Advertisement
১১ মে ২০২৪
sushmita sen

Sushmita Sen: থাকে শুধু উপচার, মুখোমুখি বসিবার, সুস্মিতা সেন

ললিত মোদী আসলে পারদ। লয় নেই, ক্ষয় নেই। যেদিক থেকেই আলো পড়ুক, একই রকম চকচকে। কিন্তু পেটে গেলে বিপজ্জনক।

অনিন্দ্য জানা
অনিন্দ্য জানা
শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০২২ ০৮:৫৮
Share: Save:

রাত ৮টা নাগাদ নিউজরুমে বোমার মতো ফাটল খবরটা! এক সহকর্মী পরে রসিকতা করে বলছিলেন, ‘‘অল দ্য নিউজরুমস অব দ্য কান্ট্রি কমপ্লিটলি স্টাম্পড!’’

ঠিকই। রসিকতা নয়। স্টাম্পড বলে স্টাম্পড! ক্রিজের একেবারে তিন হাত বাইরে। উইকেট বাঁচানোর কোনও সুযোগ ছিল না। স্রেফ ভ্যাবাচাকা।

‘বোমা’ তো বটেই। পরমাণু বোমা বললেও বাড়াবাড়ি হবে না বোধহয়। প্রাক্তন ব্রহ্মাণ্ডসুন্দরী সুস্মিতা সেনের সঙ্গে সম্পর্কের এমন নির্ঘোষ তো এর আগে কখনও আসেনি। এবং সেই ঘোষণায় ‘বেটার হাফ’-এর মতো ভবিষ্যতের জন্য গভীর তাৎপর্যপূর্ণ এবং গভীরতর ব্যঞ্জনাদ্যোতক শব্দ।

নিজের সঙ্গে সুস্মিতার একাধিক ঘনঘোর ছবি পোস্ট করে আইপিএলের প্রাক্তন মহাকর্তা ললিতকুমার মোদী (যিনি নিজেকে অর্থিপ্রার্থী, উমেদার এবং গুণগ্রাহী মহলে ‘এলকেএম’ বলে পরিচিত করে থাকেন) লিখেছেন, পরিবারের সঙ্গে মলদ্বীপ, সার্ডিনিয়া-সহ ঝটিকা বিশ্বসফর করে সবে লন্ডনে ফিরেছেন। সঙ্গে ছিলেন সুন্দরী (নাকি ‘ব্রহ্মাণ্ডসুন্দরী’) সুস্মিতা। লিখেছেন, ‘ফাইনালি আ নিউ লাইফ।’ অবশেষে নতুন জীবন। যে জীবন, তাঁর জবানিতে— ‘ওভার দ্য মুন’।

সুস্মিতা-ললিতের সম্পর্কের খবরে চনমনে হয়ে উঠেছে গোটা দেশ।

সুস্মিতা-ললিতের সম্পর্কের খবরে চনমনে হয়ে উঠেছে গোটা দেশ।

হইহই কাণ্ড। রইরই ব্যাপার। সুস্মিতা গাঁটছড়া বাঁধছেন ললিতের সঙ্গে? গোটা দেশ চনমন করে উঠল। তার পর জানা গেল, নাহ্, এখনও নয়। কিছু পরে ভেসে এল ব্যাখ্যামূলক টুইট— ‘ইন লভ ডাজন্ট মিন ম্যারেজ ইয়েট। বাট ওয়ান দ্যাট ফর শিওর।’ অর্থাৎ, প্রেমে পড়া মানেই বিয়ে নয়। এখনও বিয়ের ভাবনা নেই। তবে ভবিষ্যতে হবে বৈকি।

সেই যে কাহিনি শুরু হল, এই উত্তর সম্পাদকীয় লেখা পর্যন্ত তার বিরাম নেই (আমার ধারণা, এ কাহিনি চলতেই থাকবে)। সুস্মিতাও টুইট করেছিলেন। তাঁর নবলব্ধ বান্ধব ললিত টুইট করার প্রায় ১৪ ঘণ্টা পরে। তবে তাতে কোনও গদগদ এবং প্রেমালু ভাব নেই। ঘনিষ্ঠ ছবি-টবি দেওয়ার মতো কোনও ললিতমার্কা উপচারও নেই। দুই কন্যার সঙ্গে নিজের ছবি পোস্ট করে শুধু লেখা, ‘বিয়ে নয়। আংটিও (বাগ্‌দানের সূচক) নয়। নিঃশর্ত ভালবাসা আমায় ঘিরে রেখেছে। অনেক ব্যাখ্যা দেওয়া হল। এ বার কাজে ফেরা যাক।’

পরিমিত। মাপা। সুস্মিতাসুলভ।

বাঙালির দিগন্তে ধূমকেতুর মতো আবির্ভূত হয়েছিলেন সুস্মিতা সেন।

বাঙালির দিগন্তে ধূমকেতুর মতো আবির্ভূত হয়েছিলেন সুস্মিতা সেন।

এক লহমায় সাতাশটা বছর পিছিয়ে গেলাম। ১৯৯৫ সালের মার্চ মাসের কোনও এক রবিবার। বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডের চারতলা বাড়ির ছাদে বিচরণরতা এক উনিশ বছরের তরুণী। আঁটসাঁট স্ল্যাক্স, গোলাপি রংয়ের ফুলস্লিভ টাইট টি-শার্ট। পায়ে জমকালো জ্যাকবুট। মাথার উপর মধ্যদিন সবে-পেরোনো সূর্য। কিন্তু ৫ ফুট ৯ ইঞ্চির হিলহিলে চেহারার সৌন্দর্যের গনগনে আঁচে তার তেজও খানিক ম্লান। নাহ্, আঁচ নয়। বিভা (সাধে কি বহু বহু বছর পরে সুস্মিতা সম্পর্কে বলতে গিয়ে এক অগ্রজ হিতৈষী তাঁর বর্ণনা দেবেন ‘ঘর ছাড়ার মতো সুন্দরী’ বলে)। যে বিভার একটা স্নিগ্ধ বিচ্ছুরণ আছে। যেমন চাঁদের আলোর থাকে। যে বিভা তৈরি হয়ে থাকে পেলব সৌন্দর্যের সঙ্গে বুদ্ধিদীপ্ততার মাপমতো মিশেলে।

সেই বিভাযুক্ত হয়ে তিনি, বিশ্বসুন্দরী, থুড়ি, ব্রহ্মাণ্ডসুন্দরী, তুরতুর করে ঘুরছিলেন গোটা ছাদে। মায়ের স্নেহসুলভ ধমক অগ্রাহ্য করে পা ঝুলিয়ে কখনও সখনও বসে পড়ছিলেন ছাদের বিপজ্জনক পাঁচিলে। এমনিতে তাঁর তখন থাকার কথা লস অ্যাঞ্জেলস বা ওই ধরনের কোনও বিদেশ সফরে। বিশ্বসুন্দরীদের যা-যা করতে হয়, সে সব অ্যাসাইনমেন্ট (মূলত বিশ্বশান্তির বাণীর প্রচার এবং প্রসার) নিয়ে। সিঙ্গাপুরমুখী সেই সফর খানিক কাটছাঁট করে দক্ষিণ কলকাতার সাউথ এন্ড পার্কের বাসিন্দা ঠাকুর্দার মৃত্যুসংবাদ পেয়ে আচম্বিতে কলকাতায় এসেছেন। এবং প্রত্যাশিত ভাবেই, আসা মাত্র গোটা শহরে একটা হিল্লোল তুলে দিয়েছেন।

ব্রহ্মাণ্ডসুন্দরীর (মনে রাখুন, প্রথম ভারতীয় ব্রহ্মাণ্ডসুন্দরী। মিস ইউনিভার্স) মঞ্চে সেরার শিরোপা পাওয়ার পরে তাঁর অবিশ্বাসজনিত বিস্ফারিত অভিব্যক্তি ততদিনে গোটা পৃথিবীতে পরিচিত। রাতারাতি নতুন এক বিগ্রহ পেয়ে বাঙালি অভিভূত, উচ্ছ্বসিত, আপ্লুত। তখনও সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় নক্ষত্র হয়ে ভারতের ক্রিকেটাকাশে আবির্ভূত হননি। ফলে বিশ্বপর্যায়ে বাঙালির সে ভাবে কোনও চ্যাম্পিয়ন ছিল না। সুস্মিতা, যাকে বলে, বাঙালির দিগন্তে ধূমকেতুর মতো আবির্ভূত হয়েছিলেন।

মদির কণ্ঠস্বর, তুখড় প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব, ঝকঝকে হাসি এবং অনবরত হাজির-জবাব হয়েও পাশের বাড়ির কন্যের মতো হাবভাবের সেই সুস্মিতা যখন একান্ত ব্যক্তিগত সফরে (বস্তুত, শোক-সফরে) কলকাতা শহরে এসে পড়লেন, বাঙালি প্রায় নাওয়া-খাওয়া ভুলে গেল। আর আনন্দবাজার পত্রিকায় মাত্র পাঁচ বছরের সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন প্রায়-নাদান আমাকে লাগিয়ে দেওয়া হল তাঁর সফরের কভারেজে। যতদূর মনে করতে পারি, মোট চার দিন ছিলেন তিনি শহরে। প্রথম দিনই তাঁর ঝরঝরে হাসিটা হাসতে হাসতে (এত প্রাণখোলা আর আন্তরিক হাসি তার আগে খুব একটা দেখেছি বলে মনে হয় না) বলেছিলেন, ‘‘আমি কিন্তু বাংলা বলতে পারি— হুঁকোমুখো হ্যাংলা, বাড়ি তার বাংলা, মুখে তার হাসি নেই দেখেছো?’’

বছর উনিশের সুস্মিতার সৌন্দর্যের আঁচে তখন সূর্যের তেজও ম্লান।

বছর উনিশের সুস্মিতার সৌন্দর্যের আঁচে তখন সূর্যের তেজও ম্লান।

সুকুমার রায় আউড়েছিলেন বটে। কিন্তু শুনে একবারেও মনে হয়নি, ন্যাকা-বোকা এবং পাকা প্রবাসী বাঙালিকন্যা জনপ্রিয় কবিতা শিখে আবৃত্তি করে পাঁচজনকে তাক লাগাতে নেমেছেন। এমনই তাঁর আবেদন। উল্টে মনে হয়েছিল, এই তরুণীর মধ্যে কোথাও একটা সব জয় করে-নেওয়া সৎ আন্তরিকতা আছে। এবং সেই সততাটা, মাফ করবেন, যুতসই বাংলা মনে পড়ছে না, তাঁর হাসির মতোই অসম্ভব ‘ডিজআর্মিং’।

তখনই প্রথম শব্দটা মনে এসেছিল— সুস্মিতাসুলভ!

কলকাতায় তাঁর চার দিনের সফরে পারিবারিক লোক-লৌকিকতা, মাদার টেরিজার সঙ্গে সাক্ষাৎ, থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশুদের সঙ্গে সময় কাটানোর অবকাশে যে খুচখাচ কথা হয়েছিল, তা যোগ করলে নেহাত মন্দ নিউজপ্রিন্ট খাবে না। মনে আছে, তিনি বলেছিলেন, ‘‘সুস্মিতার বয়স উনিশ হতে পারে। মিস ইউনিভার্সের বয়স কিন্তু উনত্রিশ।’’ সত্যিই। বয়সের তুলনায় তাঁকে অসম্ভব পরিণত মনে হয়েছিল। আর মনে হয়েছিল উচ্চাকাঙ্ক্ষী। নিজেকে নিয়ে লেখা কবিতা শুনিয়েছিলেন। যার প্রথম লাইন, ‘শি ইজ অ্যান ইন্ডিয়ান ফ্রম বেঙ্গল।’ মাঝামাঝির লাইনগুলোয় ঠিকরে-পড়া আত্মবিশ্বাস, ‘শি ডাজন্‌ট বিলিভ ইন অ্যাম্বিশন, বাট শি অ্যাসপায়ার্‌স টু বি, অ্যান্ড অ্যাসপায়ার্‌স টু বি সাকসেসফুল।’

আরও বলেছিলেন, পঁচিশেই বিয়ে করে নিতে চান। উনত্রিশে মা। জীবনের প্রথম বয়ফ্রেন্ড রজত তারা সম্পর্কে প্রশ্ন শুনেও অপ্রতিভ হননি। উল্টে ‘অফ দ্য রেকর্ড’ জিজ্ঞাসা করছি শুনে বলেছিলেন, ‘‘আমি কিছুই অফ দ্য রেকর্ড বলি না। যা বলি, সব অন রেকর্ড। আর না বলতে চাইলে একেবারেই বলি না।’’ ঠিক সেই ভঙ্গিতেই সটান বলেছিলেন, ‘‘দারুণ মানুষ। ও আমাকে সবসময়ে উৎসাহ দিয়েছে। হি ওয়াজ মাই বয়ফ্রেন্ড। কিন্তু এখন এত দূরে থাকি বলে সেটা শুধু বন্ধুত্বে এসে দাঁড়িয়েছে।’’

সুস্মিতা ছিলেন। একেবারে নিজের ইচ্ছায়, নিজের জীবনে। নিজের আইনে। নিজের শাসনে।

সুস্মিতা ছিলেন। একেবারে নিজের ইচ্ছায়, নিজের জীবনে। নিজের আইনে। নিজের শাসনে।

তাঁর বায়োডেটায় শিক্ষার খাতে দিল্লিতে এয়ারফোর্স গোল্ডেন জুবিলি ইনস্টিটিউট এবং সেকেন্দ্রাবাদের সেন্ট অ্যান্‌স স্কুলের প্রাক্তন ছাত্রীর পরিচয়টাই সর্বোচ্চ ধাপ হয়ে থাকবে। সে তো স্বাভাবিক। আঠেরোতেই ব্রহ্মাণ্ডসুন্দরী হয়ে গেলে আর কে পুঁথিগত লেখাপড়ার তোয়াক্কা করে! বিশেষত, তার পরে যদি সেই সুন্দরীর গন্তব্য হয় বলিউড (যদিও ১৯৯৫ সালের কলকাতা সফরে বলেছিলেন, কোনওদিন অভিনয়ে যাবেন না। ওটা তাঁর দ্বারা হয় না)। মহেশ ভট্টের ‘দস্তক’ ছবিতে নিজের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন সুস্মিতা। খুব যে দারুণ কিছু করেছিলেন, তা নয়। কিন্তু সেই ছবির পরিচালক বিক্রম ভট্টের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন। যুগলে সিমি গ্রেবালের টক শোয়ে এসেছিলেন। মানিয়েছিলও ভাল। কিন্তু সে সম্পর্ক বেশিদিন টেকেনি।

যেমন বিরাট কোনও উড়ান নেয়নি সুস্মিতার অভিনেত্রী জীবনও। মানে, তাঁর মাপে মনে রাখার মতো। ছুটকোছাটকা কিছু অভিনয় করেছেন। তাঁর প্রতি একটু বেশিমাত্রায় শ্রদ্ধাশীলেরা তাঁর অভিনীত কিছু চরিত্র নিয়ে তাৎক্ষণিক আলোচনা করেছেন। কিন্তু ওই পর্যন্তই। এই ২০২২ সালে সুস্মিতা অভিনীত কোনও চরিত্রের নাম বলতে বললে মনে হয় না কেউ ফুল মার্ক্স পাবেন।

কিন্তু সুস্মিতা ছিলেন। একেবারে নিজের ইচ্ছায়, নিজের জীবনে। নিজের আইনে। নিজের শাসনে। একলা মা আদালতে লড়াই করে দুই কন্যাকে দত্তক নিয়েছেন। কারণ, মাতৃত্ব কী, জানতে চেয়েছিলেন। সেই দুই দত্তক মেয়ের সঙ্গে ভারতীয় বায়ুসেনার প্রাক্তন উইং কমান্ডার বাবা, জুয়েলারি ডিজাইনার মা এবং ভাই। এই ছিল তাঁর পৃথিবী। তবে সমান্তরাল ভাবে সেই পৃথিবীতে গতায়াত থেকেছে তাঁর বিবিধ সম্পর্কের।

বস্তুত, তাঁকে চর্মচক্ষে প্রথম দেখার সেই উনিশ থেকে এই না-দেখার ছেচল্লিশে পৌঁছতে সুস্মিতা যে কত সম্পর্কে জড়িয়েছেন, তার খতেন গত কয়েকদিন ধরে সারা পৃথিবী দিচ্ছে এবং নিচ্ছে। প্রথম এবং একমাত্র দেখায় বলেছিলেন, পঁচিশেই বিয়েটা সেরে নেবেন। কিন্তু এই সেদিনও টুইঙ্কল খন্নার সঙ্গে একটা টক শোয়ে দেখলাম সুস্মিতা বলছেন, তিনবার বিয়ে করতে-করতে বেঁচেছেন! কিন্তু তাঁর সমস্ত সম্পর্কেরই একটা সাধারণ সুতো ছিল। এবং আছে— নিজের মর্জিতে বাঁচা। সুস্মিতাসুলভ।

বেশ বুঝতে পারছি, সেই সুস্মিতাসুলভ মর্জি মেনেই ললিত মোদীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছেন তিনি। বেশ করেছেন! নেটদুনিয়ার কিছু লোক তাঁকে বলেছেন ‘গোল্ড ডিগার’। সুস্মিতা জবাবে লিখেছেন, ‘আমি নিজের কাছে এবং নিজের বিবেকের কাছে খুব পরিষ্কার। কিন্তু চারপাশের পৃথিবীটা এতটা অসুখী আর দুঃখজনক দেখলে মনটা ভেঙে যায়। এই সব জিনিয়াসরা আসলে আমার জীবন আর চরিত্র নিয়ে মন্তব্য করে নিজেরাই সোনার খোঁজ করছে।’

এই পর্যন্ত ঠিকই আছে। কিন্তু তার পরের লাইনটা, যাকে বলে, সেই সুস্মিতাসুলভ— ‘আই ডিগ ডিপার দ্যান গোল্ড। অ্যান্ড আই হ্যাভ অলওয়েজ (ফেমাসলি) প্রেফার্‌ড ডায়মন্ডস। অ্যান্ড ইয়েস আই স্টিল বাই দেম।’

অস্যার্থ— ওহে অর্বাচীনের দল, আমি খুঁড়ি বটে। কিন্তু আমার খোঁড়াখুঁড়ি সোনার খোঁজে নয়। তার চেয়ে অনেক গভীরে। আমি খনন করি হিরের খোঁজ পেতে। আর হ্যাঁ, আমি এখনও হিরে (স্বোপার্জিত অর্থে) কিনে পরি।

ললিত মোদী কি সেই হিরে?

তাঁকে সামনাসামনি একবারই দেখেছি। ২০০৮ সালে উদ্বোধনী আইপিএল কভার করতে গিয়ে। ইডেনের ক্লাব হাউসের সিঁড়ি বেয়ে উঠে আসছিলেন। গাত্রবর্ণ উজ্জ্বল শ্যাম। সেই শ্যামল পটভূমিকায় বোধহয় একটু বেশিই ঝিকোচ্ছিল চোখের সোনালি ফ্রেমের চশমা। হাতের হ্যাঙার থেকে আলগোছে ঝুলছিল বেজ রংয়ের লিনেন জ্যাকেট। প্রতিটি পদক্ষেপে ঠিকরে পড়ছিল আত্মবিশ্বাস। সেই পদক্ষেপের তালে তালে ঝাঁকি দিয়ে উঠছিল মাথার কণ্ডিশনার-দুরস্ত চুলের গোছা।

পরনে আকাশি নীল রংয়ের হাতা-গোটানো ফুলস্লিভ শার্ট। গলায় ঈষৎ আলগা নট থেকে ঝুলছে হলদের উপর কালো পোলকা-ডটেড টাই।

তখনই মনে হয়েছিল, এই লোকের মধ্যে কোথাও একটা গুবলু আছে। স্কাই-ব্লু শার্টের সঙ্গে হলদে পোলকা ডটেড নেকটাই যে-সে ক্যারি করতে পারে না। মনে হয়েছিল, হতে পারে বিশ্বক্রিকেটকে এক দীর্ঘস্থায়ী বিপ্লব দিয়েছেন। হতে পারে ক্রোড়পতি লিগের জনক। কিন্তু লোকটা উপচারে বিশ্বাস করে। নিজের উচ্চকিত উপস্থিতিতে বিশ্বাস করে। দেখনদারিতে বিশ্বাস করে। বজ্রনির্ঘোষে বিশ্বাস করে। সেইজন্যই ব্রহ্মাণ্ডসুন্দরীকে আসলে ‘ট্রফি’ বলে মনে করে। কালক্ষেপ না-করে সেই জয়ের সুখ গোটা পৃথিবীকে জানিয়ে দিতে চায়।

হিরে নয়। ললিত মোদী আসলে পারদ। যার লয় নেই, ক্ষয় নেই। যেদিক থেকেই আলো পড়ুক, একই রকম চকচকে। কিন্তু পেটে গেলে বিপজ্জনক। এই লোকের প্রেমে পড়তে ধক লাগে!

সুস্মিতাসুলভ ধক!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

sushmita sen lalit modi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE