Advertisement
০৮ মে ২০২৪
Primary School

ব্যতিক্রমী ভাবনা

কাজ সদিচ্ছা, উদ্যম ছাড়া সম্ভব নয়। সীমিত সাধ্যের মধ্যে থেকেও কী করে অসাধ্যসাধন সম্ভব, পুরুলিয়ার স্কুল দু’টি তার দৃষ্টান্ত স্থাপন করল।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০২২ ০৭:২২
Share: Save:

অন্য রকম কিছু ভাবার, করার তাড়নাটি যখন ক্ষেত্রবিশেষে প্রবল হয়ে ওঠে, তখন সব বাধাই তার সামনে তুচ্ছ। পুরুলিয়ার পুঞ্চার বনকাটি প্রাথমিক বিদ্যালয় তার প্রকৃষ্টতম উদাহরণ। সেখানে শিক্ষাদানের পরিকাঠামো যৎসামান্য। ক্লাসঘর একটি। পৃথক কোনও অফিসঘর নেই। পড়ুয়ারাও সচ্ছল ঘরের নয়। অথচ, এত অভাবও সেখানে ‘ডিজিটাল’ মাধ্যমে শিক্ষাদানের পথ আটকাতে পারেনি। পুরুলিয়ারই অন্য একটি স্কুল, মানবাজারের গোবিন্দপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা প্রায়শই পড়ুয়াদের স্কুলের বাইরে ঘুরতে নিয়ে গিয়ে হাতেকলমে প্রকৃতিপাঠ দেন। সেখানে পড়ুয়ারা বাগানে আনাজ ফলায়, স্কুলে প্লাস্টিক থেকে তৈরি হয় ইট, সেই ইটে বানানো হয় জৈব সার তৈরির চৌবাচ্চা। পাঠ্যসূচি আর পরিবেশে মিলেমিশে এক হয়ে যায় শিক্ষার্থীরা। আদর্শ স্কুল তো একেই বলে।

অতিমারিকালে সারা দেশেই যখন শিক্ষাবৈষম্যের ক্ষত ক্রমশ চওড়া হওয়ার আশঙ্কা, তখন এই স্কুলগুলি আশার আলো জ্বালিয়ে রাখে। অতিমারি-পরবর্তী শিক্ষাব্যবস্থা যে তার আগের চেহারায় আর ফিরে আসবে না, তা এক রকম স্পষ্ট। বিকল্প হিসাবে অনলাইন শিক্ষার উপর জোর দেওয়া হলেও তাতে গ্রাম-শহরের বিভেদ যে আরও প্রকট হবে, সে আশঙ্কা প্রবল। সম্প্রতি এক আলোচনা সভায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য সুরঞ্জন দাসও এই সাইবার-বিভেদের প্রসঙ্গটি তুলেছেন। জানিয়েছেন, অনলাইন শিক্ষার পরিকাঠামো উন্নত করতে না পারলে বৈষম্য আরও বৃদ্ধি পাবে। এ-হেন পরিস্থিতিতে একমাত্র শিক্ষকদের ব্যক্তিগত উদ্যোগই পারে বৈষম্যের মাত্রাকে কিছুটা হ্রাস করতে। স্কুলছুট পড়ুয়াদের বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে নিয়ে আসার জন্য প্রচলিত পথের বাইরে গিয়ে শিক্ষাকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে হবে। মনে রাখতে হবে যে, শিক্ষকের কাজ শুধুমাত্র সিলেবাস শেষ করা নয়। বাড়ির বাইরে শিশুরা তাঁদের কাছ থেকেই জীবনবোধের পাঠটি গ্রহণ করে। সেই কাজ সদিচ্ছা, উদ্যম ছাড়া সম্ভব নয়। সীমিত সাধ্যের মধ্যে থেকেও কী করে অসাধ্যসাধন সম্ভব, পুরুলিয়ার স্কুল দু’টি তার দৃষ্টান্ত স্থাপন করল।

এবং শিক্ষা নিতে হবে সরকারকেও। সুরঞ্জন দাস সাম্প্রতিক আলোচনায় জানিয়েছেন, সমীক্ষা অনুযায়ী ২৭ শতাংশ পড়ুয়ার কাছে ইন্টারনেট সংযোগ পৌঁছয়নি। ইন্টারনেট নেই ভারতের ৫০ হাজারেরও বেশি গ্রামে। প্রশ্ন হল, এই তথ্য কি কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের কাছে নেই? এর সুরাহার কী ব্যবস্থা হয়েছে? কেরল সরকার দারিদ্রসীমার নীচে বসবাসকারীদের জন্য বিনামূল্যে ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদানের ব্যবস্থা করেছে। পশ্চিমবঙ্গেও সেই কাজ কিছু দূর হয়েছে, কিন্তু তাতে আরও অনেক জোর দেওয়া প্রয়োজন। ঠিক যেমন পুরুলিয়ার স্কুল দু’টিকে মডেল স্কুল হিসাবে ঘোষণা করে সেই উদাহরণ অন্য স্কুলগুলির সামনেও তুলে ধরা যায়। যে স্কুলগুলিতে স্মার্ট ক্লাসের পরিকাঠামো নেই, সেখানে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ করা যায়; আবার যে স্কুলে স্মার্ট ক্লাসের পরিকাঠামো থেকেও তার যথাযথ প্রয়োগ নেই, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা করা যায়। অর্থাৎ, অনেক কিছুই ‘করার’ সম্ভাবনা আছে। প্রশ্ন হল, শিক্ষার বৈষম্য দূর করার প্রশ্নটিকে সরকার কতখানি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবে?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Primary School purulia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE