Advertisement
১১ মে ২০২৪
National Museum

নিরামিষায়ণ

নয়াদিল্লির জাতীয় সংগ্রহশালায় সপ্তাহব্যাপী অনুষ্ঠানের খাদ্যতালিকা হইতে আমিষ বাদ পড়িল। প্রদর্শনীটির বিষয় ছিল ভারতের খাদ্যবিষয়ক ইতিহাস।

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০০:১৯
Share: Save:

নয়াদিল্লির জাতীয় সংগ্রহশালায় সপ্তাহব্যাপী অনুষ্ঠানের খাদ্যতালিকা হইতে আমিষ বাদ পড়িল। প্রদর্শনীটির বিষয় ছিল ভারতের খাদ্যবিষয়ক ইতিহাস। আমিষের বাদ পড়ার পশ্চাতে যে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দলের তর্জন, বুঝিতে বিলম্ব হয় না। বিজেপির আমিষবিরোধিতা ও নিরামিষবন্দনা শুধু দলীয় স্তরেই সীমাবদ্ধ নাই, তাহার নেতা ও অনুগামীরা আসমুদ্রহিমাচল ভারতকে আমিষবিদ্বেষী তথা আমিষশূন্য করিতে চায়। তাহাদের প্রচারিত এক জাতি, এক নির্বাচন, এক ভাষা, এক ধর্মের সহিতও ইহা সমঞ্জস— এক খাদ্যাভ্যাস, তাহা অবশ্যই নিরামিষ। বহুত্ববাদী ভারত-ধারণাকে উড়াইয়া এক ছাঁচে দেশকে গড়িবার মরিয়া চেষ্টা। এবং, প্রচার অথবা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে লোকের মন পাল্টাইবার ধৈর্য অথবা রুচি তাহাদের নাই। অতএব, ইতিহাস নিরামিষ হইয়াছে।

আবহমান কাল হইতেই যে ভারতের সমাজ বহুতর খাদ্যাভ্যাসে অভ্যস্ত ও তৃপ্ত, একদেশদর্শী নেতারা তাহা শুনিতে নারাজ। ডিম বা মাছের প্রতি যদি বা অসূয়া কিঞ্চিৎ কম, মাংসের কথা শুনিলেই তাঁহারা রুদ্রমূর্তি ধরেন। গোমাংস লইয়া সাম্প্রতিক কালে যে সন্ত্রাস ঘটিয়াছে, সমগ্র ভারত তাহার সাক্ষী। ক্ষমতা হাতে থাকিলে জোর খাটাইবার প্রবণতা বাড়ে, তাহাকে ধর্মের মোড়ক দিলে তো কথাই নাই। সংখ্যাগুরুর ধর্মকে শুদ্ধ ও পবিত্র বুঝাইতে সেই ধর্মাবলম্বীদের নিরামিষাশী বলিয়া দাগাইয়া দেওয়ার মধ্যে ধর্ম-রাজনীতির কারবারই প্রকট। অথচ আমিষকে ধর্মের কাঠগড়ায় না তুলিয়া বরং যুক্তি দিয়া কাজের কথাটি বলা যাইতে পারিত। বিজ্ঞান উদ্ধৃত করিয়া বলা যাইতে পারিত, ভারতের ন্যায় নিরক্ষীয় তাপমাত্রার দেশে গরু-মহিষ বা যে কোনও পশুর মাংসই সহজপাচ্য নহে, উহা না খাইলেই ভাল। বলা যাইতে পারিত, বাণিজ্যিক স্বার্থে চাষ করা মাছ বা ডিম-মাংসের জন্য লালিত হাঁসমুরগিকে যে উপায়ে পরিপুষ্ট করা হয়, তাহা মানুষের সুস্বাস্থ্যের উপযোগী নহে। নিরামিষের সমর্থনে উল্লেখ করা যাইতে পারিত জলবায়ু পরিবর্তনের সহিত গবাদি পশুর সম্পর্কও। ভারতে বিপুল গবাদি পশুসম্পদের উদ্‌গার ও গোময় ইত্যাদি হইতে ব্যাপক মিথেন নিঃসরণ হয়, তাহার তাপ আটকাইয়া রাখিবার ক্ষমতা অন্য গ্যাসের তুলনায় বহুগুণ বেশি। গবাদি পশুর সৃষ্ট ‘কার্বন ফুটপ্রিন্ট’-এর গুরুভার ভারতের উপরে চাপিয়াছে। খাদ্যাভ্যাসে আমিষ না থাকিলে মাংসের জন্য এত পশুর প্রয়োজন পড়িত না, আখেরে কার্বনভার কমিত।

অন্য একটি প্রসঙ্গও উল্লেখ করিতে হয়। মানুষ যাহা খায়, যাহা পরে, যেই কাজ করে, সব কিছুতেই স্থূল প্রয়োজনীয়তাটুকুর বাহিরে নিজস্ব সুখলাভের কারণটিও বিদ্যমান। নিরামিষ কি আমিষ যাহাই খাই, তাহাতে কেবল উদরপূর্তিই নহে, মানসিক সন্তোষ আসিল কি না, তৃপ্তি হইল কি না, তাহাও জরুরি। অর্থনীতির জটিলতা, রাষ্ট্রীয় অনুশাসনও উপভোক্তার এই সুখ-প্রত্যাশাকে অস্বীকার করিতে পারে না। নিরামিষ খাদ্যাভ্যাসকে রামরাজ্যের অঙ্গ বলিয়া প্রচার করিলে, ধর্মের দোহাই পাড়িয়া আমিষের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামিলেই মানুষের চিরন্তন অভ্যাস ও সংস্কার বদলাইবে না। আমিষাশীগণ অনেক সময় ঠাট্টা করিয়া অসার অর্থে ‘নিরামিষ’ শব্দটি প্রয়োগ করেন; রাজনীতির কারবারিদের সঙ্কীর্ণ অপযুক্তি গিলাইবার চেষ্টাই প্রমাণ, তাঁহাদের যুক্তিগুলি নিতান্ত নিরামিষ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

National Museum Non Vegetarian Food Vegetarian Food
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE