Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Narendra Modi

নূতন প্রয়াস?

বিপুল বাগাড়ম্বর, শুভ সূচনার ইঙ্গিত এবং শেষাবধি লঘুক্রিয়া— মোদী জমানায় বিদেশনীতির এমনই দস্তুর।

শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০২০ ০০:৫০
Share: Save:

নরেন্দ্র মোদীর প্রথম শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে প্রায় সকল প্রতিবেশী দেশের প্রতিনিধি আমন্ত্রিত ছিলেন। অথচ, বিগত ছয় বৎসরে একে একে দেউটি নিবিয়াছে। প্রায় সকল প্রতিবেশীর আস্থা হারাইয়াছে ভারত। দক্ষিণ এশিয়ায় তাহার প্রতিপত্তি কতখানি বজায় রহিয়াছে, প্রশ্ন তাহা লইয়াও। কয়েক বৎসর বাংলাদেশ ছিল শিবরাত্রির সলিতা, একমাত্র তাহার সহিত ভারতের সুসম্পর্ক ছিল। আশঙ্কা হয়, নয়া নাগরিকত্ব আইন শেষ অবধি তাহাকেও বিলক্ষণ চটাইয়াছে। এমতাবস্থায় আর এক বার প্রতিবেশীদের দিকে হাত বাড়াইতে দেখা গেল প্রধানমন্ত্রী মোদীকে, তিনি হাজির হইলেন সার্ক এবং নির্জোট আন্দোলনের বৈঠকে। সার্কের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য পাকিস্তান এবং নির্জোট আন্দোলনের অন্যতম স্থপতি জওহরলাল নেহরু— রাজনৈতিক কারণেই দুই মঞ্চ হইতে দূরত্ব বজায় রাখিত মোদী সরকার। অকস্মাৎ সেই অবস্থানের পরিবর্তন ঘটিতে দেখা গেল। নিঃসন্দেহে সদর্থক পদক্ষেপ। কিন্তু দেশের গত কয়েক বৎসরে কূটনৈতিক ইতিহাস এমনই যে সহসা সদর্থক পদক্ষেপকেও ভরসা করা মুশকিল। পা তুলিবার পর পা ফেলা, তাহাতেই একটি পূর্ণ পদক্ষেপ ঘটে। সুতরাং আকস্মিক প্রয়াস শেষ অবধি যায় কি না দেখিয়া তবেই সত্যকারের পরিবর্তনের আশা করা সম্ভব। অনাহ্বানের নিমন্ত্রণ, না আঁচাইলে বিশ্বাস নাই।

বিপুল বাগাড়ম্বর, শুভ সূচনার ইঙ্গিত এবং শেষাবধি লঘুক্রিয়া— মোদী জমানায় বিদেশনীতির এমনই দস্তুর। নীতি অপেক্ষাও বেশি মনোযোগ যেন চমক সৃষ্টির তাড়নায়। ২০১৫ সালে লাহৌরে চমক-সফরে নওয়াজ় শরিফের সহিত মোদীর সাক্ষাত ছিল তেমনই একটি উদ্যোগ। তাহার পর পাঠানকোট ও উরির জঙ্গি হামলা, সঙ্গে সঙ্গেই অনেক পা পিছাইয়া আসে মোদী সরকার, সমস্ত রকম আলোচনা বৈঠক ও প্রস্তাব বাতিল করা হয়। উপর্যুপরি পথ পাল্টানো হয়। মনে হয় যেন কূটনীতির অপেক্ষা রাজনীতি বেশি, বিদেশনীতির জলে অভ্যন্তরীণ ভোট-রাজনীতির মাছ ধরিবার চেষ্টা। বলিলে অত্যুক্তি হইবে না যে, প্রতিবেশী দেশের সহিত সম্পর্কের ক্রমাবনতির কারণ ইহাও। গৃহাভিমুখে তাকাইয়া বাহিরের পথ স্থির করিলে বিপর্যয় আসিবেই। কূটনীতি নিকটদৃষ্টি দিয়া চলে না, দূরদৃষ্টি দিয়া চলে।

প্রধানমন্ত্রী মোদী গত বৎসর অক্টোবর মাসেও আজারবাইজ়ানের বাকুেত অনুষ্ঠিত নির্জোট বৈঠকে না যাইতে মনস্থ করিয়াছিলেন। অর্থাৎ এই মঞ্চ তখনও তাঁহার কাছে অপাংক্তেয় ছিল। অতিমারির আবহে যখন সেই মঞ্চে ফিরিতেই হইল, তখন আশা থাকুক যে বিলম্বে হইলেও ভারতীয় বিদেশনীতি নিজের শিকড়ে প্রত্যাবর্তনের চেষ্টা করিবে। পরিবর্তিত বিশ্বে নূতন করিয়া মিত্রতা ও সমন্বয়ের পথটি খুলিবে। স্বাধীনতা-উত্তর সময়ে শীতল যুদ্ধের দিনগুলিতে দক্ষিণ এশিয়ায় এই ভাবেই গুরুত্বপূর্ণ হইয়া উঠিয়াছিল নেহরুর ভারত। কোভিড-উত্তর যুগে চিন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংঘাতে নির্জোট আন্দোলনও নূতন ভূমিকায় অবতীর্ণ হইতে পারে, তৎসঙ্গে মোদীর ভারত। ‘গ্লোবাল সাউথ’-এ ভারতের ভূমিকার কথা শোনা গেল, সার্ক-এর আপৎকালীন তহবিলে এক কোটি মার্কিন ডলার অনুদানের ঘোষণা হইল। আশা থাকুক, এই পথেই প্রতিবেশী দেশসমূহের আস্থা অর্জন করিয়া ভারত নিজের পুরাতন মর্যাদা পুনরুদ্ধার করিবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Narendra Modi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE