Advertisement
E-Paper

মহাজনের পথ?

নরেন্দ্র মোদীর পার্শ্বচর ও গুণমুগ্ধরা টুইট করে, ফেসবুকে লিখে সাধারণ মানুষকে আশ্বস্ত করেছিলেন, অচ্ছে দিন দরজায় কড়া নাড়ছে!

শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০২২ ০৫:৪২
অরবিন্দ কেজরীওয়াল।

অরবিন্দ কেজরীওয়াল। ছবি: পিটিআই

আশির দশকের গোড়ায় তৎকালীন বম্বের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে মিঠুন চক্রবর্তীকে লোকে চিনত ‘গরিবের অমিতাভ বচ্চন’ হিসাবে। ইদানীং অরবিন্দ কেজরীওয়ালকে নাকি ‘গরিবের নরেন্দ্র মোদী’ বলা হচ্ছে। টেকনোলজিতে দড় প্রজন্ম বলছে, ‘নরেন্দ্র মোদী লাইট’। কেন, তার আপাত দৃশ্যমান কারণটি গুজরাতে বিধানসভা নির্বাচনের হাওয়া ওঠামাত্র টের পাওয়া যাচ্ছে। নরম নয়, বেশ মোটা দাগের হিন্দুত্বের রাজনীতির পসরা নিয়ে নির্বাচনী ময়দানে নেমেছেন তিনি। প্রশ্ন তুলেছেন, অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু করার জন্য বিজেপি কি ২০২৪ অবধি অপেক্ষা করবে? অর্থাৎ, ভারতীয় রাজনীতিতে যে প্রশ্নগুলির উপর বিজেপির একাধিপত্য ছিল, কেজরীওয়াল তার দখল নিতে চান। টাকার মূল্যহ্রাস ঠেকানোর জন্য তিনি পরামর্শ দিয়েছেন, নোটে লক্ষ্মী-গণেশের ছবি ছাপা হোক। কেজরীওয়াল বিলক্ষণ জানেন, প্রস্তাবটি একই সঙ্গে হাস্যকর ও ভয়ঙ্কর। বর্তমান শাসকরা ভারতের গা থেকে যতই খুলে নিন ধর্মনিরপেক্ষতার আভরণ, যতই ভারতের ধারণাটি থেকে মুছে দিতে চান সর্বজনীনতার মায়াস্পর্শ, তবুও সংখ্যাগরিষ্ঠের ধর্মকে কারেন্সি নোটের গায়ে ছেপে দেওয়ার পরিস্থিতি সম্ভবত এখনও তৈরি হয়নি। কেজরীওয়ালের বিজেপি-তর হতে চাওয়ার চেষ্টাটির মধ্যে হাস্যরসের উপাদান আছে। কিন্তু ভয়ঙ্কর দিকটি হল, বিজেপি-বিরোধী রাজনীতির মুখ হতে চাওয়া কেজরীওয়ালের ভারত সম্বন্ধে শ্রদ্ধার পরিমাণ হিন্দুত্ববাদীদের তুল্য।

কিন্তু, তাঁকে ‘গরিবের নরেন্দ্র মোদী’ হিসাবে চিহ্নিত করার এটাই একমাত্র কারণ নয়। গভীরতর মিলটি হল, অর্থনীতির মতো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং জটিল বস্তুকেও সস্তা রাজনীতির উপজীব্য করে তুলতে তাঁরও বিন্দুমাত্র বাধেনি। নরেন্দ্র মোদী যেমন তাঁর বিরোধী অবতারে অর্থনীতির প্রশ্নগুলিকে লঘুতম স্তরে নামিয়ে এনে রাজনীতির ইট-পাটকেল বানাতেন। জনতার স্মৃতি ক্ষণস্থায়ী, তবুও অনেকের মনে পড়তে পারে, প্রাক্-২০১৪ প্রতিশ্রুতি ছিল, নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় এলে এক লিটার পেট্রলের দাম চল্লিশ টাকায় নেমে আসবে, ডলারের দামও সেখানেই নামবে। নরেন্দ্র মোদীর পার্শ্বচর ও গুণমুগ্ধরা টুইট করে, ফেসবুকে লিখে সাধারণ মানুষকে আশ্বস্ত করেছিলেন, অচ্ছে দিন দরজায় কড়া নাড়ছে! ডলার বা তেলের দাম যে ইচ্ছা করলেই কমানো যায় না, অথবা মূল্যস্ফীতির সমস্যা বহু ক্ষেত্রেই সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকে, এই কথাগুলি মোদী বা তাঁর পার্শ্বচরদের কেউ জানতেন না, তা বিশ্বাস করা কঠিন। যেমন, নোটে লক্ষ্মী-গণেশের ছবি ছাপলেই টাকার দাম চড়চড়িয়ে বাড়তে থাকবে, এই কথাটি কেজরীওয়াল বিশ্বাস করেন বলে সন্দেহ হয় না। কিন্তু, তাঁদের ধরনটিই এই— অর্থনীতির সমস্যাকে সাধারণ মানুষের বোঝার মতো করে পেশ করার বদলে তাকে সস্তা রাজনীতির প্রশ্নে পরিণত করা।

মানুষ কি এতই বোকা যে, নেতারা যা বোঝাবেন, তাঁরা তা-ই বুঝবেন? এই প্রশ্নের উত্তর একই সঙ্গে হ্যাঁ এবং না। দেশের বেশির ভাগ মানুষ সম্ভবত জানেন যে, নোটে হিন্দু দেবদেবীর ছবি ছাপলেই টাকার ভাগ্য ফিরবে না। কিন্তু, অর্থব্যবস্থার স্বাস্থ্যোদ্ধারে কী করা উচিত, এবং সরকার কী কী করছে বা করছে না, এই কথাগুলি সাধারণ মানুষের পক্ষে বোঝা মুশকিল। প্রকৃত গণতন্ত্রে এখানেই বিরোধীর দায়িত্ব— কোথায় সরকারের দায়িত্বপালনে ঘাটতি থেকে যাচ্ছে, তা নির্দেশ করা। তার পরিবর্তে যদি অন্যায্য আক্রমণ বা হাস্যকর যুক্তির অবতারণা করা হয়, তবে তাতে রাজনীতির স্বল্পমেয়াদ লাভ বিলক্ষণ হতে পারে— নরেন্দ্র মোদী সেই লাভের স্বরূপ জানেন, এবং কেজরীওয়ালও সে-দিকে তাকিয়েই অস্ত্র শাণাচ্ছেন— কিন্তু, গণতন্ত্রের ক্ষতি। মানুষকে শিক্ষিত করার, প্রকৃত পরিস্থিতি বোঝানোর দায়িত্ব যদি রাজনীতি অস্বীকার করে, তবে পড়ে থাকে শুধুই অন্ধকার।

Arvind Kejriwal AAP Gujarat BJP PM Narendra Modi
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy