Advertisement
E-Paper

ভুল যুদ্ধ

অ জয় মাকেনের ফের পদত্যাগেচ্ছা, আপ-এর মুখে ইভিএম কারচুপির অভিযোগ, মাওবাদী হামলায় জওয়ানদের নিহত হওয়ার প্রেক্ষিতে বিজেপি-র বিজয়োৎসব স্থগিত রাখা, হরেক নাটকের স্তর ভেদ করিয়া দিল্লি পুরসভার ফলাফলের দিকে তাকাইলে তিনটি কথা স্পষ্ট হয়।

শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০১৭ ০০:২৪

অ জয় মাকেনের ফের পদত্যাগেচ্ছা, আপ-এর মুখে ইভিএম কারচুপির অভিযোগ, মাওবাদী হামলায় জওয়ানদের নিহত হওয়ার প্রেক্ষিতে বিজেপি-র বিজয়োৎসব স্থগিত রাখা, হরেক নাটকের স্তর ভেদ করিয়া দিল্লি পুরসভার ফলাফলের দিকে তাকাইলে তিনটি কথা স্পষ্ট হয়— এক, বিজেপি-র রণকৌশলের মার নাই; দুই, ২০১৫ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পরের দুই বৎসরে যমুনাতেও বহু জল বহিয়া গিয়াছে; তিন, কংগ্রেসের আর হারাইবার কিছু নাই। অমিত শাহদের কৃতিত্ব, উত্তরপ্রদেশাদি রাজ্যে ‘মোদী ঢেউ’ প্রত্যক্ষ করিবার পরও তাঁহারা শুধু সেই ভরসাতেই থাকেন নাই। ২৭২টি আসনের মধ্যে ২৬৭টিতেই নূতন প্রার্থী দিয়া তাঁহারা ‘অ্যান্টি ইনকামবেন্সি’ ভোটের আশঙ্কা অনেকখানি মারিয়া রাখিয়াছিলেন। দিল্লি পুরসভা কোনও কাজ করে নাই, এই অত্যন্ত বাস্তব অভিযোগটিকে সামলাইবার পন্থাটি অভিনব, স্বীকার করিতেই হইবে। প্রসঙ্গত কাহারও ‘উন্নততর বামফ্রন্ট’-এর কথা স্মরণে আসিতে পারে। আপ-এর ভরাডুবিতে স্পষ্ট, দিল্লিবাসী আরও এক বার অরবিন্দ কেজরীবালকে বিশ্বাস করিতে অস্বীকার করিয়াছে। দুঃখজনক, কারণ সত্যই গত দুই বৎসরে আপ সরকার দিল্লিতে বেশ কিছু কাজ করিয়াছে। অনুমান করা চলে, যে দুর্নীতি-বিরোধী অবস্থান আপ ও কেজরীবালকে দিল্লি-রাজনীতির কেন্দ্রস্থলে আনিয়াছিল, তাহার পর্ব সারা হইয়াছে। তবুও আপ-ই দ্বিতীয় স্থানে— কংগ্রেস তৃতীয়। তাহাতেও অবশ্য আকবর রোড পুনরুজ্জীবনের সংকেত দেখিতে পাইয়াছে, কারণ দলের পক্ষে ভোটের হার খানিক বাড়িয়াছে!

সর্বভারতীয় মিডিয়া যে নির্বাচনকে প্রধানমন্ত্রী বনাম মুখ্যমন্ত্রীর দ্বৈরথ হিসাবে দেখিয়াছিল, তাহাতে প্রধানমন্ত্রী জয়ী। দিল্লির পক্ষে ইহা দুঃসংবাদ। লড়াইটিতে মুখ্যমন্ত্রী জিতিলেও তাহা দুঃসংবাদই হইত। কারণ, তাঁহারা যতই গুরুত্বপূর্ণ হউন, পুরসভার নির্বাচনে তাঁহাদের কোনও স্থান নাই। তাঁহারা পুরসভার নেতা নহেন। নরেন্দ্র মোদীর নামে জয়ধ্বনি উঠিলে হয়তো লড়াই জেতা সহজতর হয়, কিন্তু তাহাতে পুরসভার এবং নাগরিকের স্বার্থ রক্ষিত হয় না। ধর্মনিরপেক্ষতা বনাম গৈরিক জাতীয়তাবাদ, উত্তরপ্রদেশে বিজেপির সাফল্য বা পঞ্জাবে ব্যর্থতা, কোনওটিই দিল্লি পুরনির্বাচনে আলোচ্য প্রশ্ন ছিল না। পুরসভার একমাত্র কাজ নাগরিক পরিষেবা প্রদান। নির্বাচনপ্রক্রিয়াতেও তাহাই মূল বিবেচ্য হওয়া উচিত ছিল। দিল্লিতে গোটা নির্বাচনপর্বে পুর-প্রশ্নগুলি যে কার্যত উঠিলই না, তাহা নির্বাচনপ্রক্রিয়াটি এই ভাবে জাতীয় রাজনীতির হাতে ছিনতাই হইয়া যাইবার ফলেই।

নরেন্দ্র মোদী বা অরবিন্দ কেজরীবাল কেন দিল্লির পুরনির্বাচনে জড়াইবেন, তাহার তুলনায় বৃহত্তর প্রশ্ন হইল, বিজেপি, আপ বা কংগ্রেসের ন্যায় রাজনৈতিক দলগুলি আদৌ কেন পুরনির্বাচনে লড়িবে? শুধু দিল্লি নহে, ভারতের যে কোনও শহর, যে কোনও গ্রামের ক্ষেত্রেই কথাটি প্রযোজ্য। পঞ্চায়েত বা পুরসভায় কোনও বৃহত্তর নীতি রচিত হয় না। হওয়ার কথাও নহে। এই প্রতিষ্ঠানগুলির এক্তিয়ার নাগরিক পরিষেবা প্রদানেই সীমিত। অতএব, তাহার পরিসরে রাজনীতিরও প্রয়োজন নাই। বস্তুত, রাজনীতির উপস্থিতির সহিত পুরসভার নিজস্ব কাজের যথাযথ হওয়ার একটি বিরোধই রহিয়াছে। দিল্লির নির্বাচন যে বিরোধের সাক্ষী থাকিল। ফলে, কোনও একটি পুর-নির্বাচনের ফলাফলকে জাতীয় রাজনীতির অগ্নিপরীক্ষা বানাইয়া তুলিবার পরিবর্তে সম্পূর্ণ ব্যবস্থাটিকে ঢালিয়া সাজিবার কথা ভাবার সময় আসিয়াছে। যে দল রাজ্য বা জাতীয় রাজনীতিতে থাকিবে, পুরসভায় তাহার প্রবেশাধিকার কাড়িয়া লওয়া হউক। পুরসভা থাকুক নাগরিক পরিষেবার জন্য। নির্বাচন হইতে রাজনীতির রং মুছিলে ক্রমে পরিষেবার গুরুত্ব প্রতিষ্ঠিত হইবে।

Municipality citizen service Politics
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy