শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি পোর্ট অর্থাৎ কলকাতা বন্দরের অবসরপ্রাপ্ত পেনশনভোগীদের লাইফ সার্টিফিকেট নিয়ে বিস্তর সমস্যা হচ্ছে। প্রক্রিয়াটিকে ডিজিটাল করে দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে বয়স্ক পেনশনভোগীদের বলা হচ্ছে যে, অ্যান্ড্রয়েড ফোনে এই সংক্রান্ত অ্যাপ ডাউনলোড করতে। এই অ্যাপের মাধ্যমে লাইফ সার্টিফিকেট ডিজিটাল পদ্ধতিতে জমা দিতে হবে। অ্যাপ ডাউনলোড কত জন করতে পেরেছেন, সন্দেহ আছে। না পারলে জমা করতে হবে সাইবার ক্যাফেতে গিয়ে। ৭০-১০০ টাকা খরচ হচ্ছে সেখানে। কয়েকটি ব্যাঙ্ক গত বছর পর্যন্ত বিনামূল্যে এটা করে দিত। এই বছর সেই সব ব্যাঙ্ক থেকে আর এই পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে না। এখানেই শেষ নয়। বন্দর থেকে একটি লাইফ সার্টিফিকেট ফর্মও দেওয়া হচ্ছে। ফর্মটি নিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কে গিয়ে আধিকারিককে দিয়ে তা প্রত্যয়িত করাতে হবে। ফর্মটিতে কোথাও কর্তৃপক্ষের নাম মুদ্রিত না থাকায় সংশয় দেখা দিচ্ছে। ফর্মে পেনশনপ্রাপককে স্বাক্ষর ও হাতের ছাপ দু’টিই বাধ্যতামূলক ভাবে দিতে বলা হচ্ছে। যিনি স্বাক্ষর করতে পারবেন না, তিনি শুধু হাতের ছাপ দেবেন। যেটা ডিজিটালেও হচ্ছে, আবার ফর্মেও করতে হচ্ছে। এ বার ফর্মটি নিয়ে পেনশনপ্রাপক বা প্রতিনিধিকে জমা দিতে হবে কলকাতার স্ট্র্যান্ড রোডে ফেয়ারলি জেটি ওয়্যারহাউসে বন্দরের পেনশন অফিসে। না হলে স্পিড পোস্ট করা যেতে পারে। স্বাভাবিক ভাবেই স্পিড পোস্ট অথবা পেনশন অফিসে যাতায়াতের জন্য খরচ পেনশনপ্রাপকদেরই বহন করতে হচ্ছে। এই জটিলতার কারণে তাঁরা অনেকেই বিভ্রান্ত।
অন্য দিকে, পেনশন অফিসের মূল রাস্তা একমুখী হওয়ার কারণে পৌঁছতে প্রচুর পথ হাঁটতে হয়। যেখানে শেষ জীবনটা আমাদের মতো বয়স্ক পেনশনপ্রাপকদের স্বস্তিতে কাটানো উচিত, সেখানে লাইফ সার্টিফিকেটের জন্য দৌড়তে হচ্ছে সাইবার ক্যাফে, ব্যাঙ্ক, বন্দরের অফিসে। এতে এক দিকে যেমন বহু অর্থ ব্যয় হচ্ছে, অন্য দিকে শারীরিক ধকলও হচ্ছে খুব। অন্তত বিভিন্ন জায়গায় প্রতি বছর নভেম্বর মাসে একাধিক ক্যাম্প অফিস খোলা দরকার। অথবা বিকল্প হিসেবে ব্যাঙ্ক, পোস্ট অফিসের মাধ্যমে বিনামূল্যে ডিজিটাল লাইফ সার্টিফিকেটের ব্যবস্থা ও আগের মতো সেখানেই তা প্রত্যয়িত করে জমা করার সুবিধা থাকলে বয়স্ক পেনশনপ্রাপকরা উপকৃত হবেন। আশা করি, বিষয়টি বন্দর কর্তৃপক্ষ ভেবে দেখবেন।
নীলাদ্রি সেন, কলকাতা-১০৩
প্রহসন
বৃত্তটি বোধ হয় সম্পূর্ণ হল। এক সরকার ইংরেজি তুলে দিয়েছিল। আর এক সরকার এসে একেবারে ইংরেজি মাধ্যম শুরু করে দিল (সম্পাদকীয়, ‘আঁধারে শিক্ষা’, ৩-১১)। শুধু ব্রাত্য হয়ে রইল বাংলা মাধ্যম শিক্ষাব্যবস্থাটি। এক সরকার ‘মাতৃভাষা মাতৃদুগ্ধ’ বলে একটি গোটা প্রজন্মের ইংরেজির ভিতটি নড়বড়ে করে দিয়েছিল। আর এক সরকার ইংরেজি মাধ্যম করতে গিয়ে মাতৃভাষাটিকে অনাদরের পথে ঠেলে দিতে উদ্যত। সব মিলিয়ে বাংলা মাধ্যম স্কুলগুলিকে আজ আমরা ক্রমশ মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যেতে দেখছি। তার এই অকালমৃত্যু কি অনিবার্য ছিল?
প্রাথমিক স্তর থেকে ইংরেজি ও পাশ-ফেল তুলে দেওয়াটা আগের সরকারের নেতা-মন্ত্রীদের শুধু ঐতিহাসিক ভুলই ছিল না, কার্যত এই সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে বাংলা মাধ্যম স্কুলগুলির ধ্বংসের বীজ বপন করা হয়েছিল। বর্তমানে সেটিই শাখাপ্রশাখা মেলে সরকারি ও সরকারপোষিত স্কুলগুলির শ্বাসরোধ করে দিচ্ছে। কারণ, এক দিকে শিক্ষার্থীদের ইংরেজির ভিত্তিটি নড়বড়ে হয়ে গিয়েছে, অন্য দিকে বাংলা ভাষা শিক্ষার ব্যবস্থাটিও যথাযথ হয়নি। বাংলা ভাষা তো শুধু শিক্ষার একটি মাধ্যম নয়, এর সঙ্গে যুক্ত আছে বাংলার সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, ইতিহাস, ভাষার বিকাশও। কেন্দ্রীয় নানা বোর্ডের অধীন ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলিতে বাংলা হয় বাতিল, নাহয় একান্তই দুয়োরানি। ফলে এক দিন যে মধ্যবিত্ত ছিল বাংলার শিক্ষা-সংস্কৃতির মেরুদণ্ড, তার এগিয়ে চলার পথিকৃৎ, সেই বাঙালি পরিবারের সন্তানেরাই আজ রবীন্দ্রনাথ, বঙ্কিমচন্দ্র, শরৎচন্দ্র, নজরুল, দ্বিজেন্দ্রলাল, জীবনানন্দ, বিভূতিভূষণের সাহিত্যরস থেকে পুরোপুরি বঞ্চিত। কিন্তু এর দায়িত্ব তো শুধু তাদের নয়, বরং তাদেরও, যারা তিলে তিলে বাংলা মাধ্যম শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করে তাদের বাধ্য করেছে ইংরেজি মাধ্যমে চলে যেতে। মধ্যবিত্ত বাঙালির একটা বিরাট অংশ কার্যত তাদের ক্ষমতার বাইরে গিয়ে ছেলেমেয়েদের ইংরেজি মাধ্যমে পাঠিয়েছে।
অথচ, বাংলা মাধ্যম শিক্ষাব্যবস্থাটি এক সময় সারা দেশে দৃষ্টান্তস্বরূপ ছিল। তাকে রক্ষা করা কঠিন ছিল না। দরকার ছিল একটু আন্তরিকতা, দায়িত্বশীলতা, আর ব্যবস্থাটিকে রক্ষা করার মতো দৃঢ়চিত্ত। সরকারের নানা দিকে যে অজস্র অপব্যয় হয়ে চলেছে তার খানিকটা রোধ করলেই বিদ্যালয়গুলির পরিকাঠামো ঢেলে সাজানো যেত, যথেষ্ট সংখ্যক শিক্ষকের ব্যবস্থা করা যেত। এর সঙ্গে সরকারের শিক্ষা বিভাগের সজাগ নজরদারি যুক্ত হলেই বোধ হয় নিশ্চিত মৃত্যুর গ্রাস থেকে ফিরিয়ে আনা যেত ব্যবস্থাটিকে। কিন্তু তার কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। পরিবর্তে চলছে ইংরেজি মাধ্যম চালুর প্রচেষ্টা। যা শিক্ষার নামে প্রহসন ছাড়া আর কিছু নয়। এ যেন ক্ষুধার্ত মানুষের মুখে খাদ্যের বদলে ওষুধ তুলে দেওয়ার চেষ্টা। বাঙালি অভিভাবকরা একটু সচেতন হলে বোধ হয় এখনও সরকার এবং প্রশাসনকে খানিকটা উদ্যোগী করে তোলা যায়। হিন্দি আগ্রাসনের সামনে দাঁড়িয়ে শত হাহাকারেও তা রোধ করা যাবে না, যদি না বাংলা মাধ্যমের শিক্ষাব্যবস্থাটিকে বাঁচিয়ে তোলা যায়, যদি না তার মধ্যে ইংরেজি শিক্ষাকেও দক্ষতার সঙ্গে চালু রাখা যায়। ইংরেজি মাধ্যম বিদ্যালয়ের আজ অভাব নেই। বাংলার ক্ষেত্রে সরকার শেষ চেষ্টাটুকু করুক।
সমরেন্দ্র প্রতিহার, কলকাতা-২
কাউন্টার চাই
দমদম ক্যান্টনমেন্ট মেট্রো স্টেশন থেকে নেমে সরাসরি লোকাল বা এসি (মেমু) ট্রেনে চড়তে টিকিটের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। কারণ দমদম ক্যান্টনমেন্ট মেট্রো প্ল্যাটফর্ম থেকে দমদম ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন প্ল্যাটফর্মে যাওয়ার একমাত্র উপায় হল ওভারব্রিজ, যা ব্যবহার করে যাত্রীদের প্ল্যাটফর্মে পৌঁছতে হয় সম্পূর্ণ বিনা টিকিটে। এক নম্বর প্ল্যাটফর্মে নেমে টিকিট কেটে যাত্রীদের আবার দুই বা তিন নম্বর প্ল্যাটফর্মে ফিরে আসতে হয় ট্রেন ধরার জন্য। এটা যেমন বেআইনি, তেমনই ফাইনের ঝুঁকিও থাকে। তা ছাড়া সময়-সাপেক্ষও বটে। ক্যান্টনমেন্ট মেট্রো লাইনটি তিন নম্বর প্ল্যাটফর্মের বাইরে অবস্থান করায় এই সমস্যা। বহু দিন থেকে শোনা যাচ্ছে যে তিন নম্বর প্ল্যাটফর্মের বাইরে সুভাষ নগরের দিক থেকে এক নম্বর প্ল্যাটফর্মে যাওয়ার জন্য একটা আন্ডারপাস হবে। জানা নেই এই প্রকল্পের পরিকল্পনা কতটা সত্যি। তা হলে হয়তো এ সমস্যা হত না।
সুতরাং, মেট্রো যাত্রীদের সুবিধার্থে এই মুহূর্তে যদি মেট্রো টিকিট কাউন্টারের পাশাপাশি একটা লোকাল ট্রেনের টিকিট কাউন্টারের ব্যবস্থা করা যায়, তা হলে মেট্রো যাত্রী তথা সুভাষ নগর এলাকার মানুষদের অনেক সুবিধা হত। রেল কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
গোপাল চন্দ্র টিকাদার, কলকাতা-৬৫
অযথা খরচ
কিছু দিন আগে এ রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক ঘোষণা করলেন, গণনার ফর্মে ফটো লাগানো বাধ্যতামূলক নয়। কিন্তু তত ক্ষণে অনেকেরই ছবি তোলার কাজটি হয়ে গিয়েছে। স্টুডিয়োতে লাইনে দাঁড়িয়ে টাকা দিয়ে ফটো তুলতে হয়েছে। এই অপচয়ের দায় নেবে কে? এমন ভাবে সিদ্ধান্ত বদল হলে সাধারণ মানুষদের মধ্যে বিভ্রান্তি আরও বাড়ার কথা। এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
বলীন্দ্র বৈদ্য, ডায়মন্ড হারবার, দক্ষিণ ২৪ পরগনা
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)