Advertisement
E-Paper

কর্মহীন ভারত

কেবল এই প্রকল্পটিই নয়। প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ বৃদ্ধি যোজনা, প্রধানমন্ত্রী মুদ্রা যোজনা, প্রধানমন্ত্রী রোজগার প্রোৎসাহন যোজনা প্রভৃতি নিয়োগবৃদ্ধির যে সকল প্রকল্প মোদী সরকার শুরু করিয়াছিল, তাহার কোনওটিই আশা জাগাইতে পারে নাই।

শেষ আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০১৯ ০০:১৭

কথা ছিল চাকরি হইবে এক কোটি লোকের, হইয়াছে দশ লক্ষ। এই একটি তথ্যই নূতন কাজ সৃষ্টিতে প্রধানমন্ত্রী মোদীর সাফল্যের বহর দেখাইয়া দেয়। এই পরিসংখ্যান তাঁহারই ঘোষিত প্রকল্পের পরিণাম। গত সাধারণ নির্বাচনের পূর্বে তরুণ-তরুণীদের দক্ষতা বাড়াইয়া কাজে নিয়োগ করিবার আশ্বাস দিয়াছিলেন নরেন্দ্র মোদী। সেই উদ্দেশ্যে শুরু হয় ‘প্রধানমন্ত্রী কৌশল বিকাশ যোজনা’, যাহা ‘স্কিল ইন্ডিয়া’ নামে অধিক পরিচিত। তরুণ-তরুণীদের প্রশিক্ষিত করিয়া তাহাদের কাজে নিয়োগের প্রয়োজন লইয়া কোনও সংশয় নাই। প্রশিক্ষিত কর্মীর অনুপাত ভারতে লজ্জাজনক। উন্নত দেশগুলিতে শ্রমিকশক্তির প্রায় অর্ধেকই প্রশিক্ষিত, দক্ষ। প্রতিবেশী চিনেও চব্বিশ শতাংশ কর্মী দক্ষ। ভারতে দক্ষ কর্মী দশ শতাংশও নহে। অতএব ২০১৫ সালে মোদী সরকার পাঁচ বৎসরে চার কোটি কর্মীকে প্রশিক্ষিত করিবার যে প্রকল্প গ্রহণ করিয়াছিল, তাহার যথেষ্ট যুক্তি ছিল। দুই বৎসর পার না হইতে সরকার লক্ষ্য কমাইয়া এক কোটি ধার্য করে। বাজারে নাকি তাহার অধিক চাহিদা নাই। কিন্তু তিন বৎসরে সেই লক্ষ্যের মাত্র দশ শতাংশ পূরণ করিয়াছে ওই প্রকল্প। বাকি নব্বই শতাংশ কি দুই বৎসরে পূরণ হইবে? তাহার সম্ভাবনা কম, কারণ তরুণ-তরুণীদের নথিভুক্তিও লক্ষ্যের চাইতে অনেক কম, প্রশিক্ষণ সম্পূর্ণ করিবার হারও হতাশাজনক।

কেবল এই প্রকল্পটিই নয়। প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ বৃদ্ধি যোজনা, প্রধানমন্ত্রী মুদ্রা যোজনা, প্রধানমন্ত্রী রোজগার প্রোৎসাহন যোজনা প্রভৃতি নিয়োগবৃদ্ধির যে সকল প্রকল্প মোদী সরকার শুরু করিয়াছিল, তাহার কোনওটিই আশা জাগাইতে পারে নাই। কর্মহীনতা কমে নাই, বরং বাড়িয়াছে। একটি অসরকারি সংস্থার বিশ্লেষণ, গত বৎসর এক কোটিরও অধিক মানুষ কাজ হারাইয়াছেন। এই কর্মসঙ্কোচনের সিংহভাগই গ্রামে। যাঁহারা কাজ হারাইয়াছেন, তাঁহাদের অধিকাংশের বয়স চল্লিশের কম, এবং অন্তত আশি শতাংশ মহিলা। ইহাতে আন্দাজ হয়, কৃষির দুঃসময় সামগ্রিক ভাবে কর্মজগৎকে আঘাত করিয়াছে। খেতমজুরি, এবং কৃষি তথা গ্রামীণ অর্থনীতির সহিত যুক্ত নানা কাজে দিনমজুরি, বা অস্থায়ী নিয়োগ দ্রুত সঙ্কুচিত হইয়াছে। শহরে কিছু কাজ বাড়িয়াছে, কিন্তু তাহা লক্ষ্যের চাইতে অনেক কম। কর্মহীনতার যে ভয়াবহ চিত্র ফুটিয়া উঠিতেছে, মোদী সরকারের প্রকল্প তাহার নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ। লক্ষ্যের সহিত প্রকল্প পরিকল্পনার সাযুজ্য আছে কতটা, সেই প্রশ্নও উঠিতে পারে। রোজগার প্রোৎসাহন যোজনার উদ্দেশ্য, নিয়োগকর্তাদের প্রদেয় ভবিষ্যনিধির দায় সরকার বহন করিবে, যাহাতে অধিক নিয়োগ করিবার উৎসাহ পায় মালিকপক্ষ। কিন্তু সংগঠিত ক্ষেত্রেও কর্মীদের চল্লিশ শতাংশ ভবিষ্যনিধির আওতায় নাই। সেখানে এই ঔষধ কতটুকু কাজ করিবে?

মোদী দাবি করিয়াছেন, যে ধরনের কাজ এখন তৈরি হইতেছে তাহা সাবেকি পদ্ধতিতে ধরা পড়িবে না। সে কাজ কী, তাহার উত্তর মেলে নাই। তবে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ ভারতে নির্মাণের ক্ষেত্রে জোয়ার আনে নাই, তাহা এত দিনে স্পষ্ট। কেবল যে নিয়োগ বাড়ে নাই, তাহাই নহে, শিল্পে বিদ্যুতের চাহিদাও বাড়ে নাই। কর্মহীনতার হতাশা ও ক্ষোভ ক্রমে ঘনীভূত হইতেছে। যদি তাহা বাড়িতেই থাকে, সেই ঝঞ্ঝার আঘাত সমাজের জন্য ভয়ানক হইতে পারে।

Narendra Modi NDA Job Youth
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy