আখ্যানও তাই অগণিত। অনেকেই অনেক কিছু জানেন, কিন্তু কেউ যেন কিছুই জানেন না। আর পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে আবহমান কাল ধরে শোষণ চালিয়ে যান হার্ভি ওয়াইনস্টেইনের মতো দুর্বৃত্তরা।

হার্ভির মুখোশ খসে যাওয়াকে কেন্দ্র করে বিষয়টা সামনে এল, তাই আলোচনার সূত্রপাতটা হল ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিকে ঘিরে। এ হেন শোষণ শুধু ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতেই রয়েছে, এমনটা ভাবার কোনও কারণ কিন্তু নেই। জীবনের অন্যান্য সরণিতে বা সমাজের অন্যান্য ক্ষেত্রেও এই সঙ্কট সমপরিমাণে বাস্তব। সর্বাগ্রে সরব হলেন এক মার্কিন অভিনেত্রী ঠিকই। কিন্তু মুহূর্তে সাড়া মিলল সমগ্র ভুবন থেকে, সাধারণ নাগরিক সমাজ থেকে হাজার হাজার কণ্ঠ বলে উঠল, ‘আমিও, আমিও শিকার’।

খুব স্পষ্ট হল একটা বিষয়— সব দেশে, সব প্রান্তে, সব বয়সে, সব পেশায়, সব সমাজেই অনাকাঙ্খিত স্পর্শের শিকার অসংখ্য-অগণিত। বুক ফাটছিল, তবু মুখ ফুটছিল না। মাত্র একটা স্ফুলিঙ্গ বিস্ফোরণ ঘটিয়ে দিয়ে গেল। লোকলজ্জায়, সামাজিক সঙ্কোচে রুদ্ধ ছিল যে দ্বার এত দিন, সে দ্বার যখন অনর্গল হল, তখন উগরে আসুক সবটা গরল এই বেলাতেই। যথাসম্ভব সাফ হয়ে যাক আবর্জনা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE