Advertisement
E-Paper

কন্যাশ্রী

পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মিতালিদের জয়ের পর তাঁহাদের কেন্দ্র করিয়া যে কৌতূহল এবং উৎসাহ দেখা যাইতেছে, তাহার সিংহভাগ পাকিস্তানকে হারাইবার জন্য, ক্রিকেটের জন্য নহে।

শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০১৭ ০০:০০

মিতালি রাজ। গত কয়েক দিনে এই নামটির সঙ্গে ভারতীয়দের বিলক্ষণ পরিচয় হইয়াছে। বস্তুত, নামটি যাঁহার, তিনি দেশের গড়পড়তা নাগরিককে এই নামটির সহিত পরিচিত হইতে বাধ্য করিয়াছেন। মিতালি ভারতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক। ভারতীয় মহিলাদের দল। কোনও এক সাংবাদিক তাঁহাকে প্রশ্ন করিয়াছিলেন, তাঁহার প্রিয় পুরুষ ক্রিকেটার কে? উত্তরে মিতালি প্রতিপ্রশ্ন করেন যে সেই সাংবাদিক কি কখনও কোনও পুরুষ ক্রিকেটারের নিকট জানিতে চাহিয়াছেন যে তাঁহার প্রিয় মহিলা ক্রিকেটার কে? মিতালি রাজের এই উত্তরটির মধ্যে বিপুল আত্মবিশ্বাস ছিল— ক্রিকেট নামক খেলাটিতে তাঁহারা যে নেহাত দুধ-ভাত নহেন, তাঁহারা যে পুরুষ দলের সম্মুখে হীনম্মন্যতায় ভুগিবার কোনও কারণ দেখিতে পান না, মিতালি একটি উত্তরে তাহা স্পষ্ট করিয়া দিয়াছিলেন। কয়েক দিনের মধ্যেই প্রমাণিত, তাঁহার আত্মবিশ্বাসটি ভিত্তিহীন ছিল না। বিশ্বকাপের খেলায় পাকিস্তানকে তাঁহার দল ধরাশায়ী করিয়াছে। পাকিস্তান নামক দলটিকে হারানো আর পাঁচটি জয় অপেক্ষা অধিকতর তাৎপর্যপূর্ণ কেন হইবে, আপাতত সেই কূট রাজনৈতিক তর্কটিকে পার্শ্বে সরাইয়া রাখিয়া বলা চলে, এই জয় প্রচারের আলো পাইবার সহজতম পথ। মিতালি, একতা বিস্তদের লইয়াও যেমন কপিল দেব হইতে বীরেন্দ্র সহবাগ, অনেকেই টুইট করিয়াছেন। ফেসবুকে তাঁহাদের জয় লইয়া আলোচনা চলিতেছে, হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ চালাচালি হইতেছে। চ্যাম্পিয়নস ট্রফি ফাইনালে পাকিস্তানের হাতে কোহালিদের পরাভূত হইবার দিনই পাকিস্তানি হকি দলের বিরুদ্ধে ভারতীয় দলের জয় যেমন প্রচার পাইয়াছিল। পুরুষদের ক্রিকেটই যে ভারতের একমাত্র খেলা নহে, এই কথাটি বার বার প্রমাণ করিবার জন্য মিতালিদের ধন্যবাদ। যেমন ধন্যবাদার্হ পি ভি সিন্ধু, দীপা কর্মকার, সাক্ষী মালিকরাও।

পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মিতালিদের জয়ের পর তাঁহাদের কেন্দ্র করিয়া যে কৌতূহল এবং উৎসাহ দেখা যাইতেছে, তাহার সিংহভাগ পাকিস্তানকে হারাইবার জন্য, ক্রিকেটের জন্য নহে। কথাটি মিতালিরাও বিলক্ষণ জানিবেন। কিন্তু, পাকিস্তানকে হারাইবার ফলে প্রচারের যে আলো তাঁহাদের উপর পড়িয়াছে, সেই আলোয় তাঁহাদের খেলোয়াড়ি দক্ষতাও বৃহত্তর দর্শককুলের চোখে পড়িল। সেই নজর ধরিয়া রাখিবার দায়িত্ব মিতালিদের, ভারতীয় ক্রীড়া প্রশাসকদেরও। ভারতে ক্রিকেটের পরিকাঠামোর কোনও অভাব নাই। বিশ্বমানের প্রশিক্ষণেরও নহে। সুতরাং, বর্তমানের সাফল্যকে ভবিষ্যতের ধারাবাহিকতায় পরিণত করিবার সুযোগ ক্রিকেটেই সর্বাধিক। প্রসঙ্গত কাহারও ‘চক দে! ইন্ডিয়া’ নামক ছবিটির কথা স্মরণে আসিতে পারে। মানসিকতার পরিবর্তন কী ভাবে একটি খেলার গতিপথ বদলাইয়া দিতে পারে, বাস্তব হইতে অভিজ্ঞতা ধার করিয়াই ছবিটি সেই গল্প বলিয়াছিল। মিতালিরা গল্পটিকে ফের বাস্তবে লইয়া আসিতে পারেন। ভারতের ক্রীড়া ভবিষ্যতের পক্ষে তাঁহাদের সাফল্য অতি জরুরি। সাধারণ মানুষ মূলত অভ্যাসের দাস। পুরুষদের ক্রিকেট ছাড়াও হরেক খেলায় ভারতীয়দের, বিশেষত ভারতীয় মেয়েদের, সাফল্য দেখা তাঁহাদের অভ্যাস হইয়া গেলে তাঁহারা সেই সাফল্যই দেখিতে চাহিবেন। বাজার দর্শকের চাহিদাকেই শিরোধার্য করে। ফলে, মেয়েরা জিতিতে আরম্ভ করিলে তাঁহাদের খেলার দিকে বাজারের নজর পড়িতেও হয়তো বিলম্ব হইবে না।

Mithali Raj feminism Indian Sports মিতালি রাজ
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy