হাইড্রোজেন ওয়াটার! বিশ্বজুড়ে হইচই শুরু হয়েছে এই বিশেষ ধরনের জল নিয়ে। জাপানে তো এই হাইড্রোজেন ওয়াটার এতটাই জনপ্রিয় হয়েছে জাপানে যে, সেখানকার সুপারমার্কেটে জলের ভেন্ডিং মেশিনের পাশে হাইড্রোজেন ওয়াটারের ভেন্ডিং মেশিনও বসানো হয়েছে। মানুষ অর্থ দিয়ে কিনে সেই জল খাচ্ছেন। এমনকি, হাইড্রোজেন ওয়াটার দিয়ে স্নান অর্থাৎ হাইড্রোজেন বাথ-ও এখন জাপানে অত্যন্ত জনপ্রিয়। কিন্তু জল তো জলই। তাতে এমনিতেই হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেন থাকে। তা নিয়ে হঠাৎ এমন হইচইয়ের কারণ কী?
হাইড্রোজেন ওয়াটার কী?
নামে কিছুটা স্পষ্ট। হাইড্রোজেন ওয়াটার মানে হাইড্রোজেন সমৃদ্ধ জল। অর্থাৎ যে জলে হাইড্রোজেনের ভাগ থাকবে বেশি। সাধারণ জল বা ‘এইচ ২ও’-তে দু’ভাগ হাইড্রোজেন এবং এক ভাগ অক্সিজেন রাসায়নিকভাবে যুক্ত থাকে। হাইড্রোজেন ওয়াটার হলো এমন জল, যেখানে এর সঙ্গে অতিরিক্ত মলিকুলার হাইড্রোজেন গ্যাস বা ‘এইচ২’ মিশিয়ে দেওয়া হয়। এতে জলের স্বাদ বা গন্ধে কোনও পরিবর্তন হয় না। তবে জলে দ্রবীভূত মুক্ত হাইড্রোজেন বুদবুদ হয়ে থাকে।
কেন এই জল নিয়ে এত হইচই?
এক জাপানি গবেষণার পর থেকেই হাইড্রোজেন ওয়াটার নিয়ে গোটা দুনিয়ায় হইচই শুরু হয়েছে। ২০০৭ সালে জাপানের নিপ্পন মেডিকেল স্কুলের অধ্যাপক শিগেও ওহতা এবং তাঁর নেতৃত্বাধীন গবেষকেদের একটি দল এই নিয়ে গবেষণা করেন। তাঁদের লক্ষ ছিল একটাই— এমন একটি উপাদান খুঁজে বার করা যা শরীরের ক্ষতিকারক উপাদানগুলো ধ্বংস করবে অথচ ভাল উপাদানগুলোর কোনও ক্ষতি করবে না। শিগেও-এর ওই গবেষণা সফল হয়। তাঁরা যা হাইড্রোজেন ওয়াটার আবিষ্কার করেন, যার হাইড্রোজেন শরীরে অক্সিডেশন স্ট্রেস সৃষ্টিকারী অক্সিজেনের মিশে জল উৎপন্ন করে এবং শরীর থেকে বার করে দেয়। ফলে শরীরে ‘মুক্ত বিষাক্ত কণা’ বা ফ্রি র্যাডিক্যালসের পরিমাণ অনেকটাই কমে যায়। শরীর থাকে নানা রোগমুক্ত। শিগেও-র ওই গবেষণালব্ধ ফলাফল প্রকাশিত হয় বিজ্ঞান বিষয়ক খ্যাতনামী পত্রিকা ‘নেচার’-এও।
এটি খেলে কী উপকার হয়?
১। হাইড্রোক্সিল র্যাডিক্যাল নষ্ট হয়: হাইড্রোজেন গ্যাস শরীরের জন্য সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর বিষাক্ত ফ্রি র্যাডিক্যাল ধ্বংস করতে সক্ষম, যা ডিএনএ এবং কোষের ক্ষতি করে।
২। সহজে দুর্গম্য জায়গায় পৌঁছে যায়: হাইড্রোজেন পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম অণু। তাই এটি শরীরের এমন সব জায়গায় সহজেই পৌঁছে যেতে পারে যেখানে সাধারণ ওষুধ বা অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট পৌঁছোতে পারে না। যেমন মস্তিষ্ক এবং কোষের মাইক্রোকন্ড্রিয়ায় পৌঁছেও কাজ করতে পারে।
৩। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন: হাইড্রোজেন শরীরের কোনো বিষক্রিয়া তৈরি করে না, কারণ এটি ক্ষতিকর অক্সিজেন কণার সঙ্গে মিশে গিয়ে সাধারণ জল তৈরি করে এবং শরীরের বাইরে বেরিয়ে যায়।
৪। ডায়াবিটিস কমাতে: গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত এটি পান করলে টাইপ-২ ডায়াবেটিস ও বিপাকজনিত সমস্যাগুলোতে কিছুটা উন্নতি ঘটে।
৫। বার্ধক্য রোধে : এর অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট কোষের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে যা বার্ধক্যজনিত ক্ষতি রোধে বিশেষ ভূমিকা নেয়। এছাড়া এটি মানসিক চাপ কমাতেও কার্যকরী বলে দেখা গিয়েছে কিছু সমীক্ষায়, যা অকাল বার্ধক্যের কারণ বলে পরিচিত।
৬। কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি: অ্যাথলিট বা খেলোয়াড়দের ওপর পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে যে, এটি ব্যায়ামের সময় ক্লান্তি কমাতে এবং পেশির শক্তি দ্রুত ফিরে পেতে সাহায্য করে।