Advertisement
E-Paper

খোলাখুলি কথা বলাটা জরুরি

কাল আমরা আলোচনা করেছি, কতটা পরিব্যাপ্ত এই অভিজ্ঞতা, এবং বহু সন্তান কী ভাবে বাবা-মায়ের কাছেও এই অভিজ্ঞতা গোপন রাখতে চায়।

শ্রীরূপা সরকার

শেষ আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০১৮ ০০:৫৫

বাবা-মা হিসেবে সন্তানকে যৌন হেনস্তা থেকে নিরাপদ রাখতে কী কী করতে পারেন, সেটা ভেবে রাখা জরুরি। কাল আমরা আলোচনা করেছি, কতটা পরিব্যাপ্ত এই অভিজ্ঞতা, এবং বহু সন্তান কী ভাবে বাবা-মায়ের কাছেও এই অভিজ্ঞতা গোপন রাখতে চায়। সুতরাং,

১) চোখকান খোলা রাখুন। যদি দেখেন বিশেষ কোনও মানুষের সামনে আপনার সন্তান অস্বাভাবিক আচরণ করছে, বিরক্ত হচ্ছে, রেগে যাচ্ছে, চুপ করে যাচ্ছে, পালিয়ে যাচ্ছে, সঙ্গে সঙ্গে সতর্ক হোন। লক্ষ করুন যে ওরা কান্নাকাটি করছে কি না, বিষণ্ণ দেখাচ্ছে কি না, বা অবসাদে ভুগছে কি না। অবসাদের লক্ষণ হল, চুপ করে যাওয়া, খুব বেশি বা কম খাওয়া, খুব বেশি বা কম ঘুমোনো, কান্নাকাটি করা, হঠাৎ মোটা বা রোগা হয়ে যাওয়া।

২) সন্তানের সঙ্গে কথা বলুন। জিজ্ঞেস করুন, কোনও অবাঞ্ছিত ঘটনা ঘটেছে কি না, যা থেকে ওরা ভয় পাচ্ছে বা বিরক্ত হচ্ছে। এটাও জানান যে, আপনাকেও অনেকে বিরক্ত করেছে, সুতরাং এ ধরনের ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক হলেও অস্বাভাবিক নয়। তাদের ভয় পাওয়ার কারণ নেই, বরং আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করলে আপনারা সমস্যার সমাধান করতে পারবেন। এটা বোঝানো জরুরি যে, এই ধরনের ঘটনায় আপনার সন্তান অন্যায়ের শিকার, এতে ওদের কোনও দোষ নেই। যারা এটা করছে, তারাই অপরাধী। প্রথম কাজ ভয় ভাঙানো, যাতে আপনার সন্তান আপনাকে বিশ্বাস বা ভরসা করে।।

৩) অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, মায়েরা বাবার সঙ্গে আলোচনা না করে লুকিয়ে যাচ্ছেন, মেয়েকে আড়াল করছেন বিপদ থেকে। তাতে আপনার মেয়ে হয়তো সাময়িক ভাবে নিরাপদ হচ্ছে, কিন্তু সমস্যার গোড়াটা থেকেই যায়। যদি বাবা-মা দু’জনে মিলে সমস্যার মোকাবিলা না করতে পারেন, তা হলে আপনার সন্তান আপনার কাছ থেকে সমস্যা এ়ড়িয়ে যাওয়ার শিক্ষা পাবে, ঝামেলা এড়াতে শিখবে, কিন্তু কখনওই আপনার সাহসের ওপর ভরসা করবে না, বা সমস্যার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে মোকাবিলা করার শিক্ষা পাবে না। মা-বাবার একসঙ্গে সমস্যার মোকাবিলা করা খুব জরুরি।

৪) যদি কোনও অবাঞ্ছিত ঘটনার কথা জানতে পারেন, ভয় পাবেন না। কিংবা, আপনাকে আগে কেন বলেনি বলে বকাবকি করবেন না। বাচ্চাদের পক্ষে এই ধরনের ঘটনা মা-বাবাকে বলা সহজ নয়। দিশেহারা না হয়ে ঘটনার বিশ্লেষণ করুন, কী কী ভাবে অপরাধীর মোকাবিলা করা যায়, সেই পথগুলো ভাবুন, মা-বাবা একসঙ্গে পদক্ষেপ করুন। তার পর সন্তানকে সাহস দিন যে আপনারা ওর পাশে আছেন। ওর কোনও মানসিক অসুবিধে হলে সে দিকে মনোযোগ দেওয়া, যত্ন নেওয়া দরকার।

৫) অপরাধী ব্যক্তিটির থেকে সাবধান হোন। তাঁরা আত্মীয়, বন্ধু বা প্রতিবেশী হলে তাঁদের বাড়িতে আসা বন্ধ করুন। প্রাইভেট টিউটর হলে তাঁেক পালটান। স্কুলবাস বা পুলকারের হেলপার হলে মালিকের সঙ্গে কথা বলুন। খোলাখুলি কথা বলা দরকার। অপরাধী যাতে সন্তানের অসহায়তা ও ভয়ের সুযোগ না নেয়, সেটা আপনাকেই দেখতে হবে। তিনি যদি জানেন, আপনারা মেয়ের সঙ্গে আছেন, তাকে বিশ্বাস করছেন ও রক্ষা করছেন, তিনি ভয় পাবেন, সাবধান হবেন।

৬) সন্তানের মানসিক ক্ষতি আটকানোর জন্য নিকটজন কারও সাহায্য নিন, যাকে ও বিশ্বাস করে, দিদি-দাদা, মাসি-পিসি, ঠাকুরমা-দিদিমা বা বন্ধুরা। প্রয়োজনে সাইকলজিস্ট, সাইকায়াট্রিস্ট, থেরাপিস্টের সাহায্যও নিন।

আসলে সন্তানের সঙ্গে খোলাখুলি কথা হওয়াটা ভীষণ জরুরি। ছোটখাটো শারীরিক বা যৌন নিগ্রহও সারা জীবন যন্ত্রণা দিতে পারে। এমন অনভিপ্রেত ঘটনা আটকানো বাবা-মারই দায়িত্ব।

যে কথা কালও বলেছি, সাবধান হওয়ার অর্থ কিন্তু অন্ধ পুরুষবিরোধিতা নয়। পুরুষ মানেই দৈত্য বা রাক্ষস, এ রকম ভাবার শিক্ষাও কিন্তু কন্যাসন্তানকে সুস্থ ভাবে বেড়ে উঠতে দেয় না। তাকে বোঝাতে হবে, বেশির ভাগ পুরুষই এ রকম কিছু করেন না। পরিবারের অনেক আত্মীয় আমাদের বাবার মতোই আগলে চলেন। আমরা সারা জীবনে অসংখ্য শিক্ষক পেয়েছি, যাঁরা শুধু নিরাপদই নন, আমাদের প্রণম্য। পুরুষ কাজের লোক, ড্রাইভারকাকুরা অনেকেই আমাদের সন্তানের মতো ভালবেসেছেন। অর্থাৎ বিচার করা দরকার, সাবধানে। সতর্ক হোন সেই সব পুরুষের থেকে, যাঁদের থেকে সতর্ক হওয়া জরুরি।

(শেষ)

ওয়ালডেন ইউনিভার্সিটিতে মনস্তত্ত্বের শিক্ষক

Open conversation Children parents
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy