Advertisement
E-Paper

ব্যর্থতার খতিয়ান

ভারতে প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিটি পূর্বে কখনও এতখানি লাঞ্ছিত হয় নাই।

শেষ আপডেট: ২০ মে ২০১৯ ০০:০৫
সাংবাদিক বৈঠকে নরেন্দ্র মোদী।—ফাইল চিত্র।

সাংবাদিক বৈঠকে নরেন্দ্র মোদী।—ফাইল চিত্র।

পূর্ণবৃত্ত। সংসদ ভবনকে সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করিয়া যে যাত্রার সূচনা হইয়াছিল, দেশের মাটিতে প্রথম সাংবাদিক সম্মেলনে একটি প্রশ্নেরও উত্তর না দিয়া তাহা শেষ করিলেন নরেন্দ্র মোদী। মাঝের পাঁচটি বৎসর রচিত হইল এক অনপনেয় কলঙ্কের ইতিহাস। ভারতে প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিটি পূর্বে কখনও এতখানি লাঞ্ছিত হয় নাই। সেই শীর্ষ পদ কখনও সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে অলঙ্ঘ্য বিভাজনের প্রতীক হইয়া দাঁড়ায় নাই। গত পাঁচ বৎসরে নরেন্দ্র মোদীর ব্যর্থতা অগণিত। কিন্তু, সর্বাপেক্ষা দুর্ভাগ্যজনক প্রধানমন্ত্রীর পদটির মর্যাদা, সম্মান বজায় রাখিবার সামুহিক ব্যর্থতা। মূলত তাঁহাদের (অপ)শাসনের ফলেই দেশে একের পর এক সঙ্কট তৈরি হইয়াছে, অথচ প্রধানমন্ত্রী রা কাড়েন নাই। সব সমস্যার সমাধানসূত্র তাঁহার হাতে ছিল না— না থাকাই স্বাভাবিক— কিন্তু তাঁহার উদ্বেগের কথাটিও না জানাইয়া তিনি বারংবার বার্তা দিয়াছেন যে মানুষের এতখানি লাঞ্ছনায় তাঁহার কিছু আসে যায় না। বিশেষত, সঙ্কটগুলি নাকাল করিয়াছে বিভিন্ন ভাবে প্রান্তিক মানুষদের— সংখ্যালঘুদের, দলিতদের, কৃষকদের, অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের। প্রধানমন্ত্রী পদটি যে শুধুই বিদেশভ্রমণের জন্য নহে, বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধানদের আলিঙ্গনাবদ্ধ করিবার জন্য নহে, সেই পদের মূল দায়িত্ব দেশের প্রতিটি মানুষের মঙ্গলচিন্তা করা, গত পাঁচ বৎসরে তিনি এক বারও সেই কথাটি স্বীকার করিলেন না। ইহাই নরেন্দ্র মোদীর বৃহত্তম ব্যর্থতা। প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দেশের মাটিতে তাঁহার প্রথম সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রশ্ন করিবার জন্য একটিও মাইক্রোফোন ছিল না। তাঁহারা কী প্রশ্ন করিলেন, শোনা গেল না। ইহা কি প্রতীকী? এই ভাবেই তো গত পাঁচ বৎসর নরেন্দ্র মোদী দেশের মানুষের সব কথা শুনিতে অস্বীকার করিয়াছেন।

সেই ব্যর্থতার সুনামি যেমন সামাজিক ক্ষেত্রে আছড়াইয়া পড়িয়াছে, তেমনই অর্থনীতিকেও ধ্বস্ত করিয়াছে। বৃদ্ধির হার সাড়ে ছয় শতাংশের আশেপাশে ঘুরিতেছে, তাহা সমস্যার গৌণ দিক। মূল সমস্যা হইল, আর্থিক বৃদ্ধি যেটুকু ঘটিয়াছে, তাহার সুফল সবার কাছে পৌঁছায় নাই। অসাম্য বাড়িয়াছে। আর্থিক ভাবে পিছাইয়া থাকা অংশের নিকট সুফল পৌঁছাইবার পথ বন্ধ করিয়া দিয়াছে সরকারি নীতিই। নোট বাতিল ও জিএসটির জোড়া ধাক্কায় অসংগঠিত ক্ষেত্রের কোমর ভাঙিয়া গিয়াছে। কত মানুষ কর্মসংস্থানহীন হইয়াছেন, কত মানুষকে তুলনায় কম বেতনের চাকুরি লইয়া সংসারের অন্নসংস্থান করিতে হইয়াছে, প্রধানমন্ত্রী কোথাও সেই কথা বলেন নাই। দেশে বেকারত্বের হার গত অর্ধশতকে কখনও এত বেশি ছিল না। বৎসরে এক কোটি নূতন কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি ভোটের জলে ভাসিয়া গিয়াছে। এমনকি, তাঁহার ভ্রান্ত আর্থিক নীতির ধাক্কায় সংগঠিত শিল্পের কী ক্ষতি হইয়াছে, সেই কথাটিও বিজেপি নেতাদের মুখে শোনা যায় নাই। স্বাভাবিক। ভারতের পরিসংখ্যান ব্যবস্থা একদা গোটা দুনিয়ায় উদাহরণস্বরূপ ছিল। পাঁচ বৎসরে নরেন্দ্র মোদীরা সেই ব্যবস্থার যাবতীয় বিশ্বাসযোগ্যতা ঘুচাইতে সক্ষম হইয়াছেন। ভারতীয় পরিসংখ্যানের উপর ভিত্তি করিয়া এখন আর একটিও কথা বলিতে কেহ সাহস করেন না। রাজনীতি আসিয়া প্রতিষ্ঠানকে লইয়া গেলে এই পরিণতি হওয়াই স্বাভাবিক। কৃষকদের অবস্থাও করুণ। ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বৃদ্ধির নাটকে কৃষিক্ষেত্রের সমস্যা মিটে নাই। দেশে ক্রমবর্ধমান কৃষক-অসন্তোষ জানাইয়া দিয়াছে, কৃষকরা ভাল নাই। কিন্তু, নরেন্দ্র মোদী কিছু বলেন নাই। নির্বাচনী প্রচার সারিয়া তিনি কেদারনাথে তপস্যা করিতে গিয়াছেন। হিমালয়ের অপরিমেয় শান্তি কি তাঁহাকে এই ভারতের দিকে তাকাইবার অবসর দিবে? প্রধানমন্ত্রীর অসামান্য আসনটির প্রতি তিনি যে অবিচার করিলেন, তাহার জন্য কোথাও কি তিনি লজ্জিত হইবেন? প্রথম বারের জন্য কি ভাগ করিয়া লইবেন দেশের সাধারণ মানুষের বিষণ্ণতা, হতাশা?

Lok Sabha Election 2019 লোকসভা নির্বাচন ২০১৯ Narendra Modi BJP
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy